WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল



বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, প্রথমেই আমাদের জানতে হবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন ও তাঁর সমাজ পরিবর্তনের আদর্শ। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর সেই আদর্শকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন, যেখানে শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত জ্ঞান ও মানবিকতার বিকাশ ঘটবে।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যসমূহ

1. পূর্ব ও পশ্চিমের মিলন

বিশ্বভারতীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল পূর্ব ও পশ্চিমের শিক্ষার মিলন ঘটানো। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, মানব সভ্যতার উন্নতির জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়। তিনি মনে করতেন যে পশ্চিমা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাশাপাশি পূর্বের আধ্যাত্মিক ও মানবিক গুণাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা উচিত।

2. প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষা

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শন অনুসারে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। বিদ্যালয়ের পরিবেশ এমন হওয়া উচিত যেখানে শিক্ষার্থীরা মুক্তভাবে প্রকৃতির সংস্পর্শে এসে জানতে পারবে পৃথিবীর সৌন্দর্য এবং এর রহস্য। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই আদর্শকেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন, যেখানে খোলা আকাশের নিচে বসে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা ছিল।

3. জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিকতা

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটানো, তবে সেটি যেন সংকীর্ণতা বা অন্য জাতির প্রতি বিরোধিতা সৃষ্টি না করে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্বের প্রতি দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা জরুরি। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে কীভাবে তারা সারা বিশ্বকে এক পরিবার হিসেবে দেখতে পারে এবং মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে পারে।



4. শিল্প, সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার বিকাশ

বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতির চর্চা। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষার্থীরা নাচ, গান, কবিতা, নাটক, চিত্রকলা প্রভৃতি শিল্পে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটাতে, যাতে তারা নিজেদের মনের ভাবনা ও কল্পনাশক্তিকে প্রকাশ করতে পারে।

5. মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষাদান

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে শিক্ষা মানেই শুধু একাডেমিক জ্ঞান নয়; শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষাও থাকা প্রয়োজন। বিশ্বভারতীর মাধ্যমে তিনি চেষ্টা করেছিলেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, সংযম, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এবং আত্মনির্ভরতার গুণাবলী গড়ে তুলতে।

6. স্বাধীন শিক্ষাব্যবস্থা

বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠার পেছনে রবীন্দ্রনাথের আরেকটি লক্ষ্য ছিল শিক্ষাকে পুঁথিগত বিদ্যার সীমাবদ্ধতার বাইরে নিয়ে গিয়ে স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ দেওয়া। তিনি চেয়েছিলেন যে শিক্ষার্থীরা বইয়ের মধ্যে আটকে না থেকে মুক্তভাবে শিক্ষাগ্রহণ করুক। এর ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করতে এবং নতুন জ্ঞান অর্জন করতে উৎসাহিত হবে।

উপসংহার

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না, এটি ছিল তাঁর শিক্ষা দর্শনের বাস্তবায়ন। মানবতার কল্যাণ, প্রকৃতির সান্নিধ্য, সৃজনশীলতার বিকাশ, জাতীয়তাবোধ ও আন্তর্জাতিকতা—এই সমস্ত গুণাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বভারতী এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

Visva bharati rabindranath

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: