Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
অসহযোগ আন্দোলনের আকস্মিক প্রত্যাহার জাতীয় রাজনীতিকে গতিহীন করে ফেলে। এর পাশাপাশি জাতীয় কংগ্রেসে নেvতৃত্বের সংকট যখন জাতীয় রাজনীতিকে অবসাদগ্রস্ত করে তুলেছিল, তখন স্বরাজ্য দল নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করে জাতীয় আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
অসহযোগ আন্দোলন অসময়ে প্রত্যাহারের পর জাতীয় রাজনীতিতে যে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তার অনেকটাই পূরণ করেছিল স্বরাজ্য দল।
স্বরাজ্য দলের সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আইনসভার মধ্যে যেভাবে ব্রিটিশের বিভিন্ন দমনপীড়নমূলক আইনের বিরোধিতা করেছিলেন তাতে স্বদেশবাসীর জাতীয় চেতনার জাগরণ ঘটেছিল।
শাসনব্যবস্থার মধ্যে থেকে সরকারের বিরোধিতার মাধ্যমেও যে দাবিদাওয়া আদায় করা যায় সেই নিদর্শন প্রথম রেখেছিল স্বরাজ্য দলই।
স্বরাজ্য দল যে কর্মসূচির রূপায়ণ করেছিল তার সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের গঠনমূলক পরিকল্পনাগুলির মিল ছিল। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের সংকটকালে স্বরাজ্য দল গঠনমূলক কাজে নিয়োজিত ছিল।
দেশবাসীর প্রতিনিধিরূপেআইনসভায় অংশগ্রহণ করে স্বরাজ্য দলের সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি আইনের ত্রুটি জনগণের সামনে তুলে ধরেন ও ত্রুটিপূর্ণ বাজেটের বিরুদ্ধে সরব হন। এ প্রসঙ্গে মতিলাল নেহরু বলেন, আমরা এখানে এসেছি পুরোনো আইনসমূহ ধ্বংস করে ভারতের জন্য নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে।
সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন,প্রতিবাদস্বরূপ সভাকক্ষ ত্যাগ ইত্যাদি দ্বারা স্বরাজিরা প্রশাসনকে সংকটপূর্ণ করে তোলে।
স্বরাজ্য দলের বিরোধিতার কাছেই নতিস্বীকার করে ব্রিটিশ সরকার মন্টেগু- চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের কার্যকারিতা অনুসন্ধানের জন্য কমিটি নিয়োগ করেছিল। স্বরাজ্য দলের নিরন্তর বিরোধিতার জন্যই ব্রিটিশ সরকার ‘সাইমন কমিশন’ গঠন করে।
স্বরাজ্য দল তাৎক্ষণিকভাবে সাফল্য পেলেও স্থায়িত্ব পায়নি। স্বরাজ্য দলের ব্যর্থতার নানা কারণ ছিল। যেমন—
দেশবন্ধুর মৃত্যুর (১৯২৫ খ্রি., ১৬ জুন) পর স্বরাজ্য দল দ্রুত ভেঙে পড়ে। অতঃপর দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ছাড়া কোনো বিচক্ষণ নেতার আবির্ভাব ঘটেনি।
দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে বাংলায় সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের মতভেদ দলকে দুর্বল করে ।
স্বরাজ্য দলের সর্বভারতীয় স্তরে ভাঙন দেখা দেয়। মহম্মদ আলি জিন্না স্বরাজ্য দল ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন। লালা লাজপত রায়, মদনমোহন মালব্য প্রমুখ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
আইনসভায় স্বরাজ্য দলের কিছু সদস্য সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে দলকে দুর্বল করেন।
জাতীয় কংগ্রেস ইতিমধ্যে নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে গণ-আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। ফলে স্বরাজ্য দলের গুরুত্ব হ্রাস পায় ।
দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর বেঙ্গল প্যাক্ট তার গুরুত্ব হারায়। এর পরে দেশ জুড়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। তাতে বহু স্বরাজি জড়িয়ে পড়েন।
স্বরাজ্য দল নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছোতে পারেনি। মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে একদল চান সরকারি কাজে বাধা দিতে। আবার এস. আর. জয়াকার, এন. সি. কেলকার প্রমুখের মত ছিল, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে যাতে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় দলের সেই চেষ্টাই করা উচিত।
সমাজের সাধারণ মানুষ স্বরাজ্য দলের কর্মসূচির প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। তাই এই দলে গণসমর্থনের অভাব দেখা দেয়। যার অভাবে স্বরাজ্য দল ব্যর্থ হয়।
স্বরাজ্য দলের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাব রূপায়ণ, কিছু জনকল্যাণকামী আইন প্রণয়ন ইত্যাদি । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর স্বরাজ্য দলের ভাঙন শুরু হয়েছিল। জওহরলাল নেহরুর মতে, ধীরে ধীরে স্বরাজিরা বিভিন্ন সরকারি সুযোগসুবিধা ও প্রলোভনের স্বীকার হন এবং তাদের নৈতিক মান ও শৃঙ্খলাবোধের অবনতি ঘটে।
Read more;
উনিশ শতকের সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের কী অবদান ছিল ?