হিটলার ভার্সাই চুক্তির বিরােধিতা করেছিলেন কেন ? তাঁর নিরস্ত্রীকরণ বৈঠক পরিত্যাগের কারণ কী ছিল ?
ভার্সাই চুক্তির বিরােধিতার কারণ
>> ভার্সাই চুক্তির বিরােধিতার কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়ী মিত্রপক্ষের সঙ্গে জার্মানির ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় । প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ( ১৯১৯ খ্রি . ) স্বাক্ষরিত এই সন্ধি ছিল আসলে জার্মানির ওপর প্রতিশােধমূলক এক ইস্তেহার মাত্র , তাই হিটলার বিভিন্ন কারণে এই সন্ধির বিরােধিতা করেন –
>>.1 জাতীয়তাবাদবিরােধী সন্ধি : ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে জার্মানি থেকে জার্মান – অধ্যুষিত বেশ কিছু অল আলাদা করে দেওয়া হয় । এ ছাড়াও পােল্যান্ডকে জার্মানির ভিতর দিয়ে পােলিস করিডোের ’ নামক এক যােগাযােগের পথ তৈরি করে দেওয়া এবং জার্মানির ডানজিগ বন্দরকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা ইত্যাদি জাতীয়তাবাদবিরােধী পদক্ষেপের জন্য হিটলার ভার্সাই চুক্তির বিরােধিতা করেন । )
>>2. অর্থ আদায়কারী সন্ধি : যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়ের নামে জার্মানির ওপর যেভাবে জোরজবরদস্তি করে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বােঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তা সব জার্মানবাসীদের মতােই হিটলারও মেনে নিতে পারেননি । তাই তিনিও ভার্সাই সন্ধির বিরােধিতা করেন ।
>>3. অমানবিক ও অনুদার সন্ধি : ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলি জার্মানির প্রতি এতটাই কঠোর ছিল যে এই সন্ধিকে অমানবিক ও অনুদার সন্ধি বললে কোনাে অত্যুক্তি হয় না । যুদ্ধ সৃষ্টির অপরাধে ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে মিত্রপক্ষ জার্মানির প্রতি যে চরম অনুদারতা দেখিয়েছিল তা ছিল নিন্দনীয় । ইতিহাসবিদ ল্যাসিং – এর মতে — জার্মানির ওপর প্রতিশােধের লক্ষ্যে মিত্রশক্তি এই অমানবিক সন্ধির শর্তগুলি চাপিয়ে দিয়েছিল ।
নিরস্ত্রীকরণ বৈঠক পরিত্যাগের কারণ–
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে একদিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে অপরদিকে আমেরিকার আহ্বানেযােগদানকারী মােট নয়টি দেশের উদ্যোগে পরপর দুটি নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু এই নিরস্ত্রীকরণ বৈঠক হিটলার পরিত্যাগ করেন কারণ—
1. একপেশে নীতি : নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে যােগদানকারী প্রতিটি রাষ্ট্রই জার্মানির অস্ত্রহ্রাসের দাবি জানালেও নিজ নিজ দেশের ক্ষেত্রে অস্ত্রহাসের প্রশ্নে নীরব থাকে । নিরস্ত্রীকরণের প্রশ্নে এই একপেশে নীতির জন্য হিটলার বৈঠক পরিত্যাগ করেন । 2. নাতসি আদর্শের বিরােধী : হিটলারের নেতৃত্বে নাতসি দল চেয়েছিল সামরিক শক্তির সাহায্যে বিশ্বে জার্মানির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে । নাতসি পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য ছিল বলপ্রয়ােগ নীতি দ্বারা বিশ্বে প্রভুত্ব অর্জন । কিন্তু নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন সামরিক আগ্রাসন বিরােধী হওয়ায় হিটলার এই বৈঠক পরিত্যাগ করেন । 3. ‘ লেবেন শ্রউম ’ আদর্শের বিরােধী : হিটলার চেয়েছিলেন পূর্ব ইউরােপে জার্মান সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়ে জার্মানবাসীর জন্য লেবেন শ্রউম বা বাসস্থানের সম্প্রসারণ ঘটাতে । এই লক্ষ্যে তিনি ফ্রান্স আক্রমণের
জন্য পূর্ব ইউরােপ ও সােভিয়েত রাশিয়া অধিকারের পরিকল্পনা নেন । কিন্তু নিরস্ত্রীকরণ বৈঠকে যােগ দিলে তার এই পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে জেনে হিটলার নিরস্ত্রীকরণ বৈঠক পরিত্যাগ করেন।