WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

প্রাচ্য শিক্ষা এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব | ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস বর্ণনা করো



প্রাচ্য শিক্ষা এবং পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন পাস করে। এই আইনের একটি ধারায় বলা হয় সূত্র: ফোটোগ্রাফার জনস্টন ও হফম্যান যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য ব্যয় করবে। সেই অনুসারে জনশিক্ষা নীতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে ‘জনশিক্ষা কমিটি’ বা ‘কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ গঠিত হয়। এই কমিটি কলকাতায় একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিলে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রামমোহন রায় বড়োলাট লর্ড আমহার্স্টকে চিঠি লিখে সংস্কৃত শিক্ষার পরিবর্তে ইংরেজি ও আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের দাবি জানান। এভাবে এদেশে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন্ ধরনের শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত সেবিষয়ে একটি দ্বন্দ্ব শুরু হয় যা ‘পাশ্চাত্যবাদী বনাম প্রাচ্যবাদী বিতর্ক’ নামে পরিচিত। লর্ড বেন্টিঙ্কের (১৮২৮-১৮৩৫ খ্রি.) আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ‘জনশিক্ষা কমিটি’র সভাপতি নিযুক্ত হন।

 

এদেশে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত—এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা কার্যত প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট এবং পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট নামে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। প্রাচ্যবাদের সমর্থক অর্থাৎ ওরিয়েন্টালিস্টদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন



 

প্রমুখ। অন্যদিকে, পাশ্চাত্যবাদের সমর্থক অর্থাৎ অ্যাংলিসিস্টদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন টমাস ব্যাবিংটন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন প্রমুখ। উগ্র পাশ্চাত্যবাদী মেকলে বলেন যে, “ভালো ইউরোপীয় গ্রন্থাগারের একটি তাক ভারত ও আরবের সমগ্র সাহিত্যের সমকক্ষ”। তিনি ভারতে পাশ্চাত্যশিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে (২ ফ্রেব্রুয়ারি) লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব (Minutes) দেন যা ‘মেকলে মিনিট্স’ বা ‘মেকলে প্রস্তাব’ নামে পরিচিত। প্রস্তাবে মেকলে বলেন যে,

  1. প্রাচ্যের শিক্ষা বৈজ্ঞানিক চেতনাহীন এবং পাশ্চাত্যের তুলনায় সম্পূর্ণ নিকৃষ্ট।
  2. প্রাচ্যের সভ্যতা ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপবিত্র’। তাই এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত।
  3. এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে ‘ক্রমনিম্ন পরিসুত নীতি’ বা ‘চুঁইয়ে পড়া নীতি’ (Downward Filtration Theory) অনুসারে তা ক্রমশ সাধারণ দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে
  4. পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ফলে এদেশে এমন একটি সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটবে যারা “রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ।”
  5. শেষপর্যন্ত মেকলে প্রস্তাবের সুপারিশ মেনে লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে (৭ মার্চ) এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকে সরকারের শিক্ষানীতি হিসেবে ঘোষণা করেন। শিক্ষাদানের নীতি নির্ধারণে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের দ্বন্দ্বে শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হন। অবশ্য ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ‘অকল্যান্ড মিনিট’-এর মাধ্যমে সরকার প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে প্রাচ্য শিক্ষায়ও অর্থব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: