তৃতীয় পাঠ: ‘আফ্রিকা’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) – পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নোত্তর সংকলন
ভূমিকা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আদিম সভ্যতার রহস্যময়তা ও মানব-প্রকৃতির সংঘাতের জটিল অনুভূতি ফুটে ওঠেছে। নিচের প্রশ্ন–উত্তর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
🔗 পিডিএফ ডাউনলোড লিঙ্ক: [PDF Download Link Here]
📝 মক টেস্ট অংশগ্রহণ লিঙ্ক: [Mock Test Link Here]
১. বহুপছন্দভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – ২৫টি
নিম্নলিখিত প্রতিটি প্রশ্নের জন্য একটি সঠিক বিকল্প চিহ্নিত করো:
- ‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’ বললে কী বোঝানো হয়েছে?
- ক) আগ্নেয়গিরির অগ্নি খ) প্রাচীন, সংস্কৃতিবিহীন যুগ গ) ভবিষ্যতের অজানা সময় ঘ) আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগ
- উত্তর: গ
- ‘উদ্ভ্রান্ত’ শব্দের অর্থ কী?
- ক) বিভ্রান্ত খ) উৎসাহী গ) স্থির শক্ত ঘ) পরিশীলিত
- উত্তর: ক
- ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ কোন অলঙ্কার?
- ক) উপমা খ) রূপক গ) অপ্রত্যাশিতনামক ঘ) প্রত্যয়
- উত্তর: খ
- সৃষ্টিকে বারবার বিধ্বস্তের অধৈর্য্য কী নির্দেশ করে?
- ক) অস্থিতিশীল মানসিকতা খ) পুনর্জাগরণের আকাঙ্ক্ষা গ) স্থায়ী শান্তি ঘ) অবহেলা
- উত্তর: খ
- ‘প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল’ এতে কী দেখানো হয়েছে?
- ক) সৃষ্টির উৎসাহ খ) নিয়ন্ত্রণের অভাব গ) নির্মম অধোগতি ঘ) বিবর্ধিত সৌন্দর্য
- উত্তর: গ
- ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’ বসবাস কি বোঝায়?
- ক) আলোহীনতা খ) নিরাপত্তা গ) ভারী আলো ঘ) উত্তেজনা
- উত্তর: ক
- ‘দুর্বোধ সংকেত’ দ্বারা কী প্রকাশ পায়?
- ক) স্পষ্ট বার্তা খ) রহস্যময় সংকেত গ) পরিষ্কার নির্দেশনা ঘ) দ্ব্যর্থবোধ
- উত্তর: খ
- ‘বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে বিরূপের ছদ্মবেশে’– ‘ছদ্মবেশ’ কী অলঙ্কার?
- ক) অপমা খ) রূপক গ) প্রতিশৈলী ঘ) মানসিক অবস্থা
- উত্তর: খ
- ‘অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ’—এতে কবি কী ব্যক্ত করছেন?
- ক) আশা খ) অনাগ্রহ গ) নম্রতা ঘ) বিচ্ছিন্নতা
- উত্তর: গ
- মানুষ-ধরার দল এসেছে কী নিয়ে?
- ক) প্রেম খ) শ্রদ্ধা গ) শাসন ঘ) লোহার হাতকড়ি
- উত্তর: ঘ
- ‘নখ তোমার নেকড়ের চেয়ে তীক্ষ্ম’—এতে কী তুলনা হয়েছে?
- ক) নখ-ঝড় খ) ভৌতিকতা গ) শক্তি-জন্তু ঘ) তীক্ষ্ণতা-শক্তি
- উত্তর: ঘ
- সভ্যের বর্বর লোভনগ্নতায় কী ফুটে উঠেছে?
- ক) মানবতা খ) অমানবিকতা গ) সৌন্দর্য ঘ) শান্তি
- উত্তর: খ
- ‘বাষ্পাকুল অরণ্যপথে’ দ্বারা কী চিত্রিত?
- ক) ধোঁয়াশা খ) স্বচ্ছ গতি গ) পরিষ্কার বাতাস ঘ) সৌন্দর্য
- উত্তর: ক
- ‘দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়’ কোন ছয়োত্তরায় দেখা যায়?
- ক) অপমান খ) নিষ্ঠুরতা গ) মায়া ঘ) করুণা
- উত্তর: খ
- অপমানিত ইতিহাসে কি চিহ্ন রেখেছে?
- ক) কলঙ্ক খ) গৌরব গ) পুনর্জাগরণ ঘ) সংহতি
- উত্তর: ক
- মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা কেন?
- ক) উৎসব-অনুষ্ঠানে খ) শান্তির নামে গ) সভ্যতার লালসা ঘ) বিধ্বস্ত আনন্দে
- উত্তর: গ
- শিশুরা খেলছিল কোথায়?
- ক) মায়ের কোলে খ) বাগানে গ) নদীর ধারে ঘ) পাহাড়ে
- উত্তর: ক
- কবির সংগীতে কী আরাধিত হয়েছিল?
- ক) যজ্ঞ খ) প্রকৃতি গ) মানবতা ঘ) সৌন্দর্য
- উত্তর: ঘ
- ‘পশুরা বেরিয়ে এল’ দিয়ে কী বুঝানো?
- ক) শান্তি খ) বিপদ সংকেত গ) উদযাপন ঘ) স্বাধীনতা
- উত্তর: খ
- ‘অশুভ ধ্বনি’ কোন সময়ের পরিচায়ক?
- ক) প্রভাত খ) মধ্যাহ্ন গ) প্রদোষকাল ঘ) মধ্যরাত্রি
- উত্তর: গ
- ‘আগামী সন্ধ্যার শেষ রশ্মি’ দিয়ে কী ইঙ্গিত?
- ক) নতুন সূর্য ওঠা খ) দিনের শেষ বেলা গ) পুরনো স্মৃতি ঘ) অনিশ্চয়তা
- উত্তর: খ
- ‘মানহারা মানবীর দ্বারে’ কবি কী প্রশ্ন করেন?
- ক) ‘ক্ষমা করো’ খ) ‘বীরত্ব দেখাও’ গ) ‘বিদায় নাও’ ঘ) ‘শান্ত হও’
- উত্তর: ক
- ‘সভ্যতার শেষ পূণ্যবাণী’ কী নির্দেশ করে?
- ক) মুক্তি খ) সচেতনতা গ) ক্ষমাশীলতা ঘ) প্রগতি
- উত্তর: গ
- কবিতার মেজাজ কেমন?
- ক) সাঙ্গীতিক খ) করুণময় গ) উদাস ঘ) উজ্জীবিত
- উত্তর: খ
- কবিতার প্রধান থিম কী?
- ক) প্রকৃতির প্রশংসা খ) সভ্যতার অবিচার গ) প্রেমঘ; সমন্বয় ও ক্ষমা
- উত্তর: গ
২. অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নাবলী (২০টি)
নির্দেশনা: প্রতিটির উত্তর ২০ শব্দের মধ্যে সমাপন করো।
- কবিতার কেন্দ্রীয় বিষয় কী?
- উত্তর: সভ্যতার নির্মম আগ্রাসন ও প্রকৃতির বিপর্যয়।
- ‘উদ্ভ্রান্ত’ শব্দের অর্থ?
- উত্তর: বিভ্রান্ত, উৎকণ্ঠিত।
- ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ কী নির্দেশ করে?
- উত্তর: প্রকৃতির ক্রুদ্ধ শক্তি ও অশান্তি।
- ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ কেমন?
- উত্তর: গাঢ় অন্ধকারে নিরাপত্তাহীন অবস্থা।
- ‘দুর্বোধ সংকেত’ কী?
- উত্তর: অস্পষ্ট, রহস্যময় আভাস।
- ‘ছদ্মবেশ’ দ্বারা কী বোঝানো?
- উত্তর: ছদ্ম, ভানসিদ্ধ অবস্থা।
- মানুষ গর্ব করে কী নিয়ে?
- উত্তর: লোহার হাতকড়ি ও ধাতব শাসন।
- ‘অমানুষতা’ কী?
- উত্তর: নিষ্ঠুর, অসভ্য আচরণ।
- ‘বাষ্পাকুল অরণ্যপথে’ চিত্র?
- উত্তর: ধোঁয়ামাখা, কেমন কাব্যিক রহস্য।
- ‘দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতো’ কী বোঝায়?
- উত্তর: নির্মম অত্যাচার ও অবমাননা।
- ‘কাদার পিণ্ড’ কী নির্দেশ?
- উত্তর: রক্ত-আশ্রু মিশ্র মাটির দাগ।
- মন্দিরে ঘণ্টা বাজানোর কারণ?
- উত্তর: সভ্যতার মিথ্যা পবিত্রতা প্রদর্শন।
- শিশুদের খেলাধুলা কী প্রতীক?
- উত্তর: নিষ্পাপ প্রাণের স্বাচ্ছন্দ্য।
- ‘অশুভ ধ্বনি’ কী বুঝায়?
- উত্তর: বিপজ্জনক আগাম সংকেত।
- ‘প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে’ কেমন পরিবেশ?
- উত্তর: ক্লান্তিকর, অস্থির বায়ুমণ্ডল।
- কবি ‘ক্ষমা করো’ কেন আহ্বান?
- উত্তর: সভ্যতার নিরস্ত্র অর্থহীনতা লাঘবের জন্য।
- ‘পুণ্যবাণী’ কী?
- উত্তর: মহৎ, পরিশুদ্ধ কল্যাণি বাণী।
- কবিতার শৈলী কী রকম?
- উত্তর: কবিতাসূত্রবদ্ধ, দৃশ্যপটময়, অলঙ্কারসমৃদ্ধ।
- ‘মানহারা’ শব্দের অর্থ?
- উত্তর: মর্যাদাবঞ্চিত, অবমানিত।
- কবিতাটি কী ধরনের বার্তা দেয়?
- উত্তর: ক্ষমা, সংহতি ও সচেতনতার আহ্বান।
৩. সংক্ষিপ্ত/ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নাবলী (৮টি)
নির্দেশনা: প্রতিটি উত্তর ৬০ শব্দের মধ্যে লিখো।
- ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ অর্থ ব্যাখ্যা করো।
- উত্তর: ‘রুদ্র’ শব্দভাণ্ডার থেকে বোঝায় ক্রুদ্ধ, ভয়ংকর; ‘সমুদ্রের বাহু’ দ্বারা প্রকৃতির অপরিসীম শক্তি ও বিস্তার বোঝানো হয়েছে, যা মানুষের সীমাবদ্ধতা ও অস্তিত্বের সংকটকে তুলে ধরে।
- ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারা’ কে অনুভূতি?
- উত্তর: এখানে নির্জন অন্ধকারে আনাগোনা কম, আলোর অভাব ও প্রত্যাখ্যানবোধের সৃষ্টি হচ্ছে, যা আফ্রিকার রহস্যময়তার পরিবেশকে আরও ভয়ানক করে তোলে।
- ‘দুর্বোধ সংকেত’ কোন প্রেক্ষাপটে এসেছে?
- উত্তর: বৃষ্টিভেজা অরণ্যপথে বাতাসে ভাসমান অস্পষ্ট শব্দগুলো মানুষের বোধসম্পন্ন পর্যবেক্ষণকে বিভ্রান্ত করে, যা বিপদের পূর্বাভাস দেয়।
- ‘বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে বিরূপের ছদ্মবেশে’ কী বুঝানো?
- উত্তর: আফ্রিকা প্রকৃতি নিজেই ভয়ানক পরিস্থিতিকে বিদ্রূপ করে, শক্তিশালী বিপদকে দুর্বলতার মুখোশে ঢেকে দেখায়, যাতে প্রকৃতির আভ্যন্তরীণ শক্তি আরও স্পষ্ট হয়।
- মানুষ কিভাবে অবমাননা করেছে?
- উত্তর: লোহার হাতকড়ি ও তীক্ষ্ণ নখের মাধ্যমে নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে, আফ্রিকার নির্দোষ প্রাণীদের দমনে, যা সভ্যতার বর্বরতাকে স্পষ্ট করে।
- মন্দির-ঘণ্টার বিপরীতে প্রকৃতির সাদা স্থিতি কী?
- উত্তর: মানুষের ধর্মানুষ্ঠান আলোকসজ্জিত পূজার ঘন্টা, যেখানে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা বিপ্লবী বিরোধিতা সৃষ্টি করে, প্রকৃতির নি:শব্দ শক্তি পরাবাস্তব হয়ে ওঠে।
- ‘অশুভ ধ্বনি’ কবিতায় কী ইঙ্গিত?
- উত্তর: প্রদোষকালের ঝঞ্ঝাবাতাসে এল নিঃশব্দ হিংস্র শব্দ, যা সভ্যতার পতন ও প্রকৃতির প্রতিশোধের আগাম সংকেত বহন করে।
- কবির ‘ক্ষমা করো’ আহ্বান কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- উত্তর: সভ্যতার বর্বরতায় আফ্রিকা নির্যাতিত, কবি শেষ রশ্মিতে মানবীর দ্বারে ক্ষমা চেয়ে, মানবের সহানুভূতিতে মিশে যাওয়ার বার্তা দেয়।
৪. বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী (৪টি)
তৃতীয় পাঠ: ‘আফ্রিকা’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) – পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নোত্তর সংকলন
ভূমিকা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আদিম সভ্যতার রহস্যময়তা ও মানব-প্রকৃতির সংঘাতের জটিল অনুভূতি ফুটে ওঠেছে। নিচের প্রশ্ন–উত্তর শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
[MCQ, অতিসংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাধর্মী ও ব্যাকরণ প্রশ্নাবলী অপরিবর্তিত থাকছে]
৪. বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী (৮টি)
নির্দেশনা: উত্তর ১৫০ শব্দের মধ্যে দিতে হবে।
1. সভ্যতার আগ্রাসন ও প্রকৃতির সংঘাত বিশ্লেষণ করো।
সভ্যতা ও প্রকৃতির সংঘাত কবিতায় উপনিবেশবাদের প্রতীকী আক্রমণ হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। ‘লোহার হাতকড়ি’ ও ‘নখের তীক্ষ্ণতা’ মানুষের নির্মম শক্তি বোঝায়, যা ‘অরণ্য’ ও ‘জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত’কে ছিন্ন করে। এই সংঘাতে সভ্যতার আধিপত্যবোধ প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও রহস্যকে ধ্বংশ করে, কিন্তু কবি ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ রূপে প্রকৃতির প্রতিশোধের আভাস দেন। দ্বন্দ্বের এই চিত্রায়ন শুভ্র ও কালান্তিক শক্তির দ্বৈরথ, যেখানে প্রযুক্তি-শক্তি এবং প্রাণিক-আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়।
2. কবির অন্তর্নিহিত করুণা ও দোষারোপের দ্বন্দ্ব আলোচনা করো।
কবির মনের গভীরে করুণা ও দোষারোপের মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। আফ্রিকার বুকে ‘রক্তে অশ্রুতে মিশে’ দগ্ধ ইতিহাসে কবি করুণা অনুভব করেন, কিন্তু একই সঙ্গে সভ্যতার বর্বরতা ও লোভের প্রতি তীক্ষ্ণ নিন্দা জানান। ‘ক্ষমা করো’ আহ্বানে এই দুই ভাব মিশে যায়—এটি নিন্দা নয় একাত্তরব্যঞ্জক পুনঃসংস্কার। দোষারোপের তীব্রতা কবিতার চমক বাড়ায়, আর করুণা তাকে মানবিক স্পন্দন যুক্ত করে।
3. অলঙ্কার ও শৈল্পিক গঠন ব্যাখ্যা করো।
কবিতায় প্রায় প্রত্যেকটি অলঙ্কার শক্তিশালী ইমেজ প্রদান করে। উপমায় ‘কালো ঘোমটা’ আফ্রিকার অজ্ঞাত, রহস্যাবৃত প্রকৃতি চিহ্নিত করে, রূপকে মুখস্থ করে ‘বনস্পতি’র নিভৃত পাহারা থামার করুণ আবহ। উৎপ্রেক্ষা ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ কবিতার ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে পাঠককে আতঙ্কিত করে, আর বক্রোক্তি ‘বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে বিরূপের ছদ্মবেশে’ পাঠককে ভাবায় প্রকৃত বিপরীতের ভানসিদ্ধ পরিস্থিতি। ছন্দ ও বিরামচিহ্ন কবিতা ধ্রুপদী গঠনে আবদ্ধ রাখে, যা বোধ্যতা বাড়ায়।
4. ‘ক্ষমা করো’ আহ্বান কেন রাখলেন কবি? বিশ্লেষণ করো।
‘ক্ষমা করো’ আহ্বান হচ্ছে সভ্যতা-মুক্তির শর্তবাক্য। অতীতে সংঘটিত निर्दয়পীড়নের অপরাধ স্বীকার করার মাধ্যমে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার আমন্ত্রণ। কবি সরল, নিষ্পাপ আফ্রিকাকে মানবতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে, তার দুঃখে মিশতে সভ্যতাকে আহ্বান জানায়। এটি শুধুমাত্র ক্ষমার আবেদন নয়, একই সঙ্গে আত্ম-অনুসন্ধানের যাত্রা, যেখানে অপরাধী নিজেকে হরণ করে পুনরুত্থানের পথ খুঁজে পায়।
5. ‘আফ্রিকা’ কবিতায় রূপকের ব্যবহার বিশ্লেষণ করো।
কবিতায় রূপকগুলো একে অপরকে পরিপূরক করে গঠন করেছে বিস্তৃত অর্থজাল। ‘আফ্রিকা’ রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয় নির্যাতিত মানবতা; ‘রুদ্র সমুদ্রের বাহু’ প্রকৃতির প্রতিশোধ; ‘বনস্পতি’র নিবিড় পাহারা অপমানিত সত্তার গোপন ভাণ্ডার; ‘কালো ঘোমটা’ অপজ্ঞার আবরণ এবং ‘মন্দিরে বাজছে পূজার ঘণ্টা’ সভ্যতার ভণ্ডামি। রূপকগুলো কেবল চিত্র নয়, কবিতার মনোভাবের শিরোনামে পরিণত হয়েছে।
6. কবিতার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ কী ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা দিয়েছেন?
কবিতার রাজনৈতিক বার্তা নিউওভার্টন পয়েন্টের মতো: উপনিবেশবাদের নির্মমতা খণ্ডন ও পুনর্মানবিক সমাজ গঠনের আহ্বান। রবীন্দ্রনাথ ইউরোপীয় দখলদারদের লোভের ছত্রে ‘নির্লজ্জ অমানুষতা’ প্রাধান্য দেখিয়ে, সভ্যতার পুনঃজাগৃতি ও সংহতির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। সামাজিক দিক থেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর কষ্টকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে আন্তরিক সহমর্মিতা ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্বন্ধ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।
7. ‘মানহারা মানবীর দ্বারে’ চিত্রটি কবিতার কোন ভাব প্রকাশ করে? ব্যাখ্যা করো।
‘মানহারা মানবীর দ্বারে’ দৃশ্যটি নৈতিক পতিত সত্তার পরিণতি চিত্রায়ন করে। সভ্যতা নিজের অপরাধের মুখোমুখি হয়ে ‘মানহারা মানবীর’ সামনে দাঁড়িয়ে সম্মান ও আত্মসম্মান ফিরিয়ে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়। এখানে নারীশক্তি মানবতার সত্তা; তার অবমাননা সভ্যতার অন্তিম দণ্ডানুভূতি। কবি এই দ্বারের দৃশ্য দিয়ে সমাজে ক্ষমা, পুনর্বাসন ও ন্যায়পরায়ণতার সূচনা করেন।
8. কবিতার ভাষাশৈলী কিভাবে পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে তা বিশ্লেষণ করো।
কবিতার শব্দচয়ন কঠিন ও সমৃদ্ধ, যা শ্রোতা-কণ্ঠে অনুরণন ঘটায়। ‘উদ্ভ্রান্ত’, ‘দুর্বোধ’, ‘বাষ্পাকুল’ ইত্যাদি শব্দ অলঙ্কারিক ও বর্ণনামূলক; প্রতিটি শব্দে স্পষ্ট অনুভূতি জাগ্রত হয়। বক্রোচ্চার পংক্তি–বিরতি পাঠককে ভাবায়, প্রতীকী ভাষার ধারাবাহিকতায় মনস্তাত্ত্বিক আবহ তৈরি হয়। এই ভারী গাম্ভীর্য পাঠককে কবিতার প্রেক্ষাপটে নিয়ে যায় এবং চিন্তার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে দীর্ঘস্থায়ী অনুপ্রেরণা দিয়ে যায়।
৫. ব্যাকরণগত প্রশ্নাবলী (৮টি)
নিচের উলম্ব করা অংশগুলির:
- কারক/অ-কারক
- বিভক্তি
- অনুসর্গ
- উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে
- কারক: বিভাগবাচক (অ-কারক)
- বিভক্তি: ‘উদ্ভ্রান্ত’-এ কোনো বিভক্তি নেই (মূল ধাতু)
- অনুসর্গ: নাই
- রুদ্র সমুদ্রের বাহু
- কারক: করকবাচক (কর্তৃকারক)
- বিভক্তি: ‘বাহু’-তে কোনো বিভক্তি নেই (মূল সেন্য)
- অনুসর্গ: নাই
- প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে
- কারক: করকবাচক (সহকারী অব্যয়)
- বিভক্তি: ‘থেকে’-এ বিভক্তি না
- অনুসর্গ: ‘থেকে’
- বনস্পতির নিবিড় পাহারায়
- কারক: করকবাচক
- বিভক্তি: পেল্লি ‘-য়’ (কারকপ্রত্যয়)
- অনুসর্গ: নাই
- তোমার চেতনাতীত মনে
- কারক: করকবাচক
- বিভক্তি: ‘অতীত’-এ ‘অতি-’ পূর্বরূপতি
- অনুসর্গ: ‘তা’-কোনো আনুষঙ্গিক না
- অরণ্যপথে পঙ্কিল হলো ধূলি
- কারক: করকবাচক
- বিভক্তি: কোনো বিভক্তি নেই
- অনুসর্গ: নাই
- পশুরা বেরিয়ে এল
- কারক: ক্রিয়াকালের নির্দেশক (সময়কার)
- বিভক্তি: নাই
- অনুসর্গ: নাই
- আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিতে
- কারক: করকবাচক
- বিভক্তি: নাই
- অনুসর্গ: ‘-এ’ (কারকপ্রত্যয়)
শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনামূলক নোট
কবিতার সারসংক্ষেপ:
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আফ্রিকা” কবিতায় আফ্রিকা মহাদেশকে মানবীয় এক জীবন্ত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক অমানবিকতার বিচারে তার যন্ত্রণা ও লজ্জার চিত্র অঙ্কিত।
প্রধান থিম ও বিষয়বস্তুঃ
- ঐতিহাসিক নির্যাতন: ঔপনিবেশিক শোষণ ও অমানবিক আচরণ থেকে আফ্রিকার বেদনা।
- প্রকৃতির শক্তি: ঝঞ্ঝাবাতাস, রুদ্র সমুদ্র, অরণ্য—সবই আফ্রিকার প্রাণশক্তি।
- ক্ষমার বার্তা: শোষণকারীদের প্রতি ক্ষমা ও পুনরুজ্জীবনের আহ্বান।
গুরুত্বপূর্ণ আলঙ্কারিক ভাষাঃ
- “রুদ্র সমুদ্রের বাহু”: ক্রুদ্ধ প্রকৃতির শক্তি।
- “কালো ঘোমটার নিচে”: দুঃখ ও অবজ্ঞার আবরণ।
- “তান্ডবের দুন্দুভিনিনাদ”: ক্ষোভের করাল চিৎকার।
মূল শব্দ ও their significance:
শব্দ | অর্থ | গুরুত্ব |
---|---|---|
উদ্ভ্রান্ত | বিভ্রান্ত, বিক্ষুব্ধ | যুগের অস্থিতিশীলতা বোঝায় |
অন্তঃপুর | অন্তর্বিশ্ব, গভীর অন্ধকার | লুকানো বেদনা প্রকাশ করে |
অশুভ ধ্বনি | ক্রন্দন, শোকের শব্দ | শোষণের যন্ত্রণা বর্ণনা করে |
ক্ষমা করো | অন্ত্যমেশ্বরিক দয়া | পুনরুজ্জীবনের আশার বার্তা |
পড়ায় মনোযোগের বিষয়:
- প্রতিটি স্তবকে আফ্রিকার অনুভূতি কীভাবে বদলেছে পর্যবেক্ষণ করো।
- আলঙ্কারিক ভাষা ও ছন্দে দৃষ্টি দাও—কীভাবে আবেগ তীব্র হয়েছে।
- শেষের আহ্বান: ক্ষমার পদ্ধতি ও তার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
পড়ার কৌশল:
- প্রথমে সাবলীলভাবে কবিতাটি পাঠ করে প্রধান ভাব বুঝো।
- প্রতীকি শব্দ ও বিচ্ছিন্ন পঙ্ক্তির অর্থ টীকা লিখে নাও।
- আলোচনায় প্রতিটি স্তবকের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করো।
- নোটে থিম, আলঙ্কার, প্রধান শব্দ সংযোজন করো—মনে রাখার জন্য সহজ হবে।
এই নোট ছাত্রদের কবিতাটির গহ্বর বুঝতে সহায়তা করবে, এবং পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাস যোগাবে।
আফ্রিকা কবিতার প্রশ্ন উত্তর Pdf Download
📄 পিডিএফ ডাউনলোড করুন
📚 ফাইলের নাম:আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি PDF
💰 মূল্য: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে
⬇️ ডাউনলোড করুনশুভ পরীক্ষা প্রস্তুতি—অর্জন হোক সাফল্য!