WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

কে বাঁচায় কে বাঁচে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা 2024| Ke bachay ke bache Manik Bandopadhyay HS bengali 2024



কে বাঁচায় কে বাঁচে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা 2024| Ke bachay ke bache Manik Bandopadhyay HS bengali 2024

উচচমাধ্যমিক বাংলা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় -এর লেখা ল, 2024 Higher secondary Bengali exam এর জন্য একটি খুব গুরু্বপূর্ণ গল্প Ke bachay ke bache Manik Bandopadhyay এর গল্পটি।

এই ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের  (WBCHSE) এর জন্য গুরত্বপূর্ণ MCQ, SAQ, ও বড় প্রশ্নের উত্তরসহ নিচে দেওয়া হল।

‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ MCQ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ও উত্তর 

1. “সে জবাবে বলল অন্য কথা।”- ‘সে’ হল-

(ক) নিখিল,
(গ) টুনুর মা,
(খ) মৃত্যুঞ্জয়,
(ঘ) মৃত্যুদ্বয়ের জনৈক সহকর্মী

উত্তর: (খ) মৃত্যুঞ্জয়

2)……..চেয়ে ছোঁয়াচে কিছুই নেই এ জগতে।’ কীসের চেয়ে?

(ক) ক্ষুধার,
(গ) মৃতদেহের,
(খ) দরদের,
(ঘ) প্রেমের

উত্তর: (খ) দরদের

3)”বিক্ষুব্ধ চিত্তে এই সব কথা ভাবতে ভাবতে” –

(ক) মৃতুঞ্জয় টাকাগুলো টেবিলে রাখল
(খ) টুনুর মা বিছানা নিল
(গ) নিখিল সংবাদপত্রটি তুলে নিল
(ঘ) মৃত্যুঞ্জয় ঘরে এসে বসল

উত্তর: (গ) নিখিল সংবাদপত্রটি তুলে নিল

4) নিখিলকে প্রতিমাসে কিছু কিছু টাকা পাঠাতে হয়–
(ক) দুই জায়গায়,
(গ) চার জায়গায়,
(খ) তিন জায়গায়,
(ঘ) পাঁচ জায়গায়

উত্তর: (খ) তিন জায়গায়

5) আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম কী দেখল? –
(ক) ফুটপাথে মৃত্যু,
(গ) বস্তিবাসীর মৃত্যু,
(খ) অনাহারে মৃত্যু,
(ঘ) পাগলের মৃত্যু

উত্তর: (খ) অনাহারে মৃত্যু

6) ‘ফুটপাথে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না।’ কার প্রয়োজন হয় না?-
(ক) নিখিল,
(গ) মৃত্যুঞ্জয়,
(খ) টুনুর মা,
(ঘ) টুনু
উত্তর: (গ) মৃত্যুঞ্জয়
7) নিখিল ভেবেছিল তিনটে সাহায্য কমিয়ে দেবে-
(ক) পাঁচ টাকা করে,
(গ) পনেরো টাকা করে,
(খ) দশ টাকা করে,
(ঘ) কুড়ি টাকা করে

উত্তর: (ক) পাঁচ টাকা করে

8) “মৃত্যুওয় একতাড়া নোট নিখিলের সামনে রাখল।”-টাকাটা

(ক) নিখিলকে ধার দেবে,
(খ) রিলিফ ফান্ডে দেবে,
(গ) নিখিলকে ঘুষ দেবে,
(ঘ) অফিসের সকলকে ভূরিভোজ করাবে

উত্তর: (খ) রিলিফ ফান্ডে দেবে

9) মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে থাকে–

(ক) দশজন লোক
(গ) সাতজন লোক
(খ) পাঁচজন লোক
(ঘ) ন’জন লোক
উত্তর: (ঘ) ন’জন লোক
10) ‘একেবারে মুষড়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।’-বক্তা কে? –

(ক) মৃত্যুঞ্জয়
(গ) টুনুর মা
(খ) নিখিল
(ঘ) মৃত্যুপ্তয়ের ভাই
উত্তর: (গ) টুনুর মা
11) “আমারও মনে হচ্ছে যেন পাগল হয়ে যাব।” উক্তিটি করেছে-

(ক) নিখিল
(গ) টুনুর মা
(খ) মৃত্যুঞ্জয়
(ঘ) টুনু

উত্তর: (গ) টুনুর মা

12) মৃত্যুপ্তয়ের স্ত্রীর ‘কেবলি মনে পড়ে’–

13) “কিছুই কি করা যায় না?” কথাটি বলেছে –
(ক) সংসারের অভাবের কথা
(খ) স্বামীর কথা
(গ) ফুটপাথের লোকগুলোর কথা
(ঘ) ছেলেমেয়েদের কথা
উত্তর: (গ) ফুটপাথের লোকগুলোর কথা

(ক) টুনুর মা,
(খ) নিখিল,
(গ) টুনু,
(ঘ) অফিসের কেউ

উত্তর:- (ক) টুনুর মা

14) মৃত্যুগুয়ের ধূলিমলিন সিল্কের জামা এখন –

(ক) পরিচ্ছন্ন হয়েছে,
(গ) অদৃশ্য হয়েছে
(খ) ছিঁড়ে গেছে
(ঘ) নতুন হয়েছে

উত্তর: (গ) অদৃশ্য হয়েছে

15) নিখিল রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু…

(ক) আলসে প্রকৃতির লোক,
(খ) সাহসী প্রকৃতির লোক,
(গ) ভীরু প্রকৃতির লোক,
(ঘ) চালাক প্রকৃতির লোক
উত্তর: (ক) আলসে প্রকৃতির লোক

16) মৃত্যুঞ্জয়ের বিয়ে হয়েছে-

(ক) পাঁচ,
(খ) ছয়,
(গ) সাত,
(ঘ) চার বছর

উত্তর: (খ) ছয়

17) নিখিলের সন্তান ছিল-

(ক) দুটি,
(খ) তিনটি,
(গ) একটি,
(ঘ) চারটি

উত্তর:- (ক) দুটি

18) “সংসারে তার নাকি মন নেই। কার কথা বলা হয়েছে? –

(ক) মৃত্যুঞ্জয়ের,
(গ) টুনুর মার,
(খ) নিখিলের
(ঘ) বাসিনীর

উত্তর: (খ) নিখিলের

‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

1. ফুটপাথবাসী হয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যুঞ্জয় কী পরত?

উত্তর:- ফুটপাথবাসী হয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যুঞ্জয় ধুতি এবং সিল্কের জামা পরত।

2. ফুটপাথে পাকাপাকিভাবে থাকার পর মৃত্যুঞ্জয়ের সাজসজ্জার কী পরিবর্তন হয়েছিল?

উত্তর:- পাকাপাকিভাবে ফুটপাথবাসী হলে মৃত্যুঞ্জয়ের ধুতির বদলে ছেঁড়া কাপড় জোটে, গা থেকে সিল্কের জামা অদৃশ্য হয়ে যায়, গায়ে মাটি জমা হয়, তার মুখ দাড়িগোঁফে ভরে যায়।

3. ফুটপাথে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না।” – কেন?

উত্তর:- বাড়ি থেকে অল্প হাঁটলেই মৃত্যুঞ্জয় অফিসের ট্রাম পায়। নামেও অফিসের সামনে। তার পাড়ায় ফুটপাথ কম; তাকে বাজারহাটেও যেতে হয় না। তাই ফুটপাথে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না।

4. মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির বাজার ও কেনাকাটা কে করত?

উত্তর:- বাড়ির বাজার ও কেনাকাটার কাজ মৃত্যুঞ্জয় নিজে কখনও করত না। সেই কাজ করত বাড়ির চাকর ও তার ছোটোভাই।

5. নইলে দর্শনটা অনেক আগেই ঘটে যেত সন্দেহ নেই।”-কীসের দর্শন?

উত্তর:- উদ্‌ধৃত অংশে ফুটপাথের উপর দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের অনাহারে মৃত্যু হয়েছে, এমন একটি দৃশ্য দর্শনের কথা বলা হয়েছে।

6. মৃত্যুঞ্জয় কোথায় প্রথম অনাহারে মৃত্যু দেখেছিল?

উত্তর:- ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় একদিন বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে প্রথম অনাহারে মৃত্যু দেখেছিল।

7. অনাহারে মৃত্যু দেখার দিন অফিসে পৌঁছে মৃত্যুঞ্জয় কী করেছিল?

উত্তর:- অনাহারে মৃত্যু দেখার দিন শারীরিক ও মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত মৃত্যুঞ্জয় অফিসে পৌঁছে বাড়ি থেকে খেয়ে-আসা খাবারের সমস্তটাই বমি করে দিয়েছিল।

8. তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে।”-উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কাবু হয়ে পড়ার কারণ কী?

উত্তর:- ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে একদিন অনাহার-মৃত্যু দেখার পর অফিসে গিয়ে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছিল।

9. নিখিল অবসরজীবনটা কীভাবে কাটাতে চায়?

উত্তর:– নিখিল বই পড়ে এবং নিজস্ব একটা চিন্তাজগৎ গড়ে তুলে তার অবসরজীবনটা কাটাতে চায়।

10. নিখিলের সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে কত টাকা বেশি মাইনে পায় এবং কেন?

উত্তর:- নিখিলের সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয় একটি বাড়তি দায়িত্ব পালনের জন্য নিখিলের থেকে পঞ্চাশ টাকা বেশি মাইনে পায়।

11. সেটা আশ্চর্য নয়।” কোন্টা আশ্চর্য নয়?

উত্তর:- ফুটপাথের অনাহার-মৃত্যুর মতো সাধারণ এবং সহজবোধ্য ব্যাপারটা যে মৃত্যুওয় ধারণায় আনতে পারছে না, নিখিলের কাছে তা আশ্চর্য নয়।

12. নিখিল মৃত্যুওয়ের প্রতি কোন্ কোন্ নেতিবাচক মনোভাব মৃদুভাবে পোষণ করত?

উত্তর:- নিখিল মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি অবজ্ঞা এবং ঈর্ষা-এই দুই নেতিবাচক মনোভাব মৃদুভাবে পোষণ করত।

13. ‘আদর্শবাদ’-এর বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে কী বলা হয়েছে?

উত্তর:- ‘আদর্শবাদ’ হল মানবসভ্যতার সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য-গল্পটিতে আদর্শবাদ সম্বন্ধে এমন কথাই বলা হয়েছে।

14. ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পে লেখক কীসের সম্বন্ধে বলেছেন যে, তা ‘শ্লথ, নিস্তেজ নয়’?

উত্তর: ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে লেখক মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে বলেছেন যে, তা শ্লথ, নিস্তেজ নয়।

15. “মৃত্যুঞ্জয়কে সেও খুব পছন্দ করে”-মৃত্যুওয়কে পছন্দ করার কারণ কী ছিল?

উত্তর:- মৃত্যুপ্তায় নিরীহ, শান্ত, সহজসরল এবং সৎ হওয়ার পাশাপাশি মানবসভ্যতার প্রাচীনতম পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস বলে নিখিল মৃত্যুওয়কে পছন্দ করত।

16. মৃত্যুওয় বাড়ি থেকে কী কী খেয়ে এসেছিল?

উত্তর:- মৃত্যুঞ্জয় বাড়ি থেকে ভাজা, ডাল, তরকারি, মাছ, দই আর ভাত খেয়ে এসেছিল।

17. মৃত্যুদ্বয়ের মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

উত্তর:- মৃত্যুপ্তয়ের মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মোটেও শ্লথ বা নিস্তেজ ছিল না, শক্তির একটা উৎস ছিল তার। মধ্যে।

18. নিখিলের মতে, অনাহারীরা স্বার্থপর হলে কী কী সত্ত্বেও অম্ল থাকতে বাংলায় না খেয়ে কেউ মরত না?

উত্তর:- অনাহারীরা স্বার্থপর হলে অন্ন হাজার মাইল দূরে থাকলেও অথবা একত্রিশটা তালা লাগানো গুদামে থাকলেও অন্ন না পেয়ে মরত না।

19. মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে কতজন লোক ছিল?

উত্তর:- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পের মুখ্য চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে ন-জন লোক ছিল।

20. … ভূরিভোজনটা অন্যায়, কিন্তু না খেয়ে মরাটা উচিত নয় ভাই।” উক্তিটি কার?

উত্তর:- প্রশ্নে উদ্‌ধৃত উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসের সহকর্মী বন্ধু নিখিলের।



21. ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।”-এখানে কোন্ স্বার্থপরতার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর:- দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ-এই বক্তব্যকে মৃত্যুঞ্জয় একধরনের ‘পাশবিক স্বার্থপরতা’ বলে উল্লেখ করেছে এখানে।

22. ‘ কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নিখিল সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়ে কী দেখতে পেল?

উত্তর:- নিখিল সংবাদপত্রে চোখবুলিয়ে দেখতে পেল ভালোভাবে সদ্‌গতির ব্যবস্থা করে গোটা কুড়ি মৃতদেহকে স্বর্গে পাঠানো হয়নি বলে একস্থানে তীক্ষ্ণধার হা-হুতাশ করা মন্তব্য করা হয়েছে।

‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

1. “ধিক্। শত ধিক্ আমাকে।”-বক্তা কে? বক্তার চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর:- উদ্দিষ্ট বক্তা: প্রশ্নোদ্‌ধৃত অংশটির বক্তা হলেন মৃত্যুঞ্জয়। বছার চরিত্র: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রটি পর্যালোচনা করতে গেলে নীচের বিষয়গুলি চোখে পড়ে।

ন্যায়নীতিপরায়ণতা: মৃত্যুঞ্জয় একজন সৎ, মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী। নিরীহ শান্ত, দরদি, ভালোমানুষ এই যুবকটি ন্যায়নীতিবোধের অবক্ষয়ের যুগেও বুকের ভেতরে আদর্শবাদের প্রায় হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্য পুষে রাখে। আবেগপ্রবণতা: মৃত্যুঞ্জয় একদিন অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎই ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ফেলে।

দুর্ভিক্ষের সময় এমন দৃশ্য খুব স্বাভাবিক হলেও আবেগপ্রবণ মৃত্যুঞ্জয় এই দৃশ্য দেখে প্রচণ্ড আঘাত পায়। তারপর থেকে সে ক্রমে ক্রমে ভিতরে-বাইরে পালটে যেতে শুরু করে। অপরাধবোধে অস্থির মৃত্যুঞ্জয় ও তার স্ত্রী একবেলা না খেয়ে সে-খাবার দুর্ভিক্ষপীড়িতদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। এমনকি, মাসের পুরো মাইনেটা সে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। বিকারগ্রস্ততা: কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় অচিরেই বাস্তব চিত্রটা বুঝতে পারে যে, যথাসর্বস্ব দান করলেও অনাহারী মানুষগুলোর কিছুমাত্র ভালো করতে পারবে না সে। এই ব্যর্থতাই তাকে মানসিকভাবে আরও বিপর্যন্ত করে তোলে। দিন দিন মুষড়ে যেতে থাকে মৃত্যুঞ্জয়। এরপর তাই সে অন্নপ্রার্থীদের ভিড়ে ঘুরতে ঘুরতে একসময় তাদেরই একজন হয়ে যায়। অফিসে এবং ধীরে ধীরে বাড়িতে যাওয়াও বন্ধ করে দেয় মৃত্যুঞ্জয়। ছেঁড়া ন্যাকড়া পরে, খালি গায়ে সে অনাহারীদের সঙ্গে ফুটপাথে পড়ে থাকে এবং লঙ্গরখানার খিচুড়ি কাড়াকাড়ি করে খেতে শুরু করে।

শেষের কথা: মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের প্রতিবাদে, প্রতিরোধে বা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে না পারলেও সে মধ্যবিত্তের খোলস ত্যাগ করে সর্বহারা শ্রেণির মধ্যে বিলীন হতে পেরেছে, এখানেই চরিত্রটির বিশিষ্টতা।

2. ভুরিভোজনটা অন্যায়, কিন্তু না খেয়ে মরাটা উচিত নয়। ভাই। বক্তা কে? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিক আভাসিত হয়েছে?

উত্তর:- বক্তা (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা মৃত্যুঞ্জয়ের বন্ধু ও সহকর্মী নিখিল দুর্ভিক্ষের কারণে ফুটপাতে মানুষের অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুওয়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। সে তার মাইনের সমস্ত টাকাটাই নিখিলের মাধ্যমে ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দিতে চায়। কিন্তু নিখিল এই বাস্তববোধহীন ভাবাবেগের বিরোধী। মাইনের টাকায় যার নিজেরই সংসার চলে না, তার এই জনসেবার আকুলতা নিখিলের কাছে অর্থহীন বলে মনে হয়। তার মনে হয় যে, এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না। যে রিলিফ চলেছে তা আসলে)”একজনের বদলে আরেকজনকে খাওয়ানো একই সঙ্গে আত্মপ্রবঞ্ছনাও মানতে পারে না নিখিল। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতেই হবে। নিখিল বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছে “দেশের সমস্ত লোক মরে গেলেও যদি সেইটুকু সংগ্রহ করার ক্ষমতা আমার থাকে, কাউকে না দিয়ে নিজেই আমি তা খাব।” মৃত্যুঞ্জয়ের ভাবাবেগের বিপরীতে নিখিলের ভাবনা ও বক্তব্যকে অনেক বেশি বাস্তববাদী মনে হয়। নিখিল মন থেকেই বিশ্বাস করে যে, নীতিধর্মের দিক থেকে না হলেও সমাজধর্মের দিক থেকে দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ। এভাবেই নিখিলের বাস্তববুদ্ধির পরিচয় গল্পে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

3. সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুওয় প্রথম মৃত্যু দেখল- অনাহারে মৃত্যু।”-এই দেখার ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

উত্তর:- প্রেক্ষাপট: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে একদিন ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। মন্বন্তরের সময়ে এরকম মৃত্যু নিয়মিত ঘটলেও তা ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।

আবেগপ্রবণ আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয় তাই করুণ এই দৃশ্যটি দেখার কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রচণ্ড মানসিক বেদনাবোধের সঙ্গে শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। রীতিমতো কাহিল অবস্থায় অফিসে পৌঁছে সে অফিসের বাথরুমে বাড়ি থেকে খেয়ে-আসা খাবার বমি করে বের করে দেয়।

পাশের কুঠুরি থেকে খবর নিতে আসে তার সহকর্মী- বন্ধু নিখিল। নিখিল দেখে মৃত্যুঞ্জয় ভাবলেশহীন চাহনিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে, সামনে টেবিলের ওপর শূন্য কাচের গ্লাস রাখা। তাকে দেখে নিখিলের মনে হয় যে, নিশ্চয়ই কোনো-এক বড়ো সমস্যায় পড়েছে মৃত্যুঞ্জয়। সেই সমস্যার নিরর্থক, অন্যায্য কঠোরতায় শার্সিতে আটকে পড়া মৌমাছির মতো মৃত্যুঞ্জয় মাথা খুঁড়ছে। লেখক নিখিলের এই দেখার মধ্য দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার একটা স্বচ্ছ ধারণা সুন্দরভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। এককথায় মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশার, যন্ত্রণার এবং অস্থিরতার।

4. “অন্য সকলের মতো মৃত্যুওয়কে সেও খুব পছন্দ করে।”-কার কথা বলা হয়েছে? তার মৃত্যুওয়কে পছন্দ করার যে কারণ লেখক আলোচনা করেছেন এই প্রসঙ্গে সেটির বিবরণ দাও।

উত্তর:- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে ছোটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্‌ধৃতিটিতে মৃত্যুওয়ের সহকর্মী বন্ধু নিখিলের কথা বলা হয়েছে।

মৃত্যুওয় ছিল ন্যায়নীতিবোধসম্পন্ন, ধীরস্থির, নির্বিরোধী, সহানুভূতিশীল এক সাদাসিধে যুবক। কিন্তু শুধু তার এইসব ইতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই যে নিখিল তাকে পছন্দ করত, তা নয়। মানবসভ্যতার নষ্ট হয়ে যাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন যে ঐতিহ্য আদর্শবাদ, তার কল্পনায় এবং সাধনায় মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে সঁপে দিয়েছিল বলেই নিখিল তাকে খুব পছন্দ করত। অবশ্য, মৃত্যুঞ্জয় যদি দুর্বল-মনের কল্পনাবিলাসী আদর্শবাদী যুবক হত, তাহলে তাকে পছন্দ করার প্রসঙ্গ আসত না। দুটো কথার দ্বারা তাকে উত্ত্যক্ত করলেই তার মনের রাশি রাশি অন্ধকার বেরিয়ে এসে তাকে অবজ্ঞার পাত্র করে তুলত। মৃত্যুঞ্জয়ের মনের গঠন-প্রকৃতি তেমন নির্জীব বা শিথিল নয়। তার হৃদয় ও মস্তিষ্ক যথেষ্ট গতিশীল। তার হৃদয়ে শক্তির একটা উৎস রয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয়, সেই চেষ্টায় জগতে যে শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে, তেমনই এক শক্তির অধিকারী ছিল সে। এই বিশেষ শক্তির অধিকারী বলেই মৃত্যুগুয়ের প্রতি নিখিল মৃদু হিংসা পোষণ করত, ভারত, সে নিজে মৃত্যুঞ্জয় হলে খারাপ হত না। নিখিল যে মৃত্যুওয়কে খুব পছন্দ করে এবং ভালোও বাসে, তার কারণ হিসেবে লেখক এ বিষয়গুলিই উল্লেখ করেছেন।

5. এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী?”- কোন অপরাধের কথা বলা হয়েছে? বক্তার এই অপরাধবোধের কারণ কী?

উত্তর:- উদ্দিষ্ট অপরাধের পরিচয় (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে গল্পে মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার পথে ফুটপাথে এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। নিজেদের চারবেলা ‘পেট ভরে খাওয়া এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের মৃত্যু বিষয়ে উদাসীনতাকে মৃত্যুঞ্জয়ের ‘অপরাধ’ বলে মনে হয়।

মানুষের অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে তোলে। শারীরিক কষ্টবোধের সঙ্গে মানসিক যন্ত্রণা তীব্র হয়ে ওঠে। বন্ধু ও সহকর্মী নিখিল তাকে বলেছে-“মানবসভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও সবচেয়ে পচা ঐতিহ্য আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস।” এই আদর্শের কারণেই সে মৃত্যুযন্ত্রণা, ক্ষুধার যন্ত্রণা ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে শুরু করে। তারা ভালোভাবে বেঁচে আছে, অথচ কিছু মানুষ না খেয়ে মরে গেল-এই বেদনা ও বৈষম্যে সে ভাবিত হয়। আর সব জেনেশুনেও সে যে চারবেলা পেট ভরে খেয়েছে তা তাকে গ্লানিজর্জর করে তোলে। আদর্শবোধের তীব্র তারণা। সব মিলিয়ে নিজের ব্যক্তিগত এবং শ্রেণিগত উদাসীনতা মৃত্যুঞ্জয়কে অনুশোচনায় বিদ্ধ করে। যখন একদিকে লোকের অভাবে যথেষ্ট ত্রাণকার্য চালানো যাচ্ছে না-সেই সময়ে কিছু লোক সময় কাটানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছে না-এই আচরণ মৃত্যুঞ্জয় মেনে নিতে পারেনি। নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছে সে। আদর্শবোধের তীব্র তাড়নাই মৃত্যুঞ্জয়কে অপরাধী করে তুলেছে। 

আরও পড়ুন: Daily Current Affairs in Bengali 2024 | দৈনিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স 2024

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: