WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

অপিনিহিতি কাকে বলে

অপিনিহিতি হল বাংলা ভাষার একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন। সহজ করে বললে, এটি হল একটি শব্দের মধ্যে ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনির অবস্থান পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।

বিস্তারিত:

  • শব্দমধ্যস্থ ‘ই’ বা ‘উ’: কোনো শব্দের মধ্যে যদি ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনি থাকে, তাহলে সাধারণত সেটি একটি ব্যঞ্জনবর্ণের পরে অবস্থান করে।
  • অবস্থান পরিবর্তন: অপিনিহিতিতে এই ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনি তার নিজের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে একটু আগে চলে যায় এবং পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে মিশে যায়।
  • ধ্বনি পরিবর্তন: এই অবস্থান পরিবর্তনের ফলে শব্দের উচ্চারণে একটি নতুন ধ্বনি তৈরি হয়।

উদাহরণ:

  • করিয়া -> কইরা
  • রাখিরা -> রাইখ্যা
  • আজি -> আইজ

কেন হয় অপিনিহিতি?

অপিনিহিতি সাধারণত উচ্চারণের সুবিধার জন্য হয়। দ্রুত উচ্চারণ করার সময় এই ধরনের পরিবর্তন ঘটে।

JOIN NOW

কোথায় দেখা যায়?

অপিনিহিতি বাংলা ভাষার কথ্য রূপে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের কথ্য ভাষায় এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।

অপিনিহিতির গুরুত্ব:

  • ভাষার প্রাকৃতিক পরিবর্তন: অপিনিহিতি ভাষার একটি প্রাকৃতিক পরিবর্তন।
  • কথ্য ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য: এটি বাংলা ভাষার কথ্য রূপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
  • সাহিত্যে ব্যবহার: অনেক কবি ও সাহিত্যিক কথ্য ভাষার এই বৈশিষ্ট্যকে তাদের লেখায় ব্যবহার করেছেন।

সারসংক্ষেপ:

অপিনিহিতি হল বাংলা ভাষার একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন যেখানে শব্দমধ্যস্থ ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনি তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে আগে চলে যায় এবং পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে মিশে যায়। এই ধরনের পরিবর্তন উচ্চারণের সুবিধার জন্য হয় এবং বাংলা ভাষার কথ্য রূপে বেশি দেখা যায়।


অপিনিহিতি কাকে বলে বিস্তারিত

অপিনিহিতি হল একটি ধ্বনি পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যা বাংলা ভাষার ধ্বনিতত্ত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। এটি একটি জটিল ধারণা, তাই আমি এটি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করব:

  1. সংজ্ঞা: অপিনিহিতি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি শব্দের মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি লোপ পায় এবং তার পরিবর্তে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে পরবর্তী ব্যঞ্জনের যোগ ঘটে।
  2. প্রক্রিয়া: এই প্রক্রিয়ায় দুটি ব্যঞ্জনের মাঝে থাকা স্বরধ্বনি লোপ পায় এবং সেই দুটি ব্যঞ্জন একত্রিত হয়ে যুক্তাক্ষর গঠন করে।
  3. উদাহরণ:
  • “করিয়া” → “কর্য়া” → “কৈরা”
  • “লইয়া” → “লয্য়া” → “লৈয়া”
  1. ফলাফল: এই প্রক্রিয়ার ফলে নতুন স্বরধ্বনি (যেমন ঐকার) উৎপন্ন হয় এবং শব্দের আকার সংক্ষিপ্ত হয়।
  2. ব্যবহার: অপিনিহিতি প্রক্রিয়া প্রায়শই চলিত বাংলায় দেখা যায়, বিশেষত ক্রিয়াপদের ক্ষেত্রে।
  3. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: এই প্রক্রিয়াটি বাংলা ভাষার ক্রমবিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এর মাধ্যমে ভাষার উচ্চারণ ও বানান পরিবর্তনের ধারা বোঝা যায়।
  4. ভাষাতাত্ত্বিক গুরুত্ব: অপিনিহিতি প্রক্রিয়া বাংলা ভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বিবর্তনের একটি মূল উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই সম্পর্কে আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য প্রদান করছি:

  1. শব্দের উৎপত্তি:
    ‘অপিনিহিতি’ শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে। ‘অপি’ মানে ‘মধ্যে’, ‘নি’ মানে ‘নীচে’ বা ‘অন্তর্গত’, এবং ‘হিত’ মানে ‘স্থাপিত’। তাই এর আক্ষরিক অর্থ হল ‘মধ্যে নীচে স্থাপিত’।
  2. অন্যান্য ভাষায় সমতুল্য প্রক্রিয়া:
    ইংরেজিতে এই ধরনের ধ্বনি পরিবর্তনকে ‘syncope’ বলা হয়।
  3. অপিনিহিতির প্রকারভেদ:
    ক) পূর্ণ অপিনিহিতি: যেখানে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি সম্পূর্ণ লোপ পায়।
    খ) আংশিক অপিনিহিতি: যেখানে মধ্যবর্তী স্বরধ্বনি আংশিকভাবে পরিবর্তিত হয়।
  4. অপিনিহিতির প্রভাব:
  • শব্দের দৈর্ঘ্য কমে যায়।
  • উচ্চারণ সহজ হয়।
  • নতুন ধ্বনির উৎপত্তি ঘটে।
  1. বাংলা সাহিত্যে ব্যবহার:
    অপিনিহিতি প্রক্রিয়া প্রায়শই লোকসাহিত্য, গান, এবং আঞ্চলিক সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়, যা ভাষাকে আরও সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলে।
  2. ব্যাকরণগত প্রভাব:
    অপিনিহিতি শুধু উচ্চারণেই নয়, কখনও কখনও লিখিত রূপেও প্রভাব ফেলে, যা ভাষার ব্যাকরণগত নিয়মে পরিবর্তন আনে।
  3. ঐতিহাসিক বিবর্তন:
    প্রাচীন বাংলা থেকে আধুনিক বাংলায় উত্তরণের প্রক্রিয়ায় অপিনিহিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি?

JOIN NOW

Leave a Comment