WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

টলেমি বংশের অসাধারণ নারী ক্লিওপেট্রা।



Digital বোর্ড: বিষয়বস্তু ✦ show

ক্লিওপেট্রা

 গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের মৃত্যুর ( ৩২৩ খ্রি . পূ)   পর তার জনৈক সেনাপতি মিশরের ক্ষমতা দখল করে সেখানে টলেমি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন । এই বংশের অন্যতম রাজকন্যা ছিলেন ক্লিওপেট্রা । প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাসে বিরল যে কয়েকজন নারী নিজ প্রতিভাগুণে কিংবদন্তির পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মিশরের টলেমি বংশের শেষ শাসক সপ্তম ক্লিওপেট্রা , যিনি শুধু ক্লিওপেট্রা নামেই ইতিহাসে সমধিক প্রসিদ্ধ । 

পরিচয় : (1) সুন্দরী , শিক্ষিতা ও বুদ্ধিদীপ্ত : দ্বাদশ টলেমির কন্যা ক্লিওপেট্রা ৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন অসামান্য সুন্দরী , উচ্চশিক্ষিতা এবং অসাধারণ বিচক্ষণ ও বুদ্ধিদীপ্ত নারী । তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে মিশরের সিংহাসনে বসেন । (2) চারিত্রিক ত্রুটি: বারংবার বল্গাহীন প্রেমের জোয়ারে ভেসে ক্লিওপেট্রা নিজেকে কলুষিত করেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন । সুমধুর কণ্ঠস্বরের অধিকারিণী ক্লিওপেট্রার জীবনে বিভিন্ন সময়ে বহু পুরুষের আগমন ঘটেছে এবং প্রচণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষী ক্লিওপেট্রা ক্ষমতার মােহে নিজের সৌন্দর্যকে বারবার ব্যবহার করেছেন । এজন্য ক্লিওপেট্রার নিন্দা করে তাঁকে রােমান কবি হােরাস ‘ পাগল ’ এবং লুকান ‘ মিশরের লজ্জা ’ বলে অভিহিত করেছেন । (3 ) সীমাহীন দক্ষতা ; তবে রাষ্ট্রনীতিতে তার দক্ষতা ও মাতৃভূমির প্রতি তার ভালােবাসা ছিল প্রশ্নাতীত । (4)সিংহাসন লাভ ; মিশরের শাসনব্যবস্থায় প্রচলিত রীতি ছিল যে , একাকী নয় , কোনাে সঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে মিশরের শাসন পরিচালনার কাজ করতে হবে।( 1) অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা প্রথম জীবনে তার পিতা দ্বাদশ

টলেমির সহ –শাসক হিসেবে মিশরের শাসন পরিচালনা করেন।(2) পিতার মৃত্যুর পর মিশরের সিংহাসনে নিজের

মহারানী ক্লিওপেট্রা

আধিপত্য সুনিশ্চিত করার জন্য তিনি তার চেয়ে বয়সে । ৮ বছরের ছােটো ভাই ত্রয়ােদশ টলেমিকে বিবাহ করেন । এভাবে ক্লিওপেট্রা মিশরের শাসন ক্ষমতা দখল করেন । | রােমে আগমন : ক্লিওপেট্রা মিশরের সিংহাসনে বসার । তিন – চার বছরের মধ্যেই রােমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার  ৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশর অভিযান করেন । যুদ্ধে জুলিয়াস সিজারের কাছে মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা পরাজিত হন । এবং তাঁর স্বামী তথা ভ্রাতা ত্রয়ােদশ টলেমির মৃত্যু হয় । এরপর পরাজিত ক্লিওপেট্রাকে রােমে নিয়ে আসা হয় । জুলিয়াস সিজারের কাছে পরাজয় বরণের পর অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ক্লিওপেট্রা নিজেকে প্রাচ্যদেশীয় কার্পেটে মুড়িয়ে সিজারের সামনে স্বয়ং উপঢৌকন হিসেবে উপস্থিত হন । © ক্লিওপেট্রা – জুলিয়াস সিজারের প্রণয় : রােমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ক্লিওপেট্রার অপরূপ সৌন্দর্য ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হন । ফলে শীঘ্রই ক্লিওপেট্রা ও জুলিয়াস সিজারের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । এরপর জুলিয়াস সিজার তাকে মিশরের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং ক্লিওপেট্রা রােমে অবস্থান করেই মিশরের শাসন পরিচালনা করতে থাকেন । এদিকে সম্রাট জুলিয়াস সিজার বিবাহিত হলেও তিনি ক্লিওপেট্রার সঙ্গে রােমে স্বামী – স্ত্রীর মতােই একসঙ্গে বসবাস করতে থাকেন । এসময় ব্রুটাস নামে এক আততায়ী কিছুদিনের মধ্যেই সিজারকে হত্যা করেন ( ৪৪ খ্রি.পূ. ) । » মিশরে প্রত্যাবর্তন : 0 চতুর্দশ টলেমিকে বিবাহ : রােমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার নিহত হলে ক্লিওপেট্রা রােম থেকে মিশরে ফিরে আসেন এবং তাঁর অপর ভাই চতুর্দশ টলেমিকে নামেমাত্র বিবাহ করে মিশরের শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে নেন । @ চতুর্দশ টলেমিকে হত্যা এর এক বছরের মধ্যেই স্বামী তথা ভ্রাতা চতুর্দশ



টলেমিকে হত্যা করে ক্লিওপেট্রা জুলিয়াস সিজারের । ঔরসজাত সন্তান পঞ্চদশ টলেমির ( সিজারিয়ন ) সঙ্গে । যৌথভাবে মিশর শাসন করতে শুরু করেন । (3 )অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা বিৰাই : জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর কয়েক বছর পর তারই বন্ধু ও রােমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনি মিশর অভিযান করেন । কিন্তু তিনিও শীঘ্রই ক্লিওপেট্রার প্রেমে আবদ্ধ হয়ে পড়েন । অ্যান্টনি মিশরের সিংহাসন লাভের উদ্দেশ্যে ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ ( ৩৬ খ্রি.পূ. ) করেন । মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে এহেন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ক্লিওপেট্রা মিশরের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করেন । 

অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধ : (1) অক্টাভিয়াসের ক্ষোভ : অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রার বিবাহের ঘটনায় জুলিয়াস সিজারের পরবর্তী রােমান শাসক অক্টাভিয়াস অত্যন্ত কুদ্ধ হন , কেননা , অ্যান্টনি ইতিপূর্বে অক্টাভিয়াসের বােন অক্টাভিয়া মাইনরকে বিবাহ করেছিলেন । মিশর আক্রমণ : কুদ্ধ অক্টাভিয়াস মিশর আক্রমণ করে অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রার নৌবহর ধ্বংস করেন এবং মিশরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন । ক্লিওপেট্রা অক্টাভিয়াসের বাহিনীকে প্রতিরােধের চেষ্টা করেও অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে কিছুটা বিপর্যয়ে পড়ে সৈন্যদল নিয়ে পিছিয়ে আসেন। (3) মিশরের পরাজয়:  এই অবস্থায় অ্যান্টনি সেনাদল ফেলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান । এভাবে অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে রােমান বাহিনী চূড়ান্ত জয়লাভ করে ( ৩১ খ্রি.পূ. ) । মিশরের স্বাধীনতা রক্ষায় ক্লিওপেট্রার প্রয়াস অপরাহের সূর্য হয়ে শীঘ্রই পশ্চিম আকাশে অস্তমিত হয় । পরাজিত মিশরের স্বাধীনতা লুপ্ত হলে মিশর রােমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে পরিণত হয় ।

আত্মহত্যা :(1) ক্লিওপেট্রাকে বিবাহের চেষ্টা : বিজয়ী । রােমান সম্রাট অক্টাভিয়াস মিশরের পরাজিত রানি । | ক্লিওপেট্রার সন্তান তথা জুলিয়াস সিজারের ঔরসজাত । পঞ্চদশ টলেমিকে এবং মার্ক অ্যান্টনির ঔরসজাত । আলেকজান্ডার হেলিয়সকে হত্যা করেন । এরপর তিনি । ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করার উদ্যোগ নেন ।

  মর্মাঘাত: কিন্তু আজীবন একের পর এক ঘাত – প্রতিঘাতে বিধ্বস্ত ক্লিওপেট্রার মন কাচের মতােই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল । সন্তান ও প্রণয়ীদের হারিয়ে তিনি প্রচণ্ড শােকাহত হয়ে পড়েছিলেন । তাই জীবনের প্রতি তাঁর ভালােবাসা ফুরিয়ে এসেছিল । তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে , ভালােবাসাহীন হাজার বছর বাঁচার চেয়ে ভালােবাসা ভরা একটি মুহূর্ত পরে মৃত্যুও ভালাে ।  আত্মহত্যা : তাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এবং অক্টাভিয়াসকে বিবাহে অসম্মত ক্লিওপেট্রা মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ‘ অ্যাসপ ’ নামে তীব্র বিষাক্ত সাপের কামড়ে আত্মহত্যা করেন ( ১২ আগস্ট , ৩০ খ্রি.পূ. ) । অ্যান্টনি নিজের তরবারির আঘাতে আত্মহত্যা করেন । বর্তমান মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে ক্লিওপেট্রার মৃতদেহ সমাহিত করা হয় । রােমান লেখক প্লুটার্ক উল্লেখ করেছেন যে , ক্লিওপেট্রার সঙ্গে অ্যান্টনির দেহও সেখানে সমাধি দেওয়া হয় । 

কৃতিত্ব : ক্লিওপেট্রা তার রাজত্বকালে নানা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন— (1)প্রাচীন যুগের একজন নারী হয়েও শাসন ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে তিনি পুরুষদের বিরুদ্ধে শাসন লড়াই – এ অবর্তীন হন । (2) যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেন । (3) মিশরের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তাঁর অনুরাগ ও প্রয়াস ছিল সম্পূর্ণ আন্তরিক । খ্রিস্টপূর্ব যুগের এক নারী হয়েও ঘটনাবহুল জীবনের জন্য ক্লিওপেট্রা বর্তমান যুগেও আলােচনার কেন্দ্রবিন্দু । বিশ্ব জুড়ে ইতিহাসের হাজারাে রহস্যের উন্মােচন হলেও ক্লিওপেট্রা যেন আজও রহস্যময়ী হয়েই থেকে গিয়েছেন । ‘চেয়ে সব কিছুই পাওয়া এবং চেয়ে কিছুই না পাওয়া’– যদি দুটোই জীবনের চরম ট্র্যাজেডি হয় , তবে ক্লিওপেট্রা জীবন নাটকের রঙ্গমঞে আজীবন সেই চরম ট্রাজেডির নায়িকা । এই নায়িকাকে নিয়ে যুগে যুগে তৈরি হয়েছে বহু কল্পকাহিনি , নানা ভাস্কর্য , অঙ্কিত হয়েছে নানা চিত্র । উইলিয়াম শেকসপিয়র রচিত কালজয়ী নাটক ‘ অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা ’ এবং জর্জ বার্নার্ড শ রচিত নাটক ‘ সিজার ক্লিওপেট্রা তাঁকে নিয়েই রচিত হয়েছে । ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন হেনরি হ্যাগার্ড , ড্রাইডেন প্লুটার্ক , ড্যানিয়েল ও আরও অনেকে ।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me:

2 thoughts on “টলেমি বংশের অসাধারণ নারী ক্লিওপেট্রা।”

Comments are closed.