স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Rate this post

বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা

বাংলা ভাষা একটি সমৃদ্ধ এবং প্রাচীন ভাষা, যার বর্ণমালা স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা গঠিত। প্রতিটি বর্ণের নিজস্ব উচ্চারণ, ভূমিকা এবং ব্যবহার রয়েছে। বাংলা ভাষার বর্ণমালার এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি?

স্বরবর্ণের সংখ্যা ও বৈশিষ্ট্য:

স্বরবর্ণ হলো বর্ণমালার সেই অক্ষরগুলো, যেগুলো স্বতন্ত্রভাবে উচ্চারণ করতে পারে এবং অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়াই একটি ধ্বনি তৈরি করতে পারে। বাংলা ভাষায় মোট ১১টি স্বরবর্ণ রয়েছে। স্বরবর্ণগুলো হল:

এই ১১টি স্বরবর্ণ বাংলা ভাষার মৌলিক স্বরধ্বনি তৈরি করে। এগুলোর মাধ্যমে বাক্যাংশে বিভিন্ন শব্দের সঠিক উচ্চারণ এবং অর্থের পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়।

স্বরবর্ণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অন্য কোনো ধ্বনির ওপর নির্ভরশীল নয়। এটি নিজস্ব উচ্চারণ ক্ষমতা দ্বারা ধ্বনি সৃষ্টি করে এবং এককভাবে শব্দ গঠন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “অ” এবং “ই” স্বরবর্ণের সাহায্যে “অই” শব্দটি তৈরি হয়।

ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ও বৈশিষ্ট্য:

ব্যঞ্জনবর্ণ হলো বর্ণমালার সেই অক্ষরগুলো, যেগুলো একা একা উচ্চারণ করা যায় না; এগুলোকে সঠিক উচ্চারণের জন্য স্বরবর্ণের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাংলা ভাষায় মোট ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। ব্যঞ্জনবর্ণগুলো হল:

  • ক, খ, গ, ঘ, ঙ
  • চ, ছ, জ, ঝ, ঞ
  • ট, ঠ, ড, ঢ, ণ
  • ত, থ, দ, ধ, ন
  • প, ফ, ব, ভ, ম
  • য, র, ল
  • শ, ষ, স, হ
  • য়, ড়, ঢ়
  • ক্ষ, জ্ঞ

ব্যঞ্জনবর্ণের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো একা উচ্চারিত হতে পারে না। প্রতিটি ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের জন্য একটি স্বরবর্ণের সাহায্য প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ, “ক” উচ্চারণের জন্য “অ” স্বরবর্ণের সঙ্গে মিশে “কা” শব্দ তৈরি হয়।

ব্যঞ্জনবর্ণগুলো বাক্য গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে এবং শব্দের উচ্চারণের ধ্বনিগত গঠন নির্ধারণ করে। বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণের প্রয়োজনীয়তা স্বরবর্ণের সমান, কারণ সঠিক শব্দ গঠন এবং বাক্য তৈরি করতে ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহার অপরিহার্য।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে পার্থক্য কী?

স্বরবর্ণব্যঞ্জনবর্ণ বাংলা ভাষার বর্ণমালার দুটি মূল উপাদান। তাদের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ:

Join Telegram

১. উচ্চারণ ক্ষমতা:

  • স্বরবর্ণ: স্বরবর্ণ এককভাবে উচ্চারিত হতে পারে। অন্য কোনো বর্ণের সাহায্য ছাড়াই এটি পূর্ণ ধ্বনি তৈরি করতে সক্ষম। উদাহরণ: অ, আ, ই, উ।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনবর্ণ একা একা উচ্চারণ করা যায় না। এটি উচ্চারণের জন্য স্বরবর্ণের সাহায্য প্রয়োজন। উদাহরণ: ক, গ, ট, ম।

২. সংখ্যা:

  • স্বরবর্ণ: বাংলা ভাষায় মোট ১১টি স্বরবর্ণ রয়েছে।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: বাংলা ভাষায় মোট ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে।

৩. ধ্বনি প্রকৃতি:

  • স্বরবর্ণ: স্বরবর্ণ সরাসরি মুখগহ্বর থেকে নির্গত হয়, যেখানে কোনো বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না। এরা মৃদু ধ্বনি তৈরি করে।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণের সময় মুখ, জিহ্বা বা দাঁতের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, ফলে শক্তিশালী ধ্বনি তৈরি হয়।

৪. ব্যবহার:

  • স্বরবর্ণ: শব্দের মূলত ধ্বনিগত অংশ বা স্বর তৈরি করে এবং এককভাবে শব্দ গঠন করতে সক্ষম।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনবর্ণ সাধারণত শব্দের শুরুর অংশে বা মাঝের অংশে বসে এবং স্বরবর্ণের সঙ্গে মিলে সম্পূর্ণ ধ্বনি বা শব্দ গঠন করে।

৫. প্রয়োজনীয়তা:

  • স্বরবর্ণ: স্বরবর্ণ একা একা শব্দ গঠন করতে পারে এবং অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: ব্যঞ্জনবর্ণ একা শব্দ গঠন করতে পারে না, এটি স্বরবর্ণের সহযোগিতা ছাড়া পূর্ণ উচ্চারণ সম্ভব নয়।

এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ একে অপরের পরিপূরক। তবে তাদের ভূমিকা আলাদা, এবং একসঙ্গে তারা শব্দ এবং বাক্য গঠনে সাহায্য করে।

কোনো নির্দিষ্ট বর্ণ স্বরবর্ণ না ব্যঞ্জনবর্ণ তা কীভাবে বুঝবেন?

কোনো বর্ণ স্বরবর্ণ না ব্যঞ্জনবর্ণ তা বুঝতে হলে আপনাকে এই দুইটি ধরণের বর্ণের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে।

  • স্বরবর্ণ: এই বর্ণগুলি কোনো অন্য বর্ণের সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হয়। যেমন, “আ”, “ই”, “উ” ইত্যাদি।
  • ব্যঞ্জনবর্ণ: এই বর্ণগুলি কোনো স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া পূর্ণরূপে উচ্চারিত হয় না। যেমন, “ক”, “খ”, “গ” ইত্যাদি।

কোনো বর্ণ স্বরবর্ণ কি না তা বুঝার সহজ উপায়:

  • আপনি যদি কোনো বর্ণকে একা করে উচ্চারণ করতে পারেন এবং সেটি একটি পূর্ণ শব্দ বলে মনে হয়, তাহলে সেটি স্বরবর্ণ।
  • যেমন, “আ” উচ্চারণ করলে সেটি একটি পূর্ণ শব্দ বলে মনে হয়। কিন্তু “ক” উচ্চারণ করলে সেটি অসম্পূর্ণ শব্দ বলে মনে হয়।

কোনো বর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ কি না তা বুঝার সহজ উপায়:

  • আপনি যদি কোনো বর্ণকে একা করে উচ্চারণ করতে পারেন এবং সেটি একটি পূর্ণ শব্দ বলে মনে না হয়, তাহলে সেটি ব্যঞ্জনবর্ণ।
  • যেমন, “ক” উচ্চারণ করলে সেটি অসম্পূর্ণ শব্দ বলে মনে হয়। কিন্তু “ক” এর সাথে কোনো স্বরবর্ণ যোগ করলে, যেমন “কা”, তখন সেটি একটি পূর্ণ শব্দ হয়ে ওঠে।

উদাহরণ:

  • “আ” – স্বরবর্ণ
  • “ক” – ব্যঞ্জনবর্ণ
  • “ই” – স্বরবর্ণ
  • “খ” – ব্যঞ্জনবর্ণ

অন্য একটি উপায়:

  • আপনি বাংলা বর্ণমালার একটি তালিকা দেখে নিজে নিজে চিহ্নিত করতে পারেন যে কোন বর্ণ স্বরবর্ণ এবং কোনটি ব্যঞ্জনবর্ণ।

এছাড়াও:

  • বাংলা ভাষার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আপনি বিভিন্ন বই বা অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনি কোনো বাংলা শিক্ষকের কাছ থেকেও সাহায্য নিতে পারেন।

উপসংহার:

বাংলা ভাষার বর্ণমালা দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে বিভক্ত: স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ। স্বরবর্ণের সংখ্যা ১১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৯টি। এই দুটি বর্ণের সম্মিলনে বাংলা ভাষায় সঠিক শব্দ এবং বাক্য তৈরি হয়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের এই সমন্বিত গঠন বাংলা ভাষাকে ধ্বনিগতভাবে সমৃদ্ধ করেছে এবং এর লিপির সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করেছে।

ক থেকে ঁ পর্যন্ত

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি

বাংলা বর্ণমালায় স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা পৃথকভাবে গণনা করা হয়:
স্বরবর্ণ: বাংলা ভাষায় ১১টি স্বরবর্ণ রয়েছে। এগুলো হলো:
অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
ব্যঞ্জনবর্ণ: বাংলা ভাষায় ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে। এগুলো হলো:
ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, য়, ড়, ঢ়, এবং চিহ্নযুক্ত (ক্ষ, জ্ঞ)।
মোটামুটি এটাই বাংলা ভাষার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা।

Leave a Comment