এল নিনো এবং লা নিনা হলো প্রশান্ত মহাসাগরের জলবায়ু চক্রের দুটি বিপরীত অবস্থা, যা বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই দুটি ঘটনা সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তনের সাথে জড়িত।
স্বাভাবিক অবস্থা:
সাধারণত, প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব (দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল) অংশে ঠান্ডা জল এবং পশ্চিম (অস্ট্রেলিয়ার উপকূল) অংশে উষ্ণ জল থাকে। এই তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে বায়ুপ্রবাহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহ ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমি বায়ুকেও প্রভাবিত করে। এই স্বাভাবিক অবস্থায়, ভারতীয় মহাসাগরে উচ্চ চাপ সৃষ্টি হয়, যা ভারতে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি নিয়ে আসে।
লা নিনা (La Niña): শীতল প্রভাব
লা নিনা হলো এই স্বাভাবিক অবস্থার একটি তীব্র রূপ। এই সময়, পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের জল আরও ঠান্ডা হয়ে যায়, যা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটায়। বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন যে ২০২৪ সালে লা নিনার প্রভাবে ভারতে শীত আরও তীব্র হবে এবং তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। কিন্তু ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, লা নিনার প্রভাব তেমন জোরালো নয়, তাই শীতের তীব্রতা প্রত্যাশার তুলনায় কম।
লা নিনার প্রভাবগুলি হলো:
- ভারতে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি (সাধারণত)
- কিছু অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত
- অন্যান্য অঞ্চলে খরা
এল নিনো (El Niño): উষ্ণ প্রভাব
এল নিনোর ক্ষেত্রে, পরিস্থিতি বিপরীত হয়। পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের জল উষ্ণ হয়ে যায়। এর অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে প্রধান কারণ হলো শীতল জলের স্রোত এবং বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে, নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ জল একদিকে সরে যায় এবং মেরু অঞ্চল থেকে ঠান্ডা জল তার স্থান দখল করে। কিন্তু যখন প্রতি-নিরক্ষীয় স্রোত শক্তিশালী হয়, তখন এটি ঠান্ডা জলকে ঠান্ডা থাকতে দেয় না, ফলে পরিস্থিতি বদলে যায়। তখন বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয় এবং ভারত, আফ্রিকা সহ সারা বিশ্বে উষ্ণতার প্রভাব দেখা যায়। যেখানে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেখানে হয় না।
এল নিনোর প্রভাবগুলি হলো:
- বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি
- কিছু অঞ্চলে খরা এবং দাবানল
- অন্যান্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি এবং বন্যা
পূর্বাভাসের ভুল:
বক্তা উল্লেখ করেছেন যে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন যে প্রশান্ত মহাসাগরের ঠান্ডা জল যথেষ্ট পরিমাণে উপরে এসেছে এবং এর ফলে লা নিনার প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। কিন্তু গত দুই মাসে এই ঠান্ডা জলের তীব্রতা কমে গেছে। তাই জলবায়ু বিজ্ঞানীরা চিন্তিত, কারণ তাদের আগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে লা নিনার যে প্রভাব দেখা যাওয়ার কথা ছিল, তা তেমন দেখা যাচ্ছে না।
উপসংহার:
সংক্ষেপে, এল নিনো এবং লা নিনা প্রশান্ত মহাসাগরের স্থানীয় ঘটনা হলেও এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। এটি বায়ুপ্রবাহ এবং তাপমাত্রার বণ্টনে পরিবর্তন আনে, যার ফলে বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য আবহাওয়ার ধরনেও পরিবর্তন আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, এই ঘটনাগুলির পূর্বাভাস আরও জটিল হয়ে উঠেছে।