WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ভারতে বাণিজ্যের বিকাশ | ভারতের অর্থনীতি বিকাশ | বিভিন্ন যুগে ভারতের অর্থনীতির বিকাশ



ভারতে বাণিজ্যের বিকাশ

সুদূর অতীতকালে ভারতে কৃষি অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল । তখন কৃষিই ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা। বৈদিক যুগে লােহার ব্যবহার ও কৃষিকাজে লাঙলের ব্যবহার শুরু হলে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। অবশ্য কৃষির পাশাপাশি এই সময় বিভিন্ন কুটিরশিল্প ও কারিগরি শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল । হরপ্পা সভ্যতার যুগে পাথর , তামা , সিসা , ব্রোঞ্জ , মাটি প্রভৃতি দিয়ে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি হত। পরবর্তীকালে লৌহ শিল্প , অলংকার শিল্প , দারু শিল্প , বয়ন শিল্প , চর্ম শিল্প , গৃহস্থলির টুকিটাকি প্রস্তুত প্রভৃতির বিকাশ ঘটে। কৃষকের প্রয়ােজনের অতিরিক্ত উত্ত কৃষিপণ্য ও বিভিন্ন শিল্পসামগ্রীর ওপর নির্ভর করেই প্রাচীনকালে ভারতে ব্যাবসাবাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছিল।

ভারতে বাণিজ্যিক বিকাশের কারণ

সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে গুপ্ত যুগ পর্যন্ত সময়ে ভারতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক — উভয় প্রকার বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় । এই সময় ভারতে বাণিজ্যের বিকাশের বিভিন্ন কারণ ছিল।

  1. উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য : প্রাচীন যুগে ভারতে কৃষির যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। সিন্ধু সভ্যতার সময়কালেও ভারতের উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য বাইরে রপ্তানির প্রমাণ পাওয়া যায়। এসময় ভারতের সঙ্গে মিশর , সুমের , মেসােপটেমিয়া প্রভৃতি বৈদেশিক সভ্যতার যােগাযােগ গড়ে উঠেছিল।
  2. নগরজীবনের বিকাশ : অধ্যাপক ব্রজদুলাল চট্টোপাধ্যায় , ব্রতীন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় প্রমুখ দেখিয়েছেন যে , প্রাচীন ও আদি – মধ্যযুগে ভারতে নগরজীবনের বিকাশ ঘটেছিল যা বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করেছিল। দক্ষিণ ভারতে নগরম’গুলি অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।
  3. রাজকোশ ভরানাের প্রচেষ্টা : বাণিজ্য থেকে রাজকোশে যথেষ্ট শুল্ক আসত। এজন্য প্রাচীনকালের রাজারা বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করতেন , যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতেন এবং পথে বাণিজ্য চৌকি স্থাপন করে পণ্য চলাচলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতেন।
  4. হাট ও মেলার ভূমিকা : প্রাচীন যুগে গ্রামেগঞ্জে অনুষ্ঠিত হাট ও মেলাগুলিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা হত। এসব পণ্য আবার ব্যবসায়ীরা বাইরে রপ্তানি করতেন।
  5. গিল্ড গঠন : গিল্ডের প্রতিষ্ঠার ফলে শিল্পোৎপাদন , কারখানায় পণ্য ও শ্রমিকের নিয়মিত জোগান , বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অসুবিধা দূরীকরণ প্রভৃতি সম্ভব হয় এবং তা বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক হয়।

ভারতে বাণিজ্যের অগ্রগতি বর্তমান ও ইতিহাস

প্রাচীন এবং মধ্যযুগে ভারতে বাণিজ্যের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল। বিভিন্ন রাজবংশের আমলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পৃথক বিষয় প্রাধান্য পেলেও বাণিজ্যের অগ্রগতির ধারাটি সর্বদা অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন যুগে ভারতে বাণিজ্যের অগ্রগতি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল—

1. সিন্ধু সভ্যতার সময়কালে :

ভারতে সভ্যতার বিকাশের প্রথম থেকেই বাণিজ্যিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল। স্যার জন মার্শাল, মার্টিমার হুইলার, ড. ইরফান হাবিব প্রমুখ হরপ্পা সভ্যতার সময়কালের বাণিজ্যিক কাজকর্মের বিভিন্ন প্রমাণ দিয়েছেন।

  1. হরপ্পা সভ্যতায় গ্রামগুলিতে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি হত। সম্ভবত স্থলপথে পশুটানা গাড়ি এবং জলপথে নৌকা ও জাহাজের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী পরিবহণ করা হত
  2. ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে এবং ভারতের বাইরে মেসোপটেমিয়া, সুমের প্রভৃতি স্থানের সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার বাণিজ্য চলত। হরপ্পা সভ্যতায় কর্ণাটক থেকে সোনা, রাজস্থান ও বেলুচিস্তান থেকে তামা, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত থেকে সিসা এবং রাজস্থান ও গুজরাট থেকে দামি পাথর আমদানি করা হত।
  3. এসময় আফগানিস্তান থেকে রুপা ও লাপিস লাজুলি, আরব থেকে তামা, ইরান থেকে রুপা ও নীলকান্ত মণি, মধ্য এশিয়া থেকে জেড পাথর প্রভৃতি ভারতে আসত।
  4. এভাবে সংগৃহীত অনেক জিনিস যেমন সোনা, রুপা, তামা, হাতির দাঁত, কাঠ, লাপিস লাজুলি, দামি পাথর, পশুপাখির মূর্তি প্রভৃতি নিম্ন সিন্ধু অল থেকে মেসোপটেমিয়ায় রপ্তানি হত। মেসোপটেমিয়ার ঊর নামক স্থানে হরপ্পায় তৈরি সিলের সন্ধান মিলেছে।
  5. গুজরাটের লোথাল নামক স্থানে এ যুগের বন্দরের ধ্বংসাবশেষ, পাথরের বহু নোঙর ও বহু সিলমোহর পাওয়া গেছে। এগুলি হরপ্পা সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রমাণ দেয়।

2. ভারতে বৈদিক যুগে

বৈদিক যুগের প্রথমদিকে পশুপালন এবং পরের দিকে কৃষি ছিল আর্যদের প্রধান জীবিকা। তা সত্ত্বেও এ যুগে কিছু কিছু বাণিজ্যিক লেনদেন চলত।

  1. এ যুগে বাণিজ্যিক বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ছিল গোধন। কেউ কেউ আবার এ যুগে ‘নিষ্ক’ নামে স্বর্ণমুদ্রারও উল্লেখ করেন।
  2. ঋগ্ববেদে ধনী বণিকের দূরদেশে গমন, বণিকের ‘শতধন’ লাভের বাসনা, ‘পণি’ নামে অনার্য বণিকশ্রেণি প্রভৃতির উল্লেখ থেকে সমুদ্র বাণিজ্যের প্রমাণ মেলে। ঋগ্‌বেদে ‘শত অরিত্র’ নামে শত-দাঁড়বিশিষ্ট জলযানের উল্লেখ আছে যা আর্যদের সমুদ্র বাণিজ্যের প্রমাণ দেয় বলে ইতিহাসবিদ ম্যাক্সমুলার, ল্যাসেন প্রমুখ মনে করেন।
  3. পরবর্তী বৈদিক যুগে বৈশ্যরা ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ যুগের প্রধান রাস্তাগুলি রাজগৃহ, গয়া, বৈশালী, শ্রাবস্তী, মথুরা, তক্ষশিলা প্রভৃতি নগরকে যুক্ত করেছিল। এই সময়ের সাহিত্যে ‘শ্রেষ্ঠী’ নামে ধনী বণিক, ‘বাণিজ’ নামে বণিকের পুত্র, ‘সমুদ্র’ প্রভৃতির উল্লেখ থেকে বাণিজ্যের যথেষ্ট প্রমাণ মেলে। এ যুগের বৈদিক সাহিত্যে উল্লিখিত ‘কুসীদ’ বলতে ঋণ এবং ‘কুসীদিন’ বলতে ঋণের ব্যবসায়ীকে বোঝানো হয়েছে।

3. প্রাক্-মৌর্য যুগে ভারত

প্রাক্-মৌর্য যুগে ব্রাহ্মণ্যশ্রেণি বাণিজ্যের পেশাকে সুনজরে না দেখলেও এসময় বাণিজ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল।



  1. মহাজনপদগুলির উত্থান, নগরের বিকাশ, মুদ্রার প্রচলন প্রভৃতি বিষয়গুলি বাণিজ্যের বিকাশে সহায়তা করেছিল। রাজগৃহ, চম্পা, বৈশালী, বারাণসী, উজ্জয়িনী, কৌশাম্বী, শ্রাবস্তী প্রভৃতি নগরী এই সময় বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
  2. পালি সাহিত্যে কৃষির চেয়ে বাণিজ্যকে বেশি সুবিধাজনক ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পালি সাহিত্যে উল্লিখিত ধনী বণিকরা ‘শ্রেষ্ঠী’, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ‘পাপনিকো’ এবং ভ্রাম্যমাণ বণিক-প্রধান ‘সার্থবাহ’ নামে পরিচিত ছিল।
  3. এসময় পশ্চিম এশিয়া থেকে বস্ত্র, ওষুধ, টিন, কাচ, দামি পাথর, রং প্রভৃতি সামগ্রী ভারতে আমদানি হত। আর ভারত থেকে রপ্তানি হত হীরে, মুক্তো, প্রবাল, তামা, লোহা, চন্দন কাঠ, সুতিবস্ত্র, মসলিন, হাতির দাঁত, নীলকান্ত মণি, সুগন্ধি দ্রব্য, বনৌষধি প্রভৃতি।

4. মৌর্য যুগে ভারতের অর্থনীতি

মৌর্য যুগে একদিকে যেমন কৃষি ও শিল্প উভয়েরই ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছিল অন্যদিকে তেমনি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, সুদৃঢ় কেন্দ্রীয় শাসনের অস্তিত্ব, বাণিজ্যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, বাণিজ্যে রাজকীয় সহায়তা প্রভৃতি সম্ভব হয়েছিল। ফলে এসময় বাণিজ্যেরও যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল।

  1. পাটলিপুত্র নগরীর বাণিজ্যিক কাজকর্ম তদারকির উদ্দেশ্যে বিশেষ সমিতি ছিল বলে মেগাস্থিনিস উল্লেখ করেছেন। এ যুগে স্থল ও জলপথে বৈদেশিক বাণিজ্য চলত।
  2. ভারতীয় মশলা, চাল, সুগন্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের দ্রব্য, সুতিবস্ত্র, রেশম, দামি পাথর প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি হত। ভারতে আমদানি হত যুদ্ধের ঘোড়া, কাচ, নীলকান্ত মণি, সোনা ইত্যাদি।
  3. বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল তক্ষশিলা নগরী। ভারতীয় পণ্য তক্ষশিলার মাধ্যমে ইউরোপে এবং কাবুল, কান্দাহার ও পারস্যের পথে পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছোেত।
  4. গুজরাটের ভৃগুকচ্ছ, মহারাষ্ট্রের সোপারা, কল্যাণ, বাংলার তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি ছিল মৌর্য যুগের উল্লেখযোগ্য বন্দর।

5. মৌর্যোত্তর যুগে ভারতের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক বিকাশ

মৌর্য যুগের পরবর্তীকালেও বাণিজ্যের অগ্রগতি অব্যাহত ছিল।

  1. এ যুগের সাহিত্যে ‘বণিক’, ‘সার্থবাহ’, ‘শ্রেষ্ঠী’ প্রভৃতি বণিকদের উল্লেখ আছে।
  2. এ যুগে প্রথমে ‘সিল্করুট’ বা রেশমপথ ধরে এবং পরে সমুদ্রপথ ধরে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে ভারতের রেশম বাণিজ্য চলত।
  3. সুরাট, ভৃগুচ্ছ, সোপারা, কল্যাণ, কাবেরীপত্তনম, কন্যাকুমারী, তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি বন্দরের মাধ্যমে রোম ও পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চলত। রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি দুঃখ করে বলেছেন যে, “ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ফলে রোমান স্বর্ণমুদ্রা ভারতে চলে যাচ্ছে।”
  4. ভারতীয় মশলা, চাল, গম, দামি কাঠ, সুগন্ধি দ্রব্য, মসলিন, রেশম, দামি পাথর প্রভৃতি এসময় রপ্তানি হত। আর আমদানি হত খেজুর, মদ, কাচের পাত্র, সোনা, রুপা, তামা, টিন, মধু, ধূপ, কাপড় প্রভৃতি ৷

6. গুপ্ত যুগে ভারত

কৃষি ও শিল্পের অগ্রগতির পাশাপাশি গুপ্ত যুগের শান্তি ও সমৃদ্ধি বাণিজ্যের বিকাশে বিশেষ সহায়তা করেছিল। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলে রোম ভারত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বণিকরা চিন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করে। এসময় চিন, পারস্য, ইথিওপিয়া, বাইজানটাইন, সিংহল, ব্রহ্মদেশ, জাভা ও ভারত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। এই বাণিজ্যে তাম্রলিপ্ত, ভৃগুচ্ছ, কল্যাণ, কাম্বে, কাবেরীপত্তনম প্রভৃতি বন্দরগুলি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। ভারতীয় মশলা, গোলমরিচ, মুক্তো, চন্দন কাঠ, সুগন্ধি দ্রব্য, মৃগনাভি, দামি পাথর, বস্ত্র প্রভৃতি এসময় রপ্তানি হত। আমদানি হত ঘোড়া, হাতির দাঁত, তামা, নীলকান্ত মণি প্রভৃতি। গুপ্ত-পরবর্তী যুগেও বাণিজ্যের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত ছিল। অবশ্য ড. আর. এস. শর্মা, ড. ডি. এন. ঝা প্রমুখ মনে করেন যে, গুপ্ত এবং গুপ্ত পরবর্তী যুগে ভারতের বাণিজ্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

7. সুলতানি যুগে ভারতের বাণিজ্যিক বিকাশ ও অর্থনীতি

সুলতানি আমলে অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি। তবে এই সময় শিল্পের উন্নতি, নগরায়ণে= অগ্রগতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি মুদ্রা-অর্থনীতি বিকাশ প্রভৃতির ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভন্ন ধরনের ব্যাবসাবাণিজ্যের যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছিল

  1. গুজরাটের বেনে সম্প্রদায়, রাজস্থানের মাড়োয়ারি সম্প্রদায়, মুলতানি ও খোরাসানি সম্প্রদায়, মুসলি বোহরা বণিক সম্প্রদায় প্রমুখ বাণিজ্যে দক্ষ ছিল। ভ্রাম্যমাণ বণিকরা গ্রাম থেকে ফসল কিনে তা শহরে পাঠাত। ইবন বতুতা বলেছেন যে, “তিন হাজার বলদের পিঠে ত্রিশ হাজার মন শস্য চাপিয়ে তা দিল্লিতে আনা হত।”
  2. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল মুলতান, দিল্লি, সিন্ধু, কাশ্মীর, গুজরাট, বিজয়নগর, বাংলা প্রভৃতি স্থান। বৈদেশিক বাণিজ্য স্থল ও জলপথে চলত। আরব, ইরান, মিশর প্রভৃতি দেশের বণিকরা ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল।
  3. এসময় বিদেশ থেকে চন্দন কাঠ, সুগন্ধি দ্রব্য, জাফরান, কর্পূর, মশলা, ওষুধপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, মদ, কাচ, সোনা, রুপা, উন্নত মানের ঘোড়া, ক্রীতদাস প্রভৃতি ভারতে আমদানি হত। আবার ভারতীয় চাল, গম, মশলা, বস্ত্র, রেশম, শৌখিন দ্রব্য, সুগন্ধি দ্রব্য, সোনার অলংকার, দামি পাথর, ইস্পাত, নীল প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি হত।

ভারতীয় বাণিজ্যে গিল্ড বা সংঘ

প্রাচীন ও আদি-মধ্য যুগে ভারতের বিপুল সংখ্যক বণিক, শিল্পী, কারিগর প্রমুখ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে বণিক, শিল্পী, কারিগর প্রমুখ নিজেদের পৃথক পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করত। এই সংগঠনগুলি ‘গিল্ড’ (Guild) বা ‘সংঘ’ বা ‘শ্রেণি’ নামে পরিচিত ছিল।

» গিল্ডের কাজ : নিজস্ব নিয়মকানুন অনুসারে গিল্ডের কার্যকলাপ পরিচালিত হত। গিল্ড বিভিন্ন ধরনের কাজ করত।

  1. ব্যাংকের কাজ: গিল্ডগুলি বর্তমানকালের ব্যাংকের মতো স্থাবর সম্পত্তি ও নগদ অর্থ আমানত হিসেবে জমা রেখে আমানতকারীকে সুদ দিত। গিল্ড আবার জমা রাখা অর্থ সুদে অন্যকে ঋণ দিত।
  2. বাণিজ্যে অবাঞ্ছিত প্রবেশ রোধ: স্থানীয় শিল্প ও বাণিজ্যে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে গিল্ডগুলি স্থানীয় শিল্প ও বাণিজ্যকে রক্ষা করত।
  3. আর্থিক সহায়তা: গিল্ডের অসহায় সদস্যকে, অকালমৃত সদস্যের পরিবারকে গিল্ড আর্থিক সহায়তা করত।
  4. বিচারের কাজ: গিল্ডের বিচারালয়ে সদস্যদের যাবতীয় ব্যক্তিগত বিরোধ, অপরাধ ও পারিবারিক বিবাদ প্রভৃতির বিচার করে মীমাংসা করা হত।
  5. গুণমান ও মূল্যমান নির্ধারণ : গিল্ডগুলি পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে উদ্যোগ নিত।
  6. রাজস্ব প্রদান: রাজকোশে নিয়মিত রাজস্ব প্রদান করে গিল্ডগুলি রাজকীয় কাজে সহায়তা করত।
  7. সামরিক সাহায্য : রাষ্ট্রের প্রয়োজনে গিল্ডগুলি রাজাকে সামরিক সাহায্য দিত।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: