Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ, মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তনের ফসল, পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়ছে এক নিবিড় যোগসূত্র। কিন্তু দিন দিন বিশ্বজুড়ে ঘনিয়ে আসছে পরিবেশ-সংক মানুষের সৃষ্ঠ যন্ত্রসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকেই চলছে পরিবেশের ওপর মানুষের কুঠারাঘাত। ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরিবেশে দূষণের মাত্রা প্রকট হওয়ার কারণে মানবসভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন, আজ আমাদের জননী বসুন্ধরা ভালো নেই ধুষণের ভারে ক্রমশ জর্জরিত ক্রমশ এগোচ্ছে কঠিন অসুস্থতার দিকে। তাই রব উঠেছে “বসুন্ধরা বাঁচাও” এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করে সতর্ক ব্যবস্থাদি গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘ প্রতিবছর ৫ই জুন “কিন্তু পরিবেশ দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছে।
প্রাকৃতিক কারণে অথবা মানুষের কার্যকলাপে সৃষ্ঠ উদ্ভুত দূষিত পদার্থ যখন পরিবেশকে বিষময় করে আমরা দূষণ শব্দটা ব্যবহার করি। পরিবেশের প্রাকৃতিক বিভিন্ন তোলে তখনই উপাদান যেমন- মাটি, বায়, জল ইত্যাদির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব পরিবর্তন ঘটলে তা জীবজগতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এটিকে পরিবেশ দূষণ বলে। ক্ষতিকর পদার্থের বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হয়, তখনই পরিবেশ দূষিত হয়।
বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হতে পারে যেমন-
জনসংখ্যা বৃদ্ধি : ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বর্ধিত জন – সংখ্যার প্রয়োজনে বনজঙ্গল, গাছপালা কেটে চাষের জমি তৈরী করা হয় বা বসতবাড়ি নির্মান করা হয়, গাছপালা কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যায়, খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করে। স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে কলুষিত করে এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, বাসস্থান, যানবাহন, শিল্পকারখানা সবকিছুর চাহিদাই বৃদ্ধি পায়। অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে অধিক কীটনাশক ও সার ব্যবহৃত, ভূ-গর্ভের জল উত্তোলনের ফলে মাটি দুষিত হচ্ছে। অধিক শিল্প কারখানা, যানবাহন বায়ুদূষণ ও জলদূষণ ঘটাচ্ছে।
নগরায়নের ফলে পরিবেশে ক্রমাগত দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা ও গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বায়দূষণের সৃষ্টি করছে। বাস , ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ির হর্ন থেকে শব্দ দূষণ হচ্ছে। আবার নদীর জলে কলকারখানার আবর্জনা মিশে নদীর জল দূষিত হচ্ছে। নগরায়নের ফলে মানুষ কাজের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বসবাস করছে। শহরে অধিক জনসংখ্যার ফলে আবাসন সমস্যা দেখা দিচ্ছে বস্তি গড়ে উঠছে। বস্তিতে বিক্ষুদ্ধ জন্ম, স্যানিটেশন সমস্যা ও ময়লা আবর্জনা ফেলার অব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাব পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
সমগ্র বিশ্বে আজ জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনে অনতম কারণ অপরিলক্ষিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলে কাবন-ডাই-অক্সাইডর পরিমান বৃদ্ধি পাছে, এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে এভাবে যদি চলতে থাকে আগামী ৩০ বছরে অধিকাংশ ভূমি সমুদ্র তলে হারিয়ে যাবে । এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা, নদীর প্রবাহ হ্রাস, ঘূনিঝড়, বনা, জলোছাস, পানীয় জলের অভাব, মৎসসম্পদ ধ্বংস, মসল উৎপাদন হ্রাম, ভূমিকদ ইত্যাদি ভয়াবহ দুর্যোগে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন বনসম্পদ ধ্বংসের কারণ নগরায়ন, শিল্পায়ন, জ্বালানি সংগ্রহ ও কৃষিজমি সম্প্রসারণ। এছাড়া জ্বালানি সংগ্রহ, বাড়িঘর, আত্মবাণ পত্র নির্মাণ ইত্যাদির প্রয়োজনে ব্যাপকহারে বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে ফলে ভূমিক্ষয় হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের কারখানার পাশাপাশি সার ও কীটনাশক তৈরীর কারখানা, বর্জ্য নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনা এর পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাশয়ে গিয়ে বর্জ্য পতিত হচ্ছে সালে জল বায়ুদূষণ ঘটছে। ওজোন স্তর হ্রাস পাচ্ছে, গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়া ও উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিল্পকারখানা, আবাসিক এলাকা, হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পার্শ্ববর্তী জলাধারে গিয়ে পড়ছে ফলে জলদূষিত হচ্ছে, নদী নালা খালবিল ভরাট হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
ইটভাটায় ইট পোড়ানোর ফল, অচল ও অঠিক যানবাহনের ব্যবহারের ফলে অধিক জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে, বাতাসে ব্যবহৃত হচ্ছে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কল্পে নানাভাবে প্রতিকারের ব্যবস্থাও গৃহীত হচ্ছে, যেমন-
পরিবেশকে যদি মুক্ত রাখতে না পারা যায় তবে মানবসভ্যতার ধ্বংস অনিবার্য। পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে হলে প্রয়োজন মানুষের শুভ বুদ্ধির উদয় ও সৌন্দর্য চেতনার উন্মেষ। সেজন্য চাই সার্বজনীন শিক্ষার প্রসার, রাষ্ট্রেব্যবস্থার কল্যানকর” ভূমিকা ও দাখিত্ববোধ। সামুতিককালে বিভিন্ন সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান, সরকার, পৌরসভা, গনমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পরিবেশ সচেতনাতাকে গণ আন্দোলনের রূপ দিতে তৎপর হয়েছে। এই পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ হিসাবে গড়ে তুলতে প্রত্যেককেই শপথ নিতে হবে।
সুকান্ত ভট্টাচার্য তার বিখ্যাত কবিতা ছাড়পত্রে লিখেছেন –
“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যার আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”