সতীদাহ প্রথা কী | সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন | সতীদাহ প্রথা কী ব্যাখ্যা করো



সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন

ঊনবিংশ শতকের সূচনালগ্নেও বাংলা তথা ভারতীয় হিন্দুসমাজে ‘সতীদাহপ্রথা’ বা ‘সহমরণ’ নামে একটি মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুর বর্বরপ্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর পর জ্বলন্ত চিতায় তাঁর বিধবা স্ত্রীকে জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে মারা হত। ব্রিটিশ সরকার এই কুপ্রথার বিরোধী হলেও তারা প্রথমদিকে এই প্রথা নিষিদ্ধ করে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়কে ক্ষিপ্ত করতে চায়নি। তবে সরকার সতীদাহপ্রথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও হিন্দু রক্ষণশীল সম্প্রদায় এই নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

সতীদাহ প্রথার ছবি
সতীদাহ প্রথার ছবি

রাজা রামমোহন রায় ও সতীদাহ প্রথা

সমাজসংস্কারক রাজা রামমোহন রায় সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম জোরালো প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি লোকশিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলে সতীদাহপ্রথার অবসান ঘটাতে চাইছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে একটি বাংলা পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে রামমোহনের বিরোধী রক্ষণশীল হিন্দু নেতৃবৃন্দ ‘বিধায়ক’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে সতীদাহপ্রথা সম্পর্কে রামমোহনের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। এর জবাবে রামমোহন আরও একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তিনি পরে আরও কয়েকটি বাংলা ও ইংরেজি পুস্তিকা প্রকাশ করে সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তিনি ‘মনুসংহিতা’সহ বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, সতীদাহপ্রথা হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রবিরোধী। তিনি ‘সম্বাদ কৌমুদী‘ পত্রিকায় নিয়মিত প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। অন্যান্য পত্রপত্রিকায়ও সতীদাহ প্রথা সম্পর্কে বিতর্কের আলোচনা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলার রক্ষণশীল সমাজ রামমোহনের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করলেও রামমোহন ব্যাপক প্রচার চালিয়ে শিক্ষিত সমাজের একটি বড়ো অংশের সমর্থন লাভ করেন।



সতীদাহ প্রথা কে বন্ধ করেছিলেন

নতুন ইংরেজ গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক (১৮২৮-১৮৩৫ খ্রি.) নৈতিকতা ও মানবিকতার কারণে সতীদাহপ্রথার বিরোধী ছিলেন। রামমোহন সতীদাহপ্রথা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলার বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র বেন্টিঙ্কের কাছে জমা দেন। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে উদারমনস্ক বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে (৪ ডিসেম্বর) ১৭নং রেগুলেশন আইন পাস করেন। এই আইনের দ্বারা সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ হয়।

সতীদাহ প্রথা কী class 8

সতীদাহ প্রথা হল ভারতের একটি প্রাচীন সামাজিক প্রথা, যেখানে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জীবিত অবস্থায় স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে দেওয়া হত। এটি মূলত হিন্দু সমাজে প্রচলিত ছিল এবং বিশ্বাস করা হত যে, এই প্রথার মাধ্যমে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি চরম আনুগত্য ও পবিত্রতা প্রমাণ করেন।

সতীদাহ প্রথার বৈশিষ্ট্য:

  1. ধর্মীয় বিশ্বাস: অনেকেই মনে করতেন, সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে স্ত্রী স্বর্গে পৌঁছে যাবেন এবং স্বামীর আত্মার মুক্তি ঘটবে।
  2. সমাজের চাপ: মহিলাদের উপর এই প্রথা পালন করার জন্য সমাজের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হত।
  3. প্রতিবাদ: কিছু প্রগতিশীল ব্যক্তি ও সমাজ এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন।

প্রথার বিলোপ:

ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা বিলোপ আইন পাস করেন। সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় এই প্রথার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করেন। তাদের প্রচেষ্টায় প্রথাটি আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়।

আজকের দিনে সতীদাহ প্রথা একটি নিষিদ্ধ ও অমানবিক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

Aftab Rahaman
Aftab Rahaman

I'm Aftab Rahaman, The Founder Of This Blog. My Goal is To Share Accurate and Valuable Information To Make Life Easier, With The Support of a Team Of Experts.

Articles: 1903