উত্তর: আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে সরকারি নথিপত্রের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায় —(১) এই নথিপত্রগুলি পুলিশ বা গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের দ্বারা রচিত হত বলে এই ধরনের লেখাগুলি সরকারি নীতির প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন জানাত। (২) এই ধরনের নথিপত্রে সাধারণ মানুষ বা বিদ্রোহী জনগণের মনোভাবটি অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়েছে।
আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান রূপে সরকারি নথিপত্র সীমাবদ্ধতা কি
আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্র গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই সীমাবদ্ধতাগুলি নিম্নরূপ:
১. একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি
সরকারি নথিপত্র সাধারণত শাসকের দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত হয়। এতে শাসকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত, নীতি ও কার্যক্রমের পক্ষে যুক্তি প্রদান করা হয়। ফলে সাধারণ জনগণের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে।
২. সাধারণ জনগণের তথ্যের অভাব
সরকারি নথিপত্রে সাধারণত কৃষক, শ্রমিক, নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর জীবনযাত্রার বিস্তারিত চিত্র পাওয়া যায় না। ফলে সমাজের বৃহৎ অংশের ইতিহাস যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না।
৩. সেন্সরশিপ ও বিকৃতি
ঔপনিবেশিক শাসন বা পরবর্তী সময়ে অনেক নথিপত্রে তথ্য লুকানো বা বিকৃত করা হয়েছে। বিশেষত, ব্রিটিশ শাসনের সময় অনেক তথ্য সেন্সর করা হয়েছিল, যা ঐতিহাসিক গবেষণাকে প্রভাবিত করে।
৪. নির্বাচিত বিষয়ভিত্তিক জোর
সরকারি নথিপত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয়গুলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দিকগুলি তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত হয়।
৫. উপলভ্যতার সীমাবদ্ধতা
সব নথিপত্র গবেষকদের জন্য সহজলভ্য নয়। অনেক নথি গোপন রাখা হয় বা সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
৬. স্থানীয় ভাষার নথির অভাব
অনেক নথি ইংরেজি বা শাসকগোষ্ঠীর ভাষায় লেখা, যা স্থানীয় ইতিহাস বোঝার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
৭. সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় এড়িয়ে যাওয়া
সরকারি নথিপত্রে অনেক সময় সামাজিক সংঘাত, ধর্মীয় উত্থান বা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়গুলি উপেক্ষিত হয়।
এই সীমাবদ্ধতাগুলি সত্ত্বেও, সরকারি নথিপত্র ইতিহাস চর্চার জন্য অপরিহার্য। তবে এগুলির সাথে স্থানীয় গ্রন্থ, ব্যক্তিগত ডায়েরি, সংবাদপত্র এবং মৌখিক ইতিহাসের মতো অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করলে ইতিহাসের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব।