ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে নামগুলো আগুনের মতো জ্বলে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন খুদিরাম বসু (Khudiram Bose)। পরাধীন ভারতের বুকে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেওয়া এই তরুণ বিপ্লবী আজও কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে অমর। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব Khudiram Bose Biography in Bengali for Competitive Exam সম্পর্কে। আপনি যদি WBCS, Rail, PSC, SSC বা অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতির নিচ্ছেন, তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে আপনারা খুদিরাম বসুর জন্ম, বিপ্লবী জীবন, মুজাফফরপুর বোমা মামলা এবং তাঁর ঐতিহাসিক বিচার ও ফাঁসি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন, যা পরীক্ষায় ভালো স্কোর করতে সাহায্য করবে।
ভূমিকা (Introduction)
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে “অগ্নিযুগ”-এর সূচনা যাদের হাত ধরে হয়েছিল, খুদিরাম বসু তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি ছিলেন পরাধীন ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবীদের একজন, যিনি হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর এই অসম সাহসী লড়াই আজও যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করে।
কম্পিটিটিভ এক্সামের (Competitive Exam) দৃষ্টিকোণ থেকে খুদিরাম বসুর জীবনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিলিমিনারি (Preliminary) এবং মেইনস (Mains)—উভয় পরীক্ষাতেই তাঁর জন্মস্থান, বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, সহযোগী বিপ্লবীদের নাম এবং মুজাফফরপুর ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্রায়ই Multiple Choice Questions (MCQ) আসে। তাই একজন পরীক্ষার্থী হিসেবে এই টপিকটি বিস্তারিত জানা আবশ্যিক।
খুদিরাম বসু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Key Facts for Competitive Exams)
পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের রিভিশনের জন্য নিচের টেবিলটি বা পয়েন্টগুলো মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এখান থেকে সরাসরি প্রশ্ন আসতে পারে।
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| পুরো নাম | খুদিরাম বসু (Khudiram Bose) |
| জন্ম তারিখ | ৩ ডিসেম্বর, ১৮৮৯ |
| জন্মস্থান | মোহবনি, মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
| পিতা | ত্রৈলক্যানাথ বসু |
| মাতা | লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী |
| বিপ্লবী সংগঠন | যুগান্তর দল (Jugantar Party) |
| গুরু/মেন্টর | সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendranath Bose) |
| প্রধান ঘটনা | মুজাফফরপুর বোমা হামলা (Muzaffarpur Bomb Case) |
| সহযোগী | প্রফুল্ল চাকি (Prafulla Chaki) |
| টার্গেট | বিচারক কিংসফোর্ড (Judge Kingsford) |
| ভুলবশত নিহত | মিসেস কেনেডি এবং মিস কেনেডি |
| গ্রেফতারের স্থান | ওয়াইনি স্টেশন (Waini Station) |
| ফাঁসির তারিখ | ১১ আগস্ট, ১৯০৮ |
| ফাঁসির স্থান | মুজাফফরপুর জেল |
| ডাকনাম/উপাধি | অগ্নিশিশু, ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবী শহীদ |
ক্ষুদিরাম বসু কুইজ | Khudiram Bose Quiz in Bengali
খুদিরাম বসুর শৈশব ও পরিবার (Early Life & Family Background)
খুদিরাম বসুর জন্ম হয়েছিল ১৮৮৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর। তাঁর জন্মস্থান ছিল তৎকালীন মেদিনীপুর জেলার (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর) কেশপুর থানার অন্তর্গত মোহবনি (Mohobani) গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ছিল ত্রৈলক্যানাথ বসু এবং মাতার নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। ত্রৈলক্যানাথ বসু ছিলেন নাড়াজোল এস্টেটের তহশিলদার।
খুদিরামের নামকরণের পেছনে একটি করুণ কিন্তু চমকপ্রদ ঘটনা রয়েছে, যা অনেকের অজানা। তাঁর জন্মের আগে তাঁর বাবা-মায়ের দুটি পুত্রসন্তান অকালে মারা গিয়েছিল। তাই কুসংস্কার বা লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, নবজাতককে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে তাঁর মা তাকে মাত্র তিন মুঠো খুদ বা চালের খুদের বিনিময়ে তাঁর বড় দিদি অপরূপা দেবীর কাছে “বিক্রি” করে দিয়েছিলেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম রাখা হয় “খুদিরাম”।
শৈশব থেকেই খুদিরামকে চরম দারিদ্র্য এবং দুঃখের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। খুব অল্প বয়সেই তিনি তাঁর মা-বাবা উভয়কেই হারান। এরপর তিনি তাঁর বড় দিদি অপরূপা দেবীর কাছে তমলুকে এবং পরে মেদিনীপুরে বড় হন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মনে ব্রিটিশবিরোধী চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, যা পরবর্তীকালে তাকে বিপ্লবের পথে নিয়ে যায়।
শিক্ষাজীবন (Education)
খুদিরাম বসুর প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুলে। এরপর তিনি মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে (Midnapore Collegiate School) ভর্তি হন। প্রথাগত পুঁথিগত শিক্ষার চেয়ে দেশের পরিস্থিতি এবং পরাধীনতার গ্লানি তাঁকে বেশি ভাবিয়ে তুলতো।
স্কুল জীবনেই তিনি ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ এবং অন্যান্য দেশাত্মবোধক সাহিত্য পড়তে শুরু করেন। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী এবং শ্রী অরবিন্দের বিপ্লবী চিন্তাধারা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন (Partition of Bengal) তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এই সময়ে মেদিনীপুরের বিপ্লবী নেতা সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendranath Bose) এবং জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। তাঁদের অনুপ্রেরণায় এবং দিকনির্দেশনায় খুদিরাম বুঝতে পারেন যে, কেবল আবেদন-নিবেদন করে ব্রিটিশদের দেশ থেকে তাড়ানো সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন সশস্ত্র বিপ্লব। এই চিন্তাধারাই তাঁকে ধীরে ধীরে একজন পুরোদস্তুর বিপ্লবীতে পরিণত করে।
বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগদান (Entry into Revolutionary Movement)
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাংলায় তখন বিপ্লবী সংগঠনগুলো গোপনে শক্তি সঞ্চয় করছিল। খুদিরাম বসু কিশোর বয়সেই “যুগান্তর” (Jugantar) দলের সদস্য হন। এটি ছিল সেই সময়ের অন্যতম প্রধান গোপন বিপ্লবী সংগঠন।
এখানে যোগ দেওয়ার পর তিনি শরীরচর্চা, লাঠি খেলা এবং অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। তাঁর সাহস এবং নিষ্ঠা দেখে বিপ্লবী নেতারা তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে শুরু করেন। তিনি মেদিনীপুরে গুপ্ত সমিতির একটি সক্রিয় অংশ হয়ে ওঠেন।
তাঁর মনে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি ঘৃণা এতটাই তীব্র ছিল যে, তিনি তাঁর পড়াশোনা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং সম্পূর্ণভাবে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। সিস্টার নিবেদিতার (Sister Nivedita) সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাত হয়েছিল, যা তাঁর বিপ্লবী চেতনাকে আরও শাণিত করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, রক্ত না দিলে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়।
প্রথম দিকের বিপ্লবী কার্যকলাপ (Early Revolutionary Activities)
মুজাফফরপুরের ঘটনার আগে খুদিরাম বসু বেশ কিছু ছোটখাটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৬ সালে মেদিনীপুরে আয়োজিত একটি কৃষি ও শিল্প মেলায় তিনি ব্রিটিশবিরোধী লিফলেট বিলি করছিলেন। সেই লিফলেটের শিরোনাম ছিল “সোনার বাংলা”।
সেখানে একজন পুলিশ কনস্টেবল তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করলে, খুদিরাম অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সেই কনস্টেবলকে ঘুষি মেরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এটি ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম সরাসরি সংঘাত। পরবর্তীকালে অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের মামলা (Sedition Case) হয়, কিন্তু প্রমাণের অভাবে তিনি মুক্তি পান।
এছাড়াও, তিনি এবং তাঁর দল ডাক বিভাগের মেলব্যাগ লুট এবং রেললাইন উড়িয়ে দেওয়ার মতো নাশকতামূলক পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এই কাজগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ প্রশাসনের কাজে বিঘ্ন ঘটানো এবং বিপ্লবের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। এই ঘটনাগুলো তাঁকে পুলিশের খাতায় একজন “বিপজ্জনক বিপ্লবী” হিসেবে চিহ্নিত করে।
মুজাফফরপুর বোমা হামলা (Muzaffarpur Bomb Case)
খুদিরাম বসুর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ঘটনা হলো মুজাফফরপুর বোমা মামলা (১৯০৮)। এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ব্রিটিশ বিচারক ডগলাস কিংসফোর্ড (Douglas Kingsford)।
কেন কিংসফোর্ডকে লক্ষ্য করা হয়েছিল?
কিংসফোর্ড আগে আলিপুরে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সেখানে তিনি স্বদেশী আন্দোলনের কর্মীদের, বিশেষ করে ছাত্রদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করতেন এবং কঠোর শাস্তি দিতেন। এমনকি সুশীল সেন নামে এক কিশোরকে জনসমক্ষে চাবুক মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এই কারণে বিপ্লবী দল তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। নিরাপত্তার খাতিরে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বিহারের মুজাফফরপুরে বদলি করে দেয়।
ঘটনার বিবরণ:
বিপ্লবী দল কিংসফোর্ডকে হত্যা করার দায়িত্ব দেয় খুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকি-র (Prafulla Chaki) ওপর। তাঁরা দুজনে মুজাফফরপুরে পৌঁছান এবং কিংসফোর্ডের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে শুরু করেন। তাঁরা কিংসফোর্ডের বাংলোর কাছে একটি গাছতলায় আশ্রয় নেন এবং সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকেন।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল, সন্ধ্যাবেলা। ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে একটি ঘোড়ার গাড়ি আসতে দেখে তাঁরা ভাবেন যে এতে কিংসফোর্ড আছেন। খুদিরাম গাড়ির দিকে একটি বোমা নিক্ষেপ করেন। গাড়িটি বিস্ফোরণে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না। তার বদলে ছিলেন ব্যারিস্টার প্রিঙ্গল কেনেডির স্ত্রী এবং কন্যা। তাঁরা দুজনেই এই হামলায় মারা যান। এই ঘটনা ইতিহাসে Muzaffarpur Conspiracy Case বা মুজাফফরপুর ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এটি ছিল ভারতীয় বিপ্লবীদের দ্বারা ব্রিটিশদের ওপর অন্যতম বড় একটি সশস্ত্র হামলা।
গ্রেফতার, বিচার ও আদালত প্রক্রিয়া (Arrest & Trial)
বোমা নিক্ষেপের পর খুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি আলাদা হয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। খুদিরাম সারা রাত প্রায় ২৫ মাইল হেঁটে ওয়াইনি (Waini) স্টেশনে পৌঁছান (বর্তমানে এই স্টেশনের নাম ‘খুদিরাম বোস পুসা স্টেশন’)।
গ্রেফতারের মুহূর্ত:
১ মে সকালে, তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে একটি চায়ের দোকানে জল খেতে যান। সেখানে তাঁর ধূলিমলিন চেহারা এবং ক্লান্ত ভাব দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। ফতেহ সিং এবং শিউ প্রসাদ সিং নামক দুজন কনস্টেবল তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে। খুদিরাম পালানোর চেষ্টা করেন এবং পিস্তল বের করতে যান, কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে। তাঁর কাছ থেকে দুটি রিভলবার এবং ৩৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে, প্রফুল্ল চাকি মোকামা স্টেশনে পুলিশের ঘেরাওয়ে পড়ে যান। তিনি ধরা না দিয়ে নিজের রিভলবার দিয়ে আত্মহত্যা করেন এবং শহীদের মৃত্যু বরণ করেন।
বিচার প্রক্রিয়া:
খুদিরামকে মুজাফফরপুরে নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় ঐতিহাসিক বিচার। বিচারক ছিলেন মি. কর্নডফ (Mr. Cornduff)। খুদিরামের পক্ষে বাদি ছিলেন কালিদাস বসু, উপেন্দ্রনাথ সেন এবং ক্ষেত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে এই কিশোর বিপ্লবীবর হয়ে লড়েছিলেন।
আদালতে খুদিরামের আচরণ ছিল অবাক করার মতো। তিনি নির্ভয়ে বোমা ছোঁড়ার কথা স্বীকার করেন। যখন বিচারক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি এর পরিণতি জানেন কি না, খুদিরাম হাসিমুখে মাথা নেড়ে সম্মতি জানান। বিচার চলাকালীন তাঁর মুখে সর্বদা এক অমলিন হাসি লেগে থাকত, যা দেখে বিচারক থেকে শুরু করে উপস্থিত জনতা—সবাই বিস্মিত হয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত, ১৩ জুন ১৯০৮, আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। রায় শুনেও খুদিরামের মুখের হাসি ম্লান হয়নি। তিনি বরং বিচারককে প্রশ্ন করেছিলেন, “বোমাটি কীভাবে তৈরি করতে হয়, তার সময় পেলে আমি আপনাকে শিখিয়ে দিতাম।”
শহীদ হওয়া – ফাঁসি (Execution)
বিচার প্রক্রিয়ার পর হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছিল, কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। অবশেষে সেই দিনটি আসে, যা ভারতের ইতিহাসে এক শোকাবহ অথচ গর্বের দিন হিসেবে চিহ্নিত।
১১ আগস্ট ১৯০৮, ভোর ৬টায় মুজাফফরপুর জেলে খুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির মঞ্চে ওঠার সময়ও তাঁর মধ্যে কোনো ভয় বা অনুশোচনা ছিল না। তিনি ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দিয়ে হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছিলেন।
তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। তিনি হলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কনিষ্ঠ শহীদ। তাঁর এই আত্মত্যাগ সারা বাংলায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। জেল গেটের বাইরে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিল, যারা তাঁর চিতাভস্ম নিয়ে নিজেদের পবিত্র মনে করেছিল।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে খুদিরাম বসুর অবদান (Contribution to India’s Freedom Struggle)
খুদিরাম বসুর আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছিল।
- ভয়ের বিনাশ: ব্রিটিশরা যে অপরাজেয় নয় এবং তাদের মনেও যে ভয় ধরানো যায়, তা খুদিরাম প্রমাণ করেছিলেন।
- যুবশক্তির জাগরণ: তাঁর মৃত্যু বাংলার যুবসমাজকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিল। দলে দলে ছাত্র ও যুবকরা বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হতে শুরু করে।
- সশস্ত্র বিপ্লবের পথ: তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে অহিংসার পাশাপাশি সশস্ত্র সংগ্রামও স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য।
- সাংস্কৃতিক প্রভাব: তাঁর ফাঁসির পর বাংলায় একটি বিখ্যাত গান মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে— “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি…”। এই গানটি আজও বাঙালির আবেগ এবং দেশপ্রেমের প্রতীক।
খুদিরাম বসু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ MCQ (Exam-Oriented Practice Questions)
নিচে কিছু নমুনা প্রশ্ন দেওয়া হলো যা পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা প্রবল:
প্রশ্ন ১: খুদিরাম বসু কোন বিপ্লবী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন? (A) অনুশীলন সমিতি (B) গদর পার্টি (C) যুগান্তর দল (D) ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি উত্তর: (C) যুগান্তর দল
প্রশ্ন ২: মুজাফফরপুর বোমা মামলা কত সালে সংঘটিত হয়েছিল? (A) ১৯০৫ (B) ১৯০৮ (C) ১৯১১ (D) ১৯১৩ উত্তর: (B) ১৯০৮ (৩০ এপ্রিল)
প্রশ্ন ৩: খুদিরাম বসুর ফাঁসির সময় তাঁর বয়স কত ছিল? (A) ১৮ বছর ৮ মাস (B) ১৯ বছর ২ মাস (C) ২০ বছর (D) ২১ বছর উত্তর: (A) ১৮ বছর ৮ মাস
প্রশ্ন ৪: কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য খুদিরামের সহযোগী কে ছিলেন? (A) বিনয় বসু (B) বাঘা যতীন (C) প্রফুল্ল চাকি (D) বারীন ঘোষ উত্তর: (C) প্রফুল্ল চাকি
প্রশ্ন ৫: খুদিরাম বসুকে কোন স্টেশনে গ্রেফতার করা হয়েছিল? (A) মোকামা (B) ওয়াইনি (C) কিউল (D) পটনা উত্তর: (B) ওয়াইনি (বর্তমানে খুদিরাম বোস পুসা স্টেশন)
উপসংহার (Conclusion)
খুদিরাম বসু কেবল একটি নাম নয়, তিনি একটি আদর্শ। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি যে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা ইতিহাসে বিরল। তাঁর আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি; তাঁর জ্বালানো আগুনের শিখাই পরবর্তীকালে ভগত সিং, মাস্টারদা সূর্য সেন এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো বিপ্লবীদের পথ দেখিয়েছিল।
“Khudiram Bose Biography in Bengali for Competitive Exam”-এর এই আলোচনা থেকে আমরা কেবল ইতিহাসের তথ্য জানলাম না, বরং উপলব্ধি করলাম স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য। পরীক্ষার্থী হিসেবে তাঁর জীবনের সাল-তারিখ মনে রাখা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনই একজন ভারতীয় হিসেবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোও আমাদের কর্তব্য।
খুদিরামের সেই হাসিমুখ আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—দেশের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। তাঁর জীবনী পাঠ করে অনুপ্রাণিত হন এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকুন, সাফল্য আসবেই।











