বিধবা বিবাহ কে প্রচলন করেন
হিন্দুসমাজে বাল্যবিবাহের মতো কুপ্রথা প্রচলিত থাকায় অসংখ্য নারীকে অল্প বয়সেই বিধবা হতে হত। সমাজে বিধবা নারীরা সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে বাস করতে বাধ্য হত। উনিশ শতকের মধ্যভাগে ভারতের বিভিন্ন সমাজসংস্কারক সমাজে বিধবাবিবাহ প্রচলনের উদ্দেশ্যে আন্দোলন গড়ে তোলেন। রাজা রামমোহন রায়ের তত্ত্ববোধিনী সভা, নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী, কিশোরীচাঁদ মিত্রের সুহৃদ সভা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, জ্যোতিরাও ফুলের সত্যশোধক সমাজ, প্রার্থনা সমাজ প্রভৃতি বিধবাবিবাহকে সমর্থন করে। ‘তত্ত্ববোধিনী’, ‘সংবাদ প্রভাকর’-সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিধবাবিবাহের সপক্ষে প্রচার চালানো হয়। এবিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গঠন করতে থাকেন।
কোন গভর্নর জেনারেলের আমলে বিধবা বিবাহ আইন প্রণীত হয়
তিনি ‘বিধবা-বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে তিনি ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য়ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। বিধবাবিবাহকে আইনসম্মত করার উদ্দেশ্যে তিনি গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র সরকারের কাছে জমা দেন। অবশেষে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে লর্ড ডালহৌসি ১৫ নং রেগুলেশন দ্বারা হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন প্রণয়ন করেন। তবে পরবর্তী বড়োেলাট লর্ড ক্যানিং আইনে স্বাক্ষর করে বিধবাবিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেন।
প্রথম বিধবা বিবাহ কবে অনুষ্ঠিত হয়
(২৬ জুলাই, ১৮৫৬ খ্রি.)। এই বছর ৭ ডিসেম্বর বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ব বর্ধমানের কালীমতী নামে জনৈক বিধবাকে বিবাহ করলে কলকাতায় প্রথম বিধবাবিবাহ সম্পন্ন হয়। বিদ্যাসাগর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে নিজপুত্র নারায়ণচন্দ্রকে ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন। বিধবাবিবাহ বিরোধীদের প্রতিবাদের উত্তর দেওয়ার জন্য বিদ্যাসাগর ‘অতি অল্প হইল’ও ‘আবার অতি অল্প হইল’নামে দুটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তাঁর আন্দোলনের ফলে বিধবা নারীরা মুক্তির স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়। বিধবাবিবাহ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলায় শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়, বোম্বাইয়ে প্রার্থনা সমাজ, মহারাষ্ট্রে ডি. কে. কার্ভে, মাদ্রাজে বীরসালিঙ্গম বিধবাবিবাহকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলেন।