সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা কি? | সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য কি?

 সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা

ইংরেজি empire-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘সাম্রাজ্য’। ইংরেজি empire শব্দটি লাতিন শব্দ imperium থেকে এসেছে যার অর্থ হল ‘শক্তি’ (power) বা ‘কর্তৃত্ব’ (authority)। ‘সাম্রাজ্য’ বা empire-এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সাধারণভাবে ‘সাম্রাজ্য‘ বলতে রাজতন্ত্র (Monarchy) বা অভিজাততন্ত্রের (Oligarchy) অন্তর্গত একজন সম্রাট বা সম্রাজ্ঞীর অধীনস্থ এমন বিস্তৃত ভূখণ্ড বা বিভিন্ন রাজ্যের (Kingdom) সমন্বয়ে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রকে বোঝায় যা রাজ্যের চেয়ে সুবিস্তৃত হবে, যেখানে সর্বদা বিভিন্ন জাতি বা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস থাকবে এবং সেইসব জাতি বা সম্প্রদায়কে শাসন করার উদ্দেশ্যে সম্রাটের একটি সুনির্দিষ্ট শাসন কাঠামো থাকবে। অর্থাৎ কোনো শক্তিশালী রাজতান্ত্রিক বা অভিজাততান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর অধীনস্থ সুবৃহৎ রাষ্ট্রকে ‘সাম্রাজ্য’ বলা যায়।

অন্যভাবে বলা যায়, সাম্রাজ্য হল কোনো শাসকের নেতৃত্বাধীন সেই ভৌগোলিক অঞ্চল যে অঞ্চল সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় সীমানার প্রসার ঘটায়। 3 আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, যখন কোনো ভূখণ্ডের শাসক ‘সম্রাট’ উপাধি ধারণ করেন তখন তার অধীনস্থ রাষ্ট্রকে ‘সাম্রাজ্য’ বলা যেতে পারে। ফ্রান্সের প্রথম

প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, প্রাচীনকালে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের ক্ষেত্রে যে রাজতন্ত্র বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল তা ছিল চরম রাজতন্ত্র (Absolute Monarchy)। বর্তমানকালে ইংল্যান্ডে যে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় তা হল নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র, চরম রাজতন্ত্র নয়।

নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করলেও তিনি ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘সম্রাট’ উপাধি গ্রহণ করেন। ফলে ফ্রান্স তখন সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। @ রাজনৈতিক ধারণা অনুসারে, সাম্রাজ্য বলতে ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত বিভিন্ন রাজ্য ও জাতির ঐক্যবদ্ধ একক বোঝায় যেখানে শাসনকার্য পরিচালনা করে কোনো রাজতন্ত্র (সম্রাট বা সম্রাজ্ঞী) অথবা কয়েকজনের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী।

সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে The Oxford English Reference Dictionary– তে শাসক ও শাসিতের ব্যবধানের উপর গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়েছে, “সাম্রাজ্য হল রাজনৈতিক ও সামরিক ভিত্তিতে গঠিত ভূখণ্ডে সেই জনসমষ্টি যারা সংস্কৃতিগতভাবে এবং জাতিগতভাবে শাসকগোষ্ঠীর থেকে পৃথক।”

সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য

প্রাচীনকালে গড়ে ওঠা সাম্রাজ্যগুলির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন—

Join Telegram

সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ

সাম্রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করা। সাম্রাজ্যের উত্থান এবং প্রসারে সাম্রাজ্যবাদই ছিল ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নীতি। মূলত সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করেই ইতিহাসের সুবৃহৎ সাম্রাজ্যগুলির উৎপত্তি ও প্রসার ঘটেছিল। কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনপদ, মহাজনপদ বা নগর রাষ্ট্রের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি দখল করেই সুবৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।

বৃহদায়তন

সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর বিশালায়তন। পূর্বেকার ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি দীর্ঘকাল ধরে ধারাবাহিকভাবে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করার ফলে বহু রাষ্ট্রের অবলুপ্তি ঘটে। এই অবলুপ্ত রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ড দখল করে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পায়।

চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী প্রধান শাসক

সাম্রাজ্যের প্রধান শাসক বা সম্রাট রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কখনো কখনো নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করে সাধারণ প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। রাষ্ট্র শাসনে জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য থাকে না। স্বাভাবিক কারণেই সাম্রাজ্যের জনগণের প্রতিবাদ বা বিদ্রোহ করার অধিকার সম্রাট স্বীকার করেন না।

রাজ্য জোট

সাম্রাজ্য হল কোনো একটি কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ কতগুলি রাজ্যের একটি জোট। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মৌর্য সম্রাট অশোকের আমলে ৫টি রাজ্য বা প্রদেশের সমন্বয়ে বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই পাঁচটি প্রদেশের নাম ছিল— উত্তরাপথ, 2 অবন্ডি, 3 দক্ষিণাপথ, প্রাচা ও কলিঙ্গ।

রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের উপস্থিতি

সাম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতা পরিচালিত হয় কোনো রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের দ্বারা। রাজতন্ত্র সাধারণত বংশানুক্রমিক হয়। অর্থাৎ রাজা বা সম্রাটের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী সিংহাসন লাভ করেন।

বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতির বসবাস থাকতে পারে। এর অধিকাংশই সম্রাট অর্থাৎ শাসকের জাতি থেকে আলাদা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জাতির বসবাসের কারণে সাম্রাজ্যকে কখনোই আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে এক করে দেখা ঠিক নয়।

উপাদানের বিভিন্নতা সাম্রাজ্য বিভিন্ন উপাদানের : 

সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এই উপাদানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন গোষ্ঠী, জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতি। সাম্রাজ্যের এই উপাদানগুলিতে বিভিন্নতা বা প্রভেদত্ত থাকে।

Join Telegram

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *