ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যা, সমাধান ও সম্ভাবনা  | ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?

কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যা 

Join Telegram

Table of Contents

ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের তিনটি সমস্যা

[1] কাঁচামালের অভাব: ভারতে উন্নত মানের দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর উৎপাদন পর্যাপ্ত নয়।

[2] কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি: উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তুলোর বিক্রয়মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ সেই অনুপাতে বস্ত্রাদির দাম বৃদ্ধি পায়নি। ফলে বস্তু উৎপাদকরা ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

[3] পুরোনো যন্ত্রপাতি: ভারতের কার্পাস-বয়ন কলগুলির একটি বৃহৎ অংশ এখনও পর্যন্ত পুরোনো ও বাতিল যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদন করে থাকে। এর ফলে নিম্নমানের বস্ত্রাদি উৎপন্ন হয় এবং উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। পুরোনো যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদন করায় শ্রমিকদের মাথাপিছু উৎপাদনের হারও কম।

[4] আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা: আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে উৎপাদিত বস্ত্রাদির সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

[5] কৃত্রিম তন্তুজাত বস্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা: 

কৃত্রিম তন্তু, যেমন—রেয়ন, নাইলন, পলিয়েস্টার, অ্যাক্রিলিক ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন মিশ্র বস্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণেও কার্পাস-বয়ন শিল্প গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

[6] শ্রমিক অসন্তোর : উপযুক্ত পারিশ্রমিকের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও কার্পাস বয়ন শিল্পে উৎপাদন ব্যবস্থা দারুণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

 [7] অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ: ভারতে কার্পাস-বয়ন

Join Telegram

কলগুলি চালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় অনেকসময় উৎপাদন বন্ধ থাকে।

[8] শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক: শ্রমিকদের সঙ্গে মালিক পক্ষের সুসম্পর্কের অভাব উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সমাধান

[1] শিল্পের আধুনিকীকরণ : উন্নত প্রযুক্তির প্রবর্তনের মাধ্যমে ভারত সরকার কারখানাগুলির আধুনিকীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই উদ্দেশ্যে সরকার 1986 খ্রিস্টাব্দে 750 কোটি টাকার বয়ন আধুনিকীকরণ ভাণ্ডার (Textile Modernisation Fund) স্থাপন করেছে।

(2) দীৰ্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর চাল বৃদ্ধি: উন্নত মানের বস্তু উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো আমদানি করা ছাড়াও উত্তর-পশ্চিম ভারতের শুষ্ক এলাকায় ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধের জলসেচের সাহায্যে দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

[3] অন্তঃশুল্ক হ্রাস: ‘যোশী কমিটি’-র সুপারিশ অনুযায়ী সরকার অন্তঃশুল্ক হ্রাস করেছে।

[4] স্বয়ংক্রিয় তাঁত স্থাপন: শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্যয় হ্রাসের জন্য সরকার কলগুলিতে স্বয়ংক্রিয় তাঁত বসাবার অনুমতি দিয়েছে।

[5] রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা গঠন : সুতিবস্ত্রের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য কার্পাস বস্ত্র রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা (Cotton Textile Export Promotion Council) গঠন করা হয়েছে।

[6] গবেষণা সংস্থা স্থাপন: শিল্পে উৎপাদনের উন্নতির জন্য এদেশে পাঁচটি গবেষণা সংস্থা স্থাপিত হয়েছে, যেমন—আমেদাবাদ টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন, মুম্বাই টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন, সাউথ ইন্ডিয়া টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতি।

[7] জাতীয় বয়ন নিগম গঠন: রুগ্ণ কলগুলির পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে জাতীয় বয়ন নিগম (national textile corporation) গঠন করা হয়েছে।

সম্ভাবনা:

ভারতের কার্পাস-বয়ন শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। কারণ –

[1] ভারত একটি জনবহুল দেশ বলে এখানে বস্ত্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রচুর। 

[2] ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি এখনও পর্যন্ত বস্ত্র শিল্পে খুব বেশি উন্নতি লাভ করতে পারেনি। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ভারতীয় বস্ত্রের প্রচুর চাহিদা আছে। 

[3] উন্নত প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভারতীয় বস্ত্রের বিক্রয়মূল্য হ্রাস এবং উৎপাদনগত বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হলে বিশ্বের বাজারেও ভারতীয় বস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে

Join Telegram

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *