5,327 Members Now! 🎉
🔥 Live Job Alerts!
Join Instant Updates →
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

হযরত খাদিজা (রা:) এর জীবনী

Salauddin Sekh
Updated: Feb 27, 2022

হযরত খাদিজা (রা:) (খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ‎;আনু. (৫৫৫ – ৬২০)

ভূমিকা:

আমরা এমন এক নারী সম্পর্কে জানব, যিনি ইসলামের নারীদের মধ্যে একজন মহিয়সী নারী। যিনি শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন, যিনি প্রথম মুসলমান নারী, যিনি নবী করিম (সা.) এর ভাল স্ত্রী, তিনি ছিলেন সবদিক থেকে উচ্চপদস্থ,দয়াময়ী, খোদাপ্রিয়,দানশীল এবং বেহেস্তের ফুল হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর প্রিয় মাতা। যার জীবনী ছিল উজ্জলতম ও ব্যক্তিত্ব ছিল নারীদের জন্য আদর্শস্বরূপ। যার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন_ “আল্লাহ মুমিনদের জন্য যেমন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও ইমরান তনয়া মারিয়ামকে উদাহরণ স্বরূপ করেছে, যেভাবে তাঁরা তাদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন।”

যেভাবে আসিয়া ও মারিয়াম তাঁরা তাঁদের পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন এবং মহত্বতা অর্জন করেছিলেন। ঠিক সেভাবে হযরত খাদিজা তাঁর পবিত্রতাকে বজায় রেখেছিলেন। তাই হযরত খাদিজা (আ.) কে হযরত আসিয়া ও মারিয়ামের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেহেতু তিনিও আসিয়া ও মারিয়ামের মত নমুনা স্বরূপ ছিলেন।

হযরত খাদিজার পদমর্যাদা এত বেশি মূল্যবান ছিল যে, আল্লাহ তাঁর আসমানী কিতাব তাওরাত যা হযরত মুসা (আ.) এর উপর নাজিল হয়েছিল, তাতে উল্লেখ করেছেন যে,”হযরত খাদিজার (আ.) উপমা ঐ নদীর পানির সাথে যে পানি আবে হায়াত নামে প্রসিদ্ধ এবং যে নদীর দুই ধারে জীবন বৃক্ষ আছে, যে বৃক্ষের বারোটি ফল আছে আর ঐ বৃক্ষের পাতাগুলো হচ্ছে উম্মতের জন্য নিরাময় স্বরূপ।”

জন্ম ও বংশ:

খাদিজা হস্তী বর্ষের ১৫ বছর আগে অর্থাৎ নবীর জন্মেরও ১৫ বছর আগে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ এবং মাতা ফাতিমা বিনতু জায়িদ। পিতার বংশের ঊর্ধ্ব পুরুষ কুসাঈ-এর মাধ্যমে মুহাম্মদের বংশের সাথে তার বংশ মিলিত হয়েছে । এজন্যই নবুওয়ত লাভের পর খাদিজা নবীকে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের কাছে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, “আপনার ভাতিজার কথা শুনুন”। ধারণা করা হয় বংশগত সম্পর্কের ভিত্তিতেই তিনি একথা বলেছিলেন। তার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ফিজার যুদ্ধে নিজের গোত্রের সেনাপতি ছিলেন। তার অনেক সন্তান ছিল। সন্তানদের মধ্যে খাদিজা ছিলেন দ্বিতীয়।

নবীজির সাথে বিবাহ:

খাদিজার সাথে মুহাম্মদের বিবাহ নিয়ে বেশকিছু মতামত প্রচলিত আছে। তবে সবাই একমত যে বিয়ের প্রস্তাব খাদিজা দিয়েছিলেন। একটি মতবাদ অনুসারে খাদিজা নিজেই মুহাম্মদ কে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মুহাম্মদ নিজের দরিদ্রতার অজুহাত দেখিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। তার ধারণা ছিলো গরীব হওয়ার জন্য খাদিজার বাবা এই বিয়ে মেনে নিবে না। অবশেষে খাদিজার বাবা যখন অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল অবস্থায় ছিলেন, তখন খাদিজা যেয়ে বিয়ের অনুমতি আদায় করেন। মাতালবস্থা কেটে যাওয়ার পর খাদিজার বাবা সম্মতি তুলে নেন এবং বিয়েতে বাধা দান করেন। তারপর খাদিজা আবার তার বাবার সম্মতি আদায় করেন এবং মুহাম্মদ কে বিয়ে করেন।

অপর একটি মতবাদ অনুযায়ী, খাদিজার বান্ধবী ইয়ালার স্ত্রী নাফিসা বিনতে মানিয়া বিবাহের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছেন। তিনি খাদিজার হয়ে মুহাম্মদ এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। এরপর দুই পক্ষের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়।

তাদের বিয়েতে আবু তালিব, হামযাহসহ অনেক বিশিষ্ট কুরাইশ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সকলের সামনে বিয়ের খুৎবা প্রদান করেন আবু তালিব। আরবী গদ্যসাহিত্যে এই খুৎবা এখনো বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিয়ের মোহরানা ছিলো ৫০০ স্বর্ন মুদ্রা। খাদিজা নিজেই দুই পক্ষের খরচাদি বহন করেন। তিনি দুই উকিয়া সোনা ও রুপা মুহাম্মদ কে দেন , যেন তা দিয়ে উভয়ের পোশাক ও ওয়ালীমার (বৌভাত অনুষ্ঠান) আয়োজন করতে পারেন। বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ছিলো ৪০ বছর এবং মুহাম্মদ এর বয়স ছিলো ২৫ বছর। মুলত মুহাম্মদ এর চারিত্রিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে খাদিজা তাকে বিয়ে করেন।

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ:

মুহাম্মদ (সা.) তৎকালীন আরবের সামাজিক অবক্ষয়, যুদ্ধ-বিগ্রহ, হিংসা, হানাহানি থেকে মানুষের মুক্তি কিভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তা করতেন। ত্রিশ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মাদ প্রায়ই মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় কাটাতেন। তার স্ত্রী খাদিজা নিয়মিত তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এমনি একদিন ধ্যানের সময় ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে আল্লাহপ্রেরিত বাণী নিয়ে আসেন এবং তাকে কিছু পংক্তি দিয়ে পড়তে বলেন। উত্তরে মুহাম্মাদ জানান যে তিনি পড়তে জানেন না, এতে জিবরাইল তাকে জড়িয়ে ধরে প্রবল চাপ প্রয়োগ করেন এবং আবার একই পংক্তি পড়তে বলেন। কিন্তু এবারও মুহাম্মাদ(সা.) নিজের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেওয়ার পর মুহাম্মাদ(সা.) পংক্তিটি পড়তে সমর্থ হন। মুসলিমদের ধারণা অনুযায়ী এটিই কুরআনের প্রথম আয়াত গুচ্ছ; সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত। বর্ণনায় আরও উল্লেখ আছে প্রথম বাণী লাভের পর মুহাম্মাদ এতই ভীত হয়ে পড়েন যে কাঁপতে কাঁপতে নিজ গৃহে প্রবেশ করেই খাদিজাকে কম্বল দিয়ে নিজের গা জড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। বারবার বলতে থাকেন, “আমাকে আবৃত কর”। খাদিজা নবী (সা.) এর সকল কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন এবং তাকে নবী হিসেবে মেনে নেন। ভীতি দূর করার জন্য মুহাম্মাদকে নিয়ে খাদিজা নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যান। নওফেল তাকে শেষ নবী হিসেবে আখ্যায়িত করে। এভাবে খাদিজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

জীবন পরিচিতি:

নাম: খাদিজা
উপাধি: মুবারাকাহ, তাহেরাহ, কুবরা।
উপনাম: উম্মে হিন্দ, উম্মুল মু‘মিনীন, উম্মে জাহরা।
পিতা: খুয়াইলিদ বিন আসাদ
মাতা: ফাতিমা বিনতে যাসেম
জন্ম তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার ৫৫ বছর পূর্বে মক্কায়।
রাসূলের (সা.) সাথে বিবাহের তারিখ: ১০ই রবিউল আউয়াল, নবুয়্যত ঘোষণার ১১ বছর পূর্বে।
মৃত্যু তারিখ ও স্থান: নবুয়্যত ঘোষণার দশম বছরে ১০ই রমজান মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন। প্রকৃতার্থে তিনি শেবে আবু তালিবে (আবু তালিব উপত্যকাতে) ৩ বছর বন্দী অবস্থায় তার উপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছিল সে কারণে বলা যেতে পারে তিনি শাহাদতবরণ করেছেন।
মৃত্যুকালীন বয়স: ৬৫ বছর
পবিত্র মাজার শরীফ: মোয়াল্লা নামক কবরস্থানে যার অপর নাম আবু তালিবের কবরস্থান।
রাসূলের (সা.) সাথে জীবন যাপন কাল: প্রায় ২৫ বছর।
সন্তানাদি: ত্রমানুসারে কাসিম, আবদুল্লাহ যার উপনাম তাহির ও তায়্যেব, রুকাইয়াহ, যায়নাব, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা জাহরা (আলাইহুন্নাস সালাম)।

ঘোর অন্ধকারে উজ্জল নক্ষত্রের উদয়:

আবর উপদ্বীপ মক্কায় প্রাচীন বংশধর কুরাঈশ বসবাস করতেন, পয়গাম্বরদের আদর্শ হতে দূরে থাকার কারণে, মূর্খের শাসন ও মূর্খতা এবং সে যুগের নোংড়া, অপবিত্র কার্যক্রমের ফলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে, সেখানে আদর্শের কোন চিহ্নই ছিল না। যা কিছু দেখা যেত তা শুধুই বৈষম্য, অত্যাচার, নোংড়ামী, মতভেদ, যুদ্ধ, রক্তপাত, হিংসা, স্বার্থপরতা, ছন্নছাড়া, এবং লাগামহীনের খবরাদি। এ রকম এক অন্ধকার পরিবেশে একটি আদর্শ দম্পতি (খুয়াইলিদ ও ফাতিমা) হতে এক উজ্জল নক্ষত্রের আবির্ভাব ঘটে। এই উজ্জল নক্ষত্রটি হচ্ছে হযরত খাদিজা (সা.) যিনি রাসূলের (সা.) জন্মের ১৫ বছর পূর্বে (নবুয়্যত ঘোষণার ৫৫ বছর পূর্বে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম তারিখ যদিও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই তবে তার মৃত্যু তারিখ প্রসিদ্ধ বর্ণনানুযায়ী নবুয়্যতের দশম বছরের রমজান মাসে আবু তালিবের মৃত্যুর ঠিক তিন দিন পর ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসূল (সা.) তাকে তার সন্তান হিন্দ-এর নামানুসারে উম্মে হিন্দ বলে ডাকতেন।

এই মহিয়সী নারী ৪০ বছর বয়সে রাসূলের (সা.) যাঁর বয়স তখন ২৫ বছর ছিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনিই প্রথম নারী ছিলেন যিনি ইসলামের উদয়ান্তে সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ২৫ বছর যাবৎ রাসূলের (সা.) সাথে যুগল জীবন যাপন করেন। এই দিনগুলিতে সর্বদা পরাক্রান্ত ও আত্মত্যাগী সাথী, দয়াশীল বন্ধু হিসেবে রাসূলের (সা.) সাথে ছিলেন।

তার সম্পর্কে হযরত আবু তালিব সেই অন্ধকার যুগে বলেছিলেন: খাদিজা (সা.) এমনই এক নারী যে সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ, বরকত ও সৌন্দর্য্যে ভরপুর। যার থেকে সব ধরনের অবজ্ঞা ও অপবাদ অনেক দূরে। সে এমনই নারী যে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সম্মানিত।

সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হল: ইমাম হাসান (আ.) যার সৌন্দর্য্য বনী হাসিমের সবার নিকট উপমা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি স্বয়ং এক বক্তব্যে বলেছেন:

“যখন আল্লাহ তায়ালা সবার চিত্রাঙ্কন করছিলেন আমিই সবচেয়ে বেশী তার সাথে অর্থাৎ হযরত খাদিজার (সা.) সাথে সদৃশ্য ছিলাম”।

ইসলামের পূর্বে ও পরে হযরত খাদিজার (সা.) পাঁচটি পদবী:

হযরত খাদিজা (সা.) জন্মের পূর্বে, ঐশী গ্রন্থ ইঞ্জিল যা হযরত ঈসার (সা.) উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তাতে “বরকতময় নারী ও বেহেশতে হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন: যেখানে হযরত ঈসাকে (আ.) উদ্দেশ্য করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে: তার বংশধর বরকতময় থেকে যিনি বেহেশতে তোমার মাতা হযরত মরিয়মের (আ.) সাথী।

যদিও অন্ধকার যুগে সচ্চরিত্র নারী খুবই কম ছিল ও অনেক নারীই সে যুগে অসৎ কর্মে লিপ্ত ছিল কিন্তু হযরত খাদিজা (সা.) সে যুগেও তার সর্বদিক থেকে পবিত্রতার জন্য “তাহেরাহ” অর্থাৎ পবিত্রা উপাধি অর্জন করেছিলেন।

তার ব্যক্তিত্ব সে যুগেও এত বেশী উচ্চ পর্যায়ে ও সম্মানের পাত্র ছিল যে, তাকে সবাই “সায়্যেদাতুন নেসাওয়ান” বা নারীদের সর্দারিনী বলে ডাকতেন।

সংক্ষিপ্তাকারে বলতে হয় যে, অন্ধকার যুগের নরীদেও মধ্যে হযরত খাদিজার (সা.) অবস্থান এতটাই প্রিয়ভাজন ও সম্মানিত ছিল যে, পূর্ণতা ও উচ্চ মর্যাদার ক্ষেত্রে ছিলেন অনুপম। সে কারণেই বিবাহের পর রাসূল (সা.) তাকে “কুবরা” বা পরিপূর্ণ ও উচ্চাসন উপাধি দিয়েছিলেন।

দোয়া নুতবাতে যেমন বর্ণিত হয়েছে হযরত খাদিজাকে (সা.) “খাদিজাতুল গাররা” অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত খাদিজা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

হযরত খাদিজার (রাঃ) স্বপ্ন:

রাসূলের (সা.) সাথে পরিণয় হওয়ার পূর্বে তিনি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নের কথা তার চাচাতো ভাই ওরাকা বিন নওফলের কাছে বর্ণনা করেন। তার স্বপ্নটি ছিল এ রকম যে, আকাশ হতে আমার কোলে একটি চাঁদ নেমে আসল এবং সেটা আবার সাত ভাগে বিভক্ত হল।

ওরাকা বিন নওফেল বলল: এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা হল শেষ যুগে এক রাসূলের আবির্ভাব ঘটবে এবং তার সাথে তোমার বিবাহ হবে। আর সেই বিবাহের ফলে তোমাদের থেকে সাতটি সন্তান জন্ম নিবে।

About the Author

   Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

Aftab Rahaman is a seasoned education blogger and the founder of KaliKolom.com, India’s premier Bengali general knowledge blog. With over 10 years researching current affairs, history, and competitive exam prep, he delivers in‑depth, up‑to‑date articles that help students and lifelong learners succeed. His expert insights and data‑driven guides make KaliKolom.com an authoritative resource in Bengali education.

Unlock FREE Subject-Wise PDFs Instantly

Join Our Telegram Channel for Daily Updates!

      JOIN NOW ➔

Recent Posts

See All →