ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলােচনা করাে ।

  ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি

Join Telegram

Table of Contents

 

সূচনা : হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ ও তার পুত্র দুদু মিঞা ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের প্রবর্তক । পরবর্তীকালে নােয়ামিঞার নেতৃত্বে এই আন্দোলন পরিচালিত হয় । তার আমলে ফরাজি আন্দোলনের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে ফরাজিআন্দোলন নিছক একটি ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত হয় এবং শেষ পর্যন্ত উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে এই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।

 ১ > ব্যর্থতার কারণ : ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি হল—(১) যােগ্য নেতৃত্বের অভাব : শরিয়ৎ উল্লাহ ও দুদু মিঞার মৃত্যুর পর ( ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ) ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদান করার মতাে যােগ্য নেতৃত্বের অভাব ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রধান কারণ । তাছাড়া দুদু মিঞার দীর্ঘ কারাবাসের ফলেও এই আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে । (২) ধর্মীয় সংকীর্ণতা : ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হল ধর্মীয় সংকীর্ণতা । দুদু মিঞার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নােয়া মিঞা জমিদার ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম অপেক্ষা ধর্মীয় সংশয়ে মনােনিবেশ করলে এই আন্দোলনের জনপ্রিয়তা নষ্ট হয় এবং এটি ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে (৩) রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া : দুদু মিঞার মৃত্যুর পর এই আন্দোলন রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এই আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। (৪) সাম্প্রদায়িকতার মনােভাব : ফরাজি আন্দোলন হিন্দুধর্ম বিরােধী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় । ফলে হিন্দুরা এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যেতে থাকে । (৫) সংহতির অভাব : সংকীর্ণ ধর্মবােধ দ্বারা এই আন্দোলন পরিচালিত হওয়ায় উদারপন্থী মুসলমান সমাজ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকে ফলে ; সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয় । (৬) ব্রিটিশ বিরােধীতার প্রবণতা হ্রাস : ফরাজিদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরােধীতার প্রবণতা হ্রাস পায় বরং তাদের মধ্যে ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি পেলে এই আন্দোলনের জনপ্রিয়তা কমে যায় ।

 শেষকথা : ব্যর্থতার উপরােক্ত কারণগুলি ছাড়াও এই আন্দোলনের লক্ষ্যহীনতা , অর্থলােকবল , সময় , উপকরণ ও মানষিকতার অভাব , ধর্মবোেধ ও চেতনার ওপর এই আন্দোলন গড়ে ওঠায় কৃষক সমাজের আংশিক সমর্থন , দুদু মিঞার স্বাধীন সরকার গড়ে তােলার অলীক স্বপ্ন , সর্বোপরি এই আন্দোলনের চরিত্র সর্বভারতীয় না থাকা ছিল ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যান্য কারণ ।

ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

  ভূমিকা : ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধের কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ফরাজি আন্দোলন ছিল এই রকমই একটি কৃষকবিদ্রোহ । আরবি ‘ফরাইজ শব্দ থেকে ফরাজি আন্দোলনের নামকরণ । তারিখ – ই – মহম্মদীয়া প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য ।

 >>উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : ফরাজি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল— [১] আদর্শ অনুসরণ : কোরানের পবিত্র আদর্শ অনুসরণ করে চলা , ইসলাম নির্দিষ্ট কর্তব্য ও পবিত্র বিশ্বাস মেনে চলা এবং ইসলামিয় ভাবধারাকে পুনরুজ্জীবিত করা ।  [২]কৃষক মুক্তি : অত্যাচারী হিন্দু জমিদারের শােষণ থেকে দরিদ্র কৃষকদের মুক্ত করা । নীলকর ও রক্ষণশীল মুসলমানদের বিরােধীতা করা ও ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা ।

 [৩] বৈষম্য দূরীকরণ : এই আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা । জমির ওপর সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক বৈষম্য দূর করা ।

 [ ৪ ] জুম্মা প্রার্থনায় নিষেধ : নামাজ জুম্মা বা ঈদের প্রার্থনায় আপত্তি করা কেননা ফরাজিরা মনে করত ইংরেজ অধিকৃত ভারতবর্ষ ছিল দার – উল হারব’বা বিধর্মীদের দেশ । এই অবস্থায় ভারতে নামাজ বা ঈদের সময় জুম্মা প্রার্থনা উচিত নয় । 

মূল্যায়ণ : ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও ক্রমেই তা রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে । হিন্দু – মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করাই এই আন্দোলনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় , কেননা ফরাজি আন্দোলন কখনই একটি 7 । হিন্দু বিরােধী সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল না ।

Join Telegram

Join Telegram

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *