WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

হিন্দু সম্পত্তি আইন ২০২২: ভারতের উত্তরাধিকার ব্যবস্থার বিস্তারিত বিশ্লেষণ



ভারতের হিন্দু সম্পত্তি আইন একটি জটিল কিন্তু সুসংহত কাঠামো, যা ধর্মীয় প্রথা, ঐতিহ্য এবং আধুনিক আইনের সমন্বয়ে গঠিত। ২০২২ সালেও এই আইনের মূল ভিত্তি হলো হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬ এবং এর পরবর্তী সংশোধনীগুলি, বিশেষত ২০০৫ সালের সংশোধনী যা নারীদের সম্পত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করে। এই নিবন্ধে হিন্দু সম্পত্তি আইনের মূল নীতিগুলি, বর্তমান প্রযোজ্যতা, এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

হিন্দু সম্পত্তি আইন ২০২২

১. হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

হিন্দু সম্পত্তি আইনের উৎস প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র, বিশেষত দায়ভাগমিতাক্ষরা পদ্ধতিতে নিহিত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দায়ভাগ পদ্ধতি প্রচলিত, যেখানে উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয় পিণ্ডদানের অধিকারের ভিত্তিতে । অন্যদিকে, উত্তর ভারতসহ অন্যান্য অঞ্চলে মিতাক্ষরা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেখানে জন্মসূত্রেই পুত্র পৈতৃক সম্পত্তিতে অধিকার পায় । ১৯৫৬ সালে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই দুটি পদ্ধতিকে সংহত করা হয়, তবে ২০০৫ সালের সংশোধনীতে নারীদের অধিকারকে প্রাধান্য দেওয়া হয় ।


২. ২০২২-এ হিন্দু সম্পত্তি আইনের মূল নীতি

২০২২ সালে এই আইনের কাঠামো নিম্নলিখিত স্তরে বিভক্ত:

ক. উত্তরাধিকারের শ্রেণিবিভাগ
  • সপিণ্ড: নিকটতম আত্মীয় (পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী, কন্যা, পিতা, মাতা) ।
  • সকুল্য: দূরবর্তী আত্মীয় (প্রপিতামহের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি) ।
  • সমানোদক: অতি দূরবর্তী আত্মীয় (৭ পুরুষ পর্যন্ত) ।
খ. নারীদের অধিকার

২০০৫ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, কন্যা এখন পুত্রের সমান অধিকার ভোগ করে । তবে দায়ভাগ পদ্ধতিতে নারীদের (স্ত্রী, কন্যা, মাতা) জীবনস্বত্ব (Life Interest) থাকে, অর্থাৎ সম্পত্তির মালিকানা নয়, বরং ভোগদখলের অধিকার । উদাহরণস্বরূপ, একজন বিধবা তার স্বামীর সম্পত্তিতে জীবনস্বত্ব ভোগ করেন, যা তার মৃত্যুর পর পুত্রদের কাছে হস্তান্তরিত হয় ।

গ. দত্তক পুত্রের অধিকার

দত্তক পুত্র স্বাভাবিক পুত্রের ১/৩ অংশ পায় । এই বিধান হিন্দু আইনে অনন্য, যা বংশরক্ষা ও ধর্মীয় কর্তব্য পালনের জন্য প্রাসঙ্গিক ।




৩. সম্পত্তি বণ্টনের ক্রম

দায়ভাগ পদ্ধতিতে ৫৩ জন সপিণ্ডের একটি তালিকা অনুসারে সম্পত্তি বণ্টন করা হয় :

  1. পুত্র → ২. পৌত্র → ৩. প্রপৌত্র → ৪. স্ত্রী ও পুত্রবধূগণ → ৫. কন্যা → ৬. দৌহিত্র → … (পরবর্তীতে দূরবর্তী আত্মীয়)।
    উদাহরণ: যদি কোনো ব্যক্তি তার তিন পুত্র, এক বিধবা স্ত্রী এবং এক মৃত পুত্রের বিধবা রেখে যান, তবে সম্পত্তি ৫ ভাগে বিভক্ত হবে। প্রতিটি পুত্র ও বিধবা ১/৫ অংশ পাবেন, আর মৃত পুত্রের বিধবা ও তার পুত্র বাকি ১/৫ অংশ সমানভাবে ভাগ করবেন ।

৪. সমস্যা ও সমালোচনা

  • নারীদের সীমিত মালিকানা: জীবনস্বত্বের কারণে নারীরা সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারেন না ।
  • বিবাহিত কন্যাদের অধিকারহীনতা: শুধুমাত্র অবিবাহিত বা পুত্রবতী কন্যাই সম্পত্তি পায় ।
  • ধর্মান্তরিত ব্যক্তির বঞ্চনা: হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করলে উত্তরাধিকার হারানো যায় ।

৫. আধুনিক সংস্কারের প্রচেষ্টা

২০০৫ সালের সংশোধনী সত্ত্বেও আইনের বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের অধিকার এখনও সীমিত, যেখানে ভারতের সংবিধানের সমতা নীতি (ধারা ১৪-১৫) এর সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা যায় । ২০২২ সালে কেরালা উচ্চ আদালত একটি রায়ে উল্লেখ করেন যে কন্যা পৈতৃক সম্পত্তিতে পুত্রের সমান দাবিদার ।


৬. হিন্দু আইন vs অন্যান্য ব্যক্তিগত আইন

  • মুসলিম আইন: শরীয়াহ অনুযায়ী নারীরা পুরুষের অর্ধেক অংশ পায় ।
  • খ্রিস্টান ও পার্সি আইন: ভারতীয় উপমহাদেশে এগুলি ধর্মনিরপেক্ষ সিভিল কোড দ্বারা প্রভাবিত ।

৭. ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

হিন্দু সম্পত্তি আইনে নারীদের পূর্ণ মালিকানা নিশ্চিত করতে জীবনস্বত্ব ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি। এছাড়া, দত্তক পুত্র ও কন্যার অধিকার সমন্বয় করে আইনকে আরও সমতাভিত্তিক করা প্রয়োজন ।


উপসংহার

২০২২ সালে হিন্দু সম্পত্তি আইন তার ঐতিহ্যবাহী কাঠামো বজায় রেখেও আধুনিক সমতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবে বাস্তবায়ন ও সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তনই এই আইনের সাফল্য নির্ধারণ করবে। নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: