WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস | দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস বলতে কী বোঝো



দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন

দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস (ছবি আঁকা, ফোটোগ্রাফি): ইতিহাসের লিখিত উপাদানগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে রচিত হয় না। সেরকম উপাদান সরবরাহ করতে পারে একমাত্র আঁকা ছবি এবং ফোটোগ্রাফ। ছবি ও ফোটোগ্রাফি সাধারণভাবে রক্ষণশীলতা বা প্রগতিশীলতার পরোয়া করে না, যা ঘটছে তার দৃশ্যরূপ কোনোরকম অস্পষ্টতা ছাড়াই ফুটিয়ে তোলে। এজন্য আধুনিক ইতিহাসচর্চায় দৃশ্যশিল্পের ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আধুনিক ইতিহাস চর্চায় দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস

ছবি আঁকা-র ইতিহাস

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পাহাড়ের গায়ে, দেওয়ালে, এমনকি পুঁথিপত্রেও ছবি আঁকত। ভারতে সুলতানি, চোল, বিজয়নগর, মোগল প্রভৃতি আমলে দরবারি চিত্রকলার বিকাশ ঘটে। পঞ্চদশ শতকে ইতালিতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, রাফায়েল, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো প্রমুখের আঁকা ছবিগুলি চরম উৎকর্ষতার নিদর্শন। আধুনিক বাংলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, যামিনী রায় প্রমুখ ভারতীয় চিত্রকলাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। এবিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাগেশ্বরী প্রবন্ধমালা’, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের ‘চিত্রকথা’, অশোক মিত্র-র ‘ভারতের চিত্রকলা’, গীতা কাপুরের ‘কনটেমপোরারি ইন্ডিয়ান আর্টিস্ট’প্রভৃতি।

আরো পড়ুন –



ফোটোগ্রাফি ইতিহাস

ফোটোগ্রাফির ইতিহাস খুব বেশি প্রাচীন না হলেও ইতিহাসের উপাদান ফোটোগ্রাফি:/ হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ আলোকচিত্রীর তোলা ছবিগুলি আমাদের সামনে ইতিহাসকে তুলে ধরে। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ওয়ালকট কর্তৃক ক্যামেরা আবিষ্কারের পর ভারতে ফোটো তোলার যন্ত্রপাতি আসে ১৮৫০-এর দশকের গোড়ায় ১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের সময় শুধু ছবি তোলার আকর্ষণে ড. জন মুরে, ফেলিক্স বিয়াতো, টাইটলার দম্পতির মতো ফোটোগ্রাফার এদেশে আসেন। ইউরোপীয় ছবিওয়ালাদের পাশাপাশি আহমেদ আলি খান, লালা দীনদয়াল প্রমুখ ভারতীয়ও সমকালের ছবি লেন্সে ধরে রাখেন। তখন থেকে ক্যামেরায় তোলা ছবিও এদেশের ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সাক্ষ্যপ্রমাণ হয়ে ওঠে। মন্বন্তর, নৌবিদ্রোহ, দাঙ্গা, দেশভাগ প্রভৃতির বিভিন্ন ফোটোগ্রাফ সাম্প্রতিককালের ইতিহাসচর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অধুনা ডিজিট্যাল ক্যামেরা ও মোবাইল ক্যামেরার ব্যবহার তথ্যভাণ্ডার নির্মাণে এবং ফোটোগ্রাফির মান বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চায় কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল–জন ওয়েড-এর ‘এ শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য ক্যামেরা, আর ডগলাস নিকেল-এর ‘হিস্ট্রি অব ফোটোগ্রাফি : দ্য স্টেট অব রিসার্চ, বিদ্যা দেহেজিয়া-র ‘ইন্ডিয়া প্রু দ্য লেন্স : ফোটোগ্রাফি ১৮৪০-১৯১১; সোফি গর্ডন-এর ‘নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি ইন্ডিয়ান ফোটোগ্রাফি প্রভৃতি।

আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চায় ফটোগ্রাফের ব্যবহার

প্রচলিত তথ্য ও ঘটনার বিবরণীর প্রামাণ্যতায় ফোটোগ্রাফ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফোটোগ্রাফ থেকে নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার বিবরণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাওয়া যায় বলে ঐতিহাসিক ঘটনার প্রামাণ্য ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়।

১৯৩৯ সালে গান্ধিজির সঙ্গে কথোপকথনে মগ্ন জিন্না (ফোটোগ্রাফার—কুলবন্ত রায়)
১৯৩৯ সালে গান্ধিজির সঙ্গে কথোপকথনে মগ্ন জিন্না (ফোটোগ্রাফার—কুলবন্ত রায়)

তবে ফোটোগ্রাফের ব্যবহার সম্পর্কে গবেষককে সচেতন হতে হবে। যিনি ফোটোগ্রাফ তুলছেন তিনি বিষয়কে কীভাবে দেখছেন বা ভাবছেন, তা অনেকসময় দর্শককে ঐতিহাসিক সত্য থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এক্ষেত্রে ওই ফোটোগ্রাফ থেকে প্রকৃত ঐতিহাসিক সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব নাও হতে পারে। কুলবন্ত রায়ের তোলা পাশের ফোটোগ্রাফটিতে মহম্মদ আলি জিন্না ও গান্ধিজিকে ১৯৩৯-এ আলাপরত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এই সময় দু’জনই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে ছিলেন। এরপরই ১৯৪০-এ লাহোরে মুসলিম লিগের অধিবেশনে জিন্না মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র দাবি করেন। ফোটোগ্রাফটি থেকে উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের জটিল মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব কোথাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: