প্রাচীন যুগে ইউরোপে যেমন সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটেছিল তেমনি ভারতে সুবিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটেছিল। উভয় সাম্রাজ্য অন্তত কিছুকাল সমসাময়িক ছিল। সাম্রাজ্যের প্রসার, শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোমান ও গুপ্ত উভয় সাম্রাজ্যই কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিল।
গুপ্ত সাম্রাজ্য
[su_note note_color=”#edf02b”]ভারতের ইতিহাসে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল প্রাচীন যুগ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই যুগে ভারতে সর্বপ্রথম মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কিছুকাল পর ভারতে সুবৃহৎ গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে।[/su_note]
গুপ্ত সাম্রাজ্য রাজনৈতিক অগ্রগতি
ণুপ্ত সাম্রাজ্য : মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের (১৮৭, মতান্তরে ১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) পরবর্তীকালে ভারতের বিভিন্ন অংশে ছোটো-বড়ো বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক রাজ্যের উত্থান ঘটে। এগুলির মধ্যে উত্তর ভারতে কুষাণ এবং দক্ষিণ ভারতে সাতবাহন রাজ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল। কুষাণ ও সাতবাহন রাজ্যের পতনের পরবর্তীকালে ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীগুপ্ত। বাংলা ও বিহারের কিছু অংশ নিয়ে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি সম্ভবত ২৭৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এরপর ঘটোৎকচ গুপ্ত রাজত্ব করেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে, শ্রীগুপ্ত ও ঘটোৎকচ গুপ্ত সামন্তরাজা ছিলেন। তাদের পরবর্তীকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রসারে সর্বাধিক কৃতিত্বের পরিচয় দেন গুপ্ত সম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত এবং দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।
1. প্রথম চন্দ্রগুপ্ত
অনেকের মতে, গুপ্ত বংশের প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা ছিলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্ত (৩২০ ৩৩৫ খ্রি.)। তিনি লিচ্ছবি রাজকন্যা কুমারদেবীকে বিবাহ করে নিজের শক্তি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন। পরবর্তীকালে গোটা লিচ্ছবি রাজ্যই চন্দ্রগুপ্তের অধীনে চলে আসে। ড. ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন যে, এই বিবাহের ফলে চন্দ্রগুপ্ত মগধ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তাঁর ‘মহারাজাধিরাজ‘ উপাধি থেকে অনেকে মনে করেন যে, তিনি মগধের রাজ্যসীমা বহুদূর বিস্তৃত করেছিলেন। সম্ভবত উত্তরে বেনারস থেকে দক্ষিণে মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ এবং পশ্চিমে বাকাটক রাজ্যের সীমানা থেকে পূর্বে সমতট বাদে বাংলার বাকি অংশ তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল।
2. সমুদ্রগুপ্ত
প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পুত্র সমুদ্রগুপ্ত (৩৩৫-৩৮০ খ্রি.) ছিলেন গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে আনতে সক্ষম হন।
1. উত্তর ভারতের রাজ্যজয় : হরিষেণ রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের বিখ্যাত নয়জন রাজাকে পরাজিত করে তাদের রাজ্য দখল করেন। এই নয়জন রাজা হলেন— [i] রুদ্রদেব, [ii] মতিল, [iii] নাগদত্ত, [iv] চন্দ্রবর্মন, [v] গণপতিনাগ, [vi] অচ্যুৎ, [vii] নাগসেন, [viii] নন্দিন ও [ix] বলবর্মন। এরপর তিনি দক্ষিণ দিকের আটবিক রাজ্যগুলিও জয় করেন।
2. দক্ষিণ ভারতের রাজ্যজয় : উত্তর ভারত জয়ের পর সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন এবং সেখানকার বারোজন রাজাকে পরাস্ত করেন। এরা হলেন—[i] বিরুগোপ, [ii] হস্তীবর্মণ, [iii] নীলরাজ, [iv] উগ্রসেন, [v] ধনঞ্জয়, [vi] কুবের, [vii] স্বামীদত্ত, [viii] দমন, [ix] মহেন্দ্রগিরি, [x] মহেন্দ্ৰ, [xi] ব্যাঘ্ররাজ এবং [xii] মন্তরাজ। অবশ্য তিনি দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে তাঁর প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা করেননি। দক্ষিণ ভারতে ‘গ্রহণ পরিমোক্ষ‘ নীতি গ্রহণ করে সেখানকার রাজাদের বশ্যতা ও কর প্রদানের প্রতিশ্রুতি আদায় করে সমুদ্রগুপ্ত তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
3. সীমান্তবর্তী রাজ্যজয় : সমুদ্রগুপ্ত সীমান্তবর্তী পাঁচটি রাজ্য [i] নেপাল, [ii] কর্তৃপুর, [iii] সমতট, [iv] দাভক, [v] কামরূপ জয় করেন।
4. অন্যান্য রাজ্যজয় : এ ছাড়া সমুদ্রগুপ্ত আরও নয়টি প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যের বশ্যতা আদায় করেন। ভারতের বিস্তৃত ভূখণ্ডে সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানোর পর সমুদ্রগুপ্ত ‘অশ্বমেধ যজ্ঞ’ করেন। সমুদ্রগুপ্তের সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কৃতিত্বের জন্য ঐতিহাসিক ড. ভিনসেন্ট স্মিথ সম্রাট সমুদ্রগুপ্তকে ‘ভারতের নেপোলিয়ন‘ বলে অভিহিত করেছেন।
3. দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (৩৮০-৪১৪ খ্রি.) গুপ্ত সিংহাসনে বসেন। তিনি বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে গুপ্ত বংশের প্রভাবপ্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন।
1. বৈবাহিক সম্পর্ক : তিনি মধ্য ভারতের নাগবংশীয় রাজকন্যা কুবের নাগকে বিবাহ করেন এবং নিজ কন্যা প্রভাবতীকে শক্তিশালী বাকাটক রাজ্যের রাজা দ্বিতীয় রুদ্রসেনের সঙ্গে বিবাহ দেন। তা ছাড়া কর্ণাটকের কদম্ব বংশের জনৈক রাজকন্যাকে তিনি নিজ পুত্রবধূ করে আনেন।
2. সাম্রাজ্যবাদ : দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত মালব, গুজরাট ও সৌরাষ্ট্রে রাজত্বকারী বিদেশি শক রাজাদের পরাজিত ও বিতাড়িত করে শক রাজ্য নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। দিল্লির নিকটবর্তী মেহেরৌলি গ্রামের একটি লৌহস্তম্ভে উল্লিখিত হয়েছে যে, জনৈক ‘চন্দ্র রাজা’ বাংলা ও বাহ্লিক দেশ জয় করেন। অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, এই ‘চন্দ্র রাজা’ এবং ইতিহাসখ্যাত গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত একই ব্যক্তি ছিলেন। মন্ত্রী বীরসেন রচিত এরাণ শিলালিপি থেকে সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কিত বহু তথ্য জানা যায়।
[su_divider top=”no” divider_color=”#171212″ link_color=”#161010″ size=”2″ margin=”5″]
গুপ্ত সাম্রাজ্য সামাজিক অবস্থা
1. সামাজিক বৈষম্য : প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সমাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশ্চাদ্গামিতা লক্ষ করা যায়।
1. সামাজিক স্তরভেদ : রোমান সমাজের মতোই এ যুগের সমাজে নানা স্তরভেদ ছিল। পূর্বতন মৌর্য যুগের জাতিভেদপ্রথা গুপ্ত যুগের সমাজেও প্রচলিত ছিল। চতুরাশ্রম প্রথায় সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—এই চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল। সমাজে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় ছিল সর্বোচ্চ মর্যাদা ও প্রতিপত্তির অধিকারী। ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সম্প্রদায়ের সামাজিক মর্যাদা গুপ্ত যুগে আরও হ্রাস পায়। এই সময় শূদ্রদের সামাজিক অবস্থা একেবারে হীন পর্যায়ে নেমে আসে। শূদ্র ছাড়াও গুপ্ত যুগে পঞ্চম জাতি নামে একটি অস্পৃশ্য জাতির উত্থান ঘটে। এই জাতির সামাজিক মর্যাদা শূদ্রদের চেয়েও নীচে ছিল।
2. নারীর মর্যাদা হ্রাস : এ যুগের সমাজে নারীর মর্যাদা খুবই হ্রাস পায়। সমাজে বাল্যবিবাহ ও পুরষের বহুবিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তবে কোনো কোনো সময় সামাজিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে অনুলোম(4) ও প্রতিলোম(5) প্রথা চলতে থাকে। ফলে সমাজে নানা মিশ্রজাতির সৃষ্টি হয়। ব্রাহ্মণ নারী ও শূদ্র পুরষের বিবাহজাত সন্তান চণ্ডাল নামে পরিচিত হয়। সমাজে গণিকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
2. গুপ্ত সাম্রাজ্যে দাসপ্রথা
প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ক্রীতদাসপ্রথার মতো ব্যাপক না হলেও ভারতে গুপ্ত যুগে দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল।
1. দাস সৃষ্টি : যুদ্ধবন্দিরা দাসে পরিণত হত এবং দাসদের ক্রয়বিক্রয় বা দান করা চলত। তা ছাড়া, রোমের ক্রীতদাসদের বিকল্প হিসেবে গুপ্ত যুগে শূদ্রদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই শূদ্ররা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রীতদাসের জীবন বরণ করতে বাধ্য হত। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের সেবা করাই শূদ্রদের কাজ বলে শাস্ত্রকার মনু উল্লেখ করেছেন। মনুস্মৃতিতে অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে দাসে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যের জন্য স্বেচ্ছায় দাসত্ব গ্রহণের কথা নারদস্মৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
2. দাসদের অবস্থা : অবশ্য গুপ্ত যুগে শূদ্রদের জীবন কখনোই রোমান ক্রীতদাসদের মতো করুণ ছিল না। ‘যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতিতে বলা হয়েছে যে, শূদ্র কার অধীনে কাজ করবে তা তার নিজস্ব ব্যাপার। জৈমিনি তার ‘পূর্বমীমাংসা সূত্র’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কোনো ব্যক্তি যজ্ঞে তাঁর সর্বস্ব দান করলেও তিনি কখনোই তাঁর অনুগত শুদ্রকে দান করার অধিকারী নন। মনু উল্লেখ করেছেন যে, শূদ্র কোনো অপরাধ করলে তার প্রভু তাকে এমন শাস্তি দেবেন যা প্রভু তাঁর স্ত্রী বা ভাইকে দিতে পারেন। গুপ্ত যুগের দাসরা পারিবারিক জীবনযাপন করার এবং নিজের উপার্জিত অর্থ ভোগ করার অধিকারী ছিল।
3. দাসদের মুক্তি : যাজ্ঞবল্ক্য লিখেছেন যে, জোর করে কাউকে দাসে পরিণত করা হলে তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া ছিল রাজার কর্তব্য। তা ছাড়া দাস তার প্রভুর শর্ত পূরণ করে দিলে, প্রদেয় অর্থ পরিশোধ করলে বা প্রভুর কোনো উপকার করলে সেই দাস মুক্তি পেতে পারত। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই গুপ্ত যুগে দাসবিদ্রোহের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
3. গুপ্ত সাম্রাজ্যে ভূমিদান ও সামন্ততন্ত্র
গুপ্ত যুগের সমাজ-অর্থনীতির। একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ভূমিদান প্রথার প্রচলন। এ যুগে শাসকগণ পুণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ছাড়াও মন্দির, বিহার প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিষ্কর জমি দান করতেন। এই প্রথা অগ্রহার বা ব্রহ্মদেয় প্রথা নামে পরিচিত। এই প্রথার দ্বারা জমির প্রাপক তার প্রাপ্ত জমির যাবতীয় মালিকানা লাভ করতেন। অগ্রহার প্রথার মাধ্যমে গুপ্ত যুগে সামন্তপ্রথার বিকাশ ঘটেছিল বলে ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ড. ডি. ডি কোশাম্বী, ড. রামশরণ শর্মা প্রমুখ মনে করেন।
গুপ্ত সাম্রাজ্যে সভ্যতা ও সংস্কৃতি
[su_note note_color=”#edf02b”]প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যে সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লক্ষ করা যায়। তথা বিশ্বের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে গুপ্ত যুগের অবদানও অনস্বীকার্য।[/su_note]
গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ
প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সভ্যতা ও সংস্কৃতি এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ যুগে উৎকর্ষ লক্ষ করা যায়। গুপ্ত যুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অগ্রগতি লক্ষ করে অনেকে এই যুগকে ‘সুবর্ণ যুগ’ বলে অভিহিত করেন। ইতিহাসবিদ বার্নেট গুপ্ত যুগকে প্রাচীন গ্রিসের পেরিক্লিসের যুগের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন, “প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসে পেরিক্লিসের যুগের যে স্থান প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে গুপ্ত যুগেরও সেই স্থান।” ” কোনো কোনো ইতিহাসবিদ গুপ্ত যুগের এই অগ্রগতির জন্য একে ইংল্যান্ডের ‘এলিজাবেথীয় যুগের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
গুপ্ত সাম্রাজ্যে সুশাসন ও রাজনৈতিক ঐক্য
মৌর্য শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ এ খানে
গুপ্ত সম্রাটরা দেশে এক সুদক্ষ বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিলেন। রাজারা স্বৈরাচারী হলেও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশে লিখিত আইনবিধি ছিল এবং সকলে তা মেনে চলতে বাধ্য ছিল। দেশে দণ্ডবিধি বিশেষ কঠোর ছিল না। তা ছাড়া মৌর্য-পরবর্তী যুগের রাজনৈতিক অনৈক্য দূর করে গুপ্ত সম্রাটরা ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের শান্তি ও সুস্থিতি সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করেছিল। গুপ্ত যুগে হুনদের একাধিক আক্রমণ ঘটলেও গুপ্ত রাজারা দক্ষতার সঙ্গে তা প্রতিহত করেন। ফলে ভয়ংকর হত্যা, লুণ্ঠন ও বিপর্যয়ের হাত থেকে ভারতবর্ষ রক্ষা পায়।
গুপ্ত সাম্রাজ্যে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে অগ্রগতি
গুপ্ত যুগে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটে।
1. কৃষি : সেচের জন্য সুদর্শন হ্রদের সংস্কার করা হয়েছিল। কৃষিকাজে উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও সেচব্যবস্থার প্রচলনের ফলে কৃষি-উৎপাদন বেড়েছিল।
2. শিল্প : এই যুগে বস্ত্রশিল্প, লৌহশিল্প, ধাতুশিল্প, কাষ্ঠশিল্প-সহ বহু শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল।
3. বাণিজ্য : কৃষি ও শিল্পের উপর ভিত্তি করে গুপ্ত যুগে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। ভৃগুচ্ছ, কল্যাণ, উজ্জয়িনী প্রভৃতি বন্দর থেকে রোম, চিন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। বাণিজ্যের উন্নতির জন্য এই যুগে আইন চালু ছিল। বাণিজ্যের সূত্র ধরে নাসিক, পৈঠান, বারাণসী, তক্ষশিলা প্রভৃতি নগর বা শহরের বিকাশ ঘটেছিল। নগরগুলিতে ‘গিল্ড’ বা ‘নিগম’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই আর্থিক সমৃদ্ধি সংস্কৃতির বিকাশে সহায়তা করেছিল।
গুপ্ত সাম্রাজ্যে সামাজিক উদারতা
গুপ্ত যুগে সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটেছিল।
1. বর্ণপ্রথার কঠোরতা হ্রাস: সমাজে উদারতা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ভেদাভেদ হ্রাস পেয়েছিল। সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য বেশি থাকলেও বর্ণপ্রথা তেমন কঠোর ছিল না।
2. বিবাহ : এই সময় বিভিন্ন বর্ণের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং উচ্চ ও নীচ বর্ণের মেলামেশা বৃদ্ধি পায়। অনুলোম ও প্রতিলোম বিবাহরীতি স্বীকৃত হয়।
3. নারী ও শূদ্রদের অবস্থা : এ যুগে নারী ও শূদ্রদের সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়। নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারত। ফা-হিয়েন বলেছেন যে, একমাত্র চণ্ডালরা সমাজে অস্পৃশ্য ছিল। এই ধরনের সামাজিক পরিবর্তন সংস্কৃতির বিকাশে খুবই সহায়ক হয়েছিল।
গুপ্ত সাম্রাজ্যে গুপ্ত যুগে সাহিত্য ও বিজ্ঞান
গুপ্ত যুগের সাহিত্য
সাহিত্যে অগ্রগতি : সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুপ্ত যুগে অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছিল। এ যুগের সাহিত্যের প্রধান মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা।
1. রাজকীয় সাহিত্য : সমুদ্রগুপ্ত সুকবি ও সুসাহিত্যিক ছিলেন। ‘কবিরাজ’ উপাধি গ্রহণ থেকে তাঁর কবি-প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর সভাকবি হরিষেণের কবি-প্রতিভার পরিচয় মেলে ‘এলাহাবাদ প্রশস্তি’ থেকে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী বীরসেনের ‘এরাণ শিলালিপি’ ছিল বহু তথ্য সংবলিত একটি বিখ্যাত রচনা।
2. স্মৃতিশাস্ত্র ও ধর্মগ্রন্থসমূহ : এ যুগেই বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্রগুলি যেমন— যাজ্ঞবল্ক্যস্মৃতি, কাত্যায়নস্মৃতি, ব্যাসস্মৃতি, বৃহস্পতিস্মৃতি, দেবলস্মৃতি, নারদস্মৃতি প্রভৃতি রচিত হয়। কয়েকটি পুরাণ এবং রামায়ণ ও মহাভারত এই যুগে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হয়।
গুপ্ত যুগের সাহিত্য
3. সাহিত্যিক : যে সকল বিখ্যাত পণ্ডিত, দার্শনিক ও শাস্ত্রকার এই যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঈশ্বরকৃয়, বসুবন্ধু, অসঙ্গ, গৌরপাদ, পক্ষিলস্বামীন, চন্দ্রগোমিন, বৌধায়ণ, দিন্নগাচার্য, ভর্তৃহরি, পাণিনি, পতঞ্জলি প্রমুখ। বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস’, শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিক’, ভারবি-র ‘কিরাতার্জুনীয়ম্’, ভট্টি-র ‘ভট্টিকাব্য’, দণ্ডী-র ‘দশকুমারচরিত’, বিষ্ণুশর্মার ‘পঞ্চতন্ত্র’, অমর সিংহের ‘শব্দকোষ’ প্রভৃতি গুপ্ত যুগেই রচিত হয়। মহাকবি কালিদাস ছিলেন গুপ্ত যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তাঁর রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’, ‘মেঘদূতম্’, ‘ঋতুসংহার’, ‘কুমারসম্ভব’, ‘রঘুবংশম্’ প্রভৃতি কাব্য ও নাটক প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
গুপ্ত যুগে স্থাপত্যকর্ম
[su_note note_color=”#edf02b”]স্থাপত্যকর্ম স্থাপত্যশিল্পে গুপ্ত যুগে অভাবনীয় উন্নতি লক্ষ করা যায়। এ যুগে পাথর কেটে বিভিন্ন বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু মন্দির তৈরি করা হত। অজন্তা, ইলোরা, উদয়গিরির গুহামন্দিরগুলি এর অন্যতম উদাহরণ। ইট, কাঠ, পাথর ইত্যাদি দিয়ে স্থায়ী মন্দির নির্মাণের রীতি এ যুগেই চালু হয়। মন্দিরের মাঝখানে গর্ভগৃহ ও চারপাশে প্রাঙ্গণ থাকত। এ যুগের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থাপত্য নিদর্শন হল—মণিনাগের মন্দির, কোটেশ্বর মন্দির, তিগোয়ার বিরুমন্দির, ভূমারের শিবমন্দির, কুবীরের পার্বতীমন্দির, দেওগড়ের দশাবতার মন্দির, সাঁচি ও বুদ্ধগয়ার স্তূপ ইত্যাদি।[/su_note]
গুপ্ত যুগের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
ভাস্কর্য ও চিত্রকলা : ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় গুপ্ত যুগে উৎকর্ষ লক্ষ করা যায়।
1. ভাস্কর্য : এ যুগে ভাস্কর্যের বিষয়বস্তু ছিল পৌরাণিক দেবদেবী যেমন রাম, কৃষ্ম, বিয়ু প্রভৃতি। ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল সারনাথের বৌদ্ধমূর্তিগুলি। অমরাবতী ও মথুরার ভাস্কর্য শোভা এ যুগে পরিণত রূপ লাভ করেছিল। সারনাথের অবলোকিতেশ্বর মূর্তি, সাঁচির বোধিসত্ত্ব, মথুরার ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি প্রভৃতি এসময়ের ভাস্কর্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বারাণসী ও উজ্জয়িনীতেও বহু ভাস্কর্য নিদর্শন রয়েছে। এ যুগের মূর্তিগুলির সৌন্দর্য ছিল অনুপম। তাতে আধ্যাত্মিকতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। ড. নীহাররঞ্জন রায় ও অধ্যাপক সরসীকুমার সরস্বতী বলেছেন যে, গুপ্ত যুগের শিল্পীরা অতীন্দ্রিয় শিল্প তৈরি করতে চেয়েছিলেন এবং তাতে তারা সফল হয়েছিলেন।
1. চিত্রকলা : অজন্তা ও ইলোরার গুহার দেওয়ালে গুপ্ত যুগে অঙ্কিত চিত্রকলাগুলি এ যুগেও দর্শকদের বিস্ময় উদ্রেক করে। রাজকীয় জীবন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, নগর, অরণ্য, ঋষি, ভূতপ্রেত সবই ছিল এখানকার চিত্রের বিষয়বস্তু। চিনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ বলেছেন, “যা কিছু মহৎ, যা কিছু ক্ষুদ্র” সবই অজন্তার কোলে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ‘বাঘ গুহাচিত্রের নিদর্শনগুলিও অপূর্ব। ‘মাতা ও পুত্র’, ‘বোধিসত্ত্ব চক্রপাণি’, ‘হরিণ চতুষ্টয়’ প্রভৃতি চিত্রগুলিতে বাস্তব জীবনের কাহিনি ফুটে উঠেছে। ঐতিহাসিক ড. দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ ঝা মন্তব্য করেছেন যে, “অজন্তার শিল্পীগণ মানুষ ও পশুর প্রতিকৃতি অঙ্কনে চূড়ান্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।”
গুপ্ত যুগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি
বিজ্ঞান : গুপ্ত যুগে চিকিৎসাবিদ্যা, ধাতুশিল্প, রসায়নবিদ্যা, গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র প্রভৃতি বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।
1. চিকিৎসাবিদ্যা : ধন্বন্তরী ও বাগভট্ট তাঁদের চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থগুলি গুপ্ত যুগেই রচনা করেন।
2. ধাতুবিদ্যা : এ যুগে নির্মিত দিল্লির নিকটবর্তী মেহেরৌলি গ্রামের লৌহস্তম্ভটিতে আজও কোনো মরিচা পড়েনি। এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। নালন্দায় প্রাপ্ত বুদ্ধের তাম্রমূর্তি, বিভিন্ন স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা প্রভৃতি এ যুগের ধাতুশিল্পের অগ্রগতির পরিচয় দেয়।
3. গণিত : ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা ও শূন্যের ব্যবহার শুপ্ত যুগে ভারতেই প্রচলিত হয়। পিথাগোরাসের ‘“থিয়োরেম’ এবং ত্রিকোণমিতির ‘সাইন’, ‘কোসাইন’ প্রভৃতি ধারণার সঙ্গেও গুপ্ত যুগে ভারতীয়রা পরিচিত ছিল। দশমিকের ব্যবহারও এই যুগেই শুরু হয়।
4. জ্যোতির্বিদ্যা : গুপ্ত যুগে জ্যোতির্বিদ্যাচর্চার প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। আর্যভট্ট (৪৭৬-৫৫০ খ্রি.) ছিলেন এ যুগের বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তিনি ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থটি রচনা করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে এবং বছরে ৩৬৫টি দিন আছে। তিনি আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি এবং সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করেন। ‘বৃহৎ-সংহিতা’ ও ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ গ্রন্থের রচয়িতা বরাহমিহির জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য ও সূত্রের আবিষ্কার করেন। ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর ‘ব্রয়সিদ্ধান্ডে’ গুপ্ত যুগেই পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের ইঙ্গিত দেন।
হিন্দুধর্মের পুনরুত্থান
1. হিন্দুধর্মের প্রসার : জার্মান ঐতিহাসিক ম্যাক্সমুলার গুপ্ত যুগকে ‘হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানের যুগ’ বলে চিহ্নিত করেন। এ যুগে ভক্তিধর্মের বিকাশ ঘটে এবং মূর্তিপূজা ও তন্ত্রধর্মের প্রচলন হয়। গুপ্ত যুগে ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র প্রভৃতি বৈদিক দেবতার গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং তাদের স্থলে শিব, বিষ্ণু, গণেশ, কার্তিক, দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী প্রভৃতি দেবদেবীর উপাসনা শুরু হয়।
2. অন্যান্য ধর্মে সহানুভূতি : গুপ্ত রাজারা হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এ যুগে বৌদ্ধধর্মের বিষয়কে কেন্দ্র করে অজন্তা, সারনাথ প্রভৃতি স্থানের শিল্প নিদর্শনগুলি বৌদ্ধধর্মের অগ্রগতির পরিচয় দেয়। অসঙ্গ, বসুবন্ধু, নাগার্জুন, পরমার্থ প্রমুখ বৌদ্ধ দার্শনিক এ যুগেই আবির্ভূত হয়েছিলেন। গুপ্ত রাজারা ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুরাগী হলেও পরধর্ম-সহিয়ু ছিলেন।
[su_divider top=”no” divider_color=”#171212″ link_color=”#161010″ size=”2″ margin=”5″]
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন
[su_note note_color=”#edf02b”]বহুদূর সম্প্রসারণ ও দীর্ঘ অস্তিত্বের পর ইতিহাসের নিয়মেই ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরবর্তী মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের ঘটনা যেন প্রমাণ দেয় যে, এই সময় ইউরোপ এবং ভারতের বৃহৎ সাম্রাজ্যের পতনের ঘটনা ছিল নিয়তি।[/su_note]
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারন
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের পরবর্তীকালে গুপ্ত সম্রাটরা রাজ্যবিস্তারে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারেননি। তবে এই বংশের শেষ শক্তিশালী রাজা স্কন্দগুপ্ত (৪৫৫-৪৬৭ খ্রি.) বিদেশি হুন আক্রমণ প্রতিহত করে দেশকে রক্ষা করেন। এজন্য ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁকে ‘ভারতের রক্ষাকারী’ বলে অভিহিত করেছেন। স্কন্দগুপ্তের পরবর্তীকালে পুরুগুপ্ত, নরসিংহগুপ্ত, দ্বিতীয় কুমারগুপ্ত, বুধগুপ্ত প্রমুখ দুর্বল ও অযোগ্য রাজাদের আমলে গুপ্ত সাম্রাজ্য দ্রুত পতনের দিকে এগিয়ে যায়। এই বংশের রাজা জীবিত গুপ্তের মৃত্যুর (৫০০ খ্রি.) পর গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন সম্পূর্ণ হয়।
মূল্যায়ন
গুপ্ত সাম্রাজ্য : গুপ্ত যুগের সংস্কৃতির উৎকর্ষ ভারতের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। নানান ক্ষেত্রে উৎকর্ষ লঙ্ক করে অনেকে গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ বলে থাকেন। অবশ্য কেউ কেউ বিভিন্ন কারণে গুপ্ত যুগকে ‘সুবর্ণ যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিরোধিতা করেছেন। ড. রোমিলা থাপারের মতে, গুপ্ত যুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে যা কিছু অগ্রগতি ঘটেছিল তা সমাজের উচ্চশ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সমাজের দরিদ্রশ্রেণির সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ ছিল না। ড. রামশরণ শর্মা বলেছেন যে, সাহিত্য, ধর্ম ও শিল্পের ক্ষেত্রে গুপ্ত যুগকে ‘সুবর্ণ যুগ’ বলে অভিহিত করলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচারে এই যুগকে ‘সুবর্ণ যুগ’ বলা যায় না।