Chapter – 11
সিন্ধুতীরে
সিন্ধুতীরে কবিতাভিত্তিক বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
পূর্ণমান: ১৫ | প্রতিটি প্রশ্নের মান: ১
১. “সিন্ধুতীরে” কবিতাটি কে রচনা করেছেন?
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত
খ. সৈয়দ আলাওলজন (সঠিক উত্তর)
গ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘ. কাজী নজরুল ইসলাম
২. ‘সিন্ধুতীরে’ শব্দটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
ক. নদীর তীর
খ. উপকূল অঞ্চল
গ. এক আদর্শ সমাজ (সঠিক উত্তর)
ঘ. সমুদ্রযাত্রা
৩. ‘সত্য ধর্ম সদা সদাচার’ চরণটির মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
ক. কুসংস্কারের প্রচার
খ. ধর্মীয় গোঁড়ামি
গ. সত্য, নৈতিকতা ও আদর্শ (সঠিক উত্তর)
ঘ. শাস্ত্র অনুসরণ
৪. ‘পথ্য নামে গুণমুক্তা’ – এখানে ‘পথ্য’ বলতে বোঝানো হয়েছে?
ক. পথের নির্দেশ
খ. ওষুধ
গ. খাদ্য
ঘ. গুণময় উপদেশ (সঠিক উত্তর)
৫. ‘উপরে পবিত এক’ – এই চরণের মাধ্যমে কী বোঝানো হয়েছে?
ক. পরিষ্কার আকাশ (সঠিক উত্তর)
খ. দেবতা
গ. জ্ঞানের শিখর
ঘ. সূর্য
৬. ‘তাহার পাশে রচিত উদ্যান’ – উদ্যান শব্দটির অর্থ কী?
ক. জলাশয়
খ. বাগান (সঠিক উত্তর)
গ. বাড়ি
ঘ. বনভূমি
৭. ‘বিচিত্র চঞ্চল হেমন্তে’ – কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে এখানে?
ক. বসন্ত
খ. গ্রীষ্ম
গ. বর্ষা
ঘ. হেমন্ত (সঠিক উত্তর)
৮. কবিতায় ‘কন্যা’ শব্দটি কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
ক. মেয়ে সন্তান
খ. নারী শিক্ষার্থী
গ. রূপকভাবে নারীর মর্যাদা (সঠিক উত্তর)
ঘ. রাজকন্যা
৯. কবিতায় ‘সৌরভে সৌন্দর্য’ – এটি কোন অলংকারের উদাহরণ?
ক. রূপক
খ. উপমা
গ. অনুপমা
ঘ. পুনরুক্তি (সঠিক উত্তর)
১০. কবিতায় ‘নামধনু খেলে হাসি’ – এখানে ‘নামধনু’ কোন বস্তু বোঝায়?
ক. তীর
খ. রামধনু (সঠিক উত্তর)
গ. ঢেউ
ঘ. আকাশ
১১. ‘চিকিৎসিম প্রজ্ঞাপনে’ – এই চরণের অর্থ কী?
ক. চিকিৎসকের উপদেশ
খ. জ্ঞানে ভরপুর শিক্ষা (সঠিক উত্তর)
গ. চিকিৎসার সুযোগ
ঘ. অসুখের বর্ণনা
১২. ‘নিরঞ্জন’ শব্দের অর্থ কী?
ক. পরিষ্কার
খ. অস্পষ্ট
গ. নির্লিপ্ত
ঘ. নির্মল (সঠিক উত্তর)
১৩. ‘পঞ্চশর’ শব্দটি কোন দেবতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
ক. বিষ্ণু
খ. কামদেব (সঠিক উত্তর)
গ. শিব
ঘ. ব্রহ্মা
১৪. ‘হীন আলোকের সূর্যচিহ্ন’ – এটি কোন ভাব প্রকাশ করে?
ক. জ্ঞানের অন্ধকার (সঠিক উত্তর)
খ. সূর্যের অস্ত যাওয়া
গ. আশার আলো
ঘ. বিভ্রান্তি
১৫. কবিতায় ‘উদ্যানের মাঝে নীল’ – এখানে ‘নীল’ কিসের প্রতীক?
ক. বিষণ্ণতা
খ. আকাশ
গ. প্রেম
ঘ. শান্তি (সঠিক উত্তর)
30টি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি কার রচনা?
উত্তর: ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যাংশটি সপ্তদশ শতাব্দীর কবি সৈয়দ আলাওলের রচনা।
২. সৈয়দ আলাওল কোন অঞ্চলের কবি ছিলেন?
উত্তর: সৈয়দ আলাওল বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার জালালপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
৩. ‘সিন্ধুতীরে’ শব্দটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সিন্ধুতীরে’ শব্দটি একটি কল্পলোক বা আদর্শ সমাজের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৪. কবি ‘সিন্ধুতীরে’ কোন মূল বিষয়টি তুলে ধরেছেন?
উত্তর: কবি এখানে সত্য, ধর্ম, জ্ঞান, সৌন্দর্য ও আদর্শ সমাজের রূপ তুলে ধরেছেন।
৫. ‘সত্য ধর্ম সদা সদাচার’ চরণটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: এই চরণটি নৈতিকতা ও ধর্মীয় আদর্শের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
৬. ‘পথ্য নামে গুণমুক্তা’— এখানে ‘পথ্য’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে ‘পথ্য’ বলতে বোঝানো হয়েছে উপদেশ বা শিক্ষণীয় গুণসমূহ।
৭. ‘উপরে পবিত এক’ চরণটির ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এতে বলা হয়েছে যে আকাশ পবিত্র ও এক, তা ঐক্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক।
৮. ‘বিচিত্র চঞ্চল হেমন্তে’ – কোন ঋতুর বর্ণনা পাওয়া যায়?
উত্তর: এখানে হেমন্ত ঋতুর বর্ণনা পাওয়া যায়, যা বৈচিত্র্যে ভরা ও সজীব।
৯. ‘তাহা কন্যা থাকে সর্বক্ষণ’—এখানে ‘কন্যা’ কী নির্দেশ করে?
উত্তর: কন্যা এখানে একটি রূপক, যা জ্ঞান, শুদ্ধতা ও মানবিক গুণের প্রতীক।
১০. কবিতায় সৌন্দর্য ও প্রজ্ঞার মিল কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: উদ্যানের মাঝে নানারকম গাছ ও ফুল সৌন্দর্য ও প্রজ্ঞার সমন্বয়কে উপস্থাপন করে।
১১. ‘হেমন্তে নানা রঞ্জিত’ – কোন প্রকৃতির ছবি আঁকা হয়েছে?
উত্তর: এতে হেমন্তকালের রঙিন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে।
১২. ‘নামধনু খেলে হাসি’ – এই চিত্রটি কেমন আবহ তুলে ধরে?
উত্তর: এটি এক আনন্দময়, স্বপ্নিল ও রঙিন পরিবেশের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
১৩. কবি কোন সমাজের আদর্শ তুলে ধরেছেন?
উত্তর: কবি এক শান্তিপূর্ণ, সৌন্দর্য ও মানবিকতাপূর্ণ সমাজের আদর্শ তুলে ধরেছেন।
১৪. ‘মনেতে কেঁদেছে বাসি’ – এর অর্থ কী বোঝায়?
উত্তর: এটি আত্মবেদনা ও স্মৃতিচারণার প্রকাশ, যেখানে কবি নিজ ব্যথা অনুভব করছেন।
১৫. ‘দেয়া ঘুমের কন্যা’ – এখানে ‘ঘুম’ কোন অর্থে ব্যবহৃত?
উত্তর: এখানে ঘুম মানে শান্তি, বিশ্রাম বা অবচেতন স্বপ্নময়তার প্রতীক।
১৬. ‘বিচিত্র ইহীন বালা’ – কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে বোঝানো হয়েছে, যে নারী বৈচিত্র্যে পূর্ণ কিন্তু আত্মার অনুভবে শূন্য।
১৭. কবিতায় ‘তেল সম সবান সাক্ষী’ – চরণের তাৎপর্য কী?
উত্তর: এটি একান্ত পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রতীক, যা সমাজকে শুদ্ধ করে।
১৮. ‘জাগিল প্রজ্ঞার বাগ’— এখানে ‘বাগ’ অর্থ কী?
উত্তর: ‘বাগ’ মানে বাগান; এখানে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিকাশের স্থান বোঝানো হয়েছে।
১৯. ‘মোহিতে পাইছি কৃষ্ণ-কৃষ্ণ’— এখানে কোন অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: এটি গভীর প্রেম ও আত্মনিবেদন, কৃষ্ণভাবনার প্রতি আত্মসমর্পণের প্রতীক।
২০. ‘নিরঞ্জন’ শব্দটি কবিতায় কী অর্থে ব্যবহৃত?
উত্তর: ‘নিরঞ্জন’ মানে নির্মল, নির্লিপ্ত ও নির্ভেজাল বিশুদ্ধতা।
২১. কবি কেন বলছেন ‘মোহের ভালোরে বলে’ বাজুক কন্যার জীবন?
উত্তর: কারণ তিনি চান না মেয়েরা শুধু মোহে জীবন কাটাক; বরং হোক জ্ঞানভিত্তিক।
২২. ‘চিকিৎসিম প্রজ্ঞাপনে’ – চরণটি কী বোঝায়?
উত্তর: এটি বোঝায় বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত ও যুক্তিবোধসম্পন্ন সমাজ।
২৩. কবির মতে, সত্যিকারের সমাজে নারীর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: নারী হবে জ্ঞানী, গুণবতী ও সমাজের উন্নয়নে অংশগ্রহণকারী।
২৪. ‘অতিচেতন পড়িছে ভূমিতে’ – এর তাৎপর্য কী?
উত্তর: বেশি চেতনা বা অহংকার পতনের কারণ হতে পারে, সেটাই বোঝানো হয়েছে।
২৫. ‘কিছু শিরে কিছু পায়’ – এই চরণটি কী বোঝায়?
উত্তর: জীবনের বিভাজন বা বৈষম্য বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।
২৬. ‘হীন আলোকের সূর্যচিহ্ন’ কোন অবস্থাকে নির্দেশ করে?
উত্তর: এটি অজ্ঞতা ও জ্ঞানের অভাবকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করে।
২৭. ‘পঞ্চশর’ কার প্রতীক?
উত্তর: ‘পঞ্চশর’ হল কামদেবের প্রতীক, যা প্রেম ও কামনার ইঙ্গিত বহন করে।
২৮. ‘দৃষ্টি মনের মহারশির দিয়া’ – এর তাৎপর্য কী?
উত্তর: জ্ঞানের দৃষ্টিকে মহাজ্ঞানীর উপহার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২৯. কবির মতে ‘সৌন্দর্য ও জ্ঞান’ সমাজে কীভাবে সহাবস্থান করে?
উত্তর: সৌন্দর্য ও জ্ঞান উভয়ে একত্রে থেকে সমাজকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
৩০. ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতার মূল বার্তা কী?
উত্তর: এই কবিতায় শান্তিপূর্ণ, মানবিক ও আদর্শ সমাজ গঠনের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
8টি বিশ্লেষধৰ্মী ও ব়চনাধৰ্মী প্ৰশ্ন ও উওব়
১. “দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা/অনুমান করে নিজ জীবির চিতে।” – কে, কাকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন? সেই কন্যা সেখানে কীভাবে এসেছিলেন? তাঁকে দেখে কী মনে হয়েছিল?
উত্তর:
সৈয়দ আলাওল অনূদিত পদ্মাবতী কাব্যের ‘সিন্ধুতীরে’ অংশে পদ্মা নামের কন্যাটি অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে বিস্মিত হন।
▶ সমুদ্রের অভিশাপে রত্নসেনের নৌকা ভেঙে গেলে পদ্মাবতী ও সখী সহ মান্দাসে ভেসে পড়েন। একসময় সমুদ্রতীরে এসে পৌঁছলে তাঁরা চেতনা হারান।
▶ পদ্মা কন্যাটি তাঁদের অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে রূপে বিস্মিত হন। তাঁর মনে হয়, যেন কোনো স্বর্গচ্যুত দেবকন্যা সমুদ্রতীরে এসে পড়েছেন। এলোমেলো বেশ ও চোখের দীপ্তি দেখে পদ্মা অনুমান করেন, কোনও দুর্যোগ তাঁদের এই অবস্থায় ফেলেছে।
২. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যে কবি যে আদর্শ সমাজের কথা বলেছেন, তার বৈশিষ্ট্যগুলি কী? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
সৈয়দ আলাওলের কল্পনায় আঁকা ‘সিন্ধুতীরে’ এক আদর্শ সমাজের প্রতীক। এখানে সত্য, ধর্ম, জ্ঞান ও সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ রয়েছে।
▶ এই পুরীতে ‘সত্য ধর্ম সদা সদাচার’ বিরাজ করে। সকলেই নীতিনিষ্ঠ, অহিংস ও সদাচারী। মিথ্যা ও দুষ্টতা এখানে নেই।
▶ প্রকৃতি সৌন্দর্যে পূর্ণ—ফুলে, উদ্যানে ও গন্ধে ভরা। একইসঙ্গে, পথ্য নামে গুণমুক্তা দিয়ে বোঝানো হয়েছে যে, শিক্ষাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
▶ নারীরাও এই সমাজে গুণবতী ও মর্যাদাবান। তাঁরা কেবল রূপসী নন, জ্ঞান ও চেতনায় উজ্জ্বল।
▶ এই সমাজ শান্তিপূর্ণ, নির্মল এবং মানবিক। কবির মতে, এ এক আদর্শ রূপক সমাজ যা অনুসরণযোগ্য।
৩. “উপরে পবিত এক”— এই চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? এর সাংগঠনিক গুরুত্ব কী?
উত্তর:
এই চরণে ‘পবিত এক’ দ্বারা কবি আকাশকে বোঝাতে চেয়েছেন, যা পবিত্রতা ও একতার প্রতীক।
▶ কবি এখানে আকাশকে এক ও বিশুদ্ধ রূপে দেখিয়েছেন। এই পবিত্র আকাশ সর্বজনীন, যেটি সমাজের সার্বিক ঐক্য ও বিশুদ্ধতার প্রতীক।
▶ সাংগঠনিকভাবে, এই চরণটি কবিতার কেন্দ্রীয় ভাব—আদর্শ সমাজের নির্মল পরিবেশ—প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছে।
▶ আকাশ যেমন সকলের ওপর একভাবে বিস্তৃত, তেমনি এই কল্পলোকের সমাজও বৈষম্যহীন, পরিচ্ছন্ন ও সার্বজনীন।
▶ কবির বিশ্বাস, এই একতা ও পবিত্রতাই সমাজের কাঙ্ক্ষিত গুণ।
৪. পদ্মাবতীর অজ্ঞান অবস্থা দেখে পদ্মার মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? তার ভাবনা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
পদ্মা অচেতন পদ্মাবতীকে দেখে প্রথমে রূপের মহিমায় অভিভূত হন, পরে চিন্তায় ডুবে যান।
▶ পদ্মাবতীর রূপ দেখে পদ্মার মনে হয়, ইনি কোনো স্বর্গচ্যুত অপ্সরা, যিনি দুর্যোগে পড়ে মাটিতে এসেছেন।
▶ তাঁর চোখের দীপ্তি, এলোমেলো চুল এবং রক্তিম ঠোঁট দেখে পদ্মা ধারণা করেন, কোনো প্রচণ্ড ঝড় ও সমুদ্রদুর্যোগের ফলে এঁরা ভেসে এসেছেন।
▶ রত্নসেন, সখী ও পদ্মাবতী দুর্ভাগ্যবশত সমুদ্রের ভয়াবহতা থেকে পালিয়ে এসে এখানে পড়েছেন বলে পদ্মা অনুমান করেন।
▶ তাঁর অন্তর কাঁপে এবং কৌতূহল জাগে, কারা এই অচেতন সুন্দরীরা।
৫. “পথ্য নামে গুণমুক্তা”— এখানে ‘পথ্য’ ও ‘গুণমুক্তা’ কী বোঝায়? এর ব্যঞ্জনা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
এই চরণে ‘পথ্য’ বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়, এবং ‘গুণমুক্তা’ মানে গুণসম্পন্ন জ্ঞান।
▶ কবি সমাজের শিক্ষার গুরুত্বকে বোঝাতে এই রূপক প্রয়োগ করেছেন। এখানে জ্ঞানকে মুক্তার মতো মূল্যবান বলা হয়েছে।
▶ ‘পথ্য’ শুধু দৈহিক নয়, আত্মিক ও নৈতিক উন্নতির মাধ্যমও। এই সমাজে শিক্ষা ও উপদেশের দাম আছে।
▶ কবির মতে, আদর্শ সমাজ গঠনে জ্ঞান-গরিমা ও নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন অপরিহার্য।
▶ তাই এই চরণে সমাজের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত মূল্যবোধের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
৬. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যে নারীর অবস্থান ও ভূমিকা কেমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে?
উত্তর:
‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যে নারীর অবস্থান গৌরবজনক ও সম্মানীয়। তাঁরা কেবল রূপে নয়, গুণেও সমৃদ্ধ।
▶ পদ্মাবতী কাব্যের প্রধান নারীচরিত্র। তাঁর রূপ যেমন মোহিত করে, তেমনি তাঁর ধৈর্য ও সাহসও গুরুত্বপূর্ণ।
▶ পদ্মা কন্যার বর্ণনায় বোঝা যায়, নারী কেবল ভোগ্যবস্তু নয়, বরং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশ।
▶ নারীরাও স্বনির্ভর, জ্ঞানী এবং সমাজগঠনে সক্ষম। আদর্শ সমাজে তাদের সম্মান এবং মর্যাদা অটুট।
▶ কবির দৃষ্টিতে নারী হলেন মানবতার ধারক এবং প্রজ্ঞার প্রতীক।
৭. “বিচিত্র ইহীন বালা”— এই চরণের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
এই চরণে ‘বিচিত্র ইহীন বালা’ বলতে রূপে বিচিত্র হলেও জীবনের গভীরতায় শূন্য নারীর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
▶ এখানে কবি রূপবতী কিন্তু জ্ঞান ও চেতনায় শূন্য নারীর সমালোচনা করেছেন।
▶ শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য যদি অন্তরের গুণহীন হয়, তবে তা অর্থহীন ও অসার।
▶ আদর্শ নারীর মধ্যে যেমন রূপ থাকবে, তেমনি থাকতে হবে গুণ ও চেতনা।
▶ কবির দৃষ্টিতে গুণহীন রূপ সমাজের প্রকৃত উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।
৮. ‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যে প্রকৃতির চিত্র কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছে? তার প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যে প্রকৃতি রঙিন, সজীব ও আদর্শ সমাজের সৌন্দর্যের বাহক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।
▶ কবি ফুলে-ফলে, রঙ্গে-গন্ধে ভরা উদ্যানের বর্ণনা দিয়েছেন যা পাঠকের কল্পনায় এক স্বপ্নলোকের ছবি আঁকে।
▶ প্রকৃতি এখানে কেবল পটভূমি নয়, বরং সমাজের শুদ্ধতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
▶ হেমন্তের বিবরণ, রঙিন নামধনুর খেলা, ফুলের গন্ধ—এসব সমাজকে এক নির্মল ও আনন্দদায়ক পরিবেশ দেয়।
▶ কবি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষের অন্তরকেও উন্নত করে তোলে।
সিন্ধুতীরে — সংক্ষিপ্ত নোট (পরীক্ষাভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য)
রচয়িতা: সৈয়দ আলাওল (অনুবাদক, মূল রচয়িতা: মালিক মুহম্মদ জায়সী)
উৎস: পদ্মাবতী কাব্যের পদ্মা-সমুদ্রখণ্ড
কবিতার সারাংশঃ
‘সিন্ধুতীরে’ কাব্যে পদ্মাবতীর রূপ ও দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সমুদ্রের অভিশাপে রত্নসেনের নৌকা ভেঙে যায় এবং পদ্মাবতী সখীসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রতীরে এসে পড়ে। সেখানে পদ্মা নামের এক কন্যা তাঁদের অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হন। কবি এক কল্পলোকের চিত্র আঁকেন যেখানে সত্য, ধর্ম, ন্যায় এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজ গড়ে উঠেছে।
মূল চরিত্রসমূহঃ
- পদ্মাবতী – রত্নসেনের পত্নী, সৌন্দর্যে অপার, বুদ্ধিমতী ও দৃঢ়চেতা।
- রত্নসেন – চিতোর রাজা, সাহসী ও কর্তব্যপরায়ণ।
- পদ্মা – সমুদ্রতীরবর্তী এক কন্যা, যে পদ্মাবতীদের উদ্ধার করে।
প্রধান বিষয়বস্তুসমূহঃ
- রূপ ও চেতনার সংমিশ্রণ – পদ্মাবতীর রূপের সাথে তাঁর প্রজ্ঞা ও সৌম্যতা বিশ্লেষণযোগ্য।
- আদর্শ সমাজচিত্র – যেখানে সত্য, ধর্ম, সদাচার ও জ্ঞানবোধ রয়েছে।
- নারীচরিত্রের মর্যাদা – নারী শুধু রূপ নয়, বরং চেতনার ধারক।
- প্রকৃতির সৌন্দর্য – হেমন্তের বর্ণনা, গন্ধে ভরা ফুল, রঙিন পরিবেশ—এই সমাজ এক স্বপ্নের সমান।
গুরুত্বপূর্ণ চরণ ও তাদের ব্যাখ্যা:
- “দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা” – পদ্মাবতীর রূপ দেখে পদ্মা বিস্মিত।
- “সত্য ধর্ম সদা সদাচার” – সমাজের নৈতিক গুণাবলির প্রতিচ্ছবি।
- “পথ্য নামে গুণমুক্তা” – শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।
- “উপরে পবিত এক” – আকাশের মতো বিশুদ্ধ ও সমতার প্রতীক সমাজ।
কবিতার ভাষা ও অলঙ্কারঃ
- ভাষা সহজ ও কাব্যিক।
- অলঙ্কারঃ উপমা, রূপক, বর্ণনা অলঙ্কার ব্যবহৃত।
- ভাবব্যঞ্জনা উচ্চমানের — সমাজ, নারী, প্রকৃতি ও রূপ নিয়ে চিন্তাশীল মনোভাব।
বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নের প্রস্তুতির টিপসঃ
- পদ্মাবতী চরিত্রের বিশ্লেষণ ভালো করে পড়ো।
- আদর্শ সমাজের বৈশিষ্ট্য ও কবির দৃষ্টিভঙ্গি বোঝো।
- প্রকৃতির উপস্থাপন কেমন, তা কবির ভাষায় ধরতে চেষ্টা করো।
- গুরুত্বপূর্ণ চরণ ব্যাখ্যা অনুশীলন করো।
পরীক্ষায় আসতে পারে এমন কিছু প্রশ্ন:
- পদ্মাবতী কীভাবে সমুদ্রতীরে এলেন?
- পদ্মা কাকে দেখে কী ভাবলেন?
- ‘সত্য ধর্ম সদা সদাচার’—চরণটির তাৎপর্য কী?
- কবিতায় প্রকৃতির বর্ণনা কেমন?
- নারীর অবস্থান ও মর্যাদা কেমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে?