5,327 Members Now! 🎉
🔥 Live Job Alerts!
Join Instant Updates →
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

নূরজাহান চক্র কী?

Aftab Rahaman
Updated: Dec 5, 2024

নূরজাহান চক্র মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কার একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নাম, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন সম্রাটের স্ত্রী নূরজাহান। নূরজাহান ছিলেন একজন অসাধারণ বুদ্ধিমতী ও কূটনীতিবিদ। তাঁর প্রভাব মুঘল প্রশাসন ও রাজনীতিতে এতটাই ব্যাপক ছিল যে, এটি “নূরজাহান চক্র” নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

নূরজাহান চক্রের প্রধান সদস্যরা:

  1. নূরজাহান: চক্রের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরকে প্রভাবিত করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।
  2. আসাফ খান: নূরজাহানের ভাই এবং একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ।
  3. মুমতাজ মহল: নূরজাহানের ভাই আসাফ খানের কন্যা, যিনি পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী হন।
  4. ইতিমাদ-উদ-দৌলা: নূরজাহানের পিতা, যিনি মুঘল দরবারে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।

চক্রের প্রভাব:

  • মুঘল দরবারের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার।
  • বিভিন্ন উচ্চপদে আত্মীয়দের নিয়োগ এবং সম্রাটের অনুমোদন ছাড়াই অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
  • ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ এবং সম্রাটের সিলমোহরের মাধ্যমে শাসন পরিচালনা।

সমালোচনা:

নূরজাহান চক্রকে নিয়ে সমকালীন সময়ে মুঘল দরবারে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই মনে করতেন, এই চক্রের কারণে সম্রাট জাহাঙ্গীর দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং চক্রটি ক্ষমতার অপব্যবহার করত।

তবে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, নূরজাহান চক্র মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।


নূরজাহান চক্র কী বিস্তারিত

পারস্যের বাসিন্দা মীর্জা গিয়াস বেগ ও আসমা বেগমের কন্যা নূরজাহানের প্রকৃত নাম ছিল মেহেরউন্নিসা। মেহেরউন্নিসা ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে (৩১ মে) কান্দাহারে জন্মগ্রহণ করেন। মীর্জা গিয়াস বেগ একদা সপরিবারে ভারতে চলে আসেন এবং শেখ মামুদ নামে এক ধর্মপ্রাণ মুসলিমের সহায়তায় আকবরের রাজপ্রাসাদে চাকুরি গ্রহণ করেন। আকবর তাঁকে ইতিমাদ উদ্‌দৌলা‘ উপাধি দেন। মীর্জা গিয়াস বেগের সূত্র ধরে কন্যা মেহেরউন্নিসাও আকবরের রাজপ্রাসাদে আসেন।

নূরজাহান চক্র কী

আলিকুলি বেগের সঙ্গে বিবাহ

আকবরের পুত্র সেলিম (জাহাঙ্গীর) মোগল প্রাসাদে মেহেরউন্নিসাকে দেখে তাঁর অসামান্য রূপের ছটায় মুগ্ধ হয়ে পড়েন। সেলিম শীঘ্রই অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিণী মেহেরউন্নিসার প্রেমে আকুল হয়ে তাঁকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু সেলিমের পিতা সম্রাট আকবর এই বিবাহে অসম্মত হয়ে ১৭ বছরের মেহেরউন্নিসাকে তড়িঘড়ি বর্ধমানের জায়গিরদার আলিকুলি বেগের সঙ্গে বিবাহ দেন (১৫৯৪ খ্রি.)।

জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিবাহ

1. আলিকুলি বেগকে হত্যা : আকবর মেহেরউন্নিসাকে দিল্লি থেকে বহু দূরে বিবাহ দিয়ে তাঁকে সেলিমের চোখের আড়াল করার চেষ্টা করেন ঠিকই, কিন্তু সেলিম প্রমাণ করেন যে, চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল নয়। তিনি অপরূপা মেহেরউন্নিসাকে মন থেকে কখনোই ভুলতে পারেননি। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর (১৬০৫ খ্রি.) পর তাঁর পুত্র সেলিম সিংহাসনে বসে জাহাঙ্গীর নাম গ্রহণ করেন। এরপর ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেহেরউন্নিসার স্বামী বর্ধমানের জায়গিরদার আলিকুলি বেগকে হত্যা করেন। ইতিমধ্যে মেহেরউন্নিসার পরিবার অর্থনৈতিক দিক থেকেও তীব্র সংকটে পড়েছিল।

2. বিবাহ : এই অবস্থায় ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের বসন্তকালে নববর্ষের উৎসবে মীনা বাজারের মোগল প্রাসাদে জাহাঙ্গীর ও মেহেরউন্নিসার সাক্ষাৎ হয় এবং তাঁর রূপের মোহে আবিষ্ট জাহাঙ্গীর অতি দ্রুত তাঁকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে মেহেরউন্নিসাকে বিবাহ করে জাহাঙ্গীর তাঁর ১২ জন বেগমের মধ্যে তাঁকে প্রধান বেগমের মর্যাদা দেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর প্রিয়তমা পত্নীর নতুন নাম রাখেন ‘নূরজাহান‘ যার অর্থ ‘জগতের আলো’। সেই আলোয় জাহাঙ্গীর নিজেকে আরও উজ্জ্বল করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর মোগল মুদ্রায় নিজের নামের সঙ্গে নূরজাহানের নামও খোদাই করার নির্দেশ দেন।

প্রশাসনে আধিপত্য

1. রাজনৈতিক দক্ষতা : নূরজাহান ছিলেন প্রজাদরদি এবং বহুমুখী গুণের অধিকারী। রাজনৈতিক কৌশলে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধুরন্ধরসাবলীল। জটিল রাজনৈতিক আবর্তে অবাধে সাঁতার কেটে তিনি অনায়াসেই সেই আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারতেন।

2. প্রশাসনের প্রধান শক্তি : জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিবাহের (১৬১১ খ্রি.) পর থেকে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু (১৬২৭ খ্রি.) পর্যন্ত স্বামীর অসুস্থতা ও দুর্বলতার সুযোগে নূরজাহান দরবারে এবং মোগল প্রশাসনে সীমাহীন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। প্রকৃতপক্ষে তিনিই এই সময় প্রশাসনের প্রধান নিয়ন্তায় পরিণত হন এবং তাঁর নির্দেশেই মোগল প্রশাসন পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে।

3. গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম : এই সময় নূরজাহান দরবারে দর্শনার্থীদের দর্শন দিতেন এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতেন। আসফ খাঁর কন্যা আর্জুমন্দ বানু বেগমকে (মমতাজ মহল) যুবরাজ খুররম (শাহজাহান)-এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়।

নূরজাহান চক্র

1. গঠন : জাহাঙ্গীরের অসুস্থতা ও অন্ধ পত্নীপ্রেমের সুযোগে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নূরজাহান তাঁর নিকটজনদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এটি ‘নূরজাহান চক্র‘ নামে পরিচিত।

2. সদস্যবৃন্দ : নূরজাহানের নেতৃত্বাধীন এই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন তার পিতা মীর্জা গিয়াস বেগ, ভ্রাতা আসফ খাঁইদমৎ খাঁ, যুবরাজ খুররম (শাহজাহান) প্রমুখ।

3. রাজনৈতিক কর্তৃত্ব : জাহাঙ্গীর ক্রমে আমোদ-প্রমোদ, মদ্যপান ও বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে অশস্ত হয়ে পড়লে মোগল প্রশাসন ও রাজনীতিতে নূরজাহান চক্রের কর্তৃত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। অবশ্য ইতিহাসবিদ ড. আর. পি. ত্রিপাঠী বলেছেন যে, “জাহাঙ্গীরের জীবনে কোনো অশুভ শক্তি নয়, নূরজাহান ছিলেন তাঁর রক্ষাকারী দেবদূত।””

চক্রের আধিপত্য

1. বিভিন্ন উচ্চপদ লাভ : নূরজাহান চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন উচ্চ রাজপদ গ্রহণ করেন। নূরজাহানের পিতা মীর্জা গিয়াস বেগ এবং দুই ভ্রাতা আসফ খাঁইদমৎ খাঁ মোগল দরবারে উচ্চ রাজপদ লাভ করেন। আসফ খাঁ সম্রাটের ওয়াজির বা প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন। নূরজাহান (‘Power behind throne) বা ‘সিংহাসনের চালিকা শক্তি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

2. জাহাঙ্গীরের কর্তৃত্ব হ্রাস : অসুস্থ, সুরাসক্ত ও পত্নীপ্রেমী জাহাঙ্গীর নূরজাহানের হাতের পুতুলে পরিণত হন। জাহাঙ্গীর নিজেই একদা মন্তব্য করেন যে, “এক পেয়ালা সুরার বিনিময়ে আমি আমার রাজ্য আমার প্রিয়তমা রানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।” জাহাঙ্গীর যেন এইসময় তাঁর প্রিয়তমা পত্নীর হাতে সর্বস্ব সমর্পণ করে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সিদ্ধান্তই নিয়েছেন যে, “তুমি যদি ভাসাও মোরে, চাইনে পরিত্রাণ”। অবশ্য নূরজাহান চক্রের অস্তিত্ব ও ক্ষমতার চক্র অধিকাংশ ইতিহাসবিদ স্বীকার করে নিলেও ড. নুরুল হাসান-এর মতো কেউ কেউ ‘নূরজাহান চক্র’এর বাস্তব অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

পরিণতি

1. খুররম এর চক্র ত্যাগ : শেষপর্যন্ত নুরজাহান চক্রে ভাঙন ধরে। নূরজাহান তাঁর প্রথম পক্ষের কন্যা লাডলি বেগমকে জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র শাহরিয়ার এর সঙ্গে বিবাহ দিয়ে শাহরিয়ারকে দিল্লির সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনা করেন। ফলে ক্ষুব্ধ খুররম এই চক্র ছেড়ে বেরিয়ে যান।

2. খুররমের সিংহাসন লাভ : অবশেষে নূরজাহানকে ক্ষমতাচ্যুত ও পিতা জাহাঙ্গীরকে বন্দি করে খুররম দিল্লির সিংহাসনে বসেন। এর ফলে নুরজাহানের রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

3. নূরজাহানের শেষজীবন : নূরজাহান খুররমের অধীনে গৃহবন্দি হয়ে বাকি জীবন কাটাতে বাধ্য হন। বন্দি অবস্থায় তার পিতার স্মৃতিতে নির্মীয়মাণ সমাধির কাজকর্ম দেখাশোনা করে এবং কখনো কখনো পারসি ভাষায় কবিতা লিখে তাঁর দিন কাটত। ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে (১৭ ডিসেম্বর) নূরজাহানের মৃত্যু হলে লাহোরের শাহদারা বাগে জাহাঙ্গীরের কবরের পাশেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়।

কৃতিত্ব

নূরজাহানের প্রধান কৃতিত্বগুলি হল— 1. শাসন ক্ষমতা দখল : নূরজাহান অতি সাধারণ অবস্থা থেকে মোগল রাজক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছোতে সক্ষম হন।

2. বিচক্ষণতা : মধ্যযুগের একজন নারী হয়েও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার ক্ষেত্রে তিনি বহু পুরুষকেও হার মানান।

3. সুশাসন প্রবর্তন : জাহাঙ্গীরের আমলে সাম্রাজ্যে অপশাসনের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা নূরজাহান নিজের যোগ্যতায় দূর করে দেশে সুশাসন প্রবর্তন করেন।

নুরজাহানের আসল নাম কি

মেহেরউন্নিসা

নুরজাহান নামের অর্থ কি

জগতের আলো

About the Author

   Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

Aftab Rahaman is a seasoned education blogger and the founder of KaliKolom.com, India’s premier Bengali general knowledge blog. With over 10 years researching current affairs, history, and competitive exam prep, he delivers in‑depth, up‑to‑date articles that help students and lifelong learners succeed. His expert insights and data‑driven guides make KaliKolom.com an authoritative resource in Bengali education.

Unlock FREE Subject-Wise PDFs Instantly

Join Our Telegram Channel for Daily Updates!

      JOIN NOW ➔

Recent Posts

See All →