বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফল—বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন (২৭ বছর পর বিজেপির জয়) এবং নভেম্বরে বিহার বিধানসভা নির্বাচন (এনডিএ-র ল্যান্ডস্লাইড জয়ে ২০২ আসন)—এর আলোকে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন রাজ্যের সংখ্যা এখন ১৫টি। এর মধ্যে কিছু রাজ্যে বিজেপি সরাসরি সরকার গঠন করেছে, আবার কিছুতে এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) জোটের মাধ্যমে বিজেপি-লেড সরকার চলছে। এনডিএ-র প্রভাবসহ মোট ২০টি রাজ্য ও ইউনিয়ন টেরিটরিতে বিজেপির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যা ভারতের প্রায় ৭০% জনসংখ্যা ও ভূমির আওতায়।
মণিপুর রাজ্যটি ২০২৪-এর শেষে প্রেসিডেন্টস রুল-এর অধীনে রয়েছে (বিজেপি-লেড সরকারের পদত্যাগের পর), তাই এটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। বিপক্ষ দল কংগ্রেস শুধু ৩টি রাজ্যে (কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা) শাসন করছে।
২০২৫ সালের আপডেটেড বিজেপি-শাসিত রাজ্যের তালিকা
নীচের টেবিলে ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন ১৫টি রাজ্য ও ইউনিয়ন টেরিটরির তালিকা দেওয়া হলো। এটি সরাসরি বিজেপি-শাসিত বা বিজেপি-ডমিন্যান্ট জোটের উপর ভিত্তি করে (পূর্বের তালিকায় কিছু ভুল যেমন হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, মণিপুর সংশোধন করা হয়েছে; বিহার এবং দিল্লি যুক্ত)।
| ক্রমিক | রাজ্যের নাম | শাসন ব্যবস্থার ধরন | প্রাসঙ্গিক তথ্য ও উদাহরণ |
|---|---|---|---|
| ১ | অরুণাচল প্রদেশ | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০১৬ থেকে বিজেপির প্রাধান্য; মুখ্যমন্ত্রী পেমা খন্ডু। |
| ২ | আসাম | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২১-এর নির্বাচনে বিজয়; মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা; কৃষি ও বিনিয়োগে ফোকাস। |
| ৩ | বিহার | বিজেপি-লেড জোট (জেডি(ইউ)-এর সাথে) | ২০২৫-এর নভেম্বর নির্বাচনে এনডিএ-র ২০২ আসন; মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার (জেডি(ইউ)); বিজেপির সবচেয়ে ভালো ফলাফল। |
| ৪ | ছত্তিশগড় | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২৩-এর নির্বাচনে বৃহৎ জয়; মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই। |
| ৫ | দিল্লি (ইউটি) | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ৪৮ আসন; মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা; ২৭ বছর পর জয়। |
| ৬ | গোয়া | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০১৯ থেকে স্থিতিশীলতা; মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত। |
| ৭ | গুজরাট | সরাসরি বিজেপি সরকার | দীর্ঘকালীন শাসন; মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল; উন্নয়ন নীতিতে শক্তিশালী। |
| ৮ | হরিয়ানা | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়; মুখ্যমন্ত্রী নয়ব সিং সাইনি। |
| ৯ | মধ্যপ্রদেশ | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২৩-এর নির্বাচনে বিজয়; মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব; কেন্দ্রীয় উন্নয়ন প্রকল্প। |
| ১০ | মহারাষ্ট্র | বিজেপি-লেড জোট (শিবসেনা-র সাথে) | ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়; মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস; অর্থনৈতিক নীতিতে প্রভাব। |
| ১১ | ওড়িশা | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২৪-এর নির্বাচনে প্রথমবারের জয়; মুখ্যমন্ত্রী মোহন চারণ মাজি। |
| ১২ | রাজস্থান | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২৩-এর নির্বাচনে জয়; মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা। |
| ১৩ | ত্রিপুরা | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২২ থেকে শাসন; মুখ্যমন্ত্রী মণিক সাহা। |
| ১৪ | উত্তরপ্রদেশ | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০১৭ থেকে শক্তিশালী; মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ; উন্নয়ন ও ভোটার ভেরিফিকেশন। |
| ১৫ | উত্তরাখণ্ড | সরাসরি বিজেপি সরকার | ২০২১ থেকে শাসন; মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। |
উল্লেখ্য:
- কিছু রাজ্যে (যেমন বিহার, মহারাষ্ট্র) বিজেপি জোটের মাধ্যমে শাসন করছে, কিন্তু বিজেপিকে প্রধান চালক হিসেবে গণ্য করা হয়।
- উত্তরবঙ্গ, কেরলা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে বিজেপির প্রভাব কম।
এনডিএ জোট-শাসিত রাজ্য (অতিরিক্ত ৫টি, মোট ২০)
এখানে বিজেপি কোয়ালিশন বা বাহ্যিক সমর্থন দিয়ে সরকার স্থিতিশীল রাখছে (বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদ না পেলেও)।
| ক্রমিক | রাজ্যের নাম | মুখ্যমন্ত্রী (২০২৫-এর নভেম্বর অনুযায়ী) | কী এনডিএ পার্টনার | শাসন শুরু | নোটস |
|---|---|---|---|---|---|
| ১ | আন্ধ্রপ্রদেশ | এন. চন্দ্রবাবু নাইডু | টিডিপি | ২০২৪ | বিজেপি-টিডিপি-জন সেনা জোট; টিডিপি-লেড। |
| ২ | জম্মু ও কাশ্মীর (ইউটি) | ওমর আব্দুল্লাহ | ন্যাশনাল কনফারেন্স | ২০২৪ | বিজেপির সমর্থন; এনসি-লেড। |
| ৩ | মেঘালয় | কনরাড সাংমা | এনপিপি | ২০১৮ | বিজেপি-এনপিপি-ইউডিপি জোট। |
| ৪ | নাগাল্যান্ড | নেইফিয়ু রিও | এনডিপিপি | ২০১৮ | বিজেপি-এনডিপিপি জোট। |
| ৫ | পুডুচেরি (ইউটি) | এন. রঙ্গসামি | এআইএনআরসি | ২০২১ | বিজেপি-এআইএনআরসি জোট। |
নতুন তথ্য ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
১. নতুন নির্বাচনী ফলাফল ও শাসন-পরিবর্তন:
- দিল্লি (ফেব্রুয়ারি ২০২৫): বিজেপি ৪৮ আসন জিতে ২৭ বছর পর ক্ষমতায়; এএপি-কে ২২ আসনে সীমাবদ্ধ করেছে। এটি বিজেপির সরাসরি শাসিত রাজ্যের সংখ্যা ১৪ থেকে ১৫-এ নিয়ে গেছে।
- বিহার (নভেম্বর ২০২৫): এনডিএ ২০২ আসন জিতে ল্যান্ডস্লাইড; বিজেপি ৮৯ আসন পেয়ে সবচেয়ে বেশি সিট, জেডি(ইউ) ৮৫। এটি বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটে বিজেপির পরিষ্কার জয় অব্যাহত। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-র সাথে জোট স্থিতিশীল।
২. আঞ্চলিক কৌশল ও নীতি: বিজেপি-শাসিত রাজ্যে অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শ্রম আইন সংস্কারে নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আসাম ও বিহারে উন্নত কৃষি, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ‘জন বিশ্বাস’ অ্যাক্ট-এর মতো ডিরেগুলেশন (৭টি এনডিএ রাজ্যে) চালু। দিল্লিতে বিজেপি AQI কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
৩. সম্মিলিত জোট ও সহযোগী ব্যবস্থা: উত্তর-পূর্বে (যেমন মেঘালয়, নাগাল্যান্ড) বিজেপি আঞ্চলিক দলের সাথে জোট গঠন করে স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে। এনডিএ-তে ৩৯টি দল রয়েছে, যা অ্যান্টি-কংগ্রেস ঐক্য নিশ্চিত করছে।
৪. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ: ২০২৫-এর পর তামিলনাডু (২০২৬) নির্বাচনে এআইএডিএমকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। চ্যালেঞ্জ: অর্থনৈতিক অসমতা, সামাজিক ন্যায় এবং বিরোধী অভিযোগ (যেমন ভোটার লিস্ট রিভিশন)। কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ে উন্নয়ন প্রকল্প চলবে।
উপসংহার
২০২৫ সালে বিজেপির রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট—সর্বমোট ১৫টি রাজ্যে সরাসরি/লেড সরকার গঠন করে দেশের প্রায় ৭০% এলাকায় নীতি ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করছে। “বিজেপি শাসিত রাজ্য কয়টি ২০২৫” প্রশ্নের উত্তর: বর্তমানে ১৫টি (এনডিএসহ ২০)। ভবিষ্যতে নির্বাচন, আঞ্চলিক চাহিদা ও নীতি পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে এটি বদলাতে পারে, কিন্তু বিজেপির শক্তিশালী অবস্থান বজায়।
ভারতীয় জনতা পার্টি কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়
৬ এপ্রিল ১৯৮০











