ভারতে ক্রিপস্ মিশন আসার কারণ কী ছিল? ক্রিপস্ মিশন বা ক্রিপস্ প্রস্তাব কেনো ব্যর্থ হয়েছিল?

ভারতে ক্রিপস্ মিশন আসার কারণ কী ছিল? ক্রিপস্ মিশন বা ক্রিপস্ প্রস্তাব কেনো ব্যর্থ হয়েছিল?

ক্রিপস্ মিশনের পরিচিতি:

স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ ছিলেন ব্রিটেনের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য তথা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন আইনবিদ ও বিশিষ্ট সমাজবাদী নেতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা লাভ ও ভারতের সংবিধান বিষয়ক প্রস্তাবাবলি আলাপ আলোচনার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, ক্রিপকে ভারতে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন। সেই মতো ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ ক্রিপস্ ভারতে আসেন। কারণ ক্রিপস্ মিশনকে ভারতে পাঠাবার বেশ কয়েকটি কারণ ছিল।

1. জাপানি আক্রমণের ভয়: 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রেঙুন দখল করে জাপান ভারতের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হয় (১৯৪২ খ্রি.)। ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে, জাপান আক্রমণ প্রতিরোধে ভারতীয়দের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার, তাই ভারতবাসীর সন্তুষ্টির জন্য ক্রিপস্ দৌত্য ভারতে আসে।

2. প্রভাবশালীদের চাপ:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট, ব্রিটিশ শ্রমিক দলের নেতা ক্লিমেন্ট এটলি ও অন্যান্য ইংরেজ রাজনীতিবিদ দৃঢ় অভিমত দেন যে, ভারতবাসীর সহযোগিতা পাওয়ার জন্য তাদের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া দরকার।

3. চিনের ভূমিকা: 

চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই-শেকও ভারতবাসীর দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী চার্চিলকে অনুরোধ জানান।

4. ভারতের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা: 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে গণবিদ্রোহ শুরু হয় তাতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে মিত্রপক্ষ তথা ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সহযোগিতা লাভের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। তাই ভারতীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য ক্রিপস্ ভারতে আসেন।

ক্রিপস্ মিশন কেনো ব্যর্থ হয়েছিল?

ভূমিকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের কাছ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে ও ভারতের সংবিধানবিষয়ক প্রস্তাবগুলি আলাপ আলোচনার জন্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ ভারতে আসেন ও এক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু ক্রিপসের প্রস্তাবগুলি ভারতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। শেষপর্যন্ত ক্রিপস্ প্রস্তাব ব্যর্থ হয়।

ক্রিপস্ মিশন ব্যর্থতার কারণ:

ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দল ক্রিপস্-এর প্রস্তাবগুলি প্রত্যাখ্যান করে। ক্রিপসের প্রস্তাবে ভারতকে স্বাধীনতাদানের কোনো উল্লেখ না থাকায় এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়। ও ক্রিপস্ প্রস্তাবে পরোক্ষভাবে ভারত-বিভাগকে স্বীকৃতি দেওয়ায় এই প্রস্তাব সফল হয়নি। ও দেশীয় রাজ্যগুলির ৯ কোটি মানুষের ভাগ্য রাজন্যবর্গের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে জাতীয় কংগ্রেস। ক্রিপস্ প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রাদেশিক সরকারের তুলনায় দুর্বল করায় প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। ↑ সংবিধান সভাকে সার্বভৌম ক্ষমতা না দেওয়ায় হিন্দু-মহাসভা, লিবারেল পার্টি প্রভৃতি দলও ক্রিপস্ প্রস্তাবের বিরূপ সমালোচনা করে। শেষপর্যন্ত ক্রিপস্ প্রস্তাব ব্যর্থ হয়।

মন্তব্য:

প্রবল সমালোচনার মুখে ১১ এপ্রিল ক্রিপস্ এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাহার করে নেন। এইভাবে ক্রিপসের দৌত্য ব্যর্থ হয়। গান্ধিজি বলেন এই প্রস্তাব ছিল—“একটি ফেল-পড়া ব্যাংকের প্রদেয় চেক” (a post-dated cheque on a crashing bank)।

Join Telegram
Join Telegram

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *