সুলতানী রাষ্ট্র কী
আপাতদৃষ্টিতে সুলতানী রাষ্ট্র ছিল ইসলামী রাষ্ট্র। এর অর্থ হল সুলতানরা ইসলামী আইন অনুসারে রাজ্যশাসন করলে এবং শরিয়ত আইন যাতে অমান্য করা না হয় সেদিকে নজর রাখতেন। সুলতানী রাষ্ট্রে এ কারণেই উলেমাদের প্রভাব ছিল। উলেমারা ধর্মযাজক ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন শরিয়ত্বে ব্যাখ্যাকার। ইসলামী আইনের সঙ্গে সুলতানের নীতি ও কার্যাবলীর সামঞ্জস্য সাধন করাই ছিল উলেমাদের প্রধান কাজ। সুলতানের নীতি যে ইসলামী আইনকানুনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা তারা শরিয়ত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বােঝাতেন। ভারতে অধিকাংশ সুলতনরাই ছিলেন সামরিক নেতা। লেখাপড়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল না বললেই হয়। এ কারণে
উলেমা কারা?
ইসলাম, আইন ও নীতিতত্ত্ব সম্বন্ধে উলেমারা যা বলতেন সুলতানরা তা মেনে নিলে। অভিজাত ও সাধারণ মানুষও লেখাপড়া নিয়ে চিন্তা করতেন না। ফলে উলেমাদের সবদিক দিয়ে সুবিধা হয়। বলা যায় যে দিল্লীর সুলতানী ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র ছিল ঠিকই কিন্তু এই রাষ্ট্রে অমুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। ধর্মীয় রাষ্ট্রে উলেমাদের প্রভাব ছিল সন্দেহ নেই। কিন্তু এই প্রভাব সীমাহীন ছিল না। কিছু সংখ্যক সুলতান উলেমাদের পরামর্শ অনুযায়ী রাজ্যশাসন করতে চেষ্টা করেন।
তারা অবশ্য শাসক হিসাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অপরদিকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুলতানরা নিজেদের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করতেন এবং তারা যে নৃপতিতত্বে বিশ্বাস করলে তা ইসলাম শাস্ত্রসম্মত ছিল না। তাঁরা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে মনে করতেন। সুলতানের কথাই আইন এমন মনােভাব আলাউদ্দিন খলজি ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি উলেমাদের গুরুত্ব অগ্রাহ্য করেন।
গিয়াসুদ্দিন বলবন মহম্মদ-বিন-তুঘলকও এ পথের পথিক ছিলেন। অতএব দৃঢ় ব্যক্তিত্বের ও ক্ষমতা প্রিয় সুলতানদের সঙ্গে উলেমাদের সম্পর্ক নিবিড় ছিল না। উলেমারা ছিলেন বেঙ্গভুক কর্মচারীর ন্যায়। তারা অবশ্য অভিজাতদের ন্যায় সুযােগ – সুবিধা ভােগ করতে এবং সুলতানরা তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইলে তবেই তারা তাদের মতামত দিলে। সুলতান তাদের মতামত গ্রহণ বা বর্জন করত্নে। তবে সুলতান দুর্বল চরিত্রের হলে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় উলেমাদের মতামত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল।