ভারত সভা টিকা ( Indian Association) অথবা ভারতসভার প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
ভূমিকা :
রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দিত ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী
প্রমুখের সহায়তায় কলকাতায় ভারত সভা (Indian Asso ciation) প্রতিষ্ঠা করেন। এর সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদক ছিলেন আনন্দমোহন বসু এবং সহ-সম্পাদক ছিলেন অক্ষয় কুমার সরকার।
প্রেক্ষাপট :
ভারতসভা গঠনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে দেখা যায় যে, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বদেশ-প্রেমিক অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সভাসমিতিগুলির সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংযোগে গণতান্ত্রিকভাবে সমিতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সর্বভারতীয় স্তরে সমিতি গঠন ও আন্দোলন পরিচালনা করতে না পারলে আঞ্চলিক সমিতির দাবিদাওয়াকে সরকার গুরুত্ব দেবে না। এইরূপ পরিস্থিতিতে ২৬ জুলাই ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার এলবার্ট হলে (বর্তমান কফি হাউস) সুরেন্দ্রনাথ ও অপরাপর কয়েকজন মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীর উদ্যোগে ভারত সভা গঠিত হয়। সমগ্র বাংলায় এই প্রতিষ্ঠানটির ১২৪টি শাখা গড়ে উঠেছিল।
ভারত সভার উদ্দেশ্য :
ভারত সভার চারটি উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের কথা বলা যায়। এগুলি হল—(১) ভারতে একটি শক্তিশালী জনমত গঠন করা; (২) ভারতের রাজনৈতিক স্বার্থে ভারতবাসীকে ঐক্য বদ্ধ করা; (৩) হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি জোরদার করা এবং (৪) রাজনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের সর্বস্তরের মানুষকে শামিল করা।
ভারতসভার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল–
(১) জনমত গঠন :
ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ এবং পক্ষপাতমূলক আইনের প্রতিবাদের মাধ্যমে ব্রিটিশ স্ত্রী বিরোধী জনমত গঠন ও ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করা।
(২) রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন :
বিভিন্ন ভাষা, গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপন করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা।
(৩) হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি :
হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্থাপন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে জোরদার করা।
(৪) জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটানো:
সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষত নিম্নবর্গীয় মানুষদের জাতীয় আন্দোলনে শামিল করার মধ্য দিয়ে তাদের মনে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা।
আন্দোলন পরিচালনা:
সুরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ভারত সভা সরকারের কয়েকটি প্রতিক্রিয়াশীল দমনমূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। আই. সি. এস পরীক্ষায় বয়স সংক্রান্ত বিষয়, অস্ত্র আইন, দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ আইন, ইলবার্ট বিল ইত্যাদি বিষয়ে এই সভা সক্রিয় আন্দোলন করে।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভারত সভার গুরুত্ব অপরিসীম। এই সমিতির চেষ্টায় সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সমিতি গঠিত হয় এবং ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সমিতিই জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পথ রচনা করে।
ভারতের জাতীয়তাবাদের উন্মেষে ভারত সভার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উপরিউক্ত উদ্দেশ্যগুলির মাধ্যমেই সুরেন্দ্রনাথ ভারতসভাকে গণমুখী সর্বভারতীয় চরিত্র দিতে পেরেছিলেন। এই উদ্দেশ্যগুলিকে সামনে রেখেই তিনি ভারতবাসীর স্বার্থে নানা আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন।