যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস
কোনো জাতির সামগ্রিক জীবনধারার সঙ্গে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। যাতায়াতের তিনটি মাধ্যম হল স্থলপথ, জলপথ এবং আকাশ পথ। স্থলপথে প্রাচীনকাল থেকেই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। প্রাচীনকাল থেকেই স্থলপথে পশুটানা বাহনে দূরদূরান্তে যাতায়াত চলত।
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম গুলি
আধুনিক যুগের মানুষ বিভিন্ন যান্ত্রিক যানবাহন ব্যবহার করছে (টেলফোর্ড ও ম্যাকাডাম কর্তৃক পিচের রাস্তা তৈরির কৌশল (১৮১১ খ্রি.), জর্জ স্টিভেনসন কর্তৃক বাষ্পীয় রেলইঞ্জিন (১৮১৪ খ্রি.)/ফুলটন কর্তৃক বাষ্পীয় স্টিমার(১৮১৫ খ্রি.) প্রভৃতি আবিষ্কার বিশ্ব ইতিহাসের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। রেলপথের প্রসার ফ্রান্স ও জার্মানির শিল্পবিপ্লবে, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারে, এদেশের সম্পদ নিষ্ক্রমণে এবং ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্যবোধের বিস্তারে সহায়ক হয়েছে। আবার রেলপথের সহায়তায় বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। (১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ট্রামের সূচনার পর ক্রমে ইউরোপে ও আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ট্রামগাড়ির প্রচলন ঘটে। কলকাতায় ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ঘোড়ায় টানা ট্রাম এবং ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বৈদ্যুতিক ট্রামযাত্রা শুরু হয়। ফলে বিভিন্ন শহরের অভ্যন্তরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যপক অগ্রগতি ঘটে।
আবার ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা ডাক ব্যবস্থার উন্নতি, পেনি পোস্টকার্ড ব্যবস্থা প্রবর্তন, টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে একদিকে যেমন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্রয়োজন মিটেছিল, অন্যদিকে তেমনই ভারতবাসীও ক্ষেত্রবিশেষে উপকৃত হয়েছিল। জলপথেও প্রাচীনকাল থেকেই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। প্রাচীনকালে নৌকো, ডিঙি, ভেলা প্রভৃতি ছিল জলপথে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। আধুনিককালে যান্ত্রিক স্টিমার ও জাহাজ নদী ও দূর সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। স্পেন, পোর্তুগাল, ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ জলপথে দক্ষতা দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে।
আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটে আমেরিকার রাইট ভ্রাতৃদ্বয় কর্তৃক এরোপ্লেন আবিষ্কার (১৯০৩ খ্রি.) করার পর। বর্তমানে মানুষ আকাশ পথে দূরদেশে, দূর মহাকাশে, এমনকি চাঁদেও পাড়ি দিচ্ছে। যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ইতিহাস নিয়ে সাম্প্রতিককালে যথেষ্ট চর্চা চলছে। এবিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাগ্রন্থ হল ইয়ান কের-এর ইঞ্জিনস্ অব চেঞ্জ—দ্য রেলরোডস দ্যাট মেড্ ইন্ডিয়া’, সুনীল কুমার মুন্সির ‘জিওগ্রাফি অব ট্রান্সপোর্টেশন ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া আনডার ব্রিটিশরাজ’, নীতিন সিন্হার পূর্ব ভারতের পরিবহণ ও যোগাযোগ বিষয়ক গ্রন্থ প্রভৃতি।