WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর



মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
মাধ্যমিক ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

ভূমিকা:
মাধ্যমিক ইতিহাস সিলেবাসের দ্বিতীয় অধ্যায় (সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অধ্যায় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন অবশ্যই আসে। মাধ্যমিক ইতিহাস প্রথম অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন-এর মতো, এই অধ্যায়টিও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুবই জরুরি। নিচে এই অধ্যায়ের সবচেয়ে সম্ভাব্য কিছু ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও তাদের উত্তর আলোচনা করা হলো।

Digital বোর্ড: বিষয়বস্তু ✦ show

1. স্বামী বিবেকানন্দের নব্যবেদান্তবাদের বৈশিষ্ট্য লেখো। অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের ‘নব্যবেদান্ত’ সম্পর্কে কী জানা যায়? অথবা, স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।

সূচনা: রামকৃয় পরমহংসদেবের প্রধান শিষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি হিন্দুধর্মকে বিশ্বদরবারে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বদা প্রয়াসী ছিলেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তাঁর নবআদর্শ নব্যবেদান্তবাদ নামে পরিচিত। তাঁর মতে, মানবজাতির কেবল একটাই ধর্ম হবে এমনটা কখনোই কাম্য নয়, বরং বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ধর্ম এমন হওয়া উচিত যার দ্বারা প্রত্যেকে নির্জীব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে।

ধর্মচিন্তার প্রেরণা: স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ধর্মীয় ভাবনার মূল বিষয়বস্তু হওয়া উচিত বেদ এবং বেদের আদর্শ। বিবেকানন্দ তাঁর গুরুর নির্দেশে বেদান্তকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলেন।

ধর্মের মূল্য: স্বামীজির মতে, ধর্ম হওয়া উচিত এমন যার দ্বারা মানবজাতির কল্যাণ করতে পারা যায় এবং যেখানে মানুষ যেকোনো অবস্থাতেই মানসিক সাহায্য পেতে পারে। অর্থাৎ মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ধর্মের আশ্রয় নিতে হবে এবং তা-ই হবে ধর্মের মূল বিষয়বস্তু।

নধ্যবেদান্তবাদ: প্রাচীন অদ্বৈতবাদ বা অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে বলা হয় ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা অর্থাৎ ব্রন্থ ছাড়া জগতের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিবেকানন্দের ধর্মচিন্তার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নব্যবেদান্তবাদ। তাঁর মতানুসারে জীবজগতের সর্বত্রই রন্দ্রের উপস্থিতি, তাই সাধারণ মানুষের সেবা করলেই ব্রন্থের সেবা করা হবে। আর এই কারণেই স্বামী বিবেকানন্দ শিবজ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই বরং সাধারণ মানুষের সেবাই সকলের ধর্ম হওয়া উচিত।

নব্যবেদান্তের পথ ও লক্ষ্য বিবেকানন্দের মতে, বিশ্বের শ্রেণিবিভক্ত সমাজে প্রতিটি শ্রেণির বা বর্ণের মানুষের উপযুক্ত সাধনপথ আছে। তাঁর মতে, দেবত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবার লক্ষ্য-পদ্ধতিকে যোগ বলা হয়। আর এই যোগ বা যুক্ত হবার পদ্ধতি হলো কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, রাজযোগ ও ভক্তিযোগ। প্রত্যেকের উচিত নিজেদের নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে চলা। তবে আধুনিককালে কর্মযোগের উপরেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।

মূল্যায়ন : স্বামী বিবেকানন্দ আসলে তাঁর নতুন আদর্শের দ্বারা সমগ্র বিশ্বদরবারে সনাতন হিন্দুধর্মকে আরও জনপ্রিয় করে তোলেন। আসলে তাঁর মনীষার দ্বারা তিনি হিন্দুধর্মের গৌরবান্বিত দিকগুলিকে সকল শ্রেণি, সকল ধর্মের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন।

2. বাংলার নারীমুক্তি আন্দোলনে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’র তাৎপর্য উল্লেখ করো। সাময়িক পত্রিকা হিসেবে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’র গুরুত্ব কী? অথবা, উনিশ শতকে নারীকল্যাণে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’র অবদান লেখো।

উত্তর:

সূচনা: উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত পত্রপত্রিকার মধ্যে সামাজিক প্রতিফলনের ক্ষেত্রে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে নারীমুক্তি আন্দোলন ও রক্ষণশীল সমাজে নারীজাতির মর্যাদা বৃদ্ধিতে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নজির সৃষ্টি করেছে।

প্রকাশকাল: 1863 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত এই পত্রিকার প্রকাশ করেন উমেশচন্দ্র দত্ত।

পত্রিকার উদ্দেশ্য: সমকালীন বাংলার অবহেলিত, বঞ্চিত, নারীশ্রেণির দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরা ও শিক্ষার আলো দেখিয়ে পুরুষসমাজ নির্মিত কারাগার থেকে নারীদের মুক্ত করাই ছিল ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’র প্রধান উদ্দেশ্য।

নারীদের অবস্থা: এই পত্রিকা থেকে সমকালীন বাংলার নারীদের সম্পর্কে যা জানা যায়।

নারীর মর্যাদা: সমকালীন বাংলায় নারীদের অধিকার ও মর্যাদা বলে কিছু ছিল না। এইসময় বাংলার নারীরা সাধারণত বাড়ির অন্দরমহলে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত ছিল।

কুপ্রথার অস্তিত্ব: উনিশ শতকে সমাজে বাল্যবিবাহ, পর্দাপ্রথা, বহুবিবাহ প্রভৃতির অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়।

সম্পত্তির অধিকারহীনতা: সমকালীন নারীরা ছিলেন পরাধীন, বিবাহকালে পিতৃদত্ত ও প্রাতৃদত্ত যৌতুক এবং মাতৃদত্ত স্ত্রীধন ছাড়া নারীদের অন্য সম্পত্তিতে কোনো অধিকার ছিল না।

মন্তব্য: 1863 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1923 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’য় নারীদের স্বাথে সমাজের কুপ্রথা ও কুসংস্কারের বিরদ্ধে সোচ্চার হলেও এটি সমালোচনার উর্ধ্বে উঠতে পারেনি

3. বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন? অথবা, সমাজসংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ করো। অথবা, নারীমুক্তি আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদানের মূল্যায়ন করো।

উত্তর সূচনা: ভারতবর্ষে উনিশ শতকে সমাজসংস্কার আন্দোলন বিশেষ করে নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তৎকালীন ভারতীয় নারীর বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতির বেড়াজালে সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে বসবাস করতেন। বিদ্যাসাগর নাবীজাতির মক্তির জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। তিনি ছিলেন সমকালীন ভারতের একজন বাস্তববাদী সংস্কারক।

সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

বিধবা বিবাহ সমর্থনে জনমত গঠন: সমকালীন সমাজে হিন্দু বিধবা নারীদের দ্বিতীয় বার বিবাহ করা ছিল সমাজবিরুদ্ধ কাজ। এই কুসংস্কার থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য তিনি বিধবাবিবাহের সমর্থনে এক শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলেন। এর জন্য বিদ্যাসাগর ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে এক শক্তিশালী গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এরপর তিনি ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’তে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এবং গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদনপত্র সরকারের নিকট জমা করেন।

বিধবাবিবাহ আইন পাশ : বিধবাবিবাহের পক্ষে দীর্ঘ ঘাতপ্রতিঘাতের পর বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় 15 নং রেগুলেশন-এর দ্বারা হিন্দু বিধবাবিবাহ আইন পাশ করেন লর্ড ডালহৌসি 1856 খ্রিস্টাব্দের 26 জুলাই বড়োলাট লর্ড ক্যানিং বিধবাবিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেন।

বিধবাবিবাহ রীতি প্রচলন: 1856 খ্রিস্টাব্দের 7 ডিসেম্বর প্রথম বিধবাবিবাহ রীতির প্রচলন হয়। ওইদিন শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সাথে বর্ধমানের কালীমতীর বিবাহ হলে বিধবাবিবাহ আইনত শুরু হয়।

বহুবিবাহের বিরোধিতা: উনবিংশ শতকের পূর্ব থেকেই সমাজের অপর একটি ঘৃণা প্রথা ছিল কুলীন ব্রাহ্মণদের বহুবিবাহের রীতি। এই রীতির বেড়াজালে অসংখ্য নারীর সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে জীবন অতিবাহিত হতো। এর বিরুদ্ধে 1873 খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর ‘বহুবিবাহ বন্ধ হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ প্রকাশ করেন।

বাল্যবিবাহের বিরোধিতা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অপর একটি সামাজিক সংস্কার ছিল বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করা। এরজন্য তিনি ‘শুভকারী’ পত্রিকায় ‘বাল্যবিবাহের দোষ শীর্ষক নিবন্ধে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন। এতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়ে 1860 খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করে, মেয়েদের বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স হবে 10 বছর।

বিধবাবিবাহের সাফল্যে বিদ্যাসাগরের অবদান:

বিধবাবিবাহের প্রসার: বিদ্যাসাগর বাংলাজুড়ে বিধবাবিবাহের স্বপক্ষে যে আওয়াজ তুলেছিলেন তা সমগ্র ভারতবর্ষে অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যেমন-মহারাষ্ট্রে ডি কে কাভে মাদ্রাজে বীরশালিঙ্গম পান্ডুলু এবং বোম্বাইয়ে প্রার্থনা সমাজের হাত ধরে বিধবাবিবাহের রীতি বিরাট সাফল্য পেয়েছিল।

নারীমুক্তি আন্দোলন: কেবলমাত্র বিধবাবিবাহ আন্দোলন নয়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ। যুগ যুগ ধরে বয়ে আসা সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীমুক্তি আন্দোলনে সাফল্য পেয়েছিলেন।

রক্ষণশীল সমাজের বিরোধিতা: বিদ্যাসাগরের সংস্কারপন্থী মনোভাব সমকালীন রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

মূল্যায়ন: ড: অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, বিদ্যাসাগর ছিলেন ‘ট্যাডিশনাল মডার্নাইজার’। মাইকেল মধুসুদন দত্ত বিদ্যাসাগরের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন এমন একজন মানুষ, “যাঁর মনীষা প্রাচীন ঋষিদের মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজদের মতো এবং হৃদয়বত্তা বঙ্গজননীর মতো।”

4. পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, ডেভিড হেয়ার কেন বিখ্যাত?

সূচনা: স্কটল্যান্ডের ঘড়ি ব্যবসায়ী ডেভিড হেয়ার সম্পূর্ণ ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। কিন্তু এদেশের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি এদেশীয় মানুষের কল্যাণের জন্য নিজ ব্যয়ে শিক্ষাবিস্তারে প্রয়াসী হয়েছিলেন। মানবতাবাদী চরিত্রের অধিকারী ডেভিড হেয়ার এদেশের মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করার জন্য আর নিজের দেশে ফিরে যাননি।

শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ারের অবদান

ক্যালকাটা বুক সোসাইটি স্থাপন: ডেভিড হেয়ার নিজস্ব উদ্যোগে তৎকালীন বাংলার গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার বিকাশ ঘটানোর জন্য ইংরেজি ও ভারতীয় বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। আর এই উদ্দেশ্যেই তিনি 1817 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘ক্যালকাটা বুক সোসাইটি’।

হিন্দু কলেজ স্থাপনে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগ: শিক্ষার বিকাশ বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার বিস্তারের জন্য কলকাতায় 1817 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘হিন্দু কলেজ’। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন ডেভিড হেয়ার। কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইড ইস্টের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করেন। এ ছাড়া রাজা রামমোহন রায় ও রাধাকান্ত দেবকেও তিনি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন। অবশেষে 1817 খ্রিস্টাব্দের 20 জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দু কলেজ যা বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।

ক্যালকাটা স্কুলবুক সোসাইটি স্থাপন: কলকাতা এবং কলকাতা শহরতলির স্কুলগুলিতে উন্নতমানের পাঠদান এবং বিভিন্ন স্থানে নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডেভিড হেয়ার 1818 খ্রিস্টাব্দের। সেপ্টেম্বর গড়ে তোলেন ক্যালকাটা স্কুলবুক সোসাইটি।

হেয়ার স্কুল স্থাপন: 1818 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ার কলকাতায় গড়ে তোলেন ‘পটলডাঙা অ্যাকাডেমি’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে হেয়ার স্কুল নামে পরিচিত। তৎকালীন সময়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা প্রদান করা হতো।

মূল্যায়ন: 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় ডেভিড হেয়ার অনন্য ভূমিকা পালন করেন। আধুনিক শিক্ষার প্রসারে এবং সাধারণ মানুষের কাছে ইংরেজি শিক্ষার জনকরূপে ডেভিড হেয়ার ভারতীয়দের কাছে একজন চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব।

5. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও তার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:- সূচনা: ভারতে শিক্ষা তথা উচ্চশিক্ষার বিকাশে একটি গরুত্বপূর্ণ দিকচিহ্ন হলো উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশ অনুযায়ী লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা (1857 খ্রিস্টাব্দে)।

প্রতিষ্ঠা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:

ইউনিভার্সিটি কমিটি: উডের ডেসপ্যাচের সুপারিশের ভিত্তিতে লর্ড ডালহৌসির শাসনকালে গঠিত ইউনিভার্সিটি কমিটির দেওয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (24 জানুয়ারি, 1857 খ্রিস্টাব্দে)।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে, 41 জন সদস্য নিয়ে গঠিত সিনেটের হাতে শিক্ষানীতি রূপায়ণের ভার ন্যস্ত করা হয়। লর্ড ক্যানিং হন এর প্রথম। আচার্য এবং স্যার জেমস উইলিয়াম কোলভিল হন প্রথম উপাচার্য।

পাঠদান-এর সূচনা: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-এর প্রথম মিটিং হয় 30 জানুয়ারি,

1858 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজের কাউন্সিল রুম-এ। ক্যামাক স্ট্রিটের একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিস গড়ে ওঠে। 1861 খ্রিস্টাব্দের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রথম এন্ট্রান্স পরীক্ষায় 244 জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য: এতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জোয়ার আসে। ছাত্রদের পরীক্ষাগ্রহণ ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তিদানের ফলে শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।

শিক্ষার বিষয়বস্তু: শিক্ষাদানের সূচনা কলা বিভাগ দিয়ে হলেও পরবর্তীতে বিজ্ঞান, কারিগরি, আইন, ডাক্তারি বিভাগেও শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল।

জ্ঞানীগুণীদের উপস্থিতি: এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশবিদেশের পন্ডিতদের উপস্থিতি শিক্ষামহলে আলোড়ন ঘটায় যা শিক্ষাবিস্তারে সহায়ক হয়।

মন্তব্য: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি পরিপূর্ণতা লাভ করলেও প্রতিষ্ঠাকালে এটি উচ্চশিক্ষাকেন্দ্র ছিল না, বরং তা ছিল পরীক্ষাগ্রহণকারী কেন্দ্র।

6. ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায়। অথবা, নকশা সাহিত্যের ইতিহাস হিসেবে ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’র কৃতিত্ব উল্লেখ করো।

উত্তর:- সূচনা: উনিশ শতকে বাংলা সাহিত্যের যেসকল গ্রন্থে বাংলার তৎকালীন সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো হুতোমপ্যাঁচার নক্সা। কালীপ্রসন্ন সিংহ ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থটি 1861 সালে প্রকাশ করেন।

বাংলার সংস্কৃতির আলোচনা: ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থে তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসব যেমন- গাজন, রথযাত্রা, রামলীলা, চড়ক, বারোয়ারি দুর্গাপূজা, মাহেশের স্নানযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে যা থেকে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় মেলে।

সমকালীন সমাজচিত্র ‘হুতোম প্যাঁচা’ ছদ্মনামে এখানে ব্যঙ্গবিদ্রুপের কশাঘাতে কলকাতার বাবুসমাজের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি, উৎসব-অনুষ্ঠান, সামাজিক কুপ্রথা চলিতভাষায় ও হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যঙ্গচিত্রের প্রদর্শন: ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’য় যেসব বাঙালি সাহেবদের ভাষা, চালচলন নকল করতে অভ্যস্ত তাদের তীব্র ভাষায় ব্যঙ্গবিদ্রুপ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে মাতাল, ফোটা তিলককাটা বৈয়বের কাহিনি, বাইজিনাচ, মদ্যপানসহ জমিদারদের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।

মূল্যায়ন এই আলোচনায় স্পষ্ট যে সমকালীন বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থটি একটি প্রামাণ্য দলিল। এই গ্রন্থে সমাজের যেসকল মানুষের চরিত্র নিন্দনীয় নয়, তাদেরকে তিনি সং সাজিয়ে উপস্থাপিত করেছেন।

6. এদেশে চিকিৎসাক্ষেত্রে কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভূমিকা কীরূপ ছিল? অথবা, ভারতে পাশ্চাত্য ও আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যাচর্চার বিকাশে কলকাতা

মেডিকেল কলেজের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর:- সূচনা: গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের উদ্যোগে 1835 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা মেডিকেল কলেজের হাত ধরে ভারতবর্ষে চিকিৎসাবিদ্যাচর্চায় নবযুগের সূচনা হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে কলেজের সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে নিয়োগ করা হয়েছিল মাউন্ট ফোর্ড জোসেফ ব্রামলিকে। দ্বারকানাথ ঠাকুরসহ দেশীয় অভিজাতদের অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানে অর্থদান করেন।

উদ্দেশ্য: প্রাথমিক পর্যায়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্দেশ্য ছিল এই কলেজ থেকে সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন্ট হিসেবে যোগ্যতা অর্জনকারী ছাত্রদের সামরিক ও অসামরিক কেন্দ্রে নিয়োগ করা। পরবর্তীতে জাতিধর্মনির্বিশেষে ভারতীয় যুবকদের চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষ করে তোলা এবং দক্ষ ডাক্তার ও নার্স জোগান দেওয়াই হয়ে ওঠে এই কলেজের উদ্দেশ্য।

শিক্ষার বিষয়: 1835 সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভেষজ, অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, ঔষধের গুণাগুণ ও প্রয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে পাঠদান করা হতো। এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ড. মধুসূদন গুপ্ত, ড. এ টি গুডউইড প্রমুখ।

শবব্যবচ্ছেদ: 1836 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ড. মধুসুদন গুপ্তের হাত ধরে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ চালু হয়েছিল। তৎকালীন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় কুসংস্কার যে যুক্তিহীন তা প্রমাণ করা হয়েছিল এই শবব্যবচ্ছেদ-এর মাধ্যমে।

প্রখ্যাত ডাক্তার তৈরি: খ্যাতনামা ডাক্তার তৈরিতে কলকাতা মেডিকেল কলেজের অবদান অনস্বীকার্য। এই কলেজে প্রথম ব্যাচে ডাক্তারি পাশ করেন উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত প্রমুখ।।

মূল্যায়ন : এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় মেডিকেল কলেজ হিসেবে কলকাতা মেডিকেল কলেজে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা লাভ করে বহুছাত্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসকের কাজে যুক্ত হন। এই কলেজ থেকে পাশ করা বহুডাক্তার পরবর্তীতে বিলেতে ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

7. ‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজজীবনের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়? | অথবা, উনিশ শতকে বাংলার সমাজচিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের কী ভূমিকা ছিল?

অথবা, ‘নীলদর্পণ’ নাটক সম্বন্ধে আলোচনা করো। অথবা, ‘নীলদর্পণ’ নাটক সম্বন্ধে কী জানো? | অথবা, জাতীয়তাবাদ প্রসারে ‘নীলদর্পণ’ নাটক-এর অবদান ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর:- সূচনা: উনিশ শতকে বাংলার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল নীলচাষ। এই নীলচাষের সাথে যুক্ত ছিলেন নীলকর সাহেব এবং নীলচাষিগণ। ‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে নীলচাষিদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানা যায়। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটানোর জন্য 1860 সালে দীনবন্ধু মিত্র ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি রচনা করেন। ওই বছরই নাটকটি প্রকাশিত হয় তাঁর ছদ্মনামে।

নীলচাষিদের দুর্দশার বিবরণ: ‘নীলদর্পণ’ নাটকে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র সমকালীন নীলচাষিদের জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। যেমন- খাদ্যশস্য চাষের পরিবর্তে কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করা, উৎপাদিত নীল বিক্রির সময় যথার্থ মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং চাষিদের ওপর অকথ্য অত্যাচার ও আর্থিক শোষণের কাহিনি।

জনমত সৃষ্টিতে: ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি যখন বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হতে শুরু করে তখন শহর ও শহরতলির শিক্ষিত সমাজ নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে এক বলিষ্ঠ জনমত গড়ে তোলে যা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদ প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।

নীল বিদ্রোহের কাহিনি: নীলকর সাহেবদের তীব্র শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বঞ্চিত নীলচাষিগণ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে 1858 খ্রিস্টাব্দে শুরু করে নীল বিদ্রোহ যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পাওয়া যায় ‘নীলদর্পণ’ নাটকে। এই নাটকটি নীল বিদ্রোহের প্রসার ঘটাতে সহায়ক হয়েছিল।

উপসংহার: জেমস লঙ-এর সহযোগিতায় নাটকটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হলে বিদেশেও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। এরই সাথে এই নাটকটি বাংলায় সাধারণ নাট্যশালার বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল, যদিও 1908 সালের পর সরকারিভাবে নাটকটি মঞ্চস্থ করা আইনত নিষিদ্ধ হয়।

8. পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন) কী ভূমিকা নিয়েছিলেন? অথবা, উনিশ শতকে নারীশিক্ষার বিস্তারে ডিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন) সাহেব কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?

উত্তর সূচনা: উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা তথা নারীশিক্ষার বিস্তারে

এও **

যেসকল বিদেশি শিক্ষানুরাগী ভারতবর্ষে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন) সাহেব। ব্রিটিশ শাসনকালে বেথুন সাহেব 1848 খ্রিস্টাব্দে লর্ড ডালহৌসির আইনমন্ত্রী হিসেবে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তিনি ভারতবর্ষের দুর্বিষহ গ্রামীণ রীতিনীতি এবং শিক্ষাব্যবস্থা দেখে নিরাশ হয়েছিলেন। আর এর পরেই তিনি ভারতবর্ষে নারীশিক্ষার বিস্তারে বিশেষ করে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

একে এই

নিজ ভাষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়াস বেথুন আঞ্চলিক ভাষা বিশেষ করে প্রতিটি প্রাদেশিক ভাষায় শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর মতে, এর ফলে সামাজিক কুসংস্কারের যেমন অবসান হবে তেমনি পিছিয়ে-পড়া নারীদের মধ্যে শিক্ষারও প্রসার হবে।

বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা: নারীশিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য বেথুন 1849 খ্রিস্টাব্দের 7 মে একটি বালিকা বিদ্যালয় (হিন্দু ফিমেল স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ প্রমুখ খুবই উদ্যোগী ছিলেন। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই স্কুলের প্রথম সম্পাদক।

বেথুন কলেজ স্থাপন: বিশেষ সামাজিক বেড়াজালে আবদ্ধ তৎকালীন নারীসমাজের মধ্যে উচ্চশিক্ষার বিস্তারের জন্য বেথুন কলকাতায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে বেথুন কলেজ নামে পরিচিত। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় এবং চন্দ্রমুখী বসু ছিলেন এই কলেজ থেকে পাশ করা প্রথম মহিলা স্নাতক।



আধুনিক শিক্ষার প্রসার: বাংলার নারীদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য বেথুন ফিমেল জুভেনাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠায়, বঙ্গানুবাদ সমাজ গঠনে এবং কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মূল্যায়ন: ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন কলকাতার বেথুন স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্নে বলেছিলেন-“আমি বিশ্বাস করি আজকের দিনটিতে একটি বিপ্লবের সূচনা করতে যাচ্ছি…. আমরা সফল হয়েছি এবং আজকে যে আদর্শের বীজ বপন করা হলো তা আর কোনো দিন বিফল হবে না।” প্রসঙ্গত, ভারতবর্ষে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার মেলবন্ধন ঘটিয়ে শিক্ষার বিস্তারে বেথুন যে অবদান রেখে গেছেন তা চিরস্মরণীয়।

9. সতীদাহপ্রথা কীভাবে রদ হয়? অথবা, সতীদাহপ্রথা বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখো।

উত্তর:- সূচনা: প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় হিন্দুসমাজে সতীদাহপ্রথার প্রচলন ছিল। ঊনবিংশ শতকের গোড়া থেকেই পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদের প্রসার ঘটলে যেসকল সামাজিক কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল সতীদাহপ্রথাবিরোধী আন্দোলন।

কোম্পানির প্রথম পদক্ষেপ: 1805 খ্রিস্টাব্দে নিজামত আদালতে পণ্ডিত ঘনশ্যাম কমিটি প্রথম সতীদাহপ্রথা সম্পর্কে মতামত জানায়। এই মতামতের ভিত্তিতে 1813 খ্রিস্টাব্দে সরকার সর্বপ্রথম গর্ভবতী ও অল্পবয়সি নারীর সতী হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

রামমোহনের প্রচেষ্টা: মানবতাবাদী রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত ‘আত্মীয় সভা’ সতীপ্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সচেষ্ট হয়। সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে রামমোহন একটি বই লিখে প্রমাণ করেন সতীদাহপ্রথা শাস্ত্রসম্মত নয়। তাই তিনি সরাসরি সাহায্য চেয়ে উইলিয়াম বেন্টিষ্কের কাছে আবেদন করেন।

বেন্টিঙ্কের উদ্যোগ: উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীপ্রথা বন্ধের লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে 1829 খ্রিস্টাব্দের 4 ডিসেম্বর সতীদাহপ্রথাকে 17 নং রেগুলেশন জারির দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

11. উনিশ শতকে বাংলায় নারীশিক্ষার বিস্তারে রাধাকান্ত দেব কীরূপ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন? অথবা, সমাজসংস্কারক হিসেবে ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর:- সূচনা: উনবিংশ শতকে ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে দেশীয় যেসব মনীষী ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাধাকান্ত দেব। রাধাকান্ত দেব চেয়েছিলেন প্রাচ্যবাদী শিক্ষাকাঠামোয় পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ হোক। তাঁর অনুপ্রেরণায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু কলেজের ছাত্ররা ইংরেজি সাহিত্য ও পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলি বাংলায় অনুবাদ করেন।

হিন্দু কলেজে অবদান প্রগতিশীল চিন্তার দ্বারা আন্তরিকভাবে রাধাকান্ত দেব হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত ছিলেন। 1818 খ্রিস্টাব্দ থেকে পরবর্তী 32 বছর পর্যন্ত রাধাকান্ত দেব হিন্দু কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসারে রাধাকান্ত দেব চিকিৎসাবিদ্যায় শবব্যবচ্ছেদকে সমর্থন করেন। এ ছাড়া ভারতীয় ছাত্রদের উচ্চতর বিজ্ঞানশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে তিনি তহবিল গঠন করেন।

নারীশিক্ষার প্রসারে: রাধাকান্ত দেব নারীশিক্ষার প্রসারেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি নিজ বাসভবনে ‘ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’র ছাত্রীদের পরীক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা করেন। তিনি ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠায় ও স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ক পুস্তক রচনায় এবং মহিলাদের ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণে সহযোগী ছিলেন।

উপসংহার: রাধাকান্ত দেব পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে সর্বক্ষেত্রেই উদ্যোগী এবং আগ্রহী ছিলেন। তবে তিনি ইংরেজি শিক্ষার সাথে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারের বিরোধী ছিলেন। ধর্মীয় কারণে তিনি রামমোহনের বিরোধী হলেও উভয়েই বিশ্বাস করতেন পাশ্চাত্য শিক্ষা ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

লর্ড মেকলে-কে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তক বলা হয়নি কেন?

(MP 2022)

উত্তর সূচনা: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিষ্কের আইন সচিব টমাস ব্যাবিংটন মেকলে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতের জনশিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা বললেও সেই অর্থ প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন শিক্ষাখাতে ব্যয় হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো কিছু বলা হয়নি। সেই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে সরকারের ঘনিষ্ঠ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের বক্তব্য: প্রাচ্যবাদী শিক্ষার সমর্থকদের মধ্যে এইচ টি প্রিন্সেপ,

কোল ব্রুক, উইলসন প্রমুখ এদেশে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। অন্যদিকে পাশ্চাত্যবাদী শিক্ষার সমর্থকদের মধ্যে মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন প্রমুখ এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানান।

মেকলে মিনিট: বেন্টিঙ্কের আমলে (1828-35) জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। এতে তিনি বলেন যে দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণি ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণ করলে তা নিম্ন পরিস্রাবণ নীতি অনুসারে ধীরে ধীরে সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত।

এই প্রস্তাবে তিনি বলেন, (ক) প্রাচ্যের শিক্ষা নিকৃষ্ট ও বৈজ্ঞানিক চেতনাহীন। তাই এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত। (খ) পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ফলে এদেশে এমন একটি সম্প্রদায়ের আত্মপ্রকাশ ঘটবে যারা “রক্তে ও বর্ণে ভারতীয় হলেও রুচি, মত, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ।”

সরকারের সিদ্ধান্ত: অবশেষে মেকলের বক্তব্য মেনে নিয়ে বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1835 সালে ভারতে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারকে সরকারি নীতি হিসেবে ঘোষণা করেন।

12. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রবর্তনের ফলাফল সম্পর্কে লেখো। অথবা, ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে ইংরেজি ও আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের ফলাফল আলোচনা করো।

উত্তর সূচনা: উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রবর্তন ও প্রসারের ফলে মধ্যযুগীয় অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও ঘৃণা থেকে ভারতীয়রা মুক্ত হতে শুরু করে। উনবিংশ শতকের তৃতীয় ও চতুর্থ দশক থেকে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের ব্যাপক উদ্যোগ লক্ষ করা যায়।

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ফলাফল: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের সুদূরপ্রসারী ফলাফল নিম্নরূপ-

(1) যুক্তিবাদের প্রসার: পাশ্চাত্য তথা ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণের দ্বারা ভারতীয়দের মধ্যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় বর্বরতার অবসান ঘটে। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদের প্রসার ঘটে। মানুষ যুক্তিতর্কের কষ্টিপাথরে বিচারবিশ্লেষণ করতে শেখে।

(2) মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব: পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনে ভারতে আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত নামে নতুন শ্রেণির উদ্ভব হয় যা ভারতীয় সমাজে শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি করে।

(3) জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ: পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা ভারতীয়দের বিভিন্ন বৈদেশিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধের ধারণার বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করেছিল ও এভাবেই ভারতে জাতীয় চেতনার উন্মেষ হয়।

মূল্যায়ন: এই আলোচনায় স্পষ্ট, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার বিভিন্ন রকম সংস্কারের সহায়ক হয়ে এক নবযুগের সূচনা করে। তবে নানারূপ দুর্বলতা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন ঊনবিংশ শতকে বহু সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা করে যা পরে ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় সংগ্রামের পটভূমি তৈরি করেছিল।

13. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দ্বন্দু বলতে কী বোঝায়? অথবা, ঔপনিবেশিক শাসনকালে শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দু কী? অথবা, এদেশে শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক আলোচনা করো।

উত্তর:- সূচনা: উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই বহু বিদেশি ও ভারতীয় শিক্ষানুরাগী মানুষের প্রচেষ্টায় এদেশে শিক্ষাবিস্তারে জোয়ার আসে। এক্ষেত্রে কোম্পানি প্রথম পর্যায়ে প্রাচ্য শিক্ষার সমর্থক হলেও পরবর্তীতে সরকারিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তার নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয় তা-ই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত।

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দু:

সনদ আইন (1813): ঔপনিবেশিক শাসনকালে 1813 সালের সনদ আইন অনুসারে ভারতীয় শিক্ষাখাতে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য কোন খাতে ব্যয় হবে তা নিয়ে শুরু হয় প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দু।

প্রাচ্য শিক্ষার সমর্থকদের মতামত প্রাচ্য শিক্ষার সমর্থকদের মতে, কোম্পানির শিক্ষানীতি হওয়া উচিত ভারতীয় ভাষায়। এই নীতির পক্ষে ছিলেন উইলসন, কোলব্রুক, স্যার প্রিন্সেপ প্রমুখ।

পাশ্চাত্যবাদীদের যুক্তি: পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের মতে, শিক্ষার মাধ্যম হওয়া উচিত ইংরেজি, বিষয় হওয়া উচিত পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান। এই মতের সমর্থক ছিলেন মেকলে, রাজা রামমোহন রায়, আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ।

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দের অবসান: 1813 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন চলতে থাকে। অবশেষে ‘General Committee of Public Instruction-এর সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে 1835 খ্রিস্টাব্দের 2 ফ্রেব্রুয়ারি ‘মেকলে মিনিট’ নামক এক রিপোর্টে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থনে সরকারি অর্থব্যয়ের নির্দেশ দেন। আর এভাবেই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছিল।

মন্তব্য: প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন চললেও এই দ্বন্দ্বই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় এক নব উন্মাদনার সূত্রপাত করেছিল। এই দ্বন্দ্বের অবসানে ভারতবর্ষে সরকারিভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের অগ্রগতি লক্ষ করা যায়।

14. ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, টীকা লেখো: নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী।

সময় সূচনা: ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে কিছু তরুণ ছাত্র পাশ্চাত্য ভাবধারার আদর্শে যুক্তিবাদ, মুক্তচিন্তা, মানসিক চিন্তা, সততার মাধ্যমে সমাজসংস্কারে ব্রতী হয়। তারা ইয়ং বেঙ্গল বা নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী নামে পরিচিত। তাদের পরিচালিত আন্দোলনই ছিল নব্যবঙ্গ আন্দোলন।

আন্দোলনের উদ্দেশ্য নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একদিকে হিন্দুসমাজ,

খ্রিস্টধর্ম ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব থেকে সনাতন হিন্দুধর্ম ও হিন্দুসমাজকে রক্ষা করা এবং অপরদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে হিন্দুসমাজের গোঁড়ামি, কুপ্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা।

নব্যবঙ্গ দলের কার্যকলাপ নব্যবঙ্গীয়দের মূললক্ষ্য ছিল হিন্দুসমাজের চিরাচরিত কুপ্রথাগুলির বিরোধিতা করা। ডিরোজিওর ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ছাত্ররা 1828 খ্রিস্টাব্দে ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে এক বিতর্ক সভা প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক কুসংস্কার ও কুপ্রথা দূর করার জন্যে। এ ছাড়া পার্থেনন ও ক্যালাইডোস্কোপ পত্রিকায় তাঁরা হিন্দুসমাজের বহুবিবাহ, নারীর শিক্ষা, জুরির বিচার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন।

আন্দোলনের নেতৃত্ব ডিরোজিও ছাড়াও অন্যান্য অনুগামীর মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রাধানাথ শিকদার, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রামতনু লাহিড়ী প্রমুখ।

সমালোচনা: খুব অল্পসময়ে এই আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়লেও তা কেবলমাত্র কলকাতা শহরের কিছু ধনী হিন্দুসমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামগঞ্জের সকল শ্রেণির মধ্যে এই আন্দোলন লক্ষ করা যায়নি। তবে তাঁরা দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করতে আগ্রহী ছিলেন একথা বলা যায়। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীকে ‘নকল দেশ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তবে সমালোচনা সত্ত্বেও নব্যবঙ্গীয়দের সত্যানুসন্ধানী মনোভাব, দেশাত্মবোধ ও সংস্কৃতির চেতনা উনিশ শতকের নবজাগরণকে সমৃদ্ধ করেছিল।

15. শ্রীরামকৃষ্ণ সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ কীভাবে তুলে ধরেন?

উত্তর:- সূচনা: আধুনিক ভারতের ধর্মীয় ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হলেন শ্রীশ্রীরামকৃয় পরমহংসদেব। উনিশ শতকের বাংলায় ধর্মীয় আন্দোলন যখন নানা মত ও পথের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে তখন রামকৃষ্ণ সর্বধর্মসমন্বয়ের সন্ধান দেন। আসলে তিনি এক নবহিন্দুধর্মের ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন।

শিবজ্ঞানে জীবসেবা: সাধারণ পোশাক পরে সহজসরল ভাষা ও উপনার সাহায্যে তিনি ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচার করেন। তিনি বলতেন, সব মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজ করে, তাই জীবে দয়া নয়-তিনি শিবজ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেন।

যত মত তত পথ: শ্রীরামকৃত্ব বৈয়ব থেকে শান্ত, ইসলাম থেকে খ্রিস্টীয়, দ্বৈত থেকে অদ্বৈত, সাকার থেকে নিরাকার, সগুণ থেকে নির্গুণ সবধরনের ধর্মীয় সাধনায় উত্তীর্ণ হন। তিনি সাধনার মাধ্যমে এই সত্যে উপনীত হন-সব ধর্ম সত্য এবং সব ধর্মমত অনুসরণে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন- “যত মত তত পথ।”

মূল আদর্শ। শ্রীরামকৃষ্ণের ধর্মের মূল আদর্শ হলো সর্বধর্ম সমন্বয়। তিনি সকল ধর্মের মধ্যে সুসম্পর্কের বা সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করে বলেন, সব মতকে এক-একটি পথ বলে জানবে। আমার মত ঠিক আর অপরের সব মিথ্যে এইরকম বোধ যেন না হয়, বিজ্ঞের ভাব যেন

না হয়। তিনি বলেন, ঈশ্বর এক ও অভিন্ন। লোকে তাঁকে বিভিন্ন নামে ডাকে।

মূল্যায়ন: সর্বধর্মসমন্বয়ের ক্ষেত্রে শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত দর্শন অনুসরণে বলেছেন, “যত্র জীব তত্র শিব।” তাঁর মতে, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান রয়েছে। জীবসেবা করলেই শিবসেবা করা হয়।

16. চীকা লেখো-লালন ফকির। অথবা, উনিশ শতকে বাংলায় ধর্মীয় সমন্বয়ে লালন ফকিরের অবদান কীরূপ? অথবা, ধর্মচিন্তায় লালন ফকিরের সমন্বয়বাদ প্রকাশিত হয়-আলোচনা করো। অথবা, বাংলার সমাজজীবনে লালন ফকিরের অবদান কী?

উত্তর:- সূচনা: উনিশ শতকে বাংলায় ধর্মীয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে যেসকল ব্যক্তির উদ্যোগ লক্ষ করা যায় তাঁদের অন্যতম ছিলেন লালন ফকির। তিনি তাঁর প্রায় দু’হাজার গানের মাধ্যমে ধর্মসমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন। তাঁর বাউল গানগুলি অতিসহজসরল হলেও গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী এবং মানবতাবাদের উদাহরণ।

বংশপরিচয়: 1774 খ্রিস্টাব্দের 17 অক্টোবর বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে লালন ফকিরের জন্ম হয়েছিল। তবে অনেকের মতে, তিনি জন্মেছিলেন কুষ্টিয়া জেলার ভাঁড়ড়া গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন মাধবরাও, মাতা ছিলেন পদ্মাবতী দেবী।

বাউলগানের শিক্ষা শৈশবকাল থেকে তিনি সংগীতপ্রিয় ছিলেন। লালন সিরাজ সাঁইয়ের কাছে বাউলগানের দীক্ষা নেন। তিনি একটি বাউল আখড়া তৈরি করে শিষ্যসহ বসবাস করতেন বলে জানা যায়।

ধর্মসমন্বয়ের আদর্শ: লালন ফকির বিশ্বাস করতেন সকল মানুষের মধ্যে বাস করে এক মনের মানুষ। সেই মনের মানুষের কোনো জাতিধর্মবর্ণ ও লিঙ্গভেদ নেই। তাই সেই মানুষকে নিয়ে লালন গান বেঁধেছিলেন-

“মিলন হবে কত দিনে

আমার মনের মানুষেরই সনে।”

তিনি জাতিভেদপ্রথা মানতেন না, তাঁর গান ছিল মর্মস্পর্শী, মানবতাবাদী আদর্শে পূর্ণ। তাই তিনি গেয়েছেন

“সব লোকে কয় লালন কি জাত এ-সংসারে লালন কয় জাতির কি রূপ দেখলাম না এনজরে।”

এভাবে গানের ভাষায় লালন ফকির সর্বধর্মের সমন্বয়বাদী আদর্শের প্রচারে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

মূল্যায়ন: লালন ফকিরের গান ও তাঁর জীবনদর্শন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলামের মতো খ্যাতনামা সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষদেরও প্রভাবিত করেছে। 1890 খ্রিস্টাব্দে 116 বছর বয়সে লালন ফকির পরলোকে গমন করেছিলেন।

17. মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন? অথবা, মধুসূদন গুপ্তের শবব্যবচ্ছেদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর:- সূচনা: উনিশ শতকে বাংলার বিজ্ঞানশিক্ষায় বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক অভূতপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন ডা: মধুসূদন গুপ্ত। 1836 খ্রিস্টাব্দের 28/22 অক্টোবর তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করে একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।

মধুসূদন গুপ্তের পরিচয় হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে 1800 খ্রিস্টাব্দে বৈদ্য চিকিৎসক পরিবারে মধুসূদন গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন। সংস্কৃত সাহিত্যে জ্ঞানলাভের পর তিনি 1826 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের বৈদিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন শুরু করেন।

শবব্যবচ্ছেদের কৃতিত্ব কলকাতা মেডিকেল কলেজ 1835 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও শবব্যবচ্ছেদ করে জ্ঞান অর্জনের পথে হিন্দুধর্মের কুসংস্কার ছিল অন্যতম বাধা। কিন্তু মধুসূদন গুপ্ত 1836 খ্রিস্টাব্দে শবব্যবচ্ছেদ করে ধর্মীয় কুসংস্কার যে যুক্তিহীন তা প্রমাণ করেন। এই শবব্যবচ্ছেদে মধুসূদন গুপ্তের সহযোগী ছিলেন উমাচরণ শেঠ, রাজকৃয় দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত ও নবীনচন্দ্র মিত্র প্রমুখ।

গ্রন্থপ্রকাশ: মধুসূদন গুপ্ত ‘লন্ডন ফার্মাকোপিয়া’ নামে একটি গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি সংস্কৃত ভাষায় অপর একটি গ্রন্থ অনুবাদ করেন। এটি রবার্ট ওপার-এর লেখা “Anatomist Vade Mecum.’

ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ: মধুসূদন গুপ্তের হাত ধরে সমকালীন সমাজে শবব্যবচ্ছেদ সম্পন্ন হলে এক বিরাট কুসংস্কারের হাত থেকে সমাজ রক্ষা পায়। যদিও এই কারণে তাঁকে জাতিচ্যুত করা হয় কিন্তু তবুও তিনি সমাজের কাছে মাথা নত করেননি।

উপসংহার: আধুনিক চিকিৎসা জগতের প্রাণপুরুষ মধুসুদন গুপ্তের হাত ধরেই চিকিৎসাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল। 1865 খ্রিস্টাব্দের 15 নভেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।

18. ধর্ম ও সমাজসংস্কারে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর অবদান কী ছিল?

উত্তর:- সূচনা: উনিশ শতকের বাংলায় এক অন্যরকম ধর্মসংস্কারক তথা সাধক ছিলেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে তিনি ব্রাহ্মসমাজের হয়ে একাধিক কর্মসূচি পরিচালনা করেন। শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর টোলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন কাটিয়েছিলেন।

সার্বিক আন্দোলন: প্রাচীন হিন্দুরীতি অনুযায়ী, গোঁড়া হিন্দুদের কাছে সতীদাহপ্রথা পবিত্র ও মহান হলেও বাস্তবে তা ছিল প্রচন্ড নিষ্ঠুর ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। উনিশ শতকে কলকাতাসহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে এর বিরুদ্ধে শুরু হয় সার্বিক আন্দোলন।

ব্রাহুসমাজে যোগদান ও বিতর্ক: 1863 সালে ব্রাহ্মসমাজে যোগদান ও বিতর্ক করে

দীর্ঘ 25 বছর ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিনি ব্রাহ্মধর্মপ্রচার করেছিলেন। 1878 সালে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার পর তাঁর সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের দূরত্ব বাড়ে এবং আচার্য পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়।

নব্যবৈয়ব আন্দোলন: ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ করার পর জীবনের শেষ চোদ্দো বছর তিনি বৈয়বধর্মপ্রচারে ও ধর্মসাধনায় মন দেন এবং বাংলায় নব্যবৈয়ব আন্দোলনের সূচনা করেন। বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনীকুমার দত্ত, সতীশ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সংস্কার: নব্যবৈঘ্নবধর্মের প্রচারের সাথে সাথে বিজয়কৃয় স্ত্রীশিক্ষা এবং জাতির উন্নয়নে প্রয়াসী হয়েছিলেন।

মন্তব্য: ধর্মসংস্কারক ও সমাজসংস্কারক হিসেবে সন্ন্যাসগ্রহণের পর বিজয়কৃয় গোস্বামীর নাম হয়েছিল অচ্যুতানন্দ সরস্বতী। 1899 খ্রিস্টাব্দে পুরীতে তিনি পরলোকগমন করেন।

18. কাঙাল হরিনাথের ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকা সমকালীন জনমানসে কী প্রভাব ফেলেছিল? অথবা, ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকা তৎকালীন সমাজজীবনে কী প্রতিফলন ঘটিয়েছে তা সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর:- সূচনা: উনিশ শতকে বাঙালি জনমানসে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। 1863 খ্রিস্টাব্দে হরিনাথ মজুমদার সম্পাদিত এই পত্রিকাটি প্রথমে পাক্ষিক ও পরে সাপ্তাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় সমকালীন বাংলার সমাজজীবনের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

গ্রামীণ সাংবাদিকতা: গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হরিনাথ মজুমদার গ্রামের বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি এমনকী গ্রামীণ সমাজের খুঁটিনাটি দিকগুলি তুলে ধরেছেন এই পত্রিকায়।

নারীদের সামাজিক স্থান: ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকা থেকে সমকালীন সমাজে নারীর দুরবস্থার কথা জানা যায়। তবে নারীশিক্ষাপ্রসারে ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়।

জমিদারদের শোষণ: এই পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে সমকালীন বাংলার জমিদার, জোতদার ও মহাজন প্রমুখের শোষণ ও অত্যাচারের কথা। চড়াহারে রাজস্ব, অতিরিক্ত কর, কারণে-অকারণে জমি থেকে প্রজাদের উচ্ছেদ ছিল তৎকালীন সমাজে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

নীলকর সাহেবদের অত্যাচার: এই পত্রিকায় তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে নীলকর সাহেবরা সাধারণ চাষিদের জোর করে নীলচাষে বাধ্য করত। আর এর বিরুদ্ধে নীলচাষিরা কীভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল সেইসব ঘটনার বিবরণ।

আধুনিক শিক্ষার প্রসারে: ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার মাধ্যমে সমকালীন সমাজে শিক্ষার প্রয়োজন এবং শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে পিছিয়ে-পড়া নারীদের মধ্যে আধুনিক শিক্ষাপ্রসারের ওপর এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

মূল্যায়ন: ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার অতিদারিদ্র্যের মধ্যেও পত্রিকা প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। তাই তিনি ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামেও পরিচিত। তাঁর মূললক্ষ্য ছিল সমকালীন অবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তথা সমাজকে সচেতন করে তোলা।

About the Author

Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

I am Aftab Rahaman, the founder of KaliKolom.com. For over 10 years, I have been writing simple and informative articles on current affairs, history, and competitive exam preparation for students. My goal is not just studying, but making the process of learning enjoyable. I hope my writing inspires you on your journey to knowledge.

📌 Follow me: