5,327 Members Now! 🎉
🔥 Live Job Alerts!
Join Instant Updates →
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বিশ্বভারতীর উদ্যোগ ইতিহাস ও বিশ্লেষণ

Team KaliKolom
Updated: Sep 27, 2021

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “মানুষের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই শিক্ষা।” শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তাঁর চিন্তার জগৎ বহুদূর বিস্তৃত। এই চিন্তার একটি দিক হল বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত মহীশূর (১৯১৬ খ্রি.), বারাণসী (১৯১৬ খ্রি.), পাটনা (১৯১৭ খ্রি.), ওসমানিয়া (১৯১৮ খ্রি.) প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে লক্ষ করেন যে, সেগুলিতেও পুরোনো ইউরোপীয় ছাঁচে নতুনের ঢালাই করা হচ্ছে। তিনি এই পুরোনো ইউরোপীয় ছাঁচ বাদ দিয়ে নতুন ধরনের উচ্চশিক্ষার চিন্তাভাবনা শুরু করেন।

শান্তিনিকেতনে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথের আতিথেয়তায় মহাত্মা গান্ধি ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধি
শান্তিনিকেতনে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি রবীন্দ্রনাথের আতিথেয়তায় মহাত্মা গান্ধি ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধি

কলা রবীন্দ্রনাথের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় হল যাবতীয় জ্ঞানভাণ্ডারের রক্ষক। সেই জ্ঞানকে সাধনা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা এবং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উপস্থিত করার দায়িত্বও বিশ্ববিদ্যালয়ের। মুক্তচিন্তার চর্চা, সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য। এই আদর্শে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির নামও ঠিক করেন—‘বিশ্বভারতী’। 

অবশেষে তিনি বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। কলাবিদ্যার পাশাপাশি এখানে অর্থশাস্ত্র, কৃষিতত্ত্ব, স্বাস্থ্যবিদ্যা,

পল্লি উন্নয়ন-সহ সমস্ত ব্যাবহারিক বিজ্ঞানের পাঠদান শুরু হয়। বিশ্বভারতীর মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনা বাস্তবায়িত হয়।

বিশ্বভারতী শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে দেশ-বিদেশের পণ্ডিত ও শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে থাকেন। বহু পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে এখানে শিক্ষকতায় যোগ দেন। বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার সমন্বয়ে বিশ্বভারতীর গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাষা, সাহিত্য, কলাশাস্ত্র, পল্লি-শিক্ষা, কৃষি-অর্থনৈতিক গবেষণা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে এখানে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “কবির মনে তাঁহারমিশন’ সম্বন্ধে দ্বিধা নাই, তাঁহার অন্তরের বিশ্বাস, আন্তর্জাতিকতার মনোশিক্ষা না পাইলে ভাবীকালের সভ্যতা টিকিবে না।”

কলকাতার নাগরিক জীবন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে—একটি শান্তিনিকেতনে এবং অপরটি শ্রীনিকেতনে। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রথম উপাচার্য (১৯৫১-৫৩ খ্রি.) ছিলেন। দেশ-বিদেশের প্রচুর ছাত্রছাত্রী এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।

 

 বিশ্বভারতী কেন ও কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাশ্চাত্য শিক্ষাধারার বিকল্প জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরূপে শান্তিনিকেতনে যে ব্ৰত্মচর্য আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন তা পরবর্তীকালে একটি বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান রূপে গড়ে ওঠে । এই প্রতিষ্ঠানকে একটি বৃহত্তর প্রতিষ্ঠান রূপে গড়ে তােলার আকাঙ্খা থেকেই গড়ে ওঠে বিশ্বভারতী ( ৮ পৌষ , ১৩২৮ বঙ্গাব্দ , ২২ ডিসেম্বর ১৯২১খ্রি:)।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল

প্রেক্ষাপট : বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ । যে সমস্ত আদর্শ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সেগুলি হল —
 
 ভারতীয় আদর্শকে তুলে ধরা : শান্তিনিকেতনকে কেন্দ্র । করে ভারতের আদর্শ ও বাণী বিশ্বে তুলে ধরার লক্ষ্যেই তিনি । বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন । সাহিত্যিকরূপে বিশ্ববাসীকে যেমন সাহিত্য উপহার দেন।
 
 নিজের কর্তব্য সম্পাদন : তেমনি তিনি ভারতবাসীর হয়ে বিশ্বকে কিছু প্রদান করতে । চেয়েছিলেন । এই উদ্দেশ্যেই তিনি একজন ভারতীয়রূপে । নিজের কর্তব্য সম্পাদনের জন্য বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন । 
 
প্রতিষ্ঠা : ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর । শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয় ( ৮ পৌষ , ১৩২৫ । বঙ্গাব্দ ) । এর তিন বছর পর পৌষ উৎসবে বিশ্বভারতী । উঘাটিত হয় । বিশ্বভারতী সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনার তিনটি স্তর ছিল যথা— 
 
১ ভারত সংস্কৃতি : ভারতের সমগ্ররূপ উপলব্ধি করতে ভারতের নানা সংস্কৃতি ( বৈদিক , বৌদ্ধ , জৈন ও মুসলমান ) কে তুলে ধরা ।
 
 ২ বিদ্যা উৎপাদন : তিনি মত প্রকাশ করেন যে , বিশ্বভারতীর মূল কাজ হবে বিদ্যার উৎপাদন । বিদ্যা বিতরণ হবে গৌণ কাজ । এই উদ্দেশ্যে বিশ্বের মনীষীদের আহ্বান করে বিশ্বভারতীতে তাঁদের আনার কাজ শুরু করেন ।
 
৩ উৎপাদন – শিক্ষা : শিক্ষার্থীদের অর্থশাস্ত্র , কৃষি – তত্ত্ব , নানা ব্যবহারিক বিদ্যা শিক্ষা ও বিশ্বভারতীর চতুর্দিকে তার প্রয়ােগের ব্যবস্থা করাও ছিল তার চিন্তা – ভাবনার বিশেষ দিক । এরই সূত্র ধরে শ্রী নিকেতনের প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
 
 উপসংহার : বিশ্বভারতী উদ্যানের দিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীকে দেশবাসীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন । এভাবেই ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের একজন আদর্শ ভারতীয় | রূপে উত্তরণ ঘটে

প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষাকে মানুষ ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় বলে মনে করতেন না। তাঁর মতে, শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় গড়ে তোলা দরকার। তাঁর শিক্ষাভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তাঁর প্রকৃতি ভাবনা। ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন,

“আমার শিশুকালেই বিশ্বপ্রকৃতির সাথে আমার খুব একটি সহজ এবং নিবিড় যোগ ছিল। বাড়ির ভিতরের নারিকেল গাছগুলি প্রত্যেকে আমার কাছে অত্যন্ত সত্য হইয়া দেখা দিত। সকালে জাগিবামাত্রই সমস্ত পৃথিবীর জীবনোল্লাসে আমার মনকে তাহার খেলার সঙ্গীর মতো ডাকিয়া বাহির করিত…।”

তিনি উপলব্ধি করেন যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বলেন, সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। কিন্তু আজ মানুষ নির্মমভাবে বন ধ্বংস করে মরুভূমিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। অরণ্যদেবতা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “লুব্ধ মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে নিজেরই ক্ষতিকে ডেকে এনেছে; বায়ুকে নির্মল করবার ভার যে গাছপালার উপর, যার পত্র ঝরে গিয়ে ভূমিকে উর্বরতা দেয়, তাকেই সে নির্মূল করেছে।

বিধাতার যা কিছু কল্যাণের দান, আপনার কল্যাণ বিস্মৃত হয়ে মানুষ তাকেই নষ্ট করেছে।” তিনি শান্তিনিকেতনে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই তাঁর আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে পঞ্চবটী প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বৃক্ষরোপণ উৎসবকে জোরদার করেন। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে প্রতি বছর ২২ শ্রাবণ দিনটিকে শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।

রবীন্দ্রনাথ পল্লিগ্রামের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কৃষিকাজের উন্নতির বিষয়ে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা করেন। প্রজাদের সদ্য বকেয়া খাজনার উপর সামান্য হিতৈষীবৃত্তি ধার্য করে এবং জমিদারি থেকে তার সমপরিমাণ অর্থ ভরতুকি দিয়ে ‘হিতৈষী তহবিল’ গড়ে তোলা হয়। এই তহবিলের অর্থ গ্রামে রাস্তাঘাট নির্মাণ, মন্দির-মসজিদের

সংস্কার, স্কুল-মাদ্রাসা স্থাপন, চাষিদের বিপদকার্লে সাহায্যদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যয় করা হত। শিলাইদহে ‘মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয়’ এবং পতিসরে হাসপাতাল স্থাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে আদর্শ কৃষিক্ষেত্র স্থাপন করে সেখানে ট্র্যাক্টর, পাম্পসেট ও জৈব সার ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব আনেন। সেযুগে ধনী বাঙালি পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাদের সন্তানদের আই. সি. এস. বা ব্যারিস্টার বানানো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদার ও জামাতা নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলিকে কৃষিবিদ্যা শিখতে ১৯০৬-০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিদেশে পাঠান।

চাষের কাজে বৈজ্ঞানিক প্রথায় উন্নত বীজ, সার, সেচ প্রভৃতি ব্যবহার করে জনসাধারণের উন্নতিবিধানই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ৮০ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষিখামার গড়ে তোলেন। তিনি কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ পর্যন্ত ৬ মাইল রাস্তা তৈরি করেন। গ্রামে তাঁতের কাজ, মৃৎশিল্প প্রভৃতি কুটিরশিল্পের বিকাশে তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তিনি গ্রামে সমবায় প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেন।

আরো দেখুন —

স্বল্প সুদে চাষিদের ঋণদানের জন্য পতিসর কৃষিব্যাংক স্থাপন করা হয়। জমিদারির প্রজাদের বিবাদের মীমাংসার জন্য তিনি সালিশি সভা গড়ে দেন। আধুনিক পঞ্চায়েতের ধাঁচে গ্রাম-কাঠামোও গড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। চাষিরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্য তিনি ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’ (১৮৯৫ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করে ন্যায্য মূল্যে তাদের ধান ও পাট কিনে বাজারে বিক্রির দায়িত্ব নেন।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল মানুষে মানুষে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করা। তিনি জমিদারি পরিচালনা করতে এসে হিন্দু-মুসলমান ব্রাহ্মণ-চণ্ডালের ভেদাভেদ দূর করে কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন। গ্রামের চাষিদের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তিদান, তাদের সন্তানদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করেন।

About the Author

   Aftab Rahaman

AFTAB RAHAMAN

Aftab Rahaman is a seasoned education blogger and the founder of KaliKolom.com, India’s premier Bengali general knowledge blog. With over 10 years researching current affairs, history, and competitive exam prep, he delivers in‑depth, up‑to‑date articles that help students and lifelong learners succeed. His expert insights and data‑driven guides make KaliKolom.com an authoritative resource in Bengali education.

Unlock FREE Subject-Wise PDFs Instantly

Join Our Telegram Channel for Daily Updates!

      JOIN NOW ➔

Recent Posts

See All →