WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মাধ্যমিক ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর | প্রথম অধ্যায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর



মাধ্যমিক ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর: সুপ্রিয় বন্ধুরা, আজকের পোস্টে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক (১০ম শ্রেণি) ইতিহাসের বড় প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করলাম। পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (WBBSE) ২০২৬ সালের জন্য নতুন প্যাটার্ন ও সম্পূর্ণ সিলেবাস প্রকাশ করেছে। তাই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করার জন্য আমরা ইতিহাসের প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করেছি।

Digital বোর্ড: বিষয়বস্তু ✦ show

মাধ্যমিক ইতিহাস বড় প্রশ্ন উত্তর List

#1 নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করো।

Answer:- ভূমিকা :- প্রচলিত ইতিহাসচর্চার একটি বিকল্প ও সংশোধনবাদী ধারা হিসেবে আধুনিক ইতিহাসচর্চার একটি বিশেষ দিক হল ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা।

প্রেক্ষাপট :- নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার উদ্ভবের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে

1. উন্নয়নের প্রচেষ্টা :- প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে উদার সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন, জীবনযাত্রাসহ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রচেষ্টা মানবসমাজে অগ্রগতির সূচনা করায় সমাজের নীচুতলার মানুষ গুরুত্ব লাভ করে।

2. আন্দোলন ও মতাদর্শের বিকাশ :- ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে জাতিবিদ্বেষ, যুদ্ধবিরোধী মানসিকতা, নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ফলে ঘটনার নতুন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শুরু হয়।

3. অবহেলিত বিষয়ে গুরুত্ব দান :- ঐতিহাসিক লরেন্স ডব্লু লেভাইন তাঁর ‘Black Culture’-এর উপর গবেষণালব্ধ বইয়ের প্রথম বাক্যেই ঘোষণা করেন যে, এটাই হল সেই সময় যখন ঐতিহাসিকদের নিজস্ব চেতনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এবং একইভাবে দরকার গবেষণার মাধ্যমে অবজ্ঞাপ্রাপ্ত ও অবহেলিত বিষয়গুলির প্রতি গুরুত্ব দান করা।

8 ঐতিহাসিকদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কসবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী ইউরোপের ঐতিহাসিকগণ সমাজের নীচুতলা থেকে ইতিহাস রচনায় সচেষ্ট হন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক হলেন ক্রিস্টোফার হিল, এরিক জে হবসবম, প্যাট্রিক জয়েস, এডওয়ার্ড থম্পসন প্রমুখ।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, বিভিন্ন ঘটনার ফলশ্রুতি হিসেবে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক ইতিহাসের মূল বিষয় হল সমাজের সামগ্রিক ইতিহাস।


Also read


#2 নতুন সামাজিক ইতিহাস কী তা বিশ্লেষণ করো

Answer- ভূমিকা : প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালের বিভিন্ন ঘটনা ও মতাদর্শের ফলশ্রুতি হিসেবে ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে গড়ে ওঠা নতুন সামাজিক ইতিহাসের মূল বিষয় হল সমাজের সামগ্রিক ইতিহাস।

সামাজিক ইতিহাসের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
সামাজিক ইতিহাস-এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য হল—

1. সামগ্রিক সামাজিক ইতিহাস :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সমাজের নীচুতলার মানুষ ও বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির মানুষের ইতিহাস গুরুত্ব লাভ করে। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এই ইতিহাসের পরিধি বিস্তৃত হয় ও তা নতুন সামাজিক ইতিহাসরূপে পরিচিত হয়।

2. ঘটনা-বঞ্চনার তথ্যনিষ্ঠ অনুসন্ধান :- নতুন ধরনের ও সামাজিক ইতিহাসের বিষয়গত দিক হল শ্রমিক-কৃষক ইতিহাস, লিঙ্গগত ইতিহাস, কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাস, অভিপ্রয়াণের ইতিহাস, যুবক ও শিশু-সহ পরিবারের ইতিহাস, গোষ্ঠী ইতিহাস, হিংসার ইতিহাস প্রভৃতি।

3. সংশোধনবাদ :- নতুন সামাজিক ইতিহাস হল প্রচলিত রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিক ইতিহাসের বিপরীতে এক সংশোধনবাদী ইতিহাস।

4. প্রাতিষ্ঠানিক :- নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার জন্য ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দ্য সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন’, যার মুখপত্র হল ‘সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি’।

উপসংহার

নতুন সামাজিক ইতিহাস সমালোচনামুক্ত নয়। অনেকক্ষেত্রেই এই ইতিহাসে প্রচলিত ইতিহাসকে খণ্ডন করা হয় এবং নতুন তথ্য ও সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়।


#3 স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করো। অথবা, স্থানীয় ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে টীকা লেখো।

Answer– ভূমিকা :- আধুনিক ইতিহাসচর্চার বিশেষ দিক হল স্থানীয় ইতিহাস। স্থানীয় ইতিহাস বলতে বোঝায় ভৌগোলিকভাবে স্থানীয় প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইতিহাস।

বিভিন্ন দিক :- স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দিককে এভাবে চিহ্নিত করা যায়

স্থানীয় ইতিহাসের সূত্রপাত :- উনিশ শতকের ইংল্যান্ডে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর বা শহরের ইতিহাস রচনার মাধ্যমে স্থানীয় ইতিহাস
লেখা শুরু হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াতেও এই ধরনের ইতিহাস রচনা শুরু হয়।

2. স্থানীয় বিষয় :- এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় দেশ বা ব্যাপক এলাকার পরিবর্তে ক্ষুদ্র এলাকাকে চিহ্নিত করে সেই স্থানের ইতিহাস অন্বেষণ করা হয়। এভাবে স্থানীয় ইতিহাসসমূহের সমন্বয়ে দেশের ইতিহাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

3. মৌখিক পরম্পরা :- স্থানীয় জনশ্রুতি, মিথ বা অতিকথা, উপকথা, মৌখিক পরম্পরাকে ভিত্তি করে রচিত স্থানীয় ইতিহাস অনেকক্ষেত্রেই অলিখিত থাকে এবং এজন্যই মৌখিক পরম্পরার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

4. সমাজের ক্ষুদ্র ইতিহাস :- স্থানীয় ইতিহাস রচনাকালে স্থানীয় সমাজের ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বা পরিবারের ইতিহাসকে তুলে ধরে এলাকার গুরুত্ব চিহ্নিত করা হয়। তাই এই ইতিহাস হল বৃহত্তর সমাজ-ইতিহাসের ক্ষুদ্র সংস্করণ।


#4 আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে সরকারি নথিপত্রকে কীভাবে ব্যবহার করা হয় তা বিশ্লেষণ করো। অথবা, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের সীমাবদ্ধতা লেখো।

Answer– ভূমিকা : আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সরকারি নথিপত্র। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বড়োলাট ও ভারত-সচিবের দলিলপত্র, বড়োলাটের নিম্নপদস্থ । রাজকর্মচারীদের রিপোর্ট বা প্রতিবেদন ও চিঠিপত্র, পুলিশ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রভৃতি।

ব্যবহার পদ্ধতি :– সরকারি নথিপত্রগুলি থেকে ভূমিরাজস্ব, বিদ্রোহ, সরকারের (আর্থিক, রাজনৈতিক প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক) নীতির কথা এবং ভারতের রাজনৈতিক, আন্দোলনের কথা জানা গেলেও এইসব তথ্য সবসময় সত্যি নাও হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে কয়েকটি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন

1. নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা :- ব্রিটিশ আমলে সরকারি নথিপত্রগুলির অধিকাংশই সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা হওয়ায় উপনিবেশ-বিরোধী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও কার্যকলাপ সম্পর্কে সেগুলিতে নেতিবাচক বর্ণনাই পাওয়া যায়। তাই এইসব নথিপত্রের নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

2. বেসরকারি তথ্যের সঙ্গে যাচাই :- বেসরকারি নথি বা সাহিত্য বা আন্দোলনকারীদের জীবনস্মৃতি বা মুখের কথার মাধ্যমে সরকারি নথিপত্রগুলির বর্ণনা যাচাই করা প্রয়োজন।

3. সংবাদপত্রের সঙ্গে যাচাই :- সংবাদপত্রের প্রতিবেদন বা রচনায় সমসাময়িক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই এগুলি থেকে সরকারি নথির তথ্য যাচাই করা উচিত।

4. নৈর্ব্যক্তিক মানসিকতা দ্বারা যাচাই :- সরকারি নথিপত্র থেকে নিরপেক্ষ ইতিহাস গড়ে তুলতে হলে নথিপত্র ব্যবহারকারীকে নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে।


#5 ‘জীবনের ঝরাপাতা’ নামক আত্মজীবনী আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানরূপে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বিশ্লেষণ করো।

Answer– ভূমিকা : সরলাদেবী চৌধুরানি তাঁর (১৮৭২-১৯৪৫ খ্রি.) আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’-তে ব্যক্তিজীবনের কাহিনির পাশাপাশি জাতীয় জীবনের কথাও জানা যায়। তাই আত্মজীবনীটি ভারতের আধুনিক ইতিহাসের এক মূল্যবান সূত্র।

উপাদানরূপে গুরুত্ব :- ইতিহাসের উপাদানরূপে যে-সমস্ত কারণে এই আত্মজীবনীটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল—
ঠাকুর পরিবারের ইতিহাস :- উনিশ শতকের বাংলার শীর্ষস্থানীয় মহিলা সাহিত্যিক স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগনি সরলাদেবী তাঁর রচনার মাধ্যমে ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্যের নানান কথা প্রকাশ করেছেন।

2. রাজনৈতিক ইতিহাস :- এই বই থেকে উনিশ শতকের শেষদিকের চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের সঙ্গে জড়িত দুই তাত্ত্বিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বামী বিবেকানন্দের কথা যেমন জানা যায়, আবার তেমনই, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা এবং সরলাদেবীর স্বদেশি ভাবধারা প্রচারের কথাও রয়েছে এই আত্মজীবনীতে।

3. সামাজিক ইতিহাস :– এই বইয়ে অভিজাত পরিবারের কায়দাকানুন, নারীশিক্ষা, বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহেবি সংস্কৃতি আলোচিত হয়েছে।

উপসংহার

তবে ‘জীবনের ঝরাপাতা’র কয়েকটি সীমাবদ্ধতা ছিল এবং একারণেই তা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। তাই এই গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যকে সমসাময়িক অন্যান্য নথিপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের দ্বারা যাচাই করা প্রয়োজন।


#6 ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা কী?

Answer— ভূমিকা : ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের জন্য সাধারণ মহাফেজখানা, গ্রন্থাগার বা বিভাগীয় দপ্তর প্রভৃতি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি আজকাল ইনটারনেট (www) থেকেও ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

ইনটারনেট ব্যবহারের সুবিধা সংগ্রহে ইনটারনেট ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল—

1. তথ্যের সহজলভ্যতা :- দেশবিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র, গ্রন্থাগার ও মহাফেজখানা, মিউজিয়াম প্রভৃতির সংগৃহীত নথিপত্র ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ইনটারনেট-এ আপলোড-এর ফলে সহজেই তথ্য পাওয়া যায়।

2. সময় ও খরচ হ্রাস : ইতিপূর্বে তথ্য সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা বিদেশে যেতে হত। কিন্তু এখন ঘরে বসে ইনটারনেটের মাধ্যমে তা খুব অল্প সময়ে ও অল্প খরচে পাওয়ার ফলে সময়ের অপচয় কমে ও গবেষণা খরচ হ্রাস পায়।

ইনটারনেট ব্যবহারের অসুবিধা

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইনটারনেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেমন

1. সত্যাসত্যের অনিশ্চয়তা : চাক্ষুষ নথিপত্র ঘেঁটে বা আকর গ্রন্থ পাঠ করে ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের সত্যতা সম্পর্কে যতটা নিশ্চিত হওয়া যায় ইনটারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে তা সম্ভব নয়।

2. তথ্য সূত্রের অভাব :- ইনটারনেট থেকে পাওয়া তথ্য সংগ্রহের সময় তথ্যসূত্র তেমন না থাকার ফলে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতাও থাকে না। আবার অনেক সময় ইনটারনেট-এ তথ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে; ফলে গবেষণার কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

উপসংহার :- কোনো একটি বিষয়ে অল্প সময়ে ইনটারনেট-এ চটজলদি প্রচুর পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত তথ্য পাওয়া গেলেও পরে আকর গ্রন্থ বা নথিপত্র থেকে তথ্যগুলি মিলিয়ে নেওয়া উচিত। এর ফলে ইতিহাস বিকৃতি ঘটে না।


7# নারীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Answer— ভূমিকা : উনিশ শতকের বিখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত ও সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-৯১ খ্রি.)। নারীমুক্তির উদ্দেশ্যে সারাজীবন ধরে শিক্ষাবিস্তার ও সমাজসংস্কারে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

প্রেক্ষাপট :- নারীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগরের লক্ষ্য ছিল দুটি, যথা—
1. বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ প্রবর্তন, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ রোধ, এবং বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি অনুভব করেন নারী মুক্তির জন্য প্রয়োজন নারীশিক্ষা।

2. নারীকে শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব হলে পরবর্তী প্রজন্মও শিক্ষিত হয়ে উঠবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।

নারীশিক্ষা বিস্তারে অবদান :

1. স্কুল প্রতিষ্ঠা : বিদ্যাসাগর বিদ্যালয় দক্ষিণবঙ্গের পরিদর্শকের সরকারি পদে থাকার (১৮৫৭-৫৮ খ্রি.) সুযোগে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় এবং ১০০টি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বেথুন সাহেবের উদ্যোগে ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ প্রতিষ্ঠাকালে তিনি বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন।

2. ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা :- বিদ্যাসাগর তাঁর নিজের জন্মস্থান মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে মা ভগবতী দেবীর পুণ্য স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠা করেন ভগবতী বিদ্যালয় (১৮৯০ খ্রি.)।

3. নারী শিক্ষা ভাণ্ডার

তাঁর প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়গুলিকে সরকার আর্থিক সাহায্যদান বন্ধ করলে বিদ্যাসাগর ‘নারীশিক্ষা ভাণ্ডার’ নামে একটি তহবিল গঠন করেছিলেন।

4. স্ত্রী শিক্ষা সম্মিলনী :- বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার যথাযথ প্রসারের জন্য মেদিনীপুর হুগলি বর্ধমানসহ বিভিন্ন জেলায় স্ত্রীশিক্ষা সম্মিলনী’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

উপসংহার
বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষার প্রসার ও নারী সমাজের উন্নতির জন্য যুক্তির চেয়ে হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের ওপর বেশি নির্ভর করেন। তাই ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁকে ‘ঐতিহ্যবাহী আধুনিককার’ বলে অভিহিত করেছেন।


8# রাজা রামমোহন রায় কীভাবে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তা ব্যাখ্যা করো। অথবা, সতীদাহ প্রথা কেন নিষিদ্ধ হয়?

Answer— ভূমিকা :- অষ্টাদশ শতকের সূচনায় কলকাতা-সহ বাংলায় গড়ে ওঠা সতীদাহ প্রথাবিরোধী আন্দোলনে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী রামমোহন রায় যুক্ত হন ও সাফল্যের সঙ্গে এই আন্দোলন পরিচালনা করেন।

রামমোহন রায়ের অবদান :- যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী রামমোহন রায় নিজেকে সতীদাহ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করেন।

1. নারী-হত্যা :– রামমোহন মত প্রকাশ করেন যে, সতীদাহের অধিকাংশ ঘটনাই স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ছিল না, তা ছিল বলপূর্বক নারী-হত্যা। সমসাময়িককালের বিভিন্ন তথ্য ও সরকারি নথিপত্র থেকেও এই বক্তব্য সমর্থিত হয়।

2. স্বতঃস্ফূর্ত রদ :- রামমোহন রায় আইনের পরিবর্তে মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও চেতনার প্রসারের মাধ্যমেই এই প্রথা রদ করতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষ একদিন এই প্রথার অবসান ঘটাবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।

3. চেতনা সৃষ্টি :– রামমোহন রায় সতীদাহ বিরোধী চেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে সতীদাহ প্রথাকে অশাস্ত্রীয় প্রমাণ করতে সচেষ্ট হন। এ ছাড়া সংবাদপত্রে বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে জনগণের চেতনা সঞ্চার করেন। প্রচারসভার পাশাপাশি শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে স্বামীর চিতায় সতী ইচ্ছুক বিধবাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

4. বেন্টিঙ্কের উদ্যোগকে সমর্থন :- রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের জন্য সরকারি সমর্থনের ওপর নির্ভর করেন। অবশেষে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংল্যান্ডের জনগণের একাংশ নিষ্ঠুর সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য আবেদন জানালে তৎকালীন বড়োেলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সপ্তদশ বিধি (১৭নং রেগুলেশান) জারি করে এই প্রথা রদ করেন।

মূল্যায়ন

সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলন শুধু রামমোহন রায়ের গড়ে তোলা আন্দোলন ছিল না, বরং আগেই গড়ে এক আন্দোলন। তবে এই আন্দোলন তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শেষপর্যন্ত সাফল্য লাভ করে।


#9 সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলন বিশ্লেষণ করো।

Answer— ভূমিকা : মৃত স্বামীর চিতায় তার সদ্যবিধবা জীবন্ত স্ত্রীর সহমরণ সতীদাহপ্রথা নামে পরিচিত।
আন্দোলন :- বাংলা তথা ভারতের সমাজসংস্কার আন্দোলনে সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলন ছিল একটি ব্যাপক আন্দোলন এর বিভিন্ন দিক হল—

1. সার্বিক আন্দোলন :- প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে প্রচলিত সতীদাহপ্রথা গোঁড়া হিন্দুদের কাছে পবিত্র ও মহান প্রথা হলেও বাস্তবে তা অত্যন্ত নিষ্ঠুর হওয়ায় এই প্রথার বিরুদ্ধে উনিশ শতকে কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলন গড়ে ওঠে।

2. সরকারি নিয়ন্ত্রণ :- সতীদাহপ্রথার ব্যাপকতায় চিন্তিত ইংরেজ সরকার ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে একটি আইনের মাধ্যমে গর্ভবতী ও অল্পবয়সি নারীর সতী হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

3. রামমোহনের চেষ্টা :- মানবতাবাদী ও যুক্তিবাদী রাজা রামমোহন রায় সতীদাহপ্রথা বিরোধী প্রচারসভা ও প্রচারপুস্তিকার মাধ্যমে এই প্রথার বিরোধিতা করেন ও সতীদাহপ্রথাকে অশাস্ত্রীয় বলে প্রমাণ করেন। সরকারের কাছে আবেদনপত্র প্রেরণ করে সরকারি আইনের সাহায্যে এই প্রথা রদে সচেষ্ট হন।

4. ইংল্যান্ড ও বেন্টিঙ্কের উদ্যোগ :- ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংল্যান্ডের জনগণ তাদের পার্লামেন্টের মাধ্যমে নিষ্ঠুর সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য আবেদন জানায়। তৎকালীন বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কও এই প্রথার বিরোধী হওয়ায় তিনি ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘সপ্তদশ বিধি’ নামে আইন প্রবর্তন করে এই প্রথা রদ করেন।

উপসংহার

 উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, রামমোহন রায়ের আগেই গড়ে ওঠা সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলনকে তিনি সাফল্যের পথে এগিয়ে দেন।


#10 বিধবাবিবাহ আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।

Answer— ভূমিকা :– অষ্টাদশ শতক থেকেই বিধবাবিবাহ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং উনিশ শতকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সুযোগ্য নেতৃত্বে এই আন্দোলন সফল হয়েছিল।

বিদ্যাসাগরের অবদান :- বিদ্যাসাগর ছিলেন মানবতাবাদী, শিক্ষাব্রতী ও নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি বহুবিবাহের বিরোধিতার পাশাপাশি বিধবাদের বৈধব্য যন্ত্রণা উপলব্ধি করে এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে যেভাবে যুক্ত করেন তা হল

1. শাস্ত্র নির্ভরতা :- বিধবাবিবাহে হিন্দুশাস্ত্রের সমর্থন খোঁজার (১) জন্য তিনি ভারতের প্রাচীন পুথিপত্র ও গ্রন্থাদি পাঠ করেন ও বিধবাবিবাহের সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন এবং “পরাশর শি সংহিতা” থেকে উদ্ধৃতি তুলে প্রমাণ করেন যে বিধবাবিবাহ হিন্দুশাস্ত্র সম্মত।

2. গ্রন্থ প্রকাশ : বিদ্যাসাগর “বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব” (১৮৫৫ খ্রি.) নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে বিধবাবিবাহের সপক্ষে জনমত গঠন করতে সচেষ্ট হন। বিদ্যাসাগরের মতামতের বিরুদ্ধে সেইসময় অন্তত ৩০টি প্রতিবাদ পুস্তক প্রকাশিত হয়।

3. সরকারের কাছে আবেদনপত্র প্রেরণ :– তিনি বিধবাবিবাহ প্রবর্তন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের জন্য প্রায় এক হাজার জনের স্বাক্ষর করা একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে প্রেরণ করেন। (অক্টোবর, ১৮৫৫ খ্রি.)। বিদ্যাসাগরের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাজা রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে তৎকালীন গোঁড়া হিন্দুরা একজোট হন।

4. সরকারি উদ্যোগ :- বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহের সপক্ষে আবেদনের পাশাপাশি বিধবাবিবাহের বিরুদ্ধেও অন্তত ১৪টি আবেদনপত্র সরকারের কাছে পাঠানো হয়। শেষপর্যন্ত গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং বিধবাবিবাহ আইন পাস করেন। (জুলাই, ১৮৫৬ খ্রি.)।

উপসংহার

বিধবাবিবাহ আইন পাস হলে বিদ্যাসাগর শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে কালীমতীদেবী নামের এক বিধবার এবং নিজের পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে আর-এক বিধবার বিবাহ দেন।


#11 স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো। অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের ‘নব্য বেদান্ত’ আদর্শ ও তার প্রয়োগ ব্যাখ্যা করো। অথবা, ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারা সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

Answer— ভূমিকা :- অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ‘মানব সেবাই ধর্মের সর্বোচ্চ লক্ষ্য’ এবং একারণেই তিনি আত্মমুক্তি অপেক্ষা সমাজের উন্নতির ওপর অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি ‘বনের বেদান্ত’কে ঘরে আনার কথা বলেন এবং বেদান্তকে মানব কল্যাণের কাজে ব্যবহারের কথা বলেন যা ‘নব্য বেদান্ত’ নামে পরিচিত।

চিন্তাধারা :- তাঁর চিন্তাধারা বিভিন্ন দিকে যেভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল তা হল—

1. গঠনমূলক সমালোচনা :- প্রকাশ্য রাজনীতিতে না নামলেও বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে বিবেকানন্দ তৎকালীন ভারতের দারিদ্র্য, অস্পৃশ্যতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, জাতিভেদ, নারীনির্যাতন, ধর্মীয় বিরোধ প্রভৃতির বিরুদ্ধে তীব্র কশাঘাত হেনেছিলেন।

2. দরিদ্রদের সেবা :- ভারতবর্ষের পথে-প্রান্তরে ভ্রমণ করে বিবেকানন্দ দরিদ্র ও অজ্ঞ ভারতবাসীর মধ্যে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। জীবের মধ্যেই তিনি ভগবান শিবকে প্রত্যক্ষ করে বলেছিলেন—‘যত্র জীব তত্র শিব’।

3. সমাজমুক্তি :- মানবতাবাদী ও সমাজপ্রেমী বিবেকানন্দ আত্মমুক্তি অপেক্ষা সমাজের উন্নতির জন্য বেদান্তকে মানবহিতের কাজে ব্যবহারের কথা প্রচার করেন। এভাবেই ‘নব্যবেদান্ত তাঁর ধর্মসংস্কারের অভিমুখের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

4. রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা :- জাতির মধ্যে ত্রাণকার্য, শিক্ষার প্রসার, সুচিকিৎসার প্রসার এবং প্রকৃত মানুষ গড়ার উদ্দেশ্যে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে তাঁর উদ্যোগে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ প্রতিষ্ঠিত হয়।


#12 প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক কী? মেকলে মিনিট কী?
অথবা, উনিশ শতকে বাংলাদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কেন ঘটে? এর পরিণতি কী হয়?

Answer— প্রথম অংশ, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক :- ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে এদেশের শিক্ষাখাতে প্রতি বছর বরাদ্দ করা একলক্ষ টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে খরচ করা হবে সে সম্পর্কে ১৮২০-র দশকে এক তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়, যা প্রাচ্য শিক্ষা-পাশ্চাত্য শিক্ষা-বিষয়ক দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।

বিতর্কের বিষয় :- ওই সময়ে যাঁরা প্রাচ্য ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার কথা বলেন তাঁরা প্রাচ্যবাদী এবং যাঁরা ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষাচর্চার কথা বলেন তাঁরা পাশ্চাত্যবাদী নামে পরিচিত হন। এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রমুখ প্রাচ্যবাদীর মত ছিল—দেশীয় ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো। অন্যদিকে লর্ড মেকলে, চার্লস গ্রান্ট প্রমুখ পাশ্চাত্যবাদীর উদ্দেশ্য ছিল মূলত ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো।

ভারতীয়দের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্যবাদী, পক্ষান্তরে রাজা রাধাকান্ত দেব প্রমুখ ছিলেন প্রাচ্যবাদী। রাজা রামমোহন রায় কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি করেন।

ভারতে ইংরেজি শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাচ্যবাদী পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কে শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীদের মতই সুপ্রতিষ্ঠিত | হয় এবং ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক মেকলে মিনিট-এর ভিত্তিতে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার প্রসারকে ‘সরকারি নীতি’ বলে ঘোষণা করেন।



মূল্যায়ন :- ভারতের বাংলা প্রদেশে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্ক শুরু হলেও বোম্বাই প্রদেশ-সহ অন্যান্য প্রদেশে অনুরূপ বিতর্ক হয়নি। এই স্থানগুলিতে পাশ্চাত্য শিক্ষানীতিই গৃহীত হয়েছিল। যাইহোক, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য বিতর্কের অবসানের ফলে ভারতে দ্রুত পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে।

দ্বিতীয় অংশ, মেকলে মিনিট :- বড়োলাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের শাসনকালে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাটের পরিষদে আইন সদস্যরূপে যোগ দেন ও পরবর্তীকালে শিক্ষাসভার সভাপতি হন। তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে সচেষ্ট হন পাড়া এবং ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেন যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত। তাঁর মতের থরে সমর্থনে যুক্তি দেন যে—

1. ভারতীয় ভাষার দৈন্যতা :- তাঁর মতে, সমস্ত ভারত ও বার্তা আরবের যে প্রাচীন সাহিত্য রয়েছে তা ইউরোপীয় ভাষা অপেক্ষা নিকৃষ্টতর হওয়ায় ভারতীয়দের মাতৃভাষাগুলি শিক্ষার বাহনরূপে যথার্থ ভূমিকা পালনে অক্ষম।

2. ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব : তিনি মনে করেন যে, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য হল জ্ঞানবিজ্ঞানের এক অফুরন্ত খনি।

3. ইংরেজি জানা কর্মচারী : ইংরেজি ভাষা প্রবর্তিত হলে ভারতে নবজীবনের সূচনার পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রশাসনে ইংরেজি ভাষা জানা কর্মচারী নিয়োগ করাও সম্ভব হবে।
মেকলে মিনিট প্রবর্তনের মাধ্যমে সরকারি অর্থ পাশ্চাত্য ভাষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে এটি ছিল খুব এর তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।


#13 খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

Answer— ভূমিকা :- আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা।

বৈশিষ্ট্য :- খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচতচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1. পৃথক খাদ্যাভ্যাসের কারণ :- মানুষের রুচি ও সামর্থ্য, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ধর্মীয় রীতি ও বিধিনিষেধ কীভাবে মানুষের পৃথক পৃথক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলে তা চিহ্নিত করা।

2. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে ঔপনিবেশিক প্রভাব :- এশিয়া-আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে শাসক ও শাসিত উভয়েরই খাদ্যাভ্যাসে কীভাবে পরিবর্তন এসেছিল তা চিহ্নিত করা।

 

3. খাদ্যগ্রহণ ও বর্জনের কারণ :- স্বাধীন মানুষেরা কেন ও কীভাবে খাদ্য গ্রহণ-বর্জন করে তা তুলে ধরা এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আবার ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনস্থ শাসিত ও শাসকদের খাদ্যগ্রহণ ও বর্জনকে তুলে ধরা এই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়।

4. খাদ্যাভ্যাস ও জাতীয়তাবাদ :- উপনিবেশের জনগণ দেশজ খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তা ব্যাখ্যা করাও হল এই ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার

খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী খাবার সংক্রান্ত ইতিহাসের পাশাপাশি হাজার হাজার বছরের খাবার প্রক্রিয়াকরণ ও হারিয়ে যাওয়া খাবারের রন্ধন প্রণালীও তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্যাভ্যাস সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে কীভাবে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাও উপলব্ধি করা সম্ভব হয়েছে।


#14 শিল্পচর্চার ইতিহাসের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করো

Answer— ভূমিকা :- শিল্পচর্চার ইতিহাসের অন্তর্গত বিষয়গুলি হল সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র।

শিল্পচর্চার বিভিন্ন দিক :- ইউরোপে রেনেসাঁসের সময়কাল

থেকেই চলচ্চিত্র ছাড়া অন্যান্য শিল্পচর্চার ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল। এর বিভিন্ন দিকগুলি হল—

1. আকার বা ধরন চিহ্নিতকরণ :- শিল্পচর্চার অন্তর্গত বিষয়গুলির উদ্ভব, ধরন ও রীতির বিবর্তনকে চিহ্নিত করে এই বিষয়গুলির ইতিহাস নির্মাণ করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।

2. নান্দনিকতা :- সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র-এর সঙ্গে যুক্ত নান্দনিকতার বিষয়টি কীভাবে শ্রোতা ও দর্শকদের চিত্ত বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিক ও মানসিক সংহতি গড়ে তুলেছিল তা চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

3. প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব :- শিল্পচর্চাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংগীতকেন্দ্র, নৃত্যশালা, নাট্যকেন্দ্র বা রঙ্গমঞ্চ, সিনেমা হল এবং এইসব প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রগুলির পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে তাঁদের অবদানের মূল্যায়ন করাও এই ইতিহাসের এক বিশিষ্ট দিক।

4. রাজনৈতিক গুরুত্ব :- সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটি দেশের সাংস্কৃতিক সত্তা প্রকাশিত হয়। এই সত্তা কীভাবে একটি দেশের রাজনৈতিক সংহতি বা স্বাধীনতা সংগ্রামকে উজ্জীবিত করে তোলে তা চিহ্নিত করাও শিল্পচর্চার ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার

শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও শিল্পচর্চা সম্পর্কিত পরীক্ষানিরীক্ষার মূল্যায়ন করার মাধ্যমে কলাকুশলীদের ইতিহাসও গড়ে ওঠে।


#15 পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

Answer— ভূমিকা :- আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি দিক হল পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস, যা কিনা সভ্যতার বিকাশ ও বিবর্তনের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

বৈশিষ্ট্য :- পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল

1. উদ্ভব ও বিবর্তন : পোশাক-পরিচ্ছদের উদ্ভব ও তার বিবর্তনকে চিহ্নিত করে মানবসভ্যতার বিকাশে তার গুরুত্বকে তুলে ধরা এবং পোশাক কীভাবে কর্তৃত্ব ও আভিজাত্যের মাপকাঠি হয়ে উঠেছিল তা ব্যাখ্যা করা এই ইতিহাসের অন্যতম উদ্দেশ্য।

2. পোশাকের ভিন্নতা :- এই ইতিহাসচর্চায় শিল্পবিপ্লবের পূর্বের এবং শিল্পবিপ্লব ও শিল্পবিপ্লবের উত্তর পর্বের পোশাকের ধরন ও বিন্যাসকে চিহ্নিত করা হয়। পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস সমাজের অভিজাত ও সাধারণ মানুষের পোশাকের ভিন্নতার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে।

3. স্বাস্থ্যবিধি :- আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপে বিশেষত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে নারীদের পোশাকের আঁটোসাটো ধরন ও বাহুল্যতা ক্রমশই নারীদের শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পোশাকের উদ্ভব ও তার বিবর্তনকে চিহ্নিত করাও এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

4. রাজনৈতিক তাৎপর্য :- আধুনিক বিশ্বে ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে পাশ্চাত্য পোশাক কীভাবে উপনিবেশগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি দেশজ পোশাক সংস্কৃতি কীভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সংহতি দান করে তাও খুঁজে দেখে এই ইতিহাস।

উপসংহার

এভাবে দেখা যায়, পোশাকের ইতিহাসের সঙ্গে সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ইতিহাসও যুক্ত থাকায় পোশাকের ইতিহাসচর্চার ইতিহাস সামগ্রিক ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।


#16 যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো

Answer— ভূমিকা :- ১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের অন্যতম দিক হিসেবে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চার সূচনা হয়।

বৈশিষ্ট্য :- যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1. পরিধি :- যানবাহন মূলত তিন ধরনের যথা—জল, স্থল ও আকাশপথের যানবাহন। অন্যদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, চিঠিপত্র, রেডিয়ো, টিভি, ফ্যাক্স, মোবাইল ফোন প্রভৃতি।

2. উদ্ভব ও উন্নতি :- এই ইতিহাসচর্চায় চাকা আবিষ্কার থেকে শুরু করে যানবাহনের উদ্ভব ও তার বিবর্তন এবং যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরনকে চিহ্নিত করা হয়। এর পাশাপাশি প্রাচীন যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সমসাময়িক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাথক ও অগ্রগতি চিহ্নিত করাও এই ইতিহাসচর্চার অন্যতম উদ্দেশ্য।

3. প্রযুক্তিগত উন্নতি :- যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মূলে থাকে যে প্রযুক্তিগত উন্নতি, সেই অগ্রগতিকে খুঁজে বের করাও এই ইতিহাসচর্চার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

4. প্রভাব :- বাণিজ্য, যাতায়াত, সাম্রাজ্যবাদের প্রসার, নগরায়ণ ও পরিবেশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাবকে চিহ্নিত করে এই ইতিহাস বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার

যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে; যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস একটি রাষ্ট্রে সংহতি ও জাতীয়তাবাদ যেমন সৃষ্টি করে, তেমনি তা আন্তর্জাতিকতাবাদের বিকাশেও সাহায্য করে।


#16 স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করো। “অথবা, স্থানীয় ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে টীকা লেখো।

স্থানীয় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব continue reading


#17 দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস ও তার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো

Answer— ভূমিকা :- আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি দিক হল দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস। এর প্রধান দুটি বিষয় হল ছবি আঁকা ও ফোটোগ্রাফি।

দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস

মানুষ যখন তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য রং ও তুলির মাধ্যমে কোনো দৃশ্য নির্মাণ করে, তখন তা ছবি ক আঁকা নামে পরিচিত। অন্যদিকে ক্যামেরার মাধ্যমে যখন কোনো বাস্তব জিনিসের ছবি তোলা হয় এবং তখন তা ফোটোগ্রাফি নামে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ থেকেই গুহাচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে ছবি আঁকার সূচনা হয় এবং ফোটোগ্রাফির সূচনা হয়। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে।

বৈশিষ্ট্য : দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করলে দেখা যায় যে

দৃশ্য শিল্পের উদ্ভব ও বিবর্তন

ছবি আঁকা ও ফোটোগ্রাফির উদ্ভব এবং তার যুগ নির্ধারণ ও শ্রেণিবিভক্তিকরণের মাধ্যমে দৃশ্য-শিল্পের ইতিহাস গড়ে ওঠে। এর মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতি বা পরিবেশের সম্পর্ককে চিহ্নিত করা যায়।

দৃশ্য শিল্পের সংস্কৃতিতে প্রভাব

দৃশ্যশিল্প মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতিতে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল তা চিহ্নিত করা এই ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

দৃশ্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা

দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসে শিল্পী এবং ফোটোগ্রাফার বা আলোকচিত্রীদের অভিজ্ঞতা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের ইতিহাস খুঁজে বের করাও ওই ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য।

দৃশ্য শিল্পের শিল্প-প্রতিষ্ঠান

দৃশ্য শিল্পের উন্নতির জন্য বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও রীতি গড়ে উঠেছে তার ইতিহাস আলোচনা ও এই ইতিহাসচর্চার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


#18 স্থাপত্য ইতিহাস বলতে কী বোঝায়? অথবা, স্থাপত্য কর্মের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

Answer ভূমিকা :- প্রাচীন স্থাপত্যগুলি হল ইতিহাসের সাক্ষী, তাই স্থাপত্যের ইতিহাস হল অনেকটাই জীবন্ত ইতিহাস।

স্থাপত্য ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য

ইউরোপে রেনেসাঁসের সময় থেকেই স্থাপত্য ও স্থাপত্য নির্মাণকার্যে যুক্ত কারিগরদের সম্পর্কে স্থাপত্যের ইতিহাস লেখার কাজ শুরু হয়। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

স্থাপত্য প্রতিষ্ঠাকাল

স্থাপত্যের ইতিহাসে মূলত ধর্মীয়, প্রশাসনিক বা নান্দনিকতার উদ্দেশ্যে নির্মিত স্থাপত্যগুলির প্রতিষ্ঠাকাল ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি চিহ্নিত করা হয়।

স্থাপত্য ইতিহাস নির্মাণ

স্থাপত্যগুলির মাধ্যমে অতীত ও বর্তমান যুক্ত থাকে বলে স্থাপত্যগুলির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস রচনায় এগুলির ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

স্থাপত্য স্থাপত্য রীতি

প্রতিটি পৃথক স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্য, বিবর্তন ও তার ধারাবাহিকতা তুলে ধরা এই ইতিহাসের বিশেষ লক্ষণ। এ প্রসঙ্গে ইউরোপের স্থাপত্যে ডোরীয় রীতি, গথিক রীতি, রোমান ও ভিক্টোরীয় রীতির কথা বলা যায়।

স্থাপত্য জাতীয় গর্ব

বিভিন্ন দেশের সেরা স্থাপত্যগুলি কীভাবে সেই দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে বা জাতীয় আন্দোলনে উৎসাহের সঞ্চার করে তা তুলে ধরাও এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার

স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ইতিহাসও জড়িয়ে থাকায় স্থাপত্য ইতিহাস সামগ্রিক ইতিহাসের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


19# শহরের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে বিশ্লেষণ করবে?

Answer— ভূমিকা : ১৯২০-র দশক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শহর-ইতিহাসচর্চা শুরু হয় এবং ১৯৬০-র দশক থেকে এই ইতিহাসচর্চায় জোয়ার দেখা দেয়।

শহরের ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য

শহর ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

শহরের উদ্ভব ও অবক্ষয়

কেন ও কীভাবে শহরের উদ্ভব ঘটে এবং শহরের প্রসার ও তার অবক্ষয়কে চিহ্নিত করাই হল শহরের ইতিহাসচর্চার প্রধানতম দিক। তাই এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় গড়ে ওঠা শহর বা অবক্ষয়প্রাপ্ত শহর বা মহানগরকে গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়।

শহর-সংস্কৃতি

শহরের বাসিন্দা ও তাদের বিন্যাস, শহরে অভিপ্রয়াণের ইতিহাস এবং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপকে চিহ্নিত করে শহরের বিবর্তনকে চিহ্নিত করা শহর ইতিহাসচর্চার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

শহরের ভূগোল

শহর-ইতিহাসচর্চায় শহরের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সামরিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বকে চিহ্নিত করা হয়। এগুলি শহরের ইতিহাস ও নাগরিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

শহরের স্থাপত্য

শহরে নাগরিকদের বাসস্থান, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণ, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ, খেলা ও অবসর বিনোদনের জন্য স্টেডিয়াম ও পার্ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়। তাই শহরের ইতিহাসের সঙ্গে স্থাপত্য-ইতিহাসও জড়িয়ে পড়ে।

উপসংহার

শহরের ইতিহাস শুধুমাত্র শহরের উদ্ভব ও অবক্ষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় না, বরং তার সঙ্গে সামাজিক, আর্থ-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকে।


#20 পরিবেশের ইতিহাসচর্চার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

Answer— পরিবেশের অর্থাৎ, প্রকৃতি জগতের সঙ্গে মানবসমাজের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ইতিহাসই হল পরিবেশের ইতিহাস। ইতিহাসের বিভিন্ন দিকগুলি হল—

1. পৃথিবী সৃষ্টির কাল থেকে মানুষের আবির্ভাব এবং পশুশিকারি জীবন থেকে আধুনিক মানবসভ্যতার উদ্ভবের পিছনে পরিবেশের ভূমিকা ও অবদানকে চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের মূল বৈশিষ্ট্য।

2. ১৯ ও ১৯৭০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনা থেকেই পরিবেশের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে; এই ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা হলেন—র‍্যাচেল কারসন, ডেভিড আরনল্ড, রামচন্দ্র গুহ, মাধব গ্যাডগিল, রিচার্ড গ্রোভ, স্যামুয়েল পি. হাইজ, আলফ্রেড ডব্লিউ ক্রুস।

পরিবেশ আন্দোলন

পরিবেশ ইতিহাসচর্চার একটি দিক হল পরিবেশ সংক্রান্ত আন্দোলন ও পরিবেশ সংরক্ষণ। পাশ্চাত্য দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গড়ে ওঠা এইসব আন্দোলনের মধ্যে ভারতের ‘তেহেরি গাড়োয়াল’, ‘চিপ্‌কো আন্দোলন’, নর্মদা আন্দোলনের কথা বলা যায়।

পরিবেশ আন্দোলনের গুরুত্ব

পরিবেশের ইতিহাসচর্চার গুরুত্বগুলি হল—
1, মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে পরিবেশের ভূমিকা চিহ্নিত করে পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা করা।

2, পরিবেশ সংকট ও তার প্রকৃতি, পরিবেশ বিপর্যয় ও তার ভয়াবহতা, বাস্তুতন্ত্র ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ, অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও তার প্রয়োগের ব্যবস্থা করা।

3, পরিবেশের ইতিহাসের সঙ্গে অন্যান্য ইতিহাসের যোগসূত্র নির্ধারণ করা।


21# বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করো।

Answer— ভূমিকা : বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ, প্রযুক্তির উদ্ভব ও তার অগ্রগতি এবং চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতিই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত।

বৈশিষ্ট্য : বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

জ্ঞানচর্চার ইতিহাস

প্রকৃতি ও মানব শারীরতত্ত্ব সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও তার ব্যাখ্যার ফলেই তত্ত্বগত ও ব্যাবহারিক জ্ঞানের উন্মেষ ঘটেছে বলে এই ইতিহাস হল বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চার ইতিহাস।

অগ্রগতি উপস্থাপন

এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় ইউরোপের রেনেসাঁস পর্বের পরবর্তীকাল থেকে বিংশ শতক পর্যন্ত সময়ের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শারীরজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতি পরিমাপ করা হয়।

মানবসভ্যতায় প্রভাব

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা কীভাবে মানবসমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক, সামরিক ও চিকিৎসার ক্ষেত্রকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা আলোচনা করাই এই ইতিহাসের উদ্দেশ্য।

মানবসভ্যতা থেকে যন্ত্রসভ্যতা

মানুষ তার বুদ্ধি ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির উন্নতি ঘটায়। প্রযুক্তির অগ্রগতিকে চিহ্নিত করে মানবসভ্যতার যন্ত্রসভ্যতায় উত্তরণকে ব্যাখ্যা করা এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা আধুনিক ইতিহাসচর্চার এক বিশেষ অঙ্গরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনকি সাধারণ ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক।


#22 বিপিনচন্দ্র পালের আত্মচরিত ‘সত্তর বৎসর’ কীভাবে ভারতের আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হয়ে উঠেছে তা বিশ্লেষণ করো। অথবা, আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিপিনচন্দ্র পালের ‘সত্তর বৎসর’ নামক আত্মজীবনী গ্রন্থের গুরুত্ব কী?

Answer— ভূমিকা : ভারতের জাতীয়তাবাদী ও চরমপন্থী নেতা বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী ‘সত্তর বৎসর’-এ ১৮৫৮-১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালের পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে। ফলে এটি আধুনিক ভারতের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ গৌণ উপাদান।

উপাদানের বিভিন্ন দিক

‘সত্তর বৎসর’ থেকে ইতিহাসের যে দিকগুলো জানা যায় তা হল

গ্রাম ও শহরের কথা

এই গ্রন্থ থেকে বিপিনচন্দ্র পালের বংশ {[ ও পারিবারিক ইতিহাস, বাখরগঞ্জ, ফেঁচুগঞ্জ, শ্রীহট্ট, হবিগঞ্জ-এর মতো গ্রামের পাশাপাশি তৎকালীন কলকাতা শহরের ইতিহাসও জানা যায়।

সংস্কৃতি

সত্তর বৎসর’ থেকে গ্রামীণ সংস্কৃতি অর্থাৎ দোল-দুর্গোৎসব, যাত্রাগান ও পুরাণপাঠ, বিবাহ প্রথা-র পাশাপাশি কলকাতার তৎকালীন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ও বিধিনিষেধ, মদ্যপান ও মদ্যপান নিবারণী সমিতির কথাও জানা যায়।

ব্রাহ্মসমাজের রাজনৈতিক আদর্শ

তিনি দেখিয়েছেন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালিরা নতুন সামাজিক আদর্শের সন্ধান পেয়েছিল। তৎকালীন ব্রাহ্মসমাজও এই শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার আদর্শের সঞ্চার করেছিল।

ভারতসভা ও হিন্দুমেলা

‘সত্তর বৎসর’ থেকে আনন্দমোহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে ছাত্রসভা বা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘ভারতসভা’ গঠনের কথা এবং নবগোপাল মিত্র ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দুমেলা’ নামক জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠানের কথাও জানা যায়।

উপসংহার

বিপিনচন্দ্র পালই প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি তাঁর আত্মজীবনীতে ‘দেশকথা’কে তুলে ধরেছেন। তবে তাঁর এই দেশকথাতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।


#23 আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদানরূপে ‘জীবনস্মৃতি’র গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো। , ইতিহাসের উপাদান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবনস্মৃতি’ গুরুত্বপূর্ণ কেন?

Answer— ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘জীবনস্মৃতি’ নামক আত্মজীবনীটি একটু ভিন্ন ধরনের, কারণ এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ তাঁর আত্মগঠনের প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন। তাই আধুনিক ভারতের ব্যক্তি-ইতিহাস রচনার উপাদানরূপে এই গ্রন্থটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

জীবনস্মৃতির গুরুত্ব’ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘জীবনস্মৃতি’র গুরুত্বগুলি হল—

1. বাল্যকথা : এই গ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটোবেলার ‘শিক্ষারম্ভ’, ওরিয়েন্টাল সেমিনারির শিক্ষাব্যবস্থা এবং নর্মাল স্কুল ও সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।

2. ধর্মীয় পরিবেশ : রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্রাহ্ম নেতা; রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। তাঁর এই রচনার মাধ্যমে গায়ত্রীমন্ত্র ও ‘ব্রয়সংগীত’-এর কথা এবং ব্রাহ্মধর্মের আত্মসমালোচনাও জানা যায়।

3. ঠাকুরবাড়ির পরিমণ্ডল : ‘জীবনস্মৃতি’ থেকে ঠাকুর পরিবারের পারিবারিক ঐতিহ্য, সাহিত্য, কাব্য-নাটক ও চিত্রকলার চর্চার কথা যেমন জানা যায়, তেমনই, এর পাশাপাশি জাতীয়তাবাদের বিকাশে ঠাকুরবাড়ির অবদানও পরিলক্ষিত হয়।

4. স্বাদেশিকতা : রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই স্মৃতিকথায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ 8 ঠাকুরের উদ্যোগে এবং রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে পরিচালিত একটি স্বাদেশিকতা সভার কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি ঠাকুরবাড়ির সাহায্যে নবগোপাল মিত্রের ‘হিন্দুমেলা’র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

উপসংহার

জীবনস্মৃতি ছিল উনিশ শতকের শেষ তিরিশ বছরের বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির এক অনবদ্য ভাষ্য।


#24 ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠি (Letters from a Father to His Daughter) থেকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়?

Answer— ভূমিকা : আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যতম উপাদান হল চিঠিপত্র এবং এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইন্দিরা গান্ধিকে লেখা জওহরলাল নেহরুর চিঠি (Letters From a Father to His Daughter)।

ইতিহাসের উপাদান : প্রবাদপ্রতিম জাতীয় নেতা জওহরলাল নেহরুর লেখা চিঠিগুলি থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের যে সমস্ত উপাদান পাওয়া যায় সেগুলি হল—

চিঠিপত্র সেন্সর

গ্রন্থটির ভূমিকা থেকে জওহরলাল নেহরুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কারাবরণের কথা ছাড়াও জানা যায়, সেসময় কারাগারে জেলবন্দির ঘন ঘন চিঠি লেখা যেত না।

অর্থনৈতিক দুর্দশা

জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্র থেকে ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্য, ধনী ঘরে উদ্বৃত্ত খাদ্য ও গরিবদের মধ্যে খাদ্যসংকটের কথা জানা যায়। তিনি অর্থনৈতিক বৈষম্যের দূরীকরণে ‘খদ্দর’ কিনে পরার কথা প্রচার করেন এবং এভাবে গরিব তাঁতিদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নত করার কথা বলেন।

দেশীয় রাজ্যগুলির পরিস্থিতি

জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্র থেকে ভারতীয় প্রজাদের অর্থে দেশীয় রাজাদের বিলাসব্যসন ও শৌখিন গাড়ি চড়ার কথা যেমন জানা যায়, তেমনি এই সমস্ত প্রজাদের অন্নকষ্ট, শিক্ষার অভাব ও চিকিৎসার অভাবের কথাও জানা যায়। উপসংহার : জওহরলাল নেহরুর অন্যবদ্য চিঠিপত্রগুলির সাহিত্যিক মূল্য অপরিসীম। এ ছাড়া ঔপনিবেশিক শাসনে ভারত ও ভারতবাসীর বেদনাদায়ক পরিস্থিতি চিঠিপত্রের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।


#25 ইতিহাসের উপাদান রূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী | সোমপ্রকাশ পত্রিকারসম্পাদক কে

Reading Continue

#26 বঙ্গদর্শন পত্রিকা টিকা | বঙ্গদর্শন পত্রিকা বিষয়বস্তু | বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে বঙ্গদর্শন পত্রিকার গুরুত্ব

Reading Continue

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: