আম্বেদকর ও প্রাথমিক পর্বের দলিত আন্দোলনের মধ্যে সম্পর্ক –
ভারতে দলিত আন্দোলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন ড. বাবাসাহেব ভীমরাও রামজী আম্বেদকর (১৮২৯-১৯৫৬ খ্রি.) বা সংক্ষেপে বি. আর. আম্বেদকর। তিনি উনিশ শতকের শেষার্ধে দলিতদের মধ্যে গড়ে ওঠা সংহতিকে বিশ শতকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করেন।
আম্বেদকর ও দলিত আন্দোলন :
আম্বেদকর নিজে একজন দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত হয়ে দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত হন
[1] হিতকারিণী সভা প্রতিষ্ঠা :
আম্বেদকর তাঁর অনুগামীদের নিয়ে গঠন করেন ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা’ (১৯২৪ খ্রি.)। হিন্দুসমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন বা বহিষ্কৃত অস্পৃশ্যদের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাত থেকে রক্ষা করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।
[২] নিপীড়িত শ্রেণির সম্মেলন :
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে নাগপুরে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির নেতাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দলিতদের আন্দোলনে গতি সঞ্চার করে। ড. আম্বেদকর এই সমিতির সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। অচিরেই তিনি সমিতি থেকে ইস্তফা দেন।
[৩] ‘মনুস্মৃতি’ দাহ :
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আম্বেদকর সর্বসাধারণের ব্যবহার্য পুকুর থেকে দলিতদের জল তোলার অধিকার নিয়ে বিরাট সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে মনুস্মৃতি গ্রন্থ পুড়িয়ে দিয়ে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রে আঘাত হানেন।
[৪] সংগঠন প্রতিষ্ঠা :
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস গঠন করেন। প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে আম্বেদকর সরাসরি কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে দলিত আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।
[৫]পুনা চুক্তি :
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে দলিতদের পৃথক নির্বাচন বিধি স্বীকৃতি পেলেও গান্ধিজির অনশনের কারণে তা বাধা পায়। শেষপর্যন্ত আম্বেদকর গান্ধির সঙ্গে পুনা
চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) সম্পাদনের মাধ্যমে দলিতদের রাজনৈতিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেও স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট হন।
উপসংহার :
এভাবে পুনা চুক্তির সময়কাল পর্যন্ত দলিত আন্দোলনের সংগঠনে আম্বেদকরের ভূমিকা ছিল খুব উল্লেখযোগ্য। পুনা চুক্তির পরবর্তীকালে তাঁর উদ্যোগে দলিত অধিকার আন্দোলন আরও এগিয়ে যায়।