নদীর বিদ্রোহ- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২০টি Multiple Choice Question (MCQ)
১-৫: গল্পের সূচনাভাগ ও চরিত্র নির্ধারণ
- ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের লেখক কে?
A. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
B. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
C. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
D. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
উত্তর: B - নদেদাদা কোথা থেকে যাত্রা শুরু করেন?
A. গঙ্গা নদীর তীর থেকে
B. ট্রেন স্টেশন থেকে
C. চারটা পয়সাওয়ালির প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে
D. নদীর পাড় থেকে
উত্তর: C - গল্পে নদেদাদার সহচর কে?
A. তার ছেলে
B. একজন নতুন সহকারী
C. একজন যাত্রী
D. ট্রেনের কন্ডাক্টর
উত্তর: B - নতুন সহকারী প্রথমে আকাশের দিকে তাকিয়ে কী বলে?
A. “আচ্ছা হুঁ।”
B. “বৃষ্টি হবে আজ?”
C. “নদী কোথায়?”
D. “আবহাওয়া খারাপ।”
উত্তর: A - নদেদাদা কী দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে?
A. আকাশ
B. বৃক্ষরাজি
C. নদী
D. ট্রেন
উত্তর: C
৬-১০: নদীর রূপান্তর ও প্রাকৃতিক দৃশ্য
- নদীকে দেখে নদেদাদার মন কেমন হয়ে যায়?
A. উৎফুল্ল
B. বিমর্ষ
C. রাগান্বিত
D. উদাসীন
উত্তর: B - নদী কী অবস্থায় ছিল?
A. উচ্ছল
B. কুয়াশাচ্ছন্ন
C. শুষ্ক ও মৃতপ্রায়
D. বন্যায় প্লাবিত
উত্তর: C - নদীকে লেখক কোন উপমায় বর্ণনা করেন?
A. একটি জীবন্ত নদী
B. একটি মৃত নদী
C. একটি আত্মহারা নারী
D. একটি পুরাতন সঙ্গী
উত্তর: C - নদী দেখতে কেমন লাগছিল?
A. স্বচ্ছ ও গভীর
B. মলিন ও কাদাযুক্ত
C. সবুজাভ জলরাশি
D. ঢেউখেলানো নদী
উত্তর: B - নদীর শূন্যতা লেখকের মনে কী সৃষ্টি করে?
A. আনন্দ
B. তৃপ্তি
C. বিষাদ
D. বিতৃষ্ণা
উত্তর: C
১১-১৫: ভাবগম্ভীরতা ও রূপক অর্থ
- নদী এখানে কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
A. শুধুমাত্র জলধারা
B. একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
C. জীবনের রূপক
D. বন্যার উৎস
উত্তর: C - নদেদাদার অভিজ্ঞতা কিসের প্রতীক?
A. প্রকৃতি দর্শনের
B. রোমাঞ্চের
C. স্মৃতিচারণা ও পরিবর্তনের
D. অভিযানের
উত্তর: C - লেখক ‘নদীর বিদ্রোহ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
A. নদীর ভাঙন
B. নদীর প্রতিবাদ
C. প্রকৃতির প্রতি মানুষের অবহেলার প্রতিক্রিয়া
D. নদীর নতুন ধারা
উত্তর: C - “জীবন মর্মর শব্দ শুনিয়ে” — এখানে ‘মর্মর শব্দ’ কিসের ইঙ্গিত?
A. নদীর গর্জন
B. জীবনের স্রোত
C. গাছের শব্দ
D. বাতাসের গুঞ্জন
উত্তর: B - গল্পে ট্রেনের যাত্রাপথ কী বোঝায়?
A. মানুষের অগ্রগতি
B. নদীর প্রবাহ
C. অতীত থেকে বর্তমানের দিকে যাত্রা
D. কোনো গন্তব্যহীনতা
উত্তর: C
১৬-২০: লেখক পরিচিতি ও অন্যান্য তথ্য
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম কী ছিল?
A. সুশীল চক্রবর্তী
B. প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
C. প্রভাসচন্দ্র ঘোষ
D. বিনোদ ঘোষ
উত্তর: B - “নদীর বিদ্রোহ” গল্পটি কোন ধারার অন্তর্গত?
A. ঐতিহাসিক
B. সামাজিক রূপক
C. প্রেমের কাহিনি
D. প্রবন্ধ
উত্তর: B - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কোন শ্রেণির লেখক ছিলেন?
A. ন্যাচারালিস্ট
B. রোমান্টিক
C. বাস্তববাদী ও মার্ক্সবাদী
D. ঐতিহাসিক কাহিনিকার
উত্তর: C - নিচের কোনটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নয়?
A. পদ্মানদীর মাঝি
B. দিবারাত্রির কাব্য
C. আরোগ্য
D. পথের পাঁচালী
উত্তর: D - গল্পে নদেদাদার ভাবনা মূলত কী নিয়ে আবর্তিত?
A. নদীর সৌন্দর্য
B. নদীর অতীত ও বর্তমান
C. ট্রেনযাত্রা
D. বৃষ্টির আশঙ্কা
উত্তর: B
20টি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
- প্রশ্ন: নদেদাদা কোথা থেকে যাত্রা শুরু করেন?
উত্তর: চারটা পয়সাওয়ালির প্যাসেঞ্জার ট্রেনে উঠে নতুন সহকারীকে নিয়ে নদীর দিকে রওনা হন নদেদাদা। - প্রশ্ন: নতুন সহকারী প্রথমে আকাশ দেখে কী মন্তব্য করে?
উত্তর: আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বলে, “আচ্ছা হুঁ”, অর্থাৎ বৃষ্টির পূর্বাভাস অনুমান করে মন্তব্য করে। - প্রশ্ন: নদেদাদা নদী দেখে কেন হতাশ হন?
উত্তর: নদী মলিন, মৃতপ্রায়, কাদাযুক্ত দেখে তিনি অতীতের উচ্ছল রূপ স্মরণ করে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। - প্রশ্ন: লেখক নদীকে কীভাবে বর্ণনা করেছেন?
উত্তর: একটি আত্মহারা নারীর রূপে, যার যৌবন ও শক্তি একসময় ছিল, এখন নিঃসাড়, নিঃপ্রাণ। - প্রশ্ন: নদী দেখার অভিজ্ঞতা নদেদাদার মনে কী পরিবর্তন আনে?
উত্তর: নদীকে দেখে স্মৃতি জাগে, আর মন বিষণ্ণতায় ভরে ওঠে; জীবনের ক্ষয় ও রূপান্তর উপলব্ধি করেন। - প্রশ্ন: নদী এখানে কিসের প্রতীক?
উত্তর: নদী জীবনের গতিশীলতা, পরিবর্তন এবং সমাজ-প্রকৃতির উপেক্ষিত রূপের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। - প্রশ্ন: নদেদাদা কেন পুরনো নদীটিকে খুঁজে পান না?
উত্তর: পরিবেশের পরিবর্তন, দখল, দূষণ ও ঋতু পরিবর্তনের কারণে নদী তার রূপ হারিয়েছে। - প্রশ্ন: নদী নিয়ে নদেদাদার স্মৃতিচারণ কেমন?
উত্তর: নদী ছিল কখনো জীবন্ত, স্রোতস্বিনী, এখন তা বিবর্ণ, নির্জীব। স্মৃতির সঙ্গে বর্তমানের সংঘর্ষ ঘটে। - প্রশ্ন: ‘বিদ্রোহ’ শব্দটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: বিদ্রোহ প্রকৃতির ক্ষোভ; মানুষের অবহেলার বিরুদ্ধে নদীর নীরব প্রতিবাদ বা প্রতিশোধ। - প্রশ্ন: গল্পে ট্রেনের যাত্রা কিসের প্রতীক?
উত্তর: এটি জীবনের অগ্রগতির রূপক, যা পুরনো স্মৃতি ছেড়ে নতুন বাস্তবতার দিকে এগোয়। - প্রশ্ন: গল্পে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা কেমন?
উত্তর: নদীর পুরনো রূপ মনোমুগ্ধকর হলেও বর্তমান দৃশ্যত বিবর্ণ ও শূন্যতায় পূর্ণ। - প্রশ্ন: নদেদাদার চোখে বর্তমান নদী কেমন?
উত্তর: মলিন, মৃতপ্রায় ও চুপচাপ নদী; যে একসময় ছিল প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ। - প্রশ্ন: লেখকের ভাষাশৈলীর বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: কাব্যিক, রূপকভাষায় ভরপুর; প্রকৃতি ও মানুষের মনোভাব নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। - প্রশ্ন: নতুন সহকারী নদী দেখে কী বোঝে?
উত্তর: সে নদীর রূপান্তর দেখে অবাক হলেও নদেদাদার গভীর আবেগ পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না। - প্রশ্ন: নদীকে দেখে লেখকের মনোভাব কী?
উত্তর: করুণ, বিষাদময়; অতীতের উচ্ছলতা হারানো নদীর দিকে তাকিয়ে তিনি ব্যথিত হন। - প্রশ্ন: গল্পে সময় ও পরিবর্তনের প্রভাব কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: নদীর রূপান্তরের মাধ্যমে সময়ের প্রভাব, প্রকৃতির বিবর্তন ও স্মৃতির ক্ষয় প্রকাশ পেয়েছে। - প্রশ্ন: নদী কীভাবে সমাজের প্রতিচ্ছবি?
উত্তর: নদীও সমাজের মতো অবহেলিত, তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে মানুষের আচরণ ও অবহেলায়। - প্রশ্ন: লেখকের জীবনদর্শন কীভাবে প্রতিফলিত?
উত্তর: বাস্তবতা ও পরিবর্তন মেনে নেওয়ার দর্শন, প্রকৃতি ও সমাজের সম্পর্ক নিয়ে গভীর চিন্তা। - প্রশ্ন: নদীকে কেন্দ্র করে লেখকের মূল বার্তা কী?
উত্তর: প্রকৃতির প্রতি যত্নহীনতা আমাদের নিজের ক্ষয় ডেকে আনে; প্রকৃতি মানুষকে প্রতিফলন দেখায়। - প্রশ্ন: গল্পের শেষে নদেদাদার মানসিক অবস্থা কেমন?
উত্তর: নিঃসঙ্গতা, হতাশা ও ব্যর্থতার অনুভব; স্মৃতি ও বাস্তবের ফারাকে তিনি নিঃশব্দ যন্ত্রণা অনুভব করেন।
“নদীর বিদ্রোহ” গল্পের উপর ভিত্তি করে ৫টি বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন এবং উত্তর
১. প্রশ্ন: গল্পে নদীর রূপান্তর কীভাবে সমাজ ও প্রকৃতির পরিবর্তনের প্রতীক?
উত্তর:
গল্পে নদীর বিবর্ণ, নিস্তেজ চেহারা একটি বৃহত্তর সমাজ ও পরিবেশগত সংকটের প্রতীক। একসময় উচ্ছল ও প্রাণবন্ত নদী এখন মৃতপ্রায়—এটি মানুষের অবহেলা, দূষণ ও দখলের ফলে ঘটেছে। লেখক নদীর বদলে যাওয়া রূপ দেখে অতীত স্মরণ করেন, যা বোঝায় যে সমাজও তার মানবিকতা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাচ্ছে। নদী যেন প্রকৃতির এক নীরব প্রতিবাদ—যা লেখক “বিদ্রোহ” শব্দে তুলে ধরেছেন। গল্পটি মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বহীনতা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করে।
২. প্রশ্ন: ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর:
লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি মূলত আবেগপ্রবণ ও সচেতন। নদীর পরিবর্তিত রূপ দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং পূর্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্মরণ করে বিষণ্ণতা অনুভব করেন। এটি কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নয়, বরং একটি সামাজিক সংকটের প্রতিফলন। নদীকে কেন্দ্র করে তিনি মানুষের ভোগবাদী মনোভাব, অবহেলা ও পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। লেখকের চোখ দিয়ে আমরা দেখতে পাই, কীভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং তার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কও ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
৩. প্রশ্ন: নতুন সহকারী চরিত্রটি গল্পে কী ভূমিকা পালন করেছে?
উত্তর:
নতুন সহকারী চরিত্রটি গল্পে একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। তার চোখে নদীর রূপান্তর নতুন অভিজ্ঞতা, তবে তার অনুভব নদেদাদার মতো গভীর নয়। সে নদী দেখে কিছুটা বিস্মিত হলেও নদেদাদার মতো আবেগ বা স্মৃতি দ্বারা চালিত নয়। এই চরিত্রের মাধ্যমে লেখক বর্তমান প্রজন্মের পরিবেশের প্রতি নির্লিপ্ততা বা ভিন্ন মনোভাব তুলে ধরেছেন। নতুন সহকারী আসলে একটি প্রতীক—পুরনো ও নতুন প্রজন্মের ভাবনার ব্যবধানকে তুলে ধরার মাধ্যম।
৪. প্রশ্ন: ‘নদী’ গল্পে শুধুই একটি প্রকৃতিক উপাদান, নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু?
উত্তর:
‘নদী’ কেবল একটি প্রকৃতিক উপাদান নয়, বরং একটি জীবন্ত প্রতীক। এটি জীবনের প্রবাহ, ইতিহাস, স্মৃতি এবং পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। লেখকের চোখে নদী একসময় ছিল প্রাণবন্ত, স্রোতস্বিনী, যেন এক নারীর রূপে প্রতিস্থাপিত। এখন সেই নদী রূপান্তরিত—নিঃসাড়, কাদাযুক্ত ও বিস্মৃত। নদী এখানে ব্যক্তিগত স্মৃতির পাশাপাশি জাতীয় ঐতিহ্য ও পরিবেশগত বিবর্তনের প্রতিনিধি। তার বিদ্রোহ প্রকৃতিরই ক্রমাগত উপেক্ষার বিরুদ্ধে এক মৌন প্রতিবাদ।
৫. প্রশ্ন: গল্পের শিরোনাম ‘নদীর বিদ্রোহ’ কতটা তাৎপর্যপূর্ণ?
উত্তর:
‘নদীর বিদ্রোহ’ শিরোনামটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ। এখানে বিদ্রোহ শব্দটি সরাসরি কোনো সংঘাত নয়, বরং নদীর রূপান্তরকে প্রতীকীভাবে দেখানো হয়েছে। দীর্ঘ অবহেলা, দূষণ ও অবিবেচনায় নদী তার প্রাণবন্ততা হারিয়েছে—এটাই তার মৌন বিদ্রোহ। সে যেন বলছে, “তোমরা আমাকে অবহেলা করেছ, আমি আর আগের মতো নেই।” এটি প্রকৃতির প্রতিশোধ নয়, বরং তার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষকে সচেতন করার একটি বার্তা। শিরোনাম গল্পের মূল ভাবনা ও বার্তা সুন্দরভাবে ধারণ করে।