Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে নতুন গতিবেগ আসে । ভারত ছাড়াে আন্দোলন , আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান , ১৯৪৬ – এর নৌবিদ্রোহ , সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ইত্যাদি ঘটনাবলি ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে । ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় ।
1. ক্রিপস্ মিশন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান যােগ দিলে জাপান কর্তৃক ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় । ভারতবাসীর সমর্থন ও সহযােগিতা ছাড়া ইংরেজের পক্ষে জাপানের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না । তাই ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলােচনার জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতে পাঠানাে হয় ( মার্চ , ১৯৪২ খ্রি . )
![]() |
চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী |
কিন্তু ক্রিপস্ মিশন ভারতের রাজনৈতিক চক্রবর্তী রাজাগােপালাচারী দলগুলিকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয় । জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ উভয়েই ক্রিপস্ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ।
‘ ক্রিপস্ মিশন ব্যর্থ হলে ভারতবাসীর মনে হতাশা ও চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । দেশবাসীর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় কংগ্রেস ইংরেজকে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেয় । এই লক্ষ্যে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারত ছাড়াে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয় । সরকার জাতীয় নেতাদের গ্রেফতার করে আন্দোলনকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে।
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লিগের লাহাের অধিবেশনে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গৃহীতসাধারণ নির্বাচন আসন্ন হলে ব্রিটিশ সরকারও ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান খুঁজতে তৎপর হয় । এই অবস্থায় ভারতের বডােলাট লর্ড ওয়াভেল ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সঙ্গে আলােচনা করেহয়েছিল । মহম্মদ আলি জিন্না ক্রিপস প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে অনড় থাকেন । এই সংকট মােচনের উদ্দেশ্যে চক্রবর্তী রাজাগােপালাচারী একটা সমাধানসূত্র দেন ( ১৯৪৪ খ্রি . ) । এতে বলা হয় যে , লিগ কংগ্রেসের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি মেনে নিক এবং জাতীয় সরকার গঠনে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাক । স্বাধীনতার পর গণভােটের মাধ্যমে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টি বিবেচিত হবে বলে তিনি প্রস্তাব রাখেন । এটি সি . আর . ফর্মুলা নামে খ্যাত । জিন্না এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন ।
ইউরােপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পরেও এশিয়ায় যুদ্ধ চলতে থাকে । এদিকে ব্রিটেনেএকটি সমাধানসূত্র প্রকাশ করেন ( ১৯৪৫ খ্রি . ) । এটি ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে খ্যাত । লর্ড ওয়াভেল ঘােষণা করেন যে , শীঘ্রই ভারতের সংবিধান রচনার জন্য ভারতের রাজনৈতিক দলসমূহ ওরাজন্যবর্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘ গণপরিষদ গঠন করা হবে ।
ওয়াভেল পরিকল্পনা বিষয়ে আলােচনার জন্য সিমলাতে এক সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করা হয় ( ১৯৪৫ খ্রি . ) । সেখানে জিন্না দাবি করেন যে , বড়লাটের শাসন পরিষদে কেবল লিগ মনােনীত মুসলিম সদস্যদেরই নিতে হবে । কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেও বহু মুসলিম সদস্য ছিলেন । স্বভাবতই জিন্নার দাবি কংগ্রেস মানতে অস্বীকার করে । ফলে সিমলা বৈঠক ভেস্তে যায় ।
গণপরিষদ গঠনের যখন উদ্যোগ চলছে সেই সময় ঐতিহাসিক লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের বিচার শুরু হয় । এর প্রভাব পড়ে নৌবাহিনীতে । ভারতীয় নাবিকদের প্রতি শ্বেতাঙ্গ সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে এবং চাকরির শর্তাবলির উন্নয়নের দাবিতে বােম্বাই বন্দরে তলােয়ার জাহাজে নৌবিদ্রোহের সূচনা হয় । নৌবিদ্রোহ স্বাধীনতা লাভকে ত্বরান্বিত করে ।
১৯৪৫ – এর নির্বাচনে ব্রিটেনে শ্রমিকদল বিজয়ী হয় । নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতীয়দের দাবির প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন । দেশব্যাপী বিক্ষোভ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটেনের শ্রমিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া আলােচনার জন্য ভারতে মন্ত্রী মিশন ’ পাঠানাের সিদ্ধান্ত নেয় । ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্য পেথিক লরেন্স , স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ এবং এ . ভি . আলেকজান্ডার এই উদ্দেশ্যে ভারতে উপস্থিত হন ( মার্চ , ১৯৪৬ খ্রি . )।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুল ভােটে বিজয়ী হলে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ( ২ সেপ্টেম্বর , ১৯৪৬ খ্রি . ) । ক্ষুদ্ধ জিন্না এই প্রেক্ষিতে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন । লিগের মদতে ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রামের নামে কলকাতায় শুরু হয় ভয়াবহ । দাঙ্গাহাঙ্গামা।
১৯৪৭ – এর ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি ঘােষণা করেন যে , ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের হাতে শাসনদায়িত্ব অর্পণ করে ভারত ছেড়ে চলে যাবে । ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ সম্পন্ন করার । উদ্দেশ্যে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় হিসেবে ভারতে আসেন ।
ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির গভীরতা বিচার করে মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের আবশ্যিকতা অনুধাবন করেন । উভয় দলের সম্মতিক্রমে তিনি ভারত বিভাগের ও ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেন ( জুন , ১৯৪৭ খ্রি . ) ।
উপসংহার : ১৯৪৭ – এর জুলাই মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাস করা হয় । এই আইনের ভিত্তিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয় । দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে পাকিস্তান ও ভারত আত্মপ্রকাশ করে।
Comments are closed.
ভালো লিকেছেন
All rights