Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
প্রাচীন গ্রিস এবং প্রাচীন ভারতের সমাজব্যবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক স্তরভেদ ও অসাম্যের অস্তিত্ব ছিল। প্রাচীন গ্রিসে যেমন ক্রীতদাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব সেখানকার সমাজে স্বাধীন নাগরিক ও ক্রীতদাসদের মধ্যে অসাম্য সৃষ্টি করেছিল, তেমনি প্রাচীন ভারতে বর্ণ ও জাতি ব্যবস্থা সমাজে নানা বৈষম্যের সৃষ্টি করেছিল। অবশ্য প্রাচীন গ্রিস বা রোমে ক্রীতদাস বলতে যাদের বোঝানো হত, সেই অর্থে প্রাচীন ভারতে ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল না। তবে ভারতীয় সমাজে তখন ব্রাত্য, নিষাদ, পতিত ক্ষত্রিয় প্রভৃতি বিভিন্ন অচ্ছুত জাতির উত্থান ঘটেছিল। আবার বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে সামাজিক সংমিশ্রণের ফলে ভারতে রাজপুত জাতির মতো বীর যোদ্ধৃজাতিরও উদ্ভব ঘটে।
প্রাচীন গ্রিসের পরিচয়
1. সুপ্রাচীন সভ্যতা : প্রাচীন গ্রিস ছিল উন্নত সভ্যতার লীলাভূমি। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ অব্দে প্রাচীন গ্রিসে সভ্যতার সূচনা হয়। প্রাচীন গ্রিক সভ্যতাকে ভিত্তি করেই আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছে। কেননা, গ্রিক সভ্যতার পরে প্রাচীন রোমান সভ্যতা এবং পরবর্তীকালে রোমান সাম্রাজ্যের ভাঙনের পরে আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতার উৎপত্তি হয়েছে।
2. পোলিস : প্রাচীন গ্রিসের এই সভ্যতা একটিমাত্র ক্ষুদ্র দেশ বা ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ ছিল না। বিভিন্ন ছোটো ছোটো ‘পোলিস’ (Polis) বা নগর-রাষ্ট্র (City-State) নিয়ে প্রাচীন গ্রিস গড়ে উঠেছিল।
3. উত্তর ও দক্ষিণ গ্রিস : করিন্থ উপসাগর গ্রিসের মূল ভূখণ্ডকে দুইভাগে ভাগ করেছে—উত্তর গ্রিস ও দক্ষিণ গ্রিস। উত্তর গ্রিসে অবস্থিত ছিল থেসালি, এপিরাস, অ্যাকারনানিয়া, ইটোলিয়া, লোক্রিস, ডোরিস, ফোকিস, বিওসিয়া, মেগারিস, এটিকা প্রভৃতি নগর-রাষ্ট্র। দক্ষিণ গ্রিসে অবস্থিত ছিল ল্যাকোনিয়া, মেসেনিয়া, আর্কাডিয়া, এলিস, একিয়া, আর্নের্লিস, সিকিওনিয়া, করিন্থ প্রভৃতি নগর-রাষ্ট্র।
4. অন্যান্য অঞ্চল : এগুলি ছাড়া আরও বহু অঞ্চল- —ইজিয়ান সাগরের বিভিন্ন দ্বীপ, ক্রীট, এশিয়া মাইনরের পশ্চিমাংশ, ইতালির দক্ষিণাংশ, সিসিলি, সাইপ্রাস, উত্তর আফ্রিকা, স্পেন, ফ্রান্স ও কৃষ্বসাগরীয় বিভিন্ন অঞ্চল বৃহত্তর গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রুজ ক্রীতদাস ব্যবস্থাকে গ্রিক সভ্যতার মৌলিক উপাদান বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন গ্রিক কবি থিওগনিস বলেছেন যে, ‘পেঁয়াজ থেকে যেমন গোলাপের জন্ম হয় না, তেমনি নগর রাষ্ট্র। পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠা এই ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের রণনৈপুণ্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলা। স্পার্টার সামাজিক কাঠামো অন্যান্য গ্রিক নগর-রাষ্ট্রগুলি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের ছিল। এখানকার সমাজ প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল—
1. ‘স্প্যাটিয়েট’ নামে স্বাধীন নাগরিক,
2. হেলট নামে ক্রীতদাস ও
3. পেরিওকয় নামে অর্ধ-স্বাধীন প্রজা। স্পার্টার উক্ত তিনটি শ্রেণির মধ্যে বৈষম্য ছিল অত্যন্ত তীব্র।
1. নাগরিকত্ব লাভের শর্ত : স্পার্টা ছিল একটি অভিজাততান্ত্রিক নগর রাষ্ট্র। এখানকার নাগরিকত্ব লাভের প্রধান শর্ত ছিল নিজ মালিকানায় জমি থাকা। এ ছাড়া সাধারণ ভোজনালয়ের জন্য অর্থ প্রদানের সামর্থ্য এবং যৌবনে সামরিক শিক্ষাগ্রহণ ছিল নাগরিকত্ব লাভের অন্যতম শর্ত। তাই স্বাভাবিকভাবেই স্পার্টায় নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ গণতান্ত্রিক এথেন্সের চেয়ে কম ছিল।
2. নারীদের অনাগরিকত্ব : এ ছাড়া নারীরা সেদেশে নাগরিকত্ব পেত না। এর ফলে স্পার্টায় নাগরিকের সংখ্যা হেলট ও পেরিওকয়দের তুলনায় কম ছিল।
3. নাগরিকের সংখ্যা : ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্পার্টায় মাত্র ৮ হাজার নাগরিক ছিল বলে হেরোডোটাস জানিয়েছেন। ৩৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই সংখ্যা ১ হাজারে নেমে আসে বলে জানা যায়।
A. নাগরিকদের পেশা : সৈনিক হিসেবে কাজ করাই ছিল নাগরিকদের একমাত্র পেশা। প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক এই নাগরিকরা হেলটদের দিয়ে তাদের জমি চাষ করত।
স্পার্টায় হেলট নামে ক্রীতদাস শ্রেণিটি ছিল সবচেয়ে নির্যাতিত ও শোষিত শ্রেণি। ঐতিহাসিক অ্যান্ড্রুজ বলেছেন যে, স্পার্টার হেলটরা ছিল পুরোপুরি ক্রীতদাস। ডোরিয়ান বিজয়ের পূর্বেকার অধিবাসীদের বংশধর এই হেলটরা একদা দুর্দশার কবলে পড়ে দাসত্ব বরণে বাধ্য হয়েছিল। তারা সমাজের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হত। হেলটদের প্রকৃত মালিক ছিল রাষ্ট্র, তবে বাস্তবে হেলটদের ব্যাবহারিক মালিক বা প্রভু ছিল কোনো স্বাধীন নাগরিক। প্রভু হেলটদের বিক্রি করতে বা অন্যের কাছে হস্তান্তরিত করতে পারত না ঠিকই, কিন্তু প্রভুর অধীনে তাদের সীমাহীন পরিশ্রম করতে হত এবং সুতীব্র নির্যাতন ভোগ করতে হত।
A. হেলটদের কাজ : হেলটরা বিভিন্ন ধরনের কাজে নিযুক্ত হত।
1. চাষবাস : চাষবাস ছিল তাদের প্রধান কাজ।
2. সৈনিক : স্পার্টার সেনাবাহিনীতেও ট্রেনিং প্রাপ্ত বহু হেলট ছিল বলে জেনোফোেন জানিয়েছেন। স্পার্টার সুদক্ষ স্থলবাহিনী গঠিত হয়েছিল মূলত হেলটদের দ্বারাই।
3. রাষ্ট্রীয় কাজ : রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাজে হেলটদের নিযুক্ত করা হত বলে ঐতিহাসিক টড উল্লেখ করেছেন।
4. রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ : পরবর্তীকালে স্পার্টায় স্বাধীন নাগরিকের সংখ্যা কমতে থাকলে হেলটরাই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকে। তবে তারা কোনো উচ্চপদ লাভ করতে পারত না।
Photo
B. নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক : স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের সঙ্গে হেলটদের সম্পর্ক মোটেই মধুর ছিল না। হেলটরা ছিল স্পার্টার সর্বাপেক্ষা নির্যাতিত শ্রেণি।
1. হত্যালীলা : হেলটদের সর্বদা আতঙ্কে ও পদানত করে রাখার উদ্দেশ্যে স্পার্টানরা (স্প্যার্টিয়েট) মাঝেমধ্যেই নির্বিচারে হেলটদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালাত। রাতের অন্ধকারে স্পার্টার গোপন পুলিশবাহিনী নির্বিচারে হেলটদের হত্যা করত বলে অ্যারিস্টটল উল্লেখ করেছেন। স্পার্টার ম্যাজিস্ট্রেটরা হেলটদের বিরুদ্ধে বাৎসরিক যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের বিনাশ করত। সৈনিক
স্পার্টার সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে নিযুক্ত হেলটদের সামরিক শিবিরে সর্বদা নিরস্ত্র করে রাখা হত এবং তাদের রীতিমতো পাহারা দেওয়া হত।
3. মার্শাল ল : হেলটদের বিদ্রোহ অঙ্কুরে বিনাশ করার জন্য ইফর নামে স্পার্টার উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা ‘মার্শাল ল‘ জারি করতেন। সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে হেলটরা মাঝেমধ্যেই বিদ্রোহের পথে পা বাড়াত। অবশেষে ৪৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি বড়ো ধরনের হেলট বিদ্রোহের ফলেই স্পার্টার পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
[su_note note_color=”#edf02b”]বংশগতভাবে গ্রিক জাতিভুক্ত স্পার্টার পেরিওকয় শ্রেণির সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ছিল সেখানকার স্বাধীন নাগরিক ও হেলটদের মধ্যবর্তী স্তরে। পেরিওকয়রা স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের বসতির নিকটবর্তী অঞ্চলেই বসবাসের অধিকার পেয়েছিল। সম্ভবত নিজেদের আত্মরক্ষার কথা ভেবে এবং ক্রীতদাস হেলটদের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব ও ব্যবধান বজায় রাখতে নাগরিকরা তাদের নিকটবর্তী অঞ্চলে পেরিওকয়দের বসবাসের অধিকার দিয়েছিল। এজন্য ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট বলেছেন যে, ‘পেরিওকয়রা ভৌগোলিকভাবে স্পার্টানদের বেষ্টন করে রেখেছিল এবং সামাজিক দিক থেকে তারা স্পার্টান ও হেলটদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করত।’ স্পার্টার নগর রাষ্ট্র সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার পেরিওকয়ের বসবাস ছিল যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ৷[/su_note]
A. পেরিওকয়দের কাজ :
1. নানাবিধ কার্য সম্পাদন : পেরিওকয়রা শাসকগোষ্ঠীর রাজকীয় জমিজমা চাষ করত, শিল্পোৎপাদন ও বাণিজ্যের কাজ সম্পন্ন করত। পেরিওকয়রা রাষ্ট্রের কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য-সংক্রান্ত কাজগুলি সম্পন্ন করার ফলে স্বাধীন নাগরিকরা নিশ্চিন্তে রাষ্ট্রের রাজনীতি ও প্রশাসনে পূর্ণ সময় ব্যয় করতে পেরেছিল।
2. সেনাবাহিনীতে নিয়োগ : পেরিওকয়রা নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে স্পার্টার সেনাবাহিনীতে কাজ করারও সুযোগ পেয়েছিল। ফিনলে বলেছেন যে, স্পার্টার সেনাবাহিনীতে স্বাধীন নাগরিক ও পেরিওকয়দের সংখ্যা প্রায় সমান ছিল।
পেরিওকয়দের সঙ্গে স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের মোটামুটি সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
অবশ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেরিওকয়রা স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের দ্বারা বৈষম্যের শিকারও হত।
1. শোষণ : তারা নানাভাবে শাসকগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়েছিল। পেরিওকয়দের হাতে থাকা কৃষিজমিগুলি ছিল নাগরিকদের জমির তুলনায় খুবই অনুর্বর।
2. করের বোঝা : তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে সর্বদা তাদের দুর্বল করে রাখার চেষ্টা চলত।
3. অধিকার বঞ্চিত : তারা স্পার্টায় রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার লাভে বঞ্ছিত ছিল।
4. সামাজিক সম্পর্কহীনতা : স্পার্টার স্বাধীন নাগরিকদের সঙ্গে পেরিওকয়দের কোনো সামাজিক সম্পর্কও গড়ে ওঠেনি। তারা নাগরিকদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারত না।
5. অনাগরিক : স্পার্টার পেরিওকয়রা এথেন্সের মেটিকদের সমপর্যায়ভুক্ত ছিল। কিন্তু মেটিকরা এথেন্সে স্বাধীন নাগরিক শ্রেণিতে উন্নীত হতে পারলেও পেরিওকয়রা স্পার্টায় তা পারত না। তা সত্ত্বেও পেরিওকয়রা স্পার্টানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়নি। ঐতিহাসিক ফিনলে বলেছেন যে, ‘স্পার্টানদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তারা বুদ্ধিমানের কাজ করেছিল। কেন-না, স্পার্টা তাদের শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিয়েছিল।’
File Details | Description |
---|---|
PDF Name | প্রাচীন গ্রিসের দাস ব্যবস্থা |
Language | Bengali |
File Size | 58 KB |
No. of Pages | 01 |
Download Link | Click Here To Download |