উনিশ শতকের সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের কী অবদান ছিল ?

উনিশ শতকের সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান 

সূচনা:

উনিশ শতকে ভারতবাসীর সামাজিক জীবন এবং ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের অসামান্য অবদান ছিল। সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁর “শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র আদর্শ এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর দেশপ্রেমমূলক বাণী ও দিক্‌নির্দেশ দেশমাতার শৃঙ্খলমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

স্বামী বিবেকানন্দের অবদান:

» 1. সামাজিক জীবনে:

জাতিভেদ প্রথা মোচনে: শূদ্রের গলায় ব্রাহ্মণের পৈতা ঝুলিয়ে, ভাঙ্গির হাত থেকে অন্ন গ্রহণ করে স্বামীজি সমগ্র দেশবাসীর সামনে জাতপাত ও বর্ণহীন এক সাম্যবাদী আদর্শের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। সমাজে বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায় এবং বর্ণের অস্তিত্ব থাকলেও ভারতবর্ষের আত্মা এক এবং অভিন্ন, ই স্বামীজিই প্রথম এই বক্তব্য প্রচার করেন। দেশবাসীর উদ্দেশে স্বামীজি ঘোষণা করেন—“হে ভারত, ভুলিও না নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।” দরিদ্র ও আর্তের সেবার আদর্শ: স্বামীজি মনে করতেন, জীব হল ঈশ্বরের সৃষ্টি, জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের অধিষ্ঠান, তাই জীবসেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র আদর্শকে বাস্তব রূপ র্শ দেওয়ার জন্য স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠা করেন নবভারতের আনন্দমঠ, রামকৃয় মঠ ও মিশন (১৮৯৭ খ্রি.)। দরিদ্রনারায়ণ সেবার আদর্শ প্রচারে স্বামীজি বলেন—

“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”

উনিশ শতকের সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকানন্দের কী অবদান ছিল ?রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে: 

1. বিদ্রোহীর ভূমিকায়:

সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলেও স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন পরাধীন ভারতের অঘোষিত বিদ্রোহী। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ‘বিদ্রোহী সন্ন্যাসী’। তিনি ‘রাওলাট কমিটি’র তীব্র নিন্দায় মুখর হন। নেতাজি তাঁর অসম্পূর্ণ আত্মজীবনী ‘ভারত পথিক’-এ স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “স্বামীজির বাণী ও রচনাবলি আমার চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।”

2 দেশপ্রেমের জাগরণে:

ভারতবাসীকে দেশপ্রেমের মন্ত্রে স্বামীজি উদ্বুদ্ধ করেন। স্বামীজি তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন।

স্বামীজির দেশপ্রেমমূলক বাণীগুলিতে কমবেশি প্রায় সমস্ত জাতীয় নেতাই প্রভাবিত হয়েছিলেন। এর প্রমাণ মেলে গান্ধিজির উক্তিতে—“তাঁর (স্বামীজির) রচনাবলি পাঠ করে মাতৃভূমির প্রতি আমার ভালোবাসা সহস্রগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।”

আরও পড়ুন: প্রাচীন দাসত্ব এবং আধুনিক দাসত্বের মধ্যে পার্থক্য

 

Join Telegram

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *