সুফীবাদ কি
সুফি কারা?
ভারতে সুলতানী শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে যেমন গোঁড়া মুসলমান ধর্ম তাত্ত্বিকদের আগমন ঘটে, তেমনি মুসলমান মরমিয়াবাদীরাও এদেশে আসতে শুরু করেন। এরা অধিকাংশই ছিলেন পারস্য ইরানের অধিবাসী। এদের সুফী বলা হত।
বাংলায় সুফিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ – সুফিবাদের প্রভাব
হিন্দুধর্মে ভক্তি আন্দোলন যেরুপ প্রভাব বিস্তার করে ইসলাম ধর্মেও সুফীবাদ অনুরুপ প্রভাব বিস্তার করে। সুফীরা প্রথমে সিন্ধু ও পাঞ্জাবে বসবাস শুরু করে। এখান থেকে তাদের বাণী প্রচারিত হয় গুজরাট, দক্ষিন ভারত ও বাংলাদেশ। ভারতের সুফীরা প্রথমদিকে ইরানের মরমিয়া সম্প্রদায়ের প্রতি অনুগত ছিলেন। কিছুকালের মধ্যে কিন্তু ভারতীয় সুফী সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন ঘটে এবং এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কারণ হলাে ভারতীয় ও ইসলামী অতীন্দ্রিয়বাদের সুষম সমন্বয়। ভারতীয় সুফী সম্প্রদায়ের স্বকীয়তা প্রকাশ পেতে থাকে। ভারতে সুফীরা ঐহিক সুখের প্রতি দৃষ্টি দিলে না। তারা গােড়া হিন্দু ও মুসলমানদের কাছ থেকে দূরে থাকতে ভালােবাসতেন।
এই কারণেই সাধারন লােকদের নিকট তারা পরম শ্রদ্ধার পাত্র হন। কখনাে কখনাে সুফীরা এক একজন পীর বা শেখের নেতৃত্বে এক একটি সম্প্রদায় বা শ্রেণী গড়ে তুলেছিলেন। এই সম্প্রদায়গুলিকে ফকির বা দরবেশ বলা হত । এক একটি সম্প্রদায় নিজস্ব অনুষ্ঠান মেনে চললে। কয়েকটি সম্প্রদায় আবার এমন অনুষ্ঠান পালন করতে যেগুলির সম্মােহনী শক্তি ছিল। যেমন , নৃত্যের মাধ্যমে সমাধিস্থ হওয়া।
আরও দেখুন: ভারতে সুফি আন্দোলন
সুফী সম্প্রদায়গুলি মােটামুটি দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল
- বাসারা
- বিশারা
প্রথম শ্রেণীর সুফীগণ শরিয়ত আইনকানুন মেনে চলতে বলে অদের বাসার বলা হত। আর দ্বিতীয় সুফীগণ শরিয়ত মানতো না।
ভারতে দুটি শ্রেণী জনপ্রিয় হয়েছিল। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত সুফীরা ছিল ভ্রাম্যমান্য, সন্তস্বরুপ।
সুফিবাদের উদ্ভব ও বিকাশ
সুলতানী যুগে তিটি উল্লেখযােগ্য উপশ্রেণী বা গােষ্ঠী গড়ে ওঠে। চিস্তি সম্প্রদায়, সুহরাবাদী ও ফিরদোসী । ভারতে চিস্তি গােষ্টীর সিনসিনাহের প্রতিষ্ঠার খাজা মইনুউদ্দিন চিস্তি। তার শিষ্যদের মধ্যে বখতিয়ার কাফি ও তাঁর শিষ্য ফরিদ, উদ- দিন, রাজ- ই- সফর খুবই খ্যাতনামা সুফীসন্ত ছিল।
পরবর্তীকালে চিন্তি – সিন সিনাহের অন্তর্ভূক্ত সন্তদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য নাম হল নিজামউদ্দিন আউলিয়া ও নাসিরুদ্দিন চিরাগ। এদের বহু হিন্দু শিষ্যও ছিল। সুফীরা মনে করতে যে উলেমা ও রাষ্ট্র পবিত্র কোরানের অপব্যাখ্যা করে ইসলামের গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক নীতিগুলি ভেঙ্গে সমাজে বর্ণবৈষম্যে ও ধনবৈষম্যর সৃষ্টি করেছে। সুফীরা সকল মানুষই সমান- এই নীতিতে যেমন বিশ্বাসী ছিলেন তেমনি কর্মের মাধ্যমে তা দেখাতেন। উলেমা সম্প্রদায় এটি পারেনি বলে জনসাধারনের উপর উলেমাদের চেয়ে সুফীদের প্রভাব ছিল অনেক বেশি।
সমাজের কৃষক ও কারিগরদের অনেকেই সুফীদের জীবন ধারায় মুগ্ধ হয়ে তাদের অনুগামী হন। এই কারণে কৃষক ও কারিগরদের নিকট সুফীরাই ছিলেন প্রকৃত ধর্মীয় নেতা, উলেমারা নন। সূফীরা সমাজ থেকে দুরে থাকেন নি এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে পলায়নী মনােবৃত্তির পরিচয় দেননি বলে প্রচলিত সামাজিক রীতি বিরােধী ব্যাক্তি ও মানুষ তাদের চিন্তাধারা ও কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সুফীরা বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবীতে এমন যুগ আগত প্রায় যখন এক ইসলামী উদ্ধার কর্তা এসে ইসলামের খাঁটি বাণী আবার প্রচার করবেন।
ভারত সাধু সন্তদের দেশ, এখানে নির্জনবাসী সাধু সন্ন্যাসীর অভাব ছিল না। সুফীদের বৈরাগ্যময় জীবনযাত্রা ভারতবাসীর নিকট অপরিচিত মনে হয়নি। এইভাবে সুফী পীরগণ হিন্দুদের সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেন। হিন্দুরা শুরু ও পীরের মধ্যে পার্থক্য দেখেনি।
দুজন সুফী সাধকের নাম হল
1. নিজামউদ্দিন আউলিয়া।
2. নাসিরুদ্দিন চিরাগ