WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব



ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল
ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল

ভূমিকা
ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে শ্রেণীভিত্তিক সংগ্রামকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল। এই নিবন্ধে আমরা ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠার কারণ, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এর ভূমিকা বিশদভাবে আলোচনা করব।

Image to WEBP Converter

১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ব্রিটিশ ভারতে শ্রমিক-কৃষক সংকট

২০শ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ ভারতের অর্থনীতি ছিল কৃষি ও শিল্পের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু ঔপনিবেশিক নীতির কারণে শ্রমিক ও কৃষকরা চরম শোষণের শিকার হচ্ছিলেন।



  • কৃষকদের অবস্থা: জমিদারি প্রথা, উচ্চ কর, এবং ফসলের দাম হ্রাসের কারণে কৃষকরা দারিদ্র্য ও ঋণের বোঝায় নিষ্পেষিত হচ্ছিলেন।
  • শ্রমিকদের সংকট: কলকারখানায় মজুরি হ্রাস, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, এবং কর্মপরিবেশের অভাব শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি করেছিল।
  • রুশ বিপ্লবের প্রভাব: ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিশ্বজুড়ে প্রসারিত হয়েছিল, যা ভারতের বুদ্ধিজীবী ও বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

এই পরিস্থিতিতে, শ্রমিক ও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় একটি সংগঠিত রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়।

Also Read – ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন


২. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠার মূল কারণ

ক. শ্রেণী সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের স্বার্থে কাজ করছিল, অন্যদিকে কমিউনিস্টরা বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীনতা আন্দোলনে শ্রমিক-কৃষকের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এই দলটি প্রতিষ্ঠার পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রেণীভিত্তিক সংগ্রামকে রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত করা।

খ. কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক (কমিন্টার্ন) এর প্রেরণা

কমিন্টার্নের নির্দেশনা অনুযায়ী, ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতারা শ্রমিক-কৃষক জোট গঠনের চেষ্টা করেন। ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠায় মুজাফফর আহমেদ, কুতুবুদ্দিন আহমেদ, এবং এস.এ. ডাঙ্গের মতো নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

গ. কংগ্রেসের সীমাবদ্ধতা পূরণ

জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী নীতি এবং জমিদার-পুঁজিপতি সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই দলটি গড়ে উঠে। এটি সরাসরি ব্রিটিশ শোষণ ও দেশীয় শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে র্যাডিকাল সংগ্রামের ডাক দেয়।


৩. দলের লক্ষ্য ও কার্যক্রম

  • লক্ষ্য:
  • ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির উৎখাত।
  • জমিদারি প্রথা ও পুঁজিবাদের অবসান।
  • সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
  • কার্যক্রম:
  • শ্রমিক আন্দোলন: বোম্বাই, কলকাতা, এবং মাদ্রাজে টেক্সটাইল ও রেলওয়ে শ্রমিকদের সংগঠিত করে ধর্মঘট।
  • কৃষক বিদ্রোহ: উত্তরপ্রদেশ ও বাংলায় জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক সম্মেলনের আয়োজন।
  • সাংগঠনিক প্রসার: বাংলা, পাঞ্জাব, এবং বোম্বাইয়ে শাখা গঠন।

৪. চ্যালেঞ্জ ও অবদান

  • ব্রিটিশ দমননীতি: ১৯২৯ সালের মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।
  • ঐতিহাসিক অবদান:
  • ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ভিত্তি প্রস্তুত করে।
  • স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শ্রমিক আইন ও ভূমি সংস্কারে প্রভাব ফেলে।

৫. উপসংহার: ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির উত্তরাধিকার

এই দলটি যদিও স্বল্পকালীন সময়ের জন্য সক্রিয় ছিল, তবুও এটি ভারতের রাজনীতিতে শ্রমিক-কৃষক ঐক্যের ধারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। এর প্রতিষ্ঠার মূল কারণ ছিল ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে একটি বিপ্লবী বিকল্প তৈরি করা, যা পরবর্তীতে ভারতের বামপন্থী আন্দোলনের পথিকৃত হয়ে ওঠে।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: