WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

নীল বিদ্রোহ | নীলচাষের পদ্ধতি কী ধরনের ছিল? বিশ্লেষণ

 নীলচাষের পদ্ধতি কী ধরনের ছিল?

উত্তর:- বিদেশ থেকে আগত নীলকর সাহেবরা নীলচাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিল। প্রথমে মোটা টাকা দিয়ে জমিদারদের জমি দীর্ঘকালের জন্য ভাড়া নিত এবং ভাড়াটে লোক নিয়োগ করে নীলচাষ করাতো। কিন্তু পরে অতিরিক্ত লাভ পাওয়ার উদ্দেশ্যে চাষিকে তার নিজের জমিতে নীল চাষ করার পথ বেছে নেয়। নীলকর সাহেবরা নিজের জমিতে নীল চাষ করলে সেই পদ্ধতিকে বলা হত নিজ-আবাদী বা এলাকা চাষ। অন্যদিকে চাষিকে আগাম টাকা বা দাদন দিয়ে চাষির জমিতে নীলচাষ করার প্রথা ‘রায়তি’ ‘দাদনী’ বা ‘বে এলাকা’ চাষ নামে পরিচিত।

নীল তৈরির বিভিন্ন ধাপ দিগম্বর
নীল তৈরির বিভিন্ন ধাপ

নীল বিদ্রোহ গতিধারা কি কি পর্যায় ছিল?

Answer:- বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ষাট লক্ষ কৃষক নীল বিদ্রোহে সামিল হয়। এই আন্দোলনে কয়েকটি স্তর বা পর্যায় ছিল। প্রথম পর্যায়ে তারা নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিকারের জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু ব্রিটিশ প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে চাষীরা নীলচাষের জন্য দাদন নিতে অস্বীকার করে ও নীলচাষ বন্ধ করে দেয়। সেষ তথা তৃতীয় পর্বে চাষীরা সক্রিয় প্রতিরোধ আন্দোলনে লিপ্ত হয়।

বাংলায় নীল বিদ্রোহের কারণগুলি

Answer:- ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের অমানুষিক অত্যাচার ও নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলচাযিদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন নীলবিদ্রোহ নামে পরিচিত।

  1. নীলচাষের পদ্ধতি : নীলকররা গরিব চাষিদের নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে কম টাকা ‘দাদন’ দিয়ে বেশি টাকার চুক্তি করে তাদের নীলচাষ করাতে বাধ্য করত।
  2. নীলকর সাহেবদের অত্যাচার : কৃষকদের প্রতি নীলকরদের অত্যাচার, লুণ্ঠন, শোষণ, দৌরাত্ম্য, ব্যভিচার, লাম্পট্য ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।
  3. নীলকরদের সরকারি সমর্থন : ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে শ্বেতাঙ্গদের জমি কেনার অধিকার ও তারও আগে সরকারের দাদনি প্রথাকে সমর্থন, একাদশ আইন দ্বারা ‘দাদন’ গ্রহণকারী কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে তীব্র জনরোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
  4. নীলের কম দাম প্রদান : রায়তদের উৎপাদিত নীলের দাম দেওয়া হত ২ টাকা ৮ আনা অথচ সেই নীলের বাজার দর ছিল ১০ টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজি নীলে কৃষকদের ৭ টাকা ৮ আনা ঠকানো হয়।
  5. পক্ষপাতদুষ্ট বিচারব্যবস্থা : নীলকরদের বিরুদ্ধে সরকারি আদালতে নালিশ করলেও শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেটরা স্ব-জাতীয় শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের প্রতি পক্ষপাত দেখাতেন এবং মফস্সরে ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের বিচার করতে পারত না।
  6. অন্যান্য বিদ্রোহের প্রভাব : ফরাজি, ওয়াহাবি, সাঁওতাল কোল বিদ্রোহের ঘটনাক্রম নীলচাষিদের মনে সাহস সঞ্চার করে।

JOIN NOW

উপসংহার : উপরিউক্ত নানা কারণে দিগম্বর বিশ্বাস, বিয়ুচরণ | বিশ্বাস, বৈদ্যনাথ সর্দার, বিশ্বনাথ সর্দার, রহিম উল্লা, রফিক মণ্ডল, মহেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের নেতৃত্বে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বাংলার অনিচ্ছুক নীলচাষিদের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব আলোচনা।

Answer:- ভূমিকা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে যেসব বিদ্রোহ জাতীয় জাগরণে সর্বাধিক সাহায্য করেছিল তাদের মধ্যে নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০ খ্রি.) ছিল অন্যতম।

নীলবিদ্রোহের গুরুত্বগুলি হল—

  1. সফল কৃষক আন্দোলন : ইতিপূর্বের কৃষক আন্দোলনগুলি আঞ্চলিক ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ হলেও নীল বিদ্রোহ ছিল ব্যাপক আন্দোলন, কারণ এই বিদ্রোহে যোগদানকারী প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক শেষ পর্যন্ত নীলচাষ উচ্ছেদ করতে সমর্থ হয়।
  2. নীল কমিশন গঠন : নীল বিদ্রোহের ব্যাপকতায় উদ্বিগ্ন হয়ে সরকার নীলবিদ্রোহের কারণ অনুসন্ধানের জন্য গঠন করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নীল কমিশন (৩১ মার্চ, ১৮৬০ খ্রি.)। এই কমিশন নীলকরদের অত্যাচার ও নীলচাষিদের অভিযোগকে সত্য ও যথার্থ বলে মেনে নেয়।
  3. নীল চাষ বন্ধ : নীলকররা রায়তের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নীল চাষ করাতে পারবে না বলে নীল কমিশন যে বিধিবদ্ধ আইন তৈরি করেছিল তা চাষিদেরকে নীলচাষ থেকে অব্যাহতি দেয়।
  4. ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন: নীল বিদ্রোহে নীলচাষিদের পাশে বেশ কিছু জমিদার ও বাংলার শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণি যোগদান করে এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের নজির স্থাপন করেছিল যা ভারতীয় – জাতীয়তাৱাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ছিল গুরুত্বপূর্ণ দিকচিহ্ন।

অন্যান্য গুরুত্ব :

নীল বিদ্রোহের আরও কয়েকটি গুরুত্ব হল— 1. এই আন্দোলনে হিন্দু ও মুসলিম কৃষকরা একত্রিত হয়ে নজির স্থাপন করেছিল;

2. এই বিদ্রোহ শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির সঙ্গে কৃষক সমাজের যোগসূত্র গড়ে তুলেছিল।

JOIN NOW

Leave a Comment