5,327 Members Now! 🎉
🔥 Live Job Alerts!
Join Instant Updates →
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

গ্রাম্য মেলা প্রবন্ধ রচনা|Grammo mela probondha rachona

Salauddin Sekh
Updated: Sep 10, 2023

ভূমিকা:

গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম হলো গ্রাম্যমেলা। মানুষের ধূসর, নিরানন্দ এবং একঘেয়ে গ্রাম্যজীবনে মেলা আনন্দের জোয়ার নিয়ে আসে। একসময় গ্রামীণ কৃষি জগতে ছিল শস্য উৎপাদনের প্রাচুর্য। উৎসব ছিল গ্রামীণ মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের অবদানের ফলে জীবন যাত্রার পরিবর্তন হলেও মানুষের মন থেকে উৎসবের চেতনা বিলুপ্ত হয়নি। উৎসব আয়োজনের সেই পথ ধরেই গ্রাম্যমেলা তার বিশাল পরিসর দখল করে আছে। আর এই মেলাই বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বহন করে।

মেলা কী:

মেলা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো মিলন। সাধারণত গ্রাম অঞ্চলের মানুষজন বছরের শুরু অথবা শেষে নয়তো একটি বিশেষ দিন উপলক্ষে বিশেষ স্থানে নানা ধরণের উৎসব করার জন্য মিলিত হয় তাকেই গ্রাম্যমেলা বলা হয়। এই গ্রাম্যমেলা আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশ মূলত গ্রামপ্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষই গ্রামে বাস করে। তাই গ্রামবাসীদের কাছে গ্রাম্যমেলা খুবই জনপ্রিয়।

মেলার উৎপত্তি:

আদিম কালের মানুষ বিভিন্ন ধরণের অদৃশ্য দেবতায় বিশ্বাস করত, যা আদিম ধর্মবিশ্বাস বা এনামিষ্টিক (Anamistic) নামে পরিচিত। আদিমযুগের মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা, বেশি পরিমাণ ফসল ও খাদ্য প্রাপ্তির জন্য এসব অদৃশ্য দেবতার সাহায্য কামনা করতো। তাদের এই মনগড়া বিশ্বাসের কারণে যেদিন বার্ষিক ফসল পেত সেদিন কোনো পাহাড়-পর্বতের পাদদেশে-নদীর তীরে অথবা কোনো সুবৃহৎ বৃক্ষের ছায়ার নিচে সমবেত হত। এইসব স্থানে তারা বিভিন্ন ধরণের ফসল, জীবজন্তু এবং গৃহের দ্রব্যসামগ্রী উপঢৌকন হিসেবে রেখে আসত। অনেক নৃ- বিজ্ঞানী এবং সমাজ বিজ্ঞানী মনে করেন যে, এই জমায়েত বা মিলিত হওয়ার প্রক্রিয়া থেকেই গ্রাম্যমেলার উৎপত্তি হয়েছে।

মেলার উপলক্ষ:

সাধারণ একটি মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য একটি বিশেষ উপলক্ষ্য কাজ করে। আবহমানকাল ধরে চলে আসা এই মেলাগুলো সাধারণত দুই ধরণের উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। (১) ধর্মীয় মেলা- চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, রথযাত্রা মেলা, অষ্টমী মেলা, বৌদ্ধ-পূর্ণিমা মেলা, মাঘী পূর্ণিমা মেলা ইত্যাদি। এছাড়াও কোনো অলৌকিক দেবতা, পীর, দরবেশ ও সন্ন্যাসীর নামে ধর্মীয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। (২) ধর্ম নিরপেক্ষ মেলা- নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ, পৌষ মেলা, নৌকা বাইচের মেলা, ঘুড়ি প্রদর্শনের মেলা, বইমেলা, কুটির শিল্পের মেলা ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের নামে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেমন- লালন শাহের মেলা, মধুসূদনের মেলা, কবি জসীম উদদীন মেলা ইত্যাদি। ধর্ম নিরপেক্ষ মেলাগুলোতে মানুষ ভেদাভেদের পার্থক্য ভুলে সবাই একত্রে মিলিত হয়। তারা আনন্দের জোয়ারে গা- ভাসিয়ে বেড়ায়।

মেলার প্রস্তুতি:

কখন, কবে মেলা অনুষ্ঠিত হবে তা গ্রামের মানুষের আগে থেকেই জানা থাকে। আর সে অনুসারেই গ্রামের মানুষের মধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি চলে। গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েরা মেলায় খরচ করার জন্য আগে থেকেই তাদের বাবা-মায়ের নিকট থেকে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে। মেলাকে কেন্দ্র করে আশে-পাশের কারিগরেরা বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র তৈরি করে থাকে। তবে মেলায় বিক্রির জন্য ছোট ছেলে-মেয়েদের খেলনা তৈরির জন্যই কারিগররা বেশি মনোযোগ দেয়। আবার যারা মেলার মূল আয়োজক থাকে তারাও অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। মেলার নির্ধারিত স্থান পরিষ্কার এবং সুশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। মেলায় দোকান বসানোর জন্য দোকানদাররা অনেক আগে থেকেই দোকান বরাদ্দ নেয়। এছাড়াও মেলায় আগত বিভিন্ন ধরণের অতিথিদের আপ্যায়নের নানা রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

মেলার স্থান ও কাল :

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই সব মেলার জন্য হাট-বাজারের মতো নির্দিষ্ট স্থানের প্রয়োজন হয় না । খোলা-মেলা যেকোনো স্থানেই মেলার আসর বসানো যায়। সাধারণত গ্রামের কেন্দ্রস্থলে খেলার মাঠ, মন্দির প্রাঙ্গণ, নদীর তীরে বা সুবৃহৎ কোনো বৃক্ষের ছায়ার নিচে মেলা বসে। পূর্ব ঐতিহ্য অনুসারে এই স্থানগুলোতে মেলার আয়োজন করা হয়। দোকান বসানোর জন্য অনেক সময় এই স্থানগুলোতে টিনের চালা নির্মাণ করা হয়। অবশ্য মেলা শেষ হওয়ার পর এই চালাগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত মেলাগুলো একদিন, এক সপ্তাহ, পনের দিন আবার কোনটি এক মাসব্যাপী চলে।

গ্রাম্য মেলার বর্ণনা:

গ্রাম্যমেলায় গ্রামীণ জীবনের রূপবৈচিত্র্য সুন্দরভাবে ফুটে উঠে। এই মেলায় নতুন নতুন পণ্যের আত্মপ্রকাশ ঘটে। গ্রাম্যমেলায় পণ্য সামগ্রী বিক্রয়ের ব্যাপারটি প্রাধান্য পায় বলে একে বার্ষিক বাজার বলা যায়। মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে পণ্য সামগ্রী নিয়ে আসে দোকানদাররা। অনেকে মেলায় বিক্রি করার জন্য সারা বছর পণ্য তৈরি করে সঞ্চয় করে রাখে। শুধু ব্যবসায়ীগণই নয়, উৎপাদক, চাষীরাও বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে মেলায় বিক্রি করার জন্য হাজির হয়। মেলায় কোথাও মাটির জিনিস, কোথাও কাঠের জিনিস, কোথাও ঘুড়ি আবার কোথাও খাবারের দোকান বসে। মেলার বিশেষ একটি অংশজুড়ে নানা ধরণের কৃষিদ্রব্যের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। গ্রাম্যমেলায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষের আনাগোনা থাকে। আর এসব মানুষের জন্য নানা রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়। নানা রকম মিষ্টি ক্রেতাদের কাছে লোভনীয় হয়ে উঠে। ছোট ছেলেমেয়েদের মনোরঞ্জনের জন্য নানা রকম খেলনা, মাটির, কাঠের বা প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন রকম পণ্য সামগ্রী মেলায় আসে। এসব উপকরণের বৈচিত্র্যের শেষ নেই। প্রকৃতপক্ষে মেলাকে শিশুদের আনন্দের জগৎ বললেও ভুল হবে না। তাদের মুখে বাঁশির শব্দে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠে। এছাড়াও মেলায় আগত দর্শকদের জন্য নাগর দোলা, লাঠি খেলা, কুস্তি, সার্কাস, নাচ, গান, কবিগান, বাউল গান, ফকির গান

এবং যাত্রাসহ নানা ধরণের ব্যবস্থা থাকে।

নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমাবেশ:

গ্রাম্যমেলায় গ্রামের নানা পেশা ও শ্রেণির মানুষের সমাগম ঘটে। এই মেলায় মানুষের সাথে মানুষের এবং শিল্পীর সাথে শিল্পের অপূর্ব সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়। মেলার মাধ্যমে সমাজের নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের সাথে পরিচয় হয় এবং এভাবে তারা নানা ধরণের অভিজ্ঞতা লাভ করে। এখানে কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে ও মিস্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের প্রায় সব শ্রেণির লোক মিলিত হয়।

বিচিত্র সামগ্রীর সমাবেশ:

মেলায় আসা বৈচিত্র্যময় পণ্যের শেষ নেই। হস্ত ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যের মধ্যে বাঁশ, বেতের তৈরি ডালা, কুলা, হাত পাখা, শীতল পাটি, নকশী কাঁথা, ডালঘুটনি, নারকেল কোরা, মাছ ধরার কোচ, পলো, ঝাঁকি জাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মৃৎ শিল্প সামগ্রীর মধ্যে মাটির হাড়ি-পাতিল এবং পাতিলের ঢাকনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কামারের তৈরি জিনিসগুলো হলো- দা, কাস্তে, ছুরি, কোদাল, সাবল, বটি ইত্যাদি। কাঠের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে- পিঁড়ি, বেলন, জলচৌকি, চেয়ার, টেবিল, খাট পালঙ্ক উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মেলায় শিশুদের জন্য নানা ধরণের খেলনা পাওয়া যায়। যেমন- পুতুল, বাঁশি, বল, লাটিম, মার্বেল ইত্যাদি। মেয়েদের প্রসাধন উপকরণের মধ্যে ফিতা, চুড়ি, ক্লিপ, স্নো-পাউডার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে মুড়ি-মুড়কি, খই, খাজা, কদমা, চিনি বাতাসা, জিলাপি, আমিত্তি, নিমকি, রসগোল্লা ও নারিকেলের নাড়— ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মেলার তাৎপর্য:

মেলার সাধারণত দুটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক দিক। মনস্তাত্ত্বিক দিক বলতে ভাবের আদান-প্রদানকে বুঝানো হয়। আর অর্থনৈতিক দিক বলতে পণ্য বেচা-কেনাকে বুঝানো হয়। গ্রামের মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। অতিরিক্ত পরিশ্রম তাদের জীবনের ছন্দপতন ঘটায়। আর এই গ্রামীণ মেলা তখন অনাবিল শান্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। গ্রামীণ মানুষ মেলার মাধ্যমেই আনন্দের স্বাদ গ্রহণ করে থাকে। গ্রামের অনেক দরিদ্র, অবহেলিত মানুষ আছে যারা এই মেলা উপলক্ষে কিছু আয় উপার্জন করতে পারে। যেমন কামার, কুমার ও তাঁতী তাদের জিনিসগুলো বিক্রি করে এই দিনে কিছু আয় করে থাকে। সুতরাং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই মেলার তাৎপর্য রয়েছে।

মেলার অপকারিতা:

পৃথিবীতে কোনো কিছুই অবিমিশ্র নয়। তাই গ্রাম্যমেলার অনেক উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু কিছু অপকারিতা রয়েছে। সাধারণত মেলার বিচিত্র ধরণের মানুষের সমাগম ঘটে। আর এ কারণে অনেক সময় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জুয়াসহ নানা রকমের অবৈধ কাজ মেলায় সংঘটিত হয়। আবার অনেক লোকের সমাগমের জন্য পরিবেশও দূষিত হয়।

উপসংহার:

মেলাকে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক বলা যায়। এটি আবহমান বাংলার লোক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মেলার মাধ্যমে এক গাঁয়ের মানুষের সাথে অন্য গাঁয়ের মানুষ পরিচয় ঘটে এবং ভাবের আদান-প্রদান হয়। তবে ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে গ্রাম বাংলার এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে। তাই গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক গ্রাম্যমেলাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

About the Author

   Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

Aftab Rahaman is a seasoned education blogger and the founder of KaliKolom.com, India’s premier Bengali general knowledge blog. With over 10 years researching current affairs, history, and competitive exam prep, he delivers in‑depth, up‑to‑date articles that help students and lifelong learners succeed. His expert insights and data‑driven guides make KaliKolom.com an authoritative resource in Bengali education.

Unlock FREE Subject-Wise PDFs Instantly

Join Our Telegram Channel for Daily Updates!

          JOIN NOW ➔

Recent Posts

See All →