ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নরমপন্থী এবং চরমপন্থী নেতারা। তাদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য তাদের লক্ষ্য অভিন্ন ছিল। এই প্রবন্ধে আমরা নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতাদের নাম এবং তাদের অবদান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নরমপন্থী নেতারা
নরমপন্থীরা শান্তিপূর্ণ এবং সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব। নরমপন্থী নেতাদের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন:
- দাদাভাই নওরোজি (Dadabhai Naoroji)
- ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি।
- ব্রিটিশদের শোষণের তত্ত্ব তুলে ধরেন তার বিখ্যাত বই “Poverty and Un-British Rule in India”।
- গোপাল কৃষ্ণ গোখলে (Gopal Krishna Gokhale)
- তিনি গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলেন।
- মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক।
- ফিরোজ শাহ মেহতা (Pherozeshah Mehta)
- কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
- আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন।
- সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (Surendranath Banerjee)
- ভারতের প্রথম জাতীয় আন্দোলন সংগঠকদের মধ্যে একজন।
- তিনি ব্রিটিশ প্রশাসনিক সেবার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আন্দোলন চালান।
চরমপন্থী নেতারা
চরমপন্থীরা সরাসরি আন্দোলন, প্রতিবাদ এবং সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটিশদের পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাদের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামে শক্তি প্রদর্শন অপরিহার্য। চরমপন্থী নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন:
- বাল গঙ্গাধর তিলক (Bal Gangadhar Tilak)
- তার বিখ্যাত উক্তি: “Swaraj is my birthright and I shall have it.”
- ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের জন্য পরিচিত।
- বিপিনচন্দ্র পাল (Bipin Chandra Pal)
- চরমপন্থী আন্দোলনের অন্যতম নেতা।
- স্বদেশী আন্দোলন এবং জাতীয় শিক্ষা প্রচার করেন।
- লালা লাজপত রাই (Lala Lajpat Rai)
- ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিরোধিতা করতেন।
- সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন।
- অরবিন্দ ঘোষ (Sri Aurobindo)
- চরমপন্থী নেতা এবং স্বরাজের প্রবক্তা।
- পরে আধ্যাত্মিক জীবন গ্রহণ করেন এবং পন্ডিচেরি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | নরমপন্থী | চরমপন্থী |
---|---|---|
আন্দোলনের পদ্ধতি | শান্তিপূর্ণ এবং সাংবিধানিক পদ্ধতি | শক্তি প্রদর্শন ও সরাসরি প্রতিবাদ |
লক্ষ্য | ব্রিটিশদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে স্বরাজ | সশস্ত্র বিপ্লব ও ব্রিটিশ শাসনের অবসান |
গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন | প্রার্থনা, আবেদন ও আলোচনার নীতি | সশস্ত্র সংগ্রাম, স্বদেশী আন্দোলন |
নরমপন্থী ও চরমপন্থী দুটি পার্থক্য
নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতাদের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো:
- আন্দোলনের পদ্ধতি:
- নরমপন্থী: শান্তিপূর্ণ, আলোচনাভিত্তিক, এবং সাংবিধানিক পদ্ধতিতে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করতেন।
- চরমপন্থী: সরাসরি প্রতিবাদ, শক্তি প্রদর্শন এবং কখনো সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অবসান চাইতেন।
- লক্ষ্য অর্জনের নীতি:
- নরমপন্থী: ব্রিটিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় ধাপে ধাপে স্বায়ত্তশাসন বা স্বরাজ পেতে আগ্রহী ছিলেন।
- চরমপন্থী: দ্রুত এবং সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে ছিলেন, এবং ব্রিটিশদের প্রতি কোন আপস করতে চাইতেন না।
উপসংহার
নরমপন্থী এবং চরমপন্থী নেতারা ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদান অপরিসীম। তাদের প্রচেষ্টার ফলেই ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তি পায়। আজকের দিনে আমরা এই মহান নেতাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আদর্শ থেকে অনুপ্রাণিত হই।
নরমপন্থী ও চরমপন্থী PDF
Click Here নরমপন্থী ও চরমপন্থী PDF Download