Colonel sofia qureshi biography in bengali

Colonel sofia qureshi biography in bengali | কীভাবে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ইতিহাস গড়লেন?



কর্নেল সোফিয়া কুরেশি—এই নামটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর গর্ব এবং প্রেরণার প্রতীক। তিনি প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক অভ্যাসে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার জীবনের গল্প নয়, এটি হলো সাহস, নিষ্ঠা এবং সীমানা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার একটি উদাহরণ। গুজরাতের একটি ছোট শহর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সামরিক মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়া পর্যন্ত, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারীর ভূমিকাকে চিরতরে পরিবর্তন করেছেন।

প্রারম্ভিক জীবন এবং পটভূমি (Early Life and Background)

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ১৯৯০ সালে গুজরাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পরিবার সামরিক ঐতিহ্যে গভীরভাবে জড়িত। তার দাদা এবং স্বামী উভয়েই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, যা তাকে জাতীয় সেবার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। তবে, তিনি শিক্ষায়ও সমানভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি জীব রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তবে, দেশের প্রতি তার ভালোবাসা এবং সেবার আকাঙ্ক্ষা তাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কর্পসে যোগ দিতে প্রেরণ করেছিল।

সামরিক কর্মজীবন (Military Career)

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের পরে দ্রুত তার দক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে চিহ্নিত হন। ২০১৬ সালে, তিনি ইতিহাস রচনা করেন। পুনেতে অনুষ্ঠিত “এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮” নামক আন্তর্জাতিক সামরিক অভ্যাসে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়। এই অভ্যাসে ১৮টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল এবং এটি শান্তিরক্ষা ও মানবিক খনি বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে কেন্দ্রীভূত ছিল। কর্নেল সোফিয়া ছিলেন একমাত্র মহিলা কন্টিনজেন্ট কমান্ডার, যিনি ভারতের ৪০ সদস্যের দলকে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তখনকার দক্ষিণ সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছিলেন যে তার নির্বাচন তার দক্ষতার প্রমাণ।

আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০০৬ সালে, তিনি কঙ্গোতে একটি ইউএন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি পেশাদারিত্ব এবং নিষ্ঠার সাথে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তার সামরিক কর্মজীবনে তিনি ছয় বছরেরও বেশি সময় শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করেছেন।



সাম্প্রতিককালে, ২০২৫ সালের মে মাসে, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি “অপারেশন সিন্ডুর” এর পরে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই অপারেশনে ভারত পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে নয়টি আতঙ্কবাদী অবকাঠামো ধ্বংস করেছিল। এই ব্রিফিংয়ে তিনি বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংয়ের সাথে ছিলেন। এই ঘটনাটি ছিল ইতিহাসের প্রথম ঘটনা, যেখানে দুইজন মহিলা অফিসার একটি বড় সামরিক অপারেশনের পরে দেশের পক্ষে কথা বলেছিলেন।

উল্লেখযোগ্য সাফল্য এবং সম্মাননা (Achievements and Recognition)

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির সাফল্য শুধু তার সামরিক দায়িত্বে সীমাবদ্ধ নয়। তার “এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮”-এ নেতৃত্ব দেওয়া ইতিহাসের একটি মাইলফলক। এই অর্জন তাকে শুধু ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত করেনি, বরং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারীদের জন্য নেতৃত্বের পথও প্রশস্ত করেছে। তার নির্বাচন তার দক্ষতা এবং সামরিক বাহিনীর বিশ্বাসের প্রতীক।

ব্যক্তিগত জীবন (Personal Life)

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তথ্য সীমিত। তবে, জানা যায় যে তিনি আরেকজন সামরিক অফিসারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। এই বিয়ে তার সামরিক জীবনের সাথে আরও গভীরভাবে জড়িত করেছে। তার পরিবারের সামরিক ঐতিহ্য—দাদা এবং স্বামী উভয়েই সেনাবাহিনীতে—তাকে জাতীয় সেবার প্রতি আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে।

উত্তরাধিকার এবং প্রেরণা (Legacy and Inspiration)

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি শুধু একজন সামরিক অফিসার নন, তিনি হলেন নারী শক্তির প্রতীক। তার অগ্রগামী অর্জন অসংখ্য যুবতীকে সামরিক কর্মজীবন গ্রহণের জন্য প্রেরণা দিয়েছে। তিনি প্রায়ই বলেছেন, “যদি সম্ভব হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিন।” এই কথাগুলি তার বিশ্বাসের প্রতিফলন যে সামরিক বাহিনী নারীদের জন্য সমান সুযোগ এবং স্বাধীনতা প্রদান করে।

তার উত্তরাধিকার সাহস, নেতৃত্ব এবং সীমানা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার। ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন নারীদের ভূমিকা বৃদ্ধি করছে, তখন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি একজন অনুপ্রেরণামূলক চরিত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন।

উপসংহার (Conclusion)

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির জীবনী শুধু তার সামরিক সাফল্যের গল্প নয়, এটি হলো প্রেরণা এবং শক্তির একটি গল্প। জীব রসায়নে স্নাতকোত্তর থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন নেতা হিসেবে, তিনি সাহস এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে তার স্থান করে নিয়েছেন। ভবিষ্যতের প্রতি তাকালে, তার উত্তরাধিকার ভারত এবং বিশ্বের পরবর্তী প্রজন্মের সামরিক নেতাদের জন্য একটি আলোকস্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে।