5,327 Members Now! 🎉
🔥 Live Job Alerts!
Join Instant Updates →
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ ব্যাখ্যা

Salauddin Sekh
Updated: Nov 3, 2021

বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন

ভূমিকা : উনিশ শতকে ভারতে দলিত সম্প্রদায় যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনের চেষ্টা শুর করেছিল , সেগুলির মধ্যে বাংলার নমঃশূদ্র বা চণ্ডাল বা মতুয়া আন্দোলন ছিল উল্লেখযোগ্য । পূর্ববাংলার খুলনা , যশোহর , ফরিদপুর ও বরিশালের নমঃশূদ্র কৃষিজীবীদের এই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ১৮৭০ – র দশকে এবং ভারতের স্বাধীনতার পরেও তা চলেছিল ।

আন্দোলনের উদ্ভব :

নমশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভবের প্রেক্ষাপটে ছিল আর্থসামাজিক , ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কারণ ।

(১) নমঃশূদ্র আন্দোলনের অর্থনৈতিক কারণ:

ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে , নমঃশূদ্র অধ্যুষিত এলাকায় উচ্চবর্ণের হিন্দু ও সৈয়দ মুসলমানদের হাতে জমির উপর একচেটিয়া অধিকার ছিল । অন্যদিকে নমঃশূদ্ররা ছিল প্রান্তিক কৃষিজীবী , ভূমিহীন কৃষক ও মজুর । এই পরিস্থিতিতেই নমঃশূদ্ররা অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষা ও চাকরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল ।

(২) সামাজিক বৈষম্য :

নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে সামাজিক দিক থেকে পতিত ও অচ্ছুত বলে মনে করা হত । ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর – বাখরগঞ্জ অঞ্চলে একজন বিশিষ্ট নমঃশূদ্র গ্রামীণ নেতার মায়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা যোগ দিতে অস্বীকার করলে নমঃশূদ্রদের আন্দোলনের সূচনা হয়হয

(৩) নমঃশূদ্রআন্দোলনের ধর্মপ্রচারকের ভূমিকা:

ধর্মপ্রচারক প্রভু জগবন্ধু ও হরিচঁাদ ঠাকুর নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে উদার মানবতাবাদী ধর্মীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন । হরিচঁাদ ঠাকুর তাঁর শিষ্যদের ‘ মতুয়া ’ নামে ডাকতেন । তিনি ব্রাহ্মণ জমিদার ও পুরোহিত শ্রেণির অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন । নমঃশূদ্রদের মধ্যে আত্মমর্যাদা সৃষ্টি করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য । তাই তিনি তাদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারে বিশেষ উদ্যোগী হন ।
(৪) পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা : নমঃশূদ্ররা ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের জন্য পৃথক সংগঠন গড়ে তোলে । সংগঠনের মুখপত্র ছিল ‘ পতাকা ’ এবং এই পত্রিকায় নমঃশূদ্র নেতা রায়চরণ বিশ্বাস জাতি ব্যবস্থায় নিজেদের ব্রাহ্মণ গোষ্ঠীভুক্ত বলে দাবি করেন ।

(৫) নমঃশূদ্র আন্দোলনের বিকাশ :

বিশ শতকে নমঃশূদ্র আন্দোলনের বিকাশের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলি হল—

( ১ ) প্রতিনিধি দল প্রেরণ :

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নমঃশূদ্রদের একটি প্রতিনিধি দল গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে এবং ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আস্থা প্রদর্শন করে তার স্থায়িত্ব কামনা করে । তাদের যুক্তি ছিল যে , ব্রিটিশ জনগণ কোনোরকম বর্ণভিত্তিক সামাজিক কাঠামোয় বিশ্বাসী নয় । তাই ব্রিটিশরাই তাদের সামাজিক বৈষম্যের হাত থেকে মুক্ত করতে পারবে ।
( ২)  ‘ নমঃশূদ্র ’ নামের স্বীকৃতি :

নমঃশূদ্রদের মধ্যে সামাজিক সংহতির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও নমঃশূদ্ররা ঐক্যবদ্ধ হতে সচেষ্ট হয় । হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ঠাকুর নগরে বারুণী মেলা আয়োজিত হয় । গুরুচাঁদ ঠাকুর চণ্ডালদের নাম পরিবর্তন করে নমঃশূদ্র রাখার দাবি জানান । ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনায় এই দাবি স্বীকৃত হয় । পরবর্তীকালে বাংলার নমঃশূদ্রদের নিয়ে ভিন্ন মাত্রার রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল।

(৩) সংগঠন স্থাপন :

১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন ’ । প্রতিটি জেলায় এই সংগঠনের শাখা ছিল এবং এগুলির মাধ্যমে নমঃশূদ্র আন্দোলন পুরোপুরি সংগঠিত আকার নেয় । এর পাশাপাশি নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের সংস্কৃতি ( যেমন — নিজেদের ব্রাহ্মণ বলে দাবি , উপবীত ধারণ , এগারো দিন অশৌচ পালন , পরিবারে মহিলাদের বাজারে যাওয়া বন্ধ করা ) অনুসরণ করে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয় ।
( ৪ ) সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্ব দাবি :

মন্টেগু – চেমসফোর্ড শাসনসংস্কারের প্রস্তাব ঘোষিত হলে নমঃশূদ্ররা ১৯১৭ ও ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে দুটি সম্মেলনের মাধ্যমে ‘ সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের ’ দাবি করে । এর ফলে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু – চেমসফোর্ড সংস্কারে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় অনুন্নত শ্রেণির একজন প্রতিনিধি মনোনয়নের নীতি স্বীকৃত হয় ।

পর্যালোচনা :

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের সংস্কার আইনে নমঃশূদ্রদের দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ক্রমশই ব্রিটিশ সরকারপন্থী হয়ে দাবিপূরণে অগ্রসর হয় । তারা ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিকে সমর্থন করে । অন্যদিকে তারা জাতীয় আন্দোলনের বিরোধিতা করে , কারণ তাঁদের মতে , জাতীয় আন্দোলন ছিল উঁচুজাতের হিন্দু ভদ্রলোকদের আন্দোলন ।বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ ব্যাখ্যা

About the Author

   Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

Aftab Rahaman is a seasoned education blogger and the founder of KaliKolom.com, India’s premier Bengali general knowledge blog. With over 10 years researching current affairs, history, and competitive exam prep, he delivers in‑depth, up‑to‑date articles that help students and lifelong learners succeed. His expert insights and data‑driven guides make KaliKolom.com an authoritative resource in Bengali education.

Unlock FREE Subject-Wise PDFs Instantly

Join Our Telegram Channel for Daily Updates!

      JOIN NOW ➔

Recent Posts

See All →